প্রিন্ট ভিউ

রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন, ২০১৮

( ২০১৮ সনের ২০ নং আইন )

ষষ্ঠ অধ্যায়

জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ

অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
৩৬। (১) শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা রক্ষা অথবা এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীন কোনো অপরাধ সম্পর্কিত কোনো বিধান কার্যকর করিবার জন্য কোনো ব্যক্তি পুলিশ কমিশনারকে কোনো স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করিবার জন্য অনুরোধ জানাইয়া দরখাস্ত করিলে, পুলিশ কমিশনার উক্ত স্থানে অতিরিক্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করিতে পারিবেন।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন অতিরিক্ত পুলিশ আবেদনকারীর ব্যয়ে মোতায়েন করা হইবে, কিন্তু তাহারা পুলিশ কমিশনারের নির্দেশের অধীন এবং তৎকর্তৃক নির্ধারিত সময়ের জন্য মোতায়েন থাকিবেন, তবে আবেদনকারীর লিখিত অনুরোধে পুলিশ কমিশনার যে কোনো সময় উক্ত অতিরিক্ত পুলিশ প্রত্যাহার করিতে পারিবেন।
কতিপয় স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
৩৭। পুলিশ কমিশনার যদি মনে করে যে, কোনো সরকারি কাজে বা কোনো শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত ব্যক্তিদের আচরণের কারণে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত হইয়াছে, তাহা হইলে সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করিতে পারিবেন এবং তিনি যতদিন প্রয়োজন মনে করিবেন, ততদিনের জন্য উক্ত স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখিতে পারিবেন।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কার্য সম্পাদনের প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট সরকারি কাজ বা শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে উক্ত অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের ব্যয় বহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ নির্দেশে উক্ত ব্যয়ের পরিমানও নির্ধারণ করিবেন, যাহা উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি পরিশোধ করিবেন।
 
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত পুলিশ কমিশনারের নির্দেশের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরকারের নিকট আপিল করিতে পারিবেন এবং তৎসম্পর্কে সরকারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।
দুষ্কৃতিকারী দল বিতাড়ন
৩৮। পুলিশ কমিশনারের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোনো স্থানে কোনো একদল ব্যক্তির বা দুষ্কৃতিকারীদলের গতিবিধি বা তৎপরতা বিপজ্জনক বা আশংকাজনক অথবা তাহারা বেআইনি কাজে লিপ্ত রহিয়াছে বলিয়া সন্দেহের কারণ রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি লিখিত নির্দেশ জারি করিয়া অনুরূপ দলের যে কোনো সদস্যকে বা সম্পূর্ণ দলকে শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণ করিবার জন্য আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন অথবা তাহাদিগকে মহানগরী এলাকা হইতে বহিষ্কার করিতে বা, ক্ষেত্রমত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাহাদের প্রত্যাবর্তন নিষেধ করিতে পারিবেন।
অপরাধ করিতে উদ্যোগী ব্যক্তিদের অপসারণ
৩৯। পুলিশ কমিশনারের নিকট যদি-
 
(ক) প্রতীয়মান হয় যে, কোনো ব্যক্তির গতিবিধি অপর কোনো ব্যক্তির বা কোনো সম্পত্তির ক্ষতি বা বিপদ সৃষ্টি করিতেছে বা করিতে পারে; অথবা
 
(খ) বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, কোনো ব্যক্তি হিংসাত্নক পন্থায় অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত রহিয়াছে বা লিপ্ত হইবার উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে অথবা Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860) এর Chapter XII, বা উহার অধীন শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ সংঘটনে উদ্যোগী হইয়াছে-
 
তাহা হইলে পুলিশ কমিশনার, লিখিত আদেশ জারি করিয়া, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থি তৎপরতা হইতে বিরত হইবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন অথবা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য মহানগরী এলাকা হইতে বহিষ্কার করিতে পারিবেন।
কতিপয় অপরাধের জন্য দণ্ড ভোগকারী ব্যক্তির অপসারণ
৪০। কোনো ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত যে কোনো অপরাধে ইতোপূর্বে দণ্ড ভোগ করিয়া থাকিলে এবং পুলিশ কমিশনারের যদি বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, উক্ত ব্যক্তি পুনরায় অনুরূপ অপরাধ করিতে পারে, তাহা হইলে তিনি আদেশ জারি করিয়া অনুরূপ ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য মহানগরী এলাকা পরিত্যাগ করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন, যথা :-
 
(ক) Penal Code, 1860 (Act XLV of 1860) এর Chapter XII, XVI বা XVI এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ;
 
(খ) মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৩ নং আইন) এর ধারা ১১, ১২ ও ১৩ এর অধীন অপরাধ;
 
(গ) Customs Act, 1969 (Act IV of 1969) এর অধীন অপরাধ, এবং
 
(ঘ) এই আইনের ধারা ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৮২, ৮৭ বা ৮৯ এর অধীন তিনবার বা ততোধিক বার অপরাধ।
ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন প্রদত্ত নির্দেশের মেয়াদ
৪১। ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন কোনো ব্যক্তিকে মহানগরী এলাকার বাহিরে চলিয়া যাইবার নির্দেশ প্রদান করা হইলে, উক্ত নির্দেশ অনধিক ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন আদেশ জারির পূর্বে কৈফিয়তদানের সুযোগ প্রদান
৪২। (১) কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন আদেশ জারির পূর্বে পুলিশ কমিশনার উক্ত ব্যক্তিকে তাহার বিরুদ্ধে আনীত প্রাথমিক অভিযোগ এবং তজ্জন্য তাহার উপর প্রস্তাবিত আদেশ জারির বিষয়টি তাহাকে লিখিতভাবে অবহিত করিবেন এবং এতদ্‌সম্পর্কে তাহাকে কৈফিয়ত প্রদানের জন্য যুক্তিযুক্ত সুযোগ প্রদান করিবেন।
 
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তি যদি কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দরখাস্ত করেন, তাহা হইলে পুলিশ কমিশনার অনুরূপ সাক্ষ্য গ্রহণ করিবেন, যদি না তিনি মনে করেন যে, কেবল বিরক্ত ও বিলম্ব করিবার উদ্দেশ্যেই অনুরূপ দরখাস্ত করা হইয়াছে।
 
(৩) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তির তাহার আইনজীবীর মাধ্যমে পুলিশ কমিশনার সমীপে হাজির হইয়া বক্তব্য পেশের ও তৎকর্তৃক উপস্থাপিত সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদানের অধিকার থাকিবে।
 
(৪) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে পুলিশ কমিশনার তদন্ত চলাকালে অনুরূপ ব্যক্তিকে তৎসমীপে উপস্থিত হইয়া মুচলেকা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন এবং অনুরূপ মুচলেকা জামানতসহ বা জামানত ব্যতীত প্রদান করা যাইবে।
 
(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন মুচলেকা প্রদানে অনুরূপ ব্যক্তি ব্যর্থ হইলে অথবা তদন্ত চলাকালে পুলিশ কমিশনার সমীপে উপস্থিত হইতে ব্যর্থ হইলে, পুলিশ কমিশনার যথারীতি তদন্ত করিয়া তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত আদেশ জারি করিবেন।
আপিল
৪৩। (১) ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন আদেশ জারির ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে তিনি অনুরূপ আদেশ জারির তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সরকারের নিকট আপিল করিতে পারিবেন।
 
(২) এই ধারার অধীন আপিল একটি স্মারকলিপির মাধ্যমে দায়ের করিতে হইবে এবং উহার সহিত আপিল করিবার কারণ উল্লেখসহ সংশ্লিষ্ট আদেশের একটি সত্যায়িত কপি দাখিল করিতে হইবে।
 
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন আপিল আবেদন প্রাপ্তির পর সরকার সংশ্লিষ্ট আপিলকারীকে ব্যক্তিগতভাবে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে শুনানির সুযোগ প্রদান করিবেন এবং অধিকতর তদন্ত করা হইলে সেই তদন্তের পর যে আদেশটির বিরুদ্ধে আপিল করা হইয়াছে সে আদেশটি বহাল রাখিতে, সংশোধন করিতে অথবা বাতিল করিতে পারিবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার ভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান না করিলে, আপিলের নিষ্পত্তি সাপেক্ষে, যে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হইয়াছে তাহা কার্যকর থাকিবে।
 
(৪) এই ধারার অধীন আপিলের জন্য ৩০ (ত্রিশ) দিনের মেয়াদ গণনার সময় যে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হইয়াছে সেই আদেশটির সত্যায়িত কপি সংগ্রহের জন্য যে সময় প্রয়োজন হইবে তাহা বাদ যাইবে।
পুলিশ কমিশনার বা সরকারের কতিপয় আদেশের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না
৪৪। ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন পুলিশ কমিশনার কর্তৃক অথবা ধারা ৪৩ এর অধীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
মহানগরী এলাকা ত্যাগ করিতে ব্যর্থতা এবং অপসারণের পর পুনঃপ্রবেশ সম্পর্কে অনুসরণীয় কর্মপন্থা
৪৫। (১) ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন যে ব্যক্তিকে মহানগরী এলাকা হইতে অপসারণের আদেশ প্রদান করা হইয়াছে, তিনি যদি-
 
(ক) আদেশ পালনে ব্যর্থ হন; অথবা
 
(খ) অপসারণের পর, উপ-ধারা (২) এর অধীন পুলিশ কমিশনারের অনুমতি ব্যতীত আদেশে উল্লিখিত মেয়াদের মধ্যে উক্ত এলাকায় প্রবেশ করেন,
 
তাহা হইলে পুলিশ কমিশনার তাহাকে গ্রেফতার করিয়া উক্ত এলাকার বাহিরে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন।
 
(২) ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এর অধীন আদেশপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ কমিশনার তৎকর্তৃক আরোপিত শর্ত সাপেক্ষে, মহানগরী এলাকায় অস্থায়ীভাবে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন এবং তাহাকে জামানতসহ বা জামানত ব্যতীত আরোপিত শর্ত পালন নিশ্চিত করিবার স্বার্থে মুচলেকা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
 
(৩) পুলিশ কমিশনার তদ্‌কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনো অনুমতি যে কোনো সময় বাতিল করিতে পারিবেন।
 
(৪) উপ-ধারা (২) এর অধীনে মহানগরী এলাকায় প্রত্যাবর্তন করিবার অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি, অনুমতিতে উল্লিখিত মেয়াদ শেষে অথবা অনুরূপ অনুমতির মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বে উহা বাতিল করা হইলে উক্তরূপ বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে মহানগরী এলাকা ত্যাগ করিবেন এবং নূতন অনুমতি ব্যতীত ধারা ৩৮, ৩৯ ও ৪০ এ উল্লিখিত মেয়াদ পূর্তি না হইলে মহানগরী এলকায় প্রত্যাবর্তন করিতে পারিবেন না।
 
(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত ব্যক্তি আরোপিত কোনো শর্ত পূরণে ব্যর্থ হইলে অথবা শর্তানুসারে মহানগর এলাকা ত্যাগ না করিলে অথবা অপসারণের পর বিনা অনুমতিতে পুনঃপ্রবেশ করিলে পুলিশ কমিশনার তাহাকে গ্রেফতার করিয়া মহানগরীর এলাকার বাহিরে যে কোনো নির্ধারিত স্থানে অপসারণ করিতে পারিবেন।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs