প্রিন্ট ভিউ

[সেকশন সূচি]

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২

( ২০১২ সনের ৩৪ নং আইন )

সংজ্ঞা
 
২।বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
(১) ‘‘অধিদপ্তর’’ অর্থ ধারা ৭ এ উল্লিখিত ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’;
 
(২) ‘‘আপদ (Hazard) ’’ অর্থ এমন কোন অস্বাভাবিক ঘটনা যাহা প্রাকৃতিক নিয়মে, কারিগরি ত্রুটির কারণে অথবা মানুষের দ্বারা সৃষ্ট হইয়া থাকে এবং ফলস্বরূপ বিপর্যয় সংঘটনের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপদ ও হুমকির মধ্যে নিপতিত করে এবং জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের ভয়াবহ ও অপূরণীয় ক্ষতিসহ দুঃখ দুর্দশার সৃষ্টি করে;
 
(৩) ‘‘কমিটি’’ অর্থে ধারা ১৪, ১৭ এবং ১৮ এর অধীন গঠিত, ক্ষেত্রমত, গ্রুপ, কমিটি, বোর্ড, প্লাটফরম বা টাস্কফোর্স অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(৪) ‘‘কাউন্সিল’’ অর্থ ধারা ৪ এর অধীন গঠিত 'জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল';
 
(৫) ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) ’’ অর্থ প্রাকৃতিক নিয়মে সূর্যকিরণের শোষণ-বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠের কোন স্থানে দীর্ঘসময়ের বায়ুমন্ডলের ভৌত উপাদানসমূহের পরিবর্তনের ফলে অথবা মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মকাণ্ডের দ্বারা উপরি-উক্ত প্রাকৃতিক নিয়মের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন;
 
(৬) ‘‘জলযান’’ অর্থ যন্ত্রচালিত বা মানবচালিত জাহাজ, নৌকা, টাগ-বোট, ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট, মাছ ধরার নৌকা এবং যাত্রী বা পণ্য পরিবহণ বা অন্য কোন কাজে ব্যবহৃত পানিতে চলাচল করে এইরূপ কোন যানবাহন;
 
(৭) ‘‘ঝুঁকি (Risk) ’’ অর্থ আপদ, বিপদাপন্নতার উপাদান এবং পরিবেশের আন্তঃক্রিয়া বা সম্মিলন ও সক্ষমতার ফলে উদ্ভূত সম্ভাব্য ক্ষতিকর অবস্থা;
 
(৮) "তফসিল" অর্থ এই আইনের তফসিল;
 
(৯) ‘‘ত্রাণ’’ অর্থ সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় জনসাধারণকে প্রদেয় বা প্রদত্ত খাদ্য, কম্বল ও শীত বস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য বস্ত্র, আশ্রয়, ঔষধ, নবজাতক ও শিশুদের জন্য অপরিহার্য দ্রব্যাদি, বিশুদ্ধ পানীয় জল, অর্থ, জ্বালানী, বীজ, কৃষি উপকরণ, গবাদি-পশু, মৎস্য পোনা, ঢেউটিন বা গৃহ-নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্য যে কোন প্রকার সহায়তা;
 
(১০) ‘‘দুর্গত এলাকা’’ অর্থ ধারা ২২ এর অধীন ঘোষিত দুর্গত এলাকা;
 
(১১) ‘‘দুর্যোগ (Disaster) ’’ অর্থ প্রকৃতি বা মনুষ্যসৃষ্ট অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট নিম্নবর্ণিত যে কোন ঘটনা, যাহার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা আক্রান্ত এলাকার গবাদি পশু, পাখি ও মৎস্যসহ জনগোষ্ঠীর জীবন, জীবিকা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, সম্পদ, সম্পত্তি ও পরিবেশের এইরূপ ক্ষতিসাধন করে অথবা এইরূপ মাত্রায় ভোগান্তির সৃষ্টি করে, যাহা মোকাবেলায় ঐ জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সম্পদ, সামর্থ্য ও সক্ষমতা যথেষ্ট নয় এবং যাহা মোকাবেলার জন্য ত্রাণ এবং বাহিরের যে কোন প্রকারের সহায়তা প্রয়োজন হয়, যথা:-
 
(অ) ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, টর্নেডো, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক জোয়ার, ভূমিকম্প, সুনামি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, নদীভাঙ্গন, উপকূল ভাঙ্গন, খরা, মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা, মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক দূষণ, ভবনধস, ভূমিধস, পাহাড়ধস, পাহাড়ী ঢল, শিলাবৃষ্টি, তাপদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা, ইত্যাদি;
 
(আ‌) বিস্ফোরণ, অগ্নিকাণ্ড, জলযান ডুবি, বড় ধরনের ট্রেন ও সড়ক দূর্ঘটনা, রাসায়নিক ও পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা, জ্বালানী তেল বা গ্যাস নিঃসরণ অথবা গণবিধ্বংসী কোন ঘটনা;
 
(ই) মহামারী সৃষ্টিকারী ব্যাধি, যেমন প্যান্ডেমিক ইনফ্লু্‌য়েঞ্জা, বার্ডফ্লু, এনথ্রাক্স, ডায়রিয়া, কলেরা, ইত্যাদি;
 
(ঈ) ক্ষতিকর অণুজীব, বিষাক্ত পদার্থ এবং প্রাণসক্রিয় বস্তুর সংক্রমণসহ জৈব উদ্ভূত বা জৈবিক সংক্রামক দ্বারা সংক্রমণ;
 
(উ) অত্যাবশ্যকীয় সেবা বা দুর্যোগ প্রতিরোধ অবকাঠামোর অকার্যকারিতা বা ক্ষতিসাধন; এবং
 
(ঊ) ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টিকারী কোন অস্বাভাবিক ঘটনা এবং দৈব দুর্বিপাক;
 
(১২) ‘‘দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী’’ অর্থ খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় কর্তৃক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রণীত Standing Orders on Disaster (SOD) বা দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী;
 
(১৩) ‘‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’’ অর্থ দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস এবং দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি সাড়াদানের নিমিত্ত পদ্ধতিগত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও কার্যক্রম, যাহার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, যথাঃ-
 
(অ) দুর্যোগের বিপদাপন্নতা, পরিধি, মাত্রা ও সময় নির্ণয়;
 
(আ) ব্যবস্থাপনাসহ সকল প্রকার পরিকল্পনা গ্রহণ, সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন;
 
(ই) আগাম সতর্কতা, হুঁসিয়ারি, বিপদ বা মহাবিপদ সংকেত প্রদান ও প্রচারের ব্যবস্থা এবং জান-মাল নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর;
 
(ঈ) দুর্যোগ পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও চাহিদা নিরূপণ, মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন এবং অত্যাবশ্যকীয় সেবা, পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ; এবং
 
(উ) আনুষঙ্গিক অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা;
 
(১৪) ‘‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’’ অর্থ ধারা ২০ এর অধীন প্রণীত, ক্ষেত্রমত, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বা স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা;
 
(১৫) ‘‘পুনর্বাসন’’ অর্থ-
 
(অ) দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পূর্বাবস্থায় বা অধিকতর ভাল অবস্থায় ফিরাইয়া আনা;
 
(আ) ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানসিক, অর্থনৈতিক ও ভৌত কল্যাণ সাধনসহ তাহাদের সাংগঠনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকায় স্বাভাবিক জীবন, জীবিকা ও কর্মপরিবেশ ফিরাইয়া আনা;
 
(ই) ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরাইয়া আনিবার লক্ষ্যে, প্রয়োজনে, অন্যত্র স্থানান্তর করা;
 
(ঈ) ক্ষতিগ্রস্ত গবাদি পশু, মৎস্য, ইত্যাদির সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট খামার পূর্বাবস্থায় ফিরাইয়া আনা;
 
(উ) পুকুর, নদী-নালা, খাল, বিল, জলাধারে মৃত মানুষ, গবাদি পশু, মৎস্য, ইত্যাদি অপসারণের ত্বড়িৎ ব্যবস্থা করা এবং উহাদের বিষাক্ত পানি শোধনের ব্যবস্থা করাসহ মানুষ ও জীব-জন্তুর জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা;
 
(ঊ) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিষাক্ততা অপসারণের লক্ষ্যে বিষাক্ত জীবাণু ও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের ব্যবস্থাসহ উহা হইতে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
 
(১৬) ‘‘প্রস্তুতি’’ অর্থ সম্ভাব্য আপদের প্রভাব মোকাবিলায় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঝুঁকি পরিস্থিতি সম্পর্কে তাহাদের জ্ঞান ও ধারণার উন্নয়ন ঘটাইতে এবং সম্ভাব্য দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস, দুর্যোগ পরবর্তী অনুসন্ধান, উদ্ধার ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ;
 
(১৭) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
 
(১৮) ‘‘বিপদাপন্নতা (Vulnerability) ’’ অর্থ কোন জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত বিদ্যমান এমন অবস্থা যাহা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট আপদের প্রভাবে বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সাথে জনগোষ্ঠীর খাপ খাওয়াইয়া লইবার প্রত্যাশিত ক্ষমতাকে ভঙ্গুর, দুর্বল, অদক্ষ ও সীমাবদ্ধ করে;
 
(১৯) “ব্যক্তি” অর্থে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, কোন কোম্পানী, সমিতি ও সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(২০) “সশস্ত্র বাহিনী” অর্থ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনী;
 
(২১) ‘‘সাড়াদান’’ অর্থ আসন্ন দুর্যোগকালে, দুর্যোগকালীন সময়ে এবং দুর্যোগের অব্যবহিত পরে জীবন ও সম্পদ রক্ষায়, ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠির মৌলিক চাহিদা মিটাইতে বা অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদানে গৃহীত কার্যক্রম; এবং
 
(২২) ‘‘সেবা’’ অর্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য গঠিত কোন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদেয় আশ্রয়, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানীয় জল, পরিধেয় বস্ত্র, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট সেবা, অগ্নি নির্বাপন, নিরাপত্তা, অনুসন্ধান, উদ্ধার তৎপরতা এবং পুলিশ কর্তৃক প্রদেয় সেবাসহ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য সেবা।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs