প্রিন্ট ভিউ

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪

( ২০১৪ সনের ১৪ নং আইন )

দ্বিতীয় অধ্যায়

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ, শিক্ষার আওতা ও পরিধি, ইত্যাদি

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ ও বয়স-সীমা
৪। (১) প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
 
(ক) উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা; এবং
 
 
(খ) উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা।
 
 
(২) উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার বয়সসীমা হইবে ৮(আট) হইতে ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর বয়সের শিশু, যাহারা কখনও স্কুলে যায় নাই বা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিবার পূর্বেই স্কুল হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে।
 
 
(৩) উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার বয়সসীমা হইবে ১৫(পনের) ও তদূর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ, যাহারা কখনও স্কুলে যায় নাই বা প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে বা নব্য-সাক্ষর হইয়াছে বা চাহিদাভিত্তিক জীবন-দক্ষতা ও জীবিকায়ন-দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখিতে চায়।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
৫। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা :-
 
 
(ক) সাক্ষরতা, মৌলিক শিক্ষা বা অষ্টম শ্রেণী সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রি-ভোকেশনাল-২ স্তর পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষা;
 
 
(খ) অর্জিত সাক্ষরতা, জীবিকায়ন, দক্ষতা ও মৌলিক শিক্ষাকে শাণিত, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন;
 
 
(গ) জীবন ও জীবিকায়ন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম;
 
 
(ঘ) সকল ধরনের অব্যাহত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ধারায় বৃত্তিমূলক, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা প্রদান;
 
 
(ঙ) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম;
 
 
(চ) তথ্য প্রযুক্তি সাক্ষরতা;
 
 
(ছ) কৃষি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশু পালন, কুটির শিল্প, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সড়ক ব্যবহার/সড়ক নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, এইচআইভি-এইডস বা অন্য কোন জীবনঘনিষ্ট বিষয়,
 
 
(জ) প্রতিবন্ধিতা ও অটিজম।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি
৬। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
 
(ক) যে সকল শিশু বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত হইয়াছে তাহাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সমতুল্য মানের মৌলিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(খ) কিশোর-কিশোরী, যাহারা বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নাই কিংবা বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে, তাহাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার সমতুল্য মানের মৌলিক শিক্ষার দ্বিতীয় বা বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(গ) শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত সকল বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য সাক্ষরতা এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-২ স্তর পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষার মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষতার ব্যবস্থা করা এবং অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(ঘ) আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক কারণে অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, হাওড়, চর, উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, চা-বাগান, বা এইরূপ কোন অনগ্রসর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী;
 
 
(ঙ) দুঃস্থ জনগোষ্ঠী (যেমন: পথশিশু, বস্তিবাসী, বেকার যুব নারী-পুরুষ, স্বল্প আয়ের শ্রমিক ও কর্মজীবী নারী-পুরুষ, ইত্যাদি);
 
 
(চ) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও যুব নারী-পুরুষদের জন্য বিশেষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান
৭। (১) বোর্ড কর্তৃক আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিপরীতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীমান নির্ধারিত হইবে।
 
 
(২) বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনাকারী সকল ব্যক্তি, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত পাঠক্রম এবং বিষয়বস্তু অনুসরণ করিতে হইবে।
 
 
(৩) বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনাকারী সকল ব্যক্তি, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণধারী শিক্ষক নিয়োগ করিতে হইবে।
 
 
(৪) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাবোর্ড সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কোর্স সমাপনকারীদের যোগ্যতা, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, যাচাইয়ের পর সনদ প্রদান করিবে।
 
 
(৫) কোন ব্যক্তি তাহার অতীত শিখনের স্বীকৃতি পাইতে চাহিলে তাহাকে সমতুল্যমান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় শিখন মান যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে হইবে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে।
 
 
(৬) উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রাপ্ত সনদের ভিত্তিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কোন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে এবং অনুরূপভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সনদপ্রাপ্ত কোন শিক্ষার্থী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যম
৮। (১) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠদানের মাধ্যম হইবে বাংলা:
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাহাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিজস্ব ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করা যাইবে।
 
 
(২) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও যুব নারী-পুরুষকে বাংলা ইশারা ভাষায় এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে পাঠদান করা যাইবে।
 
 
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিক্ষার্থীকে প্রয়োজন অনুযায়ী ইংরেজীসহ নির্ধারিত অন্যান্য ভাষায়ও পাঠদান করা যাইবে।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs