৪৩। (১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, যেখানেই ক্ষতি সংঘটিত হউক না কেন, নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর কেবল নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী হইবে, তবে সেইক্ষেত্রে ইহা প্রমাণিত হইতে হইবে যে, উক্ত ক্ষতি অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর কর্তৃক পরিচালিত নিউক্লীয় স্থাপনায় কোন নিউক্লীয় ঘটনার ফলে সংঘটিত হইয়াছে।
(২) কোন নিউক্লীয় পদার্থ চুরি হইলে, হারাইলে, ভারমুক্ত করা হইলে (jettisoned) বা পরিত্যাগ করা হইলে, উক্ত নিউক্লীয় পদার্থ ধারণের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত সর্বশেষ অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরের উপর উহা দ্বারা সৃষ্ট নিউক্লীয় ক্ষতির দায় বর্তাইবে।
(৩) যেখানে নিউক্লীয় ক্ষতি সংঘটিত হইবে, সেখানে নিউক্লীয় ক্ষতির দায় প্রয়োগ হইবে।
পরিবহনের সময় দায়
৪৪। (১) নিউক্লীয় পদার্থ পরিবহনের ক্ষেত্রে, প্রেরণকারী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী হইবে, যতক্ষণ না গ্রহণকারী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর সংশ্লিষ্ট পদার্থ নিজের দায়িত্বে গ্রহণ করে, যদি না গ্রহণ ও প্রেরণকারী অপারেটর পরিবহনের কোন পর্যায়ে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে দায়-দায়িত্ব পরিবর্তন করে অথবা উক্ত পদার্থ বহনকারীর অনুরোধে তাহার উপর উক্ত দায় দায়িত্ব অপর্ণ করে এবং শেষোক্ত ক্ষেত্রে, উক্ত বহনকারী এই আইন অনুসারে অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর হিসাবে গণ্য হইবে।
(২) যেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তির নিকট নিউক্লীয় পদার্থ প্রেরণ করা হয়, সেইক্ষেত্রে উক্ত নিউক্লীয় পদার্থ বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে যেই যানবাহনে করিয়া আনা হইয়াছে উহা হইতে খালাস করিবার পূর্ব পর্যন্ত প্রেরণকারী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর উক্ত নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী থাকিবে।
(৩) যেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তির নিকট হইতে নিউক্লীয় পদার্থ প্রেরণ করা হয়, সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশ হইতে যে পরিবহনের মাধ্যমে নিউক্লীয় পদার্থ বহন করা হইবে উহাতে নিউক্লীয় পদার্থ বোঝাই (লোড) করিবার পর গ্রহণকারী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর উক্ত নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী হইবে।
দায়-দায়িত্বের পরিমাণ
৪৫। প্রতিটি নিউক্লীয় ঘটনার বিষয়ে দায় এর সর্বোচ্চ পরিমাণ হইবে বাংলাদেশী টাকায় তিন শত মিলিয়ন স্পেশাল ড্রয়িং রাইট (SDR) এর সমতূল্য বা সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন দ্বারা দায় এর সুনির্দিষ্ট পরিমাণ এবং প্রতিটি একক নিউক্লীয় ঘটনার জন্য একজন অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরের দায় প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
আর্থিক নিরাপত্তা
৪৬। (১) নিউক্লীয় ক্ষতির দায় মিটাইবার জন্য নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরের বীমা থাকিতে হইবে ও উহা চলমান রাখিতে হইবে, অথবা অন্যান্য আর্থিক নিরাপত্তা থাকিতে হইবে।
(২) নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরকে উপ-ধারা (১) এর অধীন আর্থিক নিরাপত্তার শর্তাবলী অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করিতে হইবে।
(৩) নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরের বিরুদ্ধে উপ-ধারা (১) এর অধীন ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণের জন্য অপারেটর বা বিদেশী অপারেটরের বীমা বা আর্থিক নিরাপত্তা এইরূপ দাবি মিটাইবার জন্য অপর্যাপ্ত বলিয়া গণ্য হইলে, বাংলাদেশ সরকার দাবির জন্য পাওনা নিশ্চিত করিবে, উক্তরূপ যে কোন ক্ষেত্রে, দাবী পরিশোধের জন্য ধারা ৪৫ এ ধার্যকৃত পরিমাণের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হইবে না।
ক্ষতিপূরণের অধিকারের তামাদি
৪৭। (১) এই আইনের অধীন নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য নিম্নরূপ সময়ের মধ্যে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা না হইলে, উক্ত ক্ষতিপূরণের অধিকার তামাদি হইবে-
(ক) জীবনহানি বা ব্যক্তিগত ক্ষতির ক্ষেত্রে, নিউক্লীয় ঘটনার তারিখ হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) বৎসর;
(খ) অন্য কোন নিউক্লীয় ক্ষতির ক্ষেত্রে, নিউক্লীয় ঘটনার তারিখ হইতে ২৫ (পঁচিশ) বৎসর।
(২) যেদিন হইতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ক্ষতি এবং উক্ত ক্ষতির জন্য দায়ী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর সম্পর্কে অবহিত হইয়াছেন বা যুক্তিসঙ্গত কারণে অবহিত হওয়া উচিত উহার ১০ (দশ) বৎসরের মধ্যে উত্থাপিত না হইলে এই আইনের অধীন নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের অধিকার তামাদি হইবে, যদি উপ-ধারা (১) এ প্রতিষ্ঠিত সময়সীমা অবসান না হয়।
(৩) উপযুক্ত আদালতের ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত না থাকিলে, নিউক্লীয় ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দাবিকারী এবং এই ধারা অনুসারে প্রযোজ্য সময়কালের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপনকারী যে কোন ব্যক্তি, আদালত কর্তৃক বিচার চূড়ান্ত হইবার পূর্বে, এমনকি উক্ত ক্ষয়-ক্ষতির জন্য দাবী উত্থাপনের সময় অতিক্রান্ত হইলেও, বর্ধিত ক্ষতি বিবেচনা করিবার জন্য দাবী সংশোধন করিতে পারিবেন।
ক্ষতিপূরণ
৪৮।(১) ক্ষতিপূরণের প্রকৃতি, ধরন, পরিমাণ এবং ন্যায়সঙ্গত বণ্টন এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
(২) ধারা ৪৫ এ সর্বোচ্চ দায়-দায়িত্বের যেই পরিমাণ নির্ধারণ করিয়া দেওয়া হইয়াছে উহা হইতে দাবীর পরিমাণ অধিক হইলে বা হইবে বলিয়া মনে হইলে, নিউক্লীয় ঘটনার দ্বারা সংগঠিত নিউক্লীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে কোন জীবনহানি বা ব্যক্তিগত ক্ষতির জন্য প্রথমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে এবং উক্ত দাবীসমূহ মিটাইবার পর অন্যান্য ক্ষতি বা বিনষ্টের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে।
(৩) নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দেওয়ানী আদালত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যে সুবিধা এবং খরচ প্রদানের নির্দেশ প্রদান করিবে তাহা ধারা ৪৫ এ নির্ধারিত অন্যূন দায়-দায়িত্বের অতিরিক্ত হইবে।
এখতিয়ার
৪৯। (১) এই আইন অনুসারে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা অথবা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলের (Exclusive Economic Zone) মধ্যে সংঘটিত নিউক্লীয় ঘটনার মাধ্যমে সৃষ্ট নিউক্লীয় ক্ষতির ক্ষতিপূরণের দাবীর মামলা কেবল এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালত কর্তৃক বিচার্য হইবে এবং উহা এই আইনের বিধান অনুযায়ী আদালতে উত্থাপন করিতে হইবে।
(২) এই আইন অনুসারে নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী যে কোন ব্যক্তি, দায়ী অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর বা বীমাকারীর বিরুদ্ধে বা ধারা ৪৬ অনুসারে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদানকারী অন্য যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবেন।
দায়-দায়িত্বের ব্যতিক্রম
৫০। (১) নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর নিউক্লীয় ক্ষতির জন্য দায়ী হইবে না যদি প্রতিপন্ন হয় যে ইহা সরাসরি নিম্নবর্ণিত কারণে হইয়াছেঃ
(ক) ব্যতিক্রমধর্মী গুরুতর প্রাকৃতিক দুর্যোগ;
(খ) প্রত্যক্ষ সশস্ত্র যুদ্ধ, শত্রুতা, গৃহযুদ্ধ বা গণ-অভ্যুত্থান।
(২) নিউক্লীয় স্থাপনার অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর যদি ইহা প্রমাণ করিতে পারে যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির সরাসরি অবহেলা অথবা ক্ষতি করিবার উদ্দেশ্যে উক্ত ব্যক্তির কোন কার্য বা নিষ্ক্রিয়তার জন্য সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতি সাধিত হইয়াছে, তাহা হইলে এইরূপ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান হইতে অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে দায়মুক্ত হইতে পারিবে।
(৩) এই আইনের কোন কিছুই নিউক্লীয় ক্ষয়-ক্ষতির জন্য কোন ব্যক্তিগত দায়কে প্রভাবিত করিবে না, যেই ক্ষয়-ক্ষতির জন্য, উপ-ধারা (২) এর কারণে, অপারেটর বা বিদেশী অপারেটর দায়ী নহেন, এবং যাহা ক্ষতি করিবার অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির কার্য বা বিচ্যুতি দ্বারা সংঘটিত হইয়াছে।