প্রিন্ট ভিউ

স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭

( ২০১৭ সনের ২১ নং আইন )

তৃতীয় অধ্যায়

হুকুম দখল

স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল
২০। (১) জেলা প্রশাসক, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, লিখিত আদেশ দ্বারা, জনপ্রয়োজন ও জনস্বার্থে, যে কোনো স্থাবর সম্পত্তি সাময়িকভাবে হুকুমদখল করিতে পারিবেন:
 
তবে শর্ত থাকে যে, যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণে হুকুমদখলের পূর্বে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা সম্ভবপর না হইলে, ভূতাপেক্ষভাবে সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করা যাইবে :
 
আরও শর্ত থাকে যে, কেবল পরিবহন বা যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত, মালিক বা তাহার পরিবারের প্রকৃত আবাসস্থল, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, হাসপাতাল, গণগ্রন্থাগার, কবরস্থান বা শ্মশানের স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল করা যাইবে না।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো আদেশ জারি করা হইলে, জেলা প্রশাসক
 
(ক) পরিবহন বা যোগাযোগ ব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণ কাজে জরুরি প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আদেশ জারির তারিখ হইতে যে কোনো সময়, এবং
 
(খ) অন্যান্য ক্ষেত্রে আদেশ জারির তারিখের পর ৩০(ত্রিশ) কার্যদিবস অতিক্রান্ত হইবার পর,
 
হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তির দখল গ্রহণ করিতে পারিবেন এবং যে উদ্দেশ্যে হুকুমদখল করা হইয়াছে সেই উদ্দেশ্যে উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন।
 
(৩) সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত, দখল গ্রহণের তারিখ হইতে ২(দুই) বৎসর অতিক্রান্ত হইবার পর, কোনো হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি হুকুম দখলের আওতায় রাখা যাইবে না।
আদেশ সংশোধন
 
২১। সরকার স্ব-উদ্যোগে অথবা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে ধারা ২০ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত কোনো আদেশ সংশোধন করিতে পারিবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, আদেশ জারির তারিখ হইতে ৩০(ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে আবেদন করা না হইলে উহা বিবেচনা করা হইবে না।
জেলা প্রশাসক কর্তৃক রোয়েদাদ প্রস্তুত
২২। (১) কোনো স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল করা হইলে এই ধারায় বর্ণিত পদ্ধতি এবং নীতি অনুসারে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করিয়া উহা প্রদান করিতে হইবে।
 
(২) জেলা প্রশাসক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে তাহার স্বার্থ এবং ক্ষতিপূরণের দাবির পরিমাণ ও বিবরণ সম্পর্কে শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া এবং উপ-ধারা (৫) অনুযায়ী-
 
(ক) নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ, এবং
 
(খ) উক্ত সম্পত্তিতে জ্ঞাত বা বিশ্বাসযোগ্য সকল স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতিপূরণের অংশ অথবা দাবি সংবলিত তথ্য -
 
সম্পর্কে একটি রোয়েদাদ প্রস্তুত করিবেন।
 
(৩) জেলা প্রশাসক কর্তৃক উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রস্তুতকৃত রোয়েদাদ, এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধির বিধানাবলি সাপেক্ষে, চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
 
(৪) জেলা প্রশাসক উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রস্তুতকৃত রোয়েদাদ সম্পর্কে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণকে অবিলম্বে নোটিশ প্রদান করিবেন।
 
(৫) হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তির প্রদেয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ বিবেচিত হইবে, যথা:―
 
(ক) সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হুকুমদখলকালীন সময়ে দখল বা ব্যবহারজনিত কারণে ভাড়া বা লিজ বাবদ প্রাপ্য অর্থের আবর্তক ক্ষতিপূরণ; এবং
 
(খ) নিম্নবর্ণিত কারণে প্রদেয় যে কোনো পরিমাণ অর্থ, যথা:―
 
(অ) হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি খালি করা বাবদ যাবতীয় ব্যয়;
 
(আ) হুকুমদখল মুক্ত হইবার পর পুনরায় দখল গ্রহণ বাবদ যাবতীয় ব্যয় ; এবং
 
(ই) স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতি ব্যতীত স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখলের পূর্বাবস্থায় আনয়নে সম্ভাব্য ব্যয়সহ হুকুমদখল অবস্থায় সংঘটিত যে কোনো ক্ষতি।
 
(৬) কোনো স্থাবর সম্পত্তি ২ (দুই) বৎসরের অধিক সময় হুকুমদখল করিয়া রাখিবার প্রয়োজন হইলে জেলা প্রশাসক, উপ-ধারা (৫) এর দফা (ক) এর বিধান অনুযায়ী প্রদেয়, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত রোয়েদাদ সংশোধন করিবেন।
ক্ষতিপূরণ প্রদান
২৩। (১) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত কোন কারণ উদ্ভব না হইলে, জেলা প্রশাসক ধারা ২২ এর অধীন ক্ষতিপূরণের জন্য ধার্যকৃত রোয়েদাদ অনুযায়ী প্রাপ্য অর্থ উহার দাবিদারকে প্রদান করিবেন।
 
(২) ক্ষতিপূরণের দাবিদার ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করিতে অসম্মত হইলে অথবা ক্ষতিপূরণের কোনো দাবিদার না থাকিলে অথবা ক্ষতিপূরণ দাবিদারের মালিকানা বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকিলে অথবা ক্ষতিপূরণের অংশ নির্ধারণে কোনো আপত্তি থাকিলে, জেলা প্রশাসক ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাবে জমা রাখিবেন যাহা, কোনো পক্ষের আরবিট্রেটর কর্তৃক নির্ধারিত দাবিকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখলের ক্ষেত্রে পরিশোধিত বলিয়া গণ্য হইবে:
 
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে গৃহীত হইলে তিনি, ক্ষতিপূরণের পরিমাণের বিষয়ে আপত্তিসহ, উক্ত অর্থ গ্রহণ করিতে পারিবেন:
 
আরও শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তি আপত্তি ব্যতিরেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ গ্রহণ করিলে তিনি ধারা ৩০ এর অধীন দরখাস্ত করিবার জন্য যোগ্য হইবেন না।
 
(৩) এই অধ্যায়ের অধীন ঘোষিত রোয়েদাদ অনুযায়ী সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিপূরণ গ্রহণকারী ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তির আইনানুগভাবে বৈধ দাবিদারকে ক্ষতিপূরণের সংশ্লিষ্ট অর্থ ফেরত প্রদানে বাধ্য থাকিবেন এবং জেলা প্রাশাসক তাহার নিকট হইতে উক্ত অর্থ আদায় করিয়া বৈধ দাবিদারকে প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।
হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তির বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হইতে অর্থ আদায়
২৪। জেলা প্রশাসক, কোনো ব্যক্তির অনুকূলে হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তির বরাদ্দ প্রদান ও দখল হস্তান্তর করিবার পর, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, তাহার নিকট হইতে ধার্যকৃত অর্থ আদায় করিবেন।
হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ
২৫। (১) জেলা প্রশাসক, হুকুমদখলকালীন সময়ে, হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকিবেন।
 
(২) বিনষ্ট হইতে রক্ষার জন্য হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি সংস্কারের প্রয়োজন মর্মে সন্তুষ্ট হইলে জেলা প্রশাসক, স্বয়ং মালিককে তাহার স্থাবর সম্পত্তি সংস্কারের জন্য সুযোগ প্রদান করিবার পর, ক্ষতিপূরণের অর্থের অনূর্ধ্ব এক ষষ্ঠাংশ অর্থ ব্যয়ে উহার সংস্কার করিবেন এবং ব্যয়িত অর্থ ক্ষতিপূরণের অর্থের সহিত সমন্বয় করিবেন।
হুকুমদখল অবমুক্তকরণ
২৬। (১) কোনো হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল মুক্ত করা হইলে জেলা প্রশাসক, যাহার নিকট হইতে উক্ত সম্পত্তি হুকুমদখল করা হইয়াছিল তাহাকে বা তাহার উত্তরাধিকারীকে অথবা উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য তদ্বিবেচনায় যোগ্য কোনো ব্যক্তির নিকট ফেরত প্রদান করিবেন।
 
(২) হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন দখল হস্তান্তর করা হইলে জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তি হইতে সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত হইবেন, তবে উক্তরূপ দখল হস্তান্তরের কারণে, উক্ত সম্পত্তিতে কোনো ব্যক্তির কোনো আইনগত অধিকার থাকিলে, অথবা যাহার অনুকূলে স্থাবর সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করা হইয়াছে তাহার নিকট কোনো বৈধ দাবি থাকিলে, উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহার উক্ত দাবি প্রতিষ্ঠার অধিকার ক্ষুণ্ণ হইবে না।
 
(৩) হুকুমদখলকৃত স্থাবর সম্পত্তি কোনো ব্যক্তির অনুকূলে ফেরত প্রদানের জন্য অবমুক্ত করিবার পর, উক্ত সম্পত্তির দখল গ্রহণ করিবার জন্য জেলা প্রশাসক কর্তৃক লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে উক্ত সম্পত্তি দখল গ্রহণ না করিলে অথবা দখল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিলে, জেলা প্রশাসকের লিখিত আদেশে বর্ণিত সময় ও তারিখের পর সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি উক্ত ব্যক্তির অনুকূলে হস্তান্তরিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
 
(৪) যাহার অনুকূলে হুকুমদখলমুক্ত স্থাবর সম্পত্তির দখল হস্তান্তরিত হইবে তাহাকে পাওয়া না গেলে অথবা তাহার কোনো প্রতিনিধি বা তাহার পক্ষে দখল গ্রহণ করিবার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি উপস্থিত না থাকিলে, জেলা প্রশাসক উক্ত সম্পত্তির প্রকাশ্য কোনো স্থানে ‘‘স্থাবর সম্পত্তিটি হুকুমদখল মুক্ত হইয়াছে’’ মর্মে বিজ্ঞপ্তি লটকাইবেন এবং, উক্ত বিজ্ঞপ্তির ৯০ (নববই) কার্যদিবসের মধ্যে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তদ্‌মর্মে একটি নোটিশ প্রদান করিবেন।
 
(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন সরকারি গেজেটে কোনো নোটিশ প্রকাশিত হইলে, উক্ত নোটিশ প্রকাশের তারিখ ও সময় হইতে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি হুকুমদখলের আওতামুক্ত হইবে এবং আইনত দখল পাইবার যোগ্য ব্যক্তিকে দখল হস্তান্তর করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত তারিখের পর হইতে উক্ত সম্পত্তির বিপরীতে কোনো ক্ষতিপূরণ বা অন্য কোনো দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কোনো দায় থাকিবে না।
বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উচ্ছেদ
২৭। (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যে উদ্দেশ্যে কোন স্থাবর সম্পত্তি হুকুমদখল করা হইবে, উক্ত উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে উক্ত সম্পত্তি ব্যবহৃত হইলে অথবা বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তি বাবদ প্রদেয় অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হইলে অথবা ধারা ২৬ অনুযায়ী অবমুক্তির কারণ উদ্ভব হইলে, জেলা প্রশাসক, যে কোনো সময় লিখিত আদেশ দ্বারা, উক্ত আদেশে উল্লিখিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে উক্ত সম্পত্তির দখল পরিত্যাগের জন্য উক্ত বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা দখলদারকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত জেলা প্রশাসকের আদেশ নির্ধারিত সময়ে প্রতিপালন করা না হইলে অথবা অমান্য করা হইলে, তিনি সংশ্লিষ্ট বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা দখলদারকে উচ্ছেদ করিতে পারিবেন এবং এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজন অনুসারে বল (force) প্রয়োগ করিতে পারিবেন।
ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় প্রযোজ্য নয়
২৮। এই অধ্যায়ের কোনো কিছুই ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোনো স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs