প্রিন্ট ভিউ

শিশু আইন, ২০১৩

( ২০১৩ সনের ২৪ নং আইন )

ষষ্ঠ অধ্যায়

গ্রেফতার, তদন্ত, বিকল্প পন্থা, (Diversion) , এবং জামিন

গ্রেফতার, ইত্যাদি
৪৪। (১) এই ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ৯ (নয়) বৎসরের নিম্নের কোন শিশুকে কোন অবস্থাতেই গ্রেফতার করা বা, ক্ষেত্রমত, আটক রাখা যাইবে না।
 
 
(২) অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন শিশুকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ সংক্রান্ত কোন আইনের অধীন গ্রেফতার বা আটক করা যাইবে না।
 
 
(৩) শিশুকে গ্রেফতার করিবার পর গ্রেফতারকারী পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারের কারণ, স্থান, অভিযোগের বিষয়বস্ত্ত, ইত্যাদি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করিবেন এবং প্রাথমিকভাবে তাহার বয়স নির্ধারণ করিয়া নথিতে লিপিবদ্ধ করিবেন :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, গ্রেফতার করিবার পর কোন শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো যাইবে না।
 
 
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন বয়স নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তা জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা, উক্ত সনদের অবর্তমানে স্কুল সার্টিফিকেট বা স্কুলে ভর্তির সময় প্রদত্ত তারিখসহ প্রাসঙ্গিক দলিলাদি উদ্‌ঘাটনপূর্বক যাচাই-বাছাই করিয়া তাহার বয়স লিপিবদ্ধ করিবেন:
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তার নিকট প্রতীয়মান হয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি একজন শিশু কিন্তু সম্ভাব্য সকল চেষ্টা করিয়াও দালিলিক প্রমাণ দ্বারা তাহা নিশ্চিত হওয়া যায় না, সেইক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে এই আইনের বিধান অনুযায়ী শিশু হিসাবে গণ্য করিতে হইবে।
 
 
(৫) সংশ্লিষ্ট থানায় শিশুর জন্য উপযোগী কোন নিরাপদ স্থান না থাকিলে গ্রেফতারের পর হইতে আদালতে হাজির না করা সময় পর্যন্ত শিশুকে নিরাপদ স্থানে আটক রাখিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, নিরাপদ স্থানে আটক রাখিবার ক্ষেত্রে শিশুকে প্রাপ্তবয়স্ক বা ইতোমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন এইরূপ কোন শিশু বা অপরাধী এবং আইনের সংস্পর্শে আসা কোন শিশুর সহিত একত্রে রাখা যাইবে না।
 
 
মাতা-পিতা ও প্রবেশন কর্মকর্তাকে অবহিতকরণ
৪৫। (১) কোন শিশুকে গ্রেফতারের পর গ্রেফতারকারী কর্মকর্তা কর্তৃক থানায় আনয়ন করিলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত বিধানাবলীকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে-
 
 
(ক) শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্যকে;
 
 
(খ) প্রবেশন কর্মকর্তাকে; এবং
 
 
(গ) প্রয়োজনে, নিকটস্থ বোর্ডকে;-
 
 
উক্ত গ্রেফতার সম্পর্কে অবহিত করিবেন।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান অনুযায়ী শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং প্রবেশন কর্মকর্তা বা ক্ষেত্রমত, বোর্ডকে অবহিত করা সম্ভব না হইলে সংশ্লিষ্ট শিশুকে আদালতে হাজির করিবার প্রথম দিবসে উক্তরূপ বিধান অনুসরণ না করিবার কারণ সংবলিত একটি প্রতিবেদন শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক আদালতে দাখিল করিতে হইবে।
 
 
তদন্ত
৪৬। এই আইন বা ইহার অধীন প্রণীত বিধিতে সুস্পষ্ট ও ভিন্নরূপ কোন বিধান না থাকিলে, এই আইনের অধীন সকল তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে, ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলী, যতদূর সম্ভব, প্রযোজ্য ও অনুসরণ করিতে হইবে।
জবানবন্দী, সতর্কীকরণ ও মুক্তি
৪৭। (১) শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মীর উপস্থিতিতে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুর জবানবন্দী গ্রহণ করিবেন।
 
 
(২) শিশুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রকৃতি ও শিশুর মানসিক ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় লইয়া শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা-
 
 
(ক) সংশ্লিষ্ট শিশু, শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মীর উপস্থিতিতে শিশুকে লিখিত বা মৌখিক সতর্কীকরণের পর মুক্তি প্রদান করিতে পারিবেন, যাহা শিশুর বিরুদ্ধে রেকর্ড হিসাবে গণ্য হইবে না; বা
 
 
(খ) বিকল্প পন্থায় প্রেরণ করিতে পারিবেন।
 
 
বিকল্প পন্থা (diversion)
৪৮। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুকে গ্রেফতার বা আটকের পর হইতে বিচার কার্যক্রমের যেকোন পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রমের পরিবর্তে, শিশুর পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক, নৃতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক ও শিক্ষাগত পটভূমি বিবেচনাপূর্বক, বিরোধীয় বিষয় মীমাংসাসহ তাহার সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকল্পে বিকল্প পন্থা (diversion) গ্রহণ করা যাইবে।
 
 
(২) ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিশুর গ্রেফতারের পর হইতে বিচার কার্যক্রমের যেকোন পর্যায়ে, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, শিশু-আদালত আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়ার পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির নিমিত্ত বিকল্প পন্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করিতে পারিবে।
 
 
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা হইলে সংশ্লিষ্ট শিশু, তাহার মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বিকল্প পন্থার শর্ত প্রতিপালন করিতেছে কি না প্রবেশন কর্মকর্তা তাহা লক্ষ্য রাখিবেন এবং বিষয়টি, সময় সময়, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, শিশু-আদালতকে অবহিত করিবেন।
 
 
(৪) শিশু, তাহার মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বিকল্প পন্থার কোন শর্ত ভঙ্গ করিলে প্রবেশন কর্মকর্তা বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে লিখিত আকারে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা বা, ক্ষেত্রমত, শিশু-আদালতকে অবহিত করিবেন।
 
 
(৫) বিকল্প পন্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
 
 
(৬) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অধিদপ্তর বিকল্প পন্থা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ যুগোপযোগী ও বাস্তবায়নযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে।
 
 
পারিবারিক সম্মেলন
৪৯। (১) ধারা ৪৮ এর অধীন বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা হইলে প্রবেশন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিরোধ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারিবারিক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন।
 
 
(২) পারিবারিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীগণ সমঝোতার ভিত্তিতে সম্মেলনের কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ ও অনুসরণ করিয়া শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিতকল্পে পরিকল্পনা গ্রহণ করিতে পারিবেন যাহা শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করিতে হইবে।
 
 
(৩) কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কোন শিশুকে বিকল্প পন্থায় প্রেরণের সময় শিশু-আদালত বা ক্ষেত্রমত, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা পারিবারিক সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং প্রবেশন কর্মকর্তা সেই মোতাবেক পারিবারিক সম্মেলনের আয়োজন করিবেন।
 
 
(৪) শিশু, বা তাহার মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য পারিবারিক সম্মেলনে গৃহীত কোন সিদ্ধান্তের শর্ত ভঙ্গ বা প্রতিপালন করিতে ব্যর্থ হইলে প্রবেশন কর্মকর্তা উহা লিখিতভাবে শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে অবহিত করিবেন।
 
 
(৫) পারিবারিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে ব্যর্থ হইলে সম্মেলনটি বাতিল হইয়া যাইবে এবং ভিন্নরূপ একটি বিকল্প পন্থা গ্রহণের নিমিত্ত প্রবেশন কর্মকর্তা বিষয়টি শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার নিকট ফেরত পাঠাইবেন।
 
 
(৬) পারিবারিক সম্মেলনের কার্যক্রমসমূহ গোপনীয় বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং উক্ত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কোন ব্যক্তির কোন বক্তব্য পরবর্তীতে কোন আদালতের বিচার কার্যক্রমে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না।
 
 
বিকল্প পন্থার মেয়াদ
৫০। (১) এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি অনুযায়ী শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে বিকল্প পন্থা গ্রহণ ও সমাপ্ত করিতে হইবে।
 
 
(২) অপরাধ সংঘটনকারী শিশু বিকল্প পন্থা অবলম্বনে ইতিবাচক সাড়া প্রদান করিলে, বিকল্প পন্থা নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বেই সমাপ্ত করা যাইবে।
 
 
বিকল্প পন্থার শর্ত ভঙ্গ বা বিকল্প পন্থার আদেশ পালনে ব্যর্থতা
৫১। এই আইনের বিধান অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তার প্রতিবেদন প্রাপ্ত হইয়া বা অন্য কোনভাবে যদি শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তার নিকট ইহা প্রতীয়মান হয় যে, শিশু, শিশুর মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বিকল্প পন্থার শর্ত ভঙ্গ করিয়াছেন বা বিকল্প পন্থা সংক্রান্ত কোন আদেশ প্রতিপালনে ব্যর্থ হইয়াছেন, তাহা হইলে বিষয়টি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে যাচাইপূর্বক শিশু-আদালত বা, ক্ষেত্রমত শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা-
 
 
(ক) পরিবর্তিত শর্তে একই ধরনের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে;
 
 
(খ) শিশুটিকে গ্রেফতার করিবার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিতে পারিবে;
 
 
(গ) শিশুটিকে শিশু-আদালতে বা থানায় হাজির হইবার জন্য লিখিত নোটিশ প্রদান করিতে পারিবে;
 
 
(ঘ) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর নিকট সংশ্লিষ্ট শিশুর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া আরম্ভ করিবার জন্য নথি প্রেরণ করিতে পারিবে;
 
 
(ঙ) শিশুটিকে প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠানে প্রেরণের জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে; অথবা
 
 
(চ) এই আইনের অধীন অন্য কোন আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
 
 
জামিন, ইত্যাদি
৫২। (১) ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বা আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন বা এই আইনের অন্য কোন বিধানে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন শিশুকে গ্রেফতার করিবার পর এই আইনের অধীন মুক্তি প্রদান বা বিকল্প পন্থায় প্রেরণ করা অথবা তাৎক্ষণিকভাবে আদালতে হাজির করা সম্ভবপর না হইলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা শিশুটিকে, ক্ষেত্রমত, তাহার মাতা-পিতা এবং তাহাদের উভয়ের অবর্তমানে তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা, ক্ষেত্রমত, বর্ধিত পরিবারের সদস্য বা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে শর্ত ও জামানত সাপেক্ষে, অথবা, শর্ত ও জামানত ব্যতীত জামিনে মুক্তি প্রদান করিতে পারিবেন।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন শিশুকে জামিনে মুক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধ জামিনযোগ্য বা জামিন অযোগ্য কি না তাহা শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা বিবেচনায় লইবেন না।
 
 
(৩) উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধের প্রকৃতি গুরুতর বা ঘৃণ্য প্রকৃতির হইলে বা জামিন প্রদান করা হইলে উহা শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের পরিপন্থী হইলে বা জামিন প্রদান করা হইলে সংশ্লিষ্ট শিশু কোন কুখ্যাত অপরাধীর সাহচর্য লাভ করিতে পারে বা নৈতিক বিপদের সম্মুখীন হইতে পারে বা জামিন প্রদান করা হইলে ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হইবার আশঙ্কা থাকিলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট শিশুকে জামিন বা মুক্তি প্রদান করিবেন না।
 
 
(৪) গ্রেফতারকৃত শিশুকে উপ-ধারা (৩) এর অধীন জামিনে মুক্তি প্রদান করা না হইলে শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, গ্রেফতারের পর আদালতে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ভ্রমণ সময় ব্যতীত, ২৪ (চবিবশ) ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিশুকে নিকটস্থ শিশু-আদালতে হাজির করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
 
 
(৫) থানা হইতে জামিনপ্রাপ্ত হয় নাই এমন কোন শিশুকে শিশু-আদালতে উপস্থাপন করা হইলে শিশু-আদালত তাহাকে জামিন প্রদান করিবে বা নিরাপদ স্থানে বা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখিবার আদেশ প্রদান করিবে।
 
 
আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু সম্পর্কে অবহিত করিবার দায়িত্ব
৫৩। কোন ব্যক্তি যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করেন যে, কোন শিশু অপরাধমূলক ঘটনার শিকার বা কোন অপরাধের সাক্ষী তাহা হইলে তিনি উহা শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মীকে অবহিত করিবেন এবং উক্ত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা, প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজকর্মী উক্ত শিশুর সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা ও সুরক্ষা
৫৪। (১) 1[ ***]আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, বয়স, লিঙ্গ এবং অক্ষমতা ও পরিপক্কতার বিষয়সমূহ বিবেচনায় লইতে হইবে।
 
(২) শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক বিশেষ শিশুবান্ধব পরিবেশে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করিতে হইবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে উক্ত শিশুর মাতা-পিতা অথবা তাহাদের অবর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক অভিভাবক বা কর্তৃপক্ষ অথবা আইনানুগ বা বৈধ অভিভাবক বা বর্ধিত পরিবারের সদস্য এবং প্রবেশন কর্মকর্তার, যাহাদের উপস্থিতিতে শিশু সাক্ষাৎকার প্রদানে রাজি থাকে বা স্বাচ্ছন্দবোধ করে, উপস্থিতিতে একজন মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করিতে হইবে।
 
(৩) আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করিয়া শিশুর সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করিবার জন্য শিশু-আদালত নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করিবার নিমিত্ত আদেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা :
 
(ক) 2[ ***] আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর সকল তথ্য গোপন রাখা এবং এমন কোন তথ্য প্রকাশ না করা, যাহার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিশুটিকে শনাক্ত করা যায়;
 
(খ) সাক্ষ্য প্রদানকারী শিশুর ছবি বা দৈহিক বর্ণনা গোপন করিবার উদ্যোগ গ্রহণ অথবা শিশুর ক্ষতি প্রতিরোধ করিবার জন্য, প্রাপ্যতা সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে শিশুর সাক্ষ্য গ্রহণ করা:-
 
(অ) পর্দার আড়ালে;
 
(আ) শুনানির পূর্বে শিশু-সাক্ষীর ভিডিওকৃত সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে, তবে উক্ত ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গ্রহণকালে আসামীপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট শিশুকে জেরা করিবার সুযোগ প্রদান করিতে হইবে;
 
(ই) একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ও উপযু্ক্ত মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে;
 
(ঈ) দ্বারবদ্ধ (Camera Trial) অধিবেশন পরিচালনার মাধ্যমে; বা
 
(উ) ভিডিও লিংকেজ পদ্ধতি চালু হইলে উক্ত পদ্ধতিতে;
 
(গ) আসামীর উপস্থিতিতে শিশু সাক্ষ্য প্রদানে অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে বা যদি এইরূপ প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে শিশুটি সত্য কথা বলিতে বাধাগ্রস্ত হইতে পারে, তাহা হইলে আসামীকে সাময়িকভাবে পুলিশের হেফাজতে আদালত পরিত্যাগের আদেশ প্রদান করা; তবে উক্ত ক্ষেত্রে আসামী পক্ষের আইনজীবীকে আদালত কক্ষে উপস্থিত থাকিতে এবং শিশুকে প্রশ্ন করিবার সুযোগ প্রদান করিতে হইবে;
 
(ঘ) শিশুর সাক্ষ্য গ্রহণের সময় বিরতির সুযোগ প্রদান করা;
 
(ঙ) শিশুর বয়স ও পরিপক্কতার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ দিন ও তারিখে শুনানির সময়সূচি নির্ধারণ করা; এবং
 
(চ) মামলার সাক্ষী বা ভিকটিম হিসাবে সাক্ষ্য প্রদানকালে, সাক্ষ্য প্রদানের পূর্বে ও পরে শিশুকে তাহার অভিভাবকসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করা; বা
 
(ছ) শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ এবং আসামীর অধিকার বিবেচনায় আনিয়া আদালত যেইরূপ বিবেচনা করিবে, সেইরূপ অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা।
 
(৪) উপ-ধারা (৩) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনা করিয়া শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার জন্য শিশু-আদালত পদ্ধতি নির্ধারণপূর্বক বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ মীমাংসার জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

  • 1
    ‘‘বিচার প্রক্রিয়ার সকল পর্যায়ে’’ শব্দগুলি শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৪ নং আইন) এর ১৭(ক) ধারাবলে বিলুপ্ত।
  • 2
    ‘‘বিচার প্রক্রিয়ার সহিত সংশ্লিষ্ট’’ শব্দগুলি শিশু (সংশোধন) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫৪ নং আইন) এর ১৭(খ) ধারাবলে বিলুপ্ত।
Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs