প্রিন্ট ভিউ

মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২

( ২০১২ সনের ৩ নং আইন )

মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন
২১। (১) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোন জেলায় মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসাবে নিয়োগ (assign) বা ক্ষমতায়িত করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৩) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের বিচার কেবল এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হইবে।
 
 
 
 
(৪) যে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রে কোন অপরাধ বা উহার অংশবিশেষ সংঘটিত হইয়াছে অথবা মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে যে অঞ্চল হইতে উদ্ধার করা হইয়াছে বা তিনি যে অঞ্চলের অধিবাসী সেই আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ট্রাইব্যুনাল উক্ত অপরাধের বিচার করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৫) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাহিরে বাংলাদেশী কোন নাগরিক বা কোম্পানী অথবা স্বভাবতঃ বাংলাদেশে আবাসী (habitually resident in Bangladesh) এমন কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটন করিলে, তিনি যেই ট্রাইব্যুনালে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রের অধিবাসী ছিলেন অথবা কোম্পানীর ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানীর নিবন্ধিত অফিস (registered office) যে আঞ্চলিক অধিক্ষেত্রে ছিল, সেই ট্রাইব্যুনাল উক্ত অপরাধের বিচার করিতে পারিবে।
 
 
ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা
২২। (১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, ট্রাইব্যুনালের দায়রা আদালতের সকল ক্ষমতা থাকিবে এবং ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোন সুরক্ষামূলক (protective order) আদেশসহ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাহাদের অধীনে বা ব্যবস্থাপনায় থাকা কোন প্রতিবেদন, দলিল বা নিবন্ধন-বহি (register) ট্রাইব্যুনালের নিকট উত্থাপন করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(২) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচার অথবা কোন ভিকটিম বা সাক্ষীর নিরাপত্তার স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল যে কোন স্থানে নিজে অথবা কমিশনের মাধ্যমে, সরাসরি বা ইলেকট্রনিক উপায়ে, কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ বা তাহাকে পরীক্ষা করিতে পারিবে এবং ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীন কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা প্রতিবেদন, তাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হইবার দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করিয়া, সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৩) এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচার চলাকালে অথবা কোন অপরাধের অভিযোগ উত্থাপনের পূর্বে ট্রাইব্যুনাল কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে বা স্বীয় ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত এবং শর্তাধীনে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে কোন সরকারি বা বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে বা সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ কোন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হেফাজতে প্রদান করিতে পারিবে এবং মানব পাচারের শিকার ব্যক্তি নারী বা শিশু হইলে ট্রাইব্যুনাল এই উপ-ধারার অধীনে আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে তাহার মতামত বিবেচনা করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৪) কোন মামলায় চার্জ গঠনের পূর্বকাল পর্যন্ত, প্রয়োজনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট উপ-ধারা (৩) এ প্রদত্ত ক্ষমতা, প্রয়োজনীয় অভিযোজন-সাপেক্ষে (adaptation) , প্রয়োগ করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৫) এই আইনের অধীন অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশন পক্ষের (prosecution) বক্তব্য শুনিয়া এবং কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া জামিন প্রদান করিতে পারিবে এবং এই উপ-ধারার অধীন জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে স্ব-বিবেচনা (discretion) প্রয়োগের সময় ট্রাইব্যুনাল অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি সংঘটিত অপরাধের তীব্রতা, ভিকটিম এবং সাক্ষীর নিরাপত্তা ও ক্ষতি এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধের পূর্ব-ইতিহাস বিবেচনা করিবে।
 
 
 
 
(৬) কোন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদানের সময় জামিন-আদেশের সহিত ট্রাইব্যুনাল তদকর্তৃক নির্দিষ্টকৃত দিনে জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুলিশের নিকট বা ট্রাইব্যুনালের কোন কর্মকর্তার নিকট হাজিরা প্রদান করিবার নির্দেশনাসহ নিয়ন্ত্রণ-আদেশ (control order) সংযুক্ত করিতে পারিবে।
ট্রাইব্যুনালের অধিকতর তদন্ত সংক্রান্ত ক্ষমতা
২৩। ট্রাইব্যুনাল কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে অথবা স্বীয় ক্ষমতায় কোন মামলার অধিকতর তদন্তের এবং তদকতৃর্ক নির্দিষ্টকৃত সময়ের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করিতে আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
বিচারকার্য সম্পন্নের সময়সীমা
২৪। (১) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ গঠনের ১৮০ (একশত আশি) কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল বিচারকার্য সম্পন্ন করিবে।
 
 
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সত্ত্বেও, উক্ত সময়সীমার মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থতা বিচারকার্যকে বাতিল করিবে না, কিন্তু, ট্রাইব্যুনাল উক্ত সময়ের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে সমর্থ না হইবার কারণ ব্যাখ্যা করিয়া ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন প্রেরণ করিবে।
 
 
রুদ্ধ-কক্ষ বিচার (trial in-camera)
২৫। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং নারী কিংবা শিশু ভিকটিমের সুরক্ষার প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনাল কারণ উল্লেখ করিয়া এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচারকার্য কেবল মামলার পক্ষগণ এবং তাহাদের নিযুক্ত আইনজীবীগণ বা ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে অন্যান্য প্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে রুদ্ধ-কক্ষে অনুষ্ঠানের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
দোভাষী নিয়োগ
২৬। এই আইনের অধীন কোন অপরাধের বিচারের যেকোন পর্যায়ে পাচারের শিকার ব্যক্তি বা অন্য কোন সাক্ষী অনুবাদক বা দোভাষী বা প্রয়োজনে ইশারা ভাষার দোভাষী নিয়োগের অনুরোধ করিতে পারিবে এবং ট্রাইব্যুনাল সেইমর্মে উপযুক্ত আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
 
 
সম্পত্তি আটক (seizure) , অবরুদ্ধকরণ (freeze)ও বাজেয়াপ্তকরণ (confiscation) এবং অতিরাষ্ট্রিক নিষেধাজ্ঞা
২৭। (১) বিচারকার্যের যে কোন পর্যায়ে, স্বীয় উদ্যোগে বা কোন ব্যক্তির আবেদনক্রমে ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত অস্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তি আটক, অবরুদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(২) কোন বাড়ি, জমি বা যানবাহন এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে বা সংঘটনের প্রচেষ্টায় ব্যবহৃত হইয়াছে বা হইতেছে বলিয়া যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকিলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত বাড়ি, জমি বা যানবাহন আটক রাখিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৩) এই আইনের অধীন কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে ট্রাইব্যুনাল উক্ত দোষী ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত অপরাধ সংঘটনের ফলে অর্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবে এবং উক্তরূপে বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিলে জমা হইবে।
 
 
 
 
(৪) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনাল বিদেশে অবস্থিত অপরাধলব্ধ অর্জিত সম্পত্তি এবং উক্ত সম্পত্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে অভিযুক্ত ব্যক্তির অর্জিত অন্য কোন সম্পত্তি অবরুদ্ধ (freeze) এবং ক্রোক (attach) করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্ত নির্দেশ লংঘিত হইলে অভিযুক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে এবং অন্যূন ২০(বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
 
 
 
 
(৫) এই ধারার অধীন অবরুদ্ধ বা ক্রোকযোগ্য সম্পত্তি নির্দিষ্টকরণে সরকার এবং বিদেশস্থ সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস ট্রাইব্যুনালকে যথাযথ সহযোগিতা করিবে এবং উপ-ধারা (৪) এর অধীন কোন আদেশ জারি হইলে সরকার যেদেশে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি অবস্থিত সেই দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে ট্রাইব্যুনালের উক্ত আদেশের ব্যাপারে অবগত করিবে।
 
 
 
 
ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ
২৮। (১) এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের জন্য কোন অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে ট্রাইব্যুনাল তদকর্তৃক আদেশকৃত অর্থদণ্ডের অতিরিক্ত হিসাবে মানব পাচারের শিকার ব্যক্তিকে যৌক্তিক পরিমাণে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য তাহাকে আদেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং এই ধরনের উক্তরূপ ক্ষতিপূরণ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সরাসরি অথবা প্রয়োজনে, the Public Demands Recovery Act, 1913 (Bengal Act No. III of 1913) এর বিধানানুযায়ী আদায়যোগ্য হইবে।
 
 
 
 
(২) ট্রাইব্যুনাল উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষতিপূরণের আদেশ না দিয়া কেবল অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়া থাকিলে, ট্রাইব্যুনাল উক্ত আদেশকৃত অর্থদণ্ডের অর্থ বা উহার কোন অংশ পাচারের শিকার ব্যক্তি বা ভিকটিমকে প্রদানের আদেশদান করিতে পারিবে।
 
 
 
 
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন আদেশকৃত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে ট্রাইব্যুনাল স্বীয় বিবেচনা প্রয়োগ করিবে এবং ক্ষতিপূরণের আদেশ প্রদানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যয়, অত্যাবশ্যক যাতায়াত এবং সাময়িক আবাসনের ব্যয়, হারানো আয়, যাতনা, প্রকৃত বা আবেগজনিত ক্ষতি এবং দুর্ভোগের তীব্রতা বিবেচনা করিবে।
 
 
বিদেশী দলিল, লিখিত তথ্য প্রমাণাদি বা উপাদানের গ্রহণযোগ্যতা
২৯। (১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বিদেশী লিখিত দলিল, আদালতের আদেশ বা রায়, তদন্ত প্রতিবেদন বা সরকারি ঘোষণা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা যথাযথভাবে সরবরাহকৃত এবং স্বাক্ষরিত ও প্রমাণীকৃত হইলে উহা সাক্ষ্য হিসাবে ট্রাইব্যুনালে গ্রহণযোগ্য হইবে, যদি তাহা বাংলাদেশে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস অথবা দূতাবাস না থাকিলে, দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কতৃর্ক সত্যায়িত হইয়া থাকে।
 
 
 
 
(২) এই আইনের অধীন বিচার কার্যক্রমে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসাবে গৃহীত হইতে হইলে কোন বাংলাদেশী কর্তৃক বিদেশে প্রস্তুতকৃত আমমোক্তারনামাসহ (power of attorney) যে কোন দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক এতদ্‌সংক্রান্ত প্রচলিত বিধি অনুসারে সত্যায়িত এবং প্রমাণীকৃত হইতে হইবে।
 
 
 
 
(৩) কোন দলিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ দূতাবাস কতৃর্ক সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত হইলে সেই দলিলের বিষয়বস্ত্তর (content)সত্যাসত্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা উক্ত দূতাবাস দায়ী হইবেনা।
ইলেকট্রনিক তথ্য প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা
৩০। অডিও ভিস্যুয়াল যন্ত্র বা কোন ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে ধারণকৃত সাক্ষ্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য (admissible) হইবে।
আপিল
৩১। ট্রাইব্যুনালের কোন আদেশ, রায় বা দণ্ডের বিরুদ্ধে রায় প্রদান অথবা আদেশ বা দণ্ড ঘোষণার ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাইবে।
 
 

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs