প্রিন্ট ভিউ
[সেকশন সূচি]
চতুর্থ অধ্যায়
পেটেন্ট অধিকার, লাইসেন্স, মালিকানা
২১। (১) যে ক্ষেত্রে¾
(ক) জনস্বার্থ, বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য বা জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কোনো খাতের উন্নয়নের জন্য আবশ্যক হয়,
(খ) কোনো আদালত বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে যে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী বা লাইসেন্সি কর্তৃক উদ্ভাবন ব্যবহারের পদ্ধতি অসম প্রতিযোগিতামূলক এবং সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, এই উপ-ধারা অনুসারে উক্ত উদ্ভাবন ব্যবহার করা হইলে উহার প্রতিকার সম্ভব,
(গ) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী তাহার একচেটিয়া অধিকারের অপব্যবহার করিতেছেন বা লাইসেন্সি কর্তৃক একচেটিয়া অধিকারের অপব্যবহার রোধে অবহেলা করিতেছেন,
(ঘ) পেটেন্টকৃত উদ্ভাবন বাংলাদেশে উৎপাদন বা আমদানির মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে বা মানসম্পন্নভাবে বা পূর্বনির্ধারিত সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সহজলভ্য হইতেছে না,
(ঙ) কোনো দ্বিতীয় পেটেন্ট আবেদনে এইরূপ কোনো উদ্ভাবনের দাবি করা হয়, যাহা প্রথম পেটেন্টে দাবিকৃত উদ্ভাবনের সহিত সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উন্নত কারিগরি জ্ঞান বিষয়ক, এবং প্রথম পেটেন্ট লঙ্ঘন না করিয়া দ্বিতীয় পেটেন্ট কাজে লাগানো সম্ভব নহে,¾
সেইক্ষেত্রে সরকার, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারীর সহিত কোনোরূপ সমঝোতা বা চুক্তি ব্যতীত, কোনো সরকারি সংস্থা বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনো ব্যক্তিকে উক্ত উদ্ভাবন ব্যবহার করিবার জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করিতে পারিবে।
(২) সরকার বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের প্রতিটি আবেদন পৃথকভাবে বিবেচনা করিবে এবং উদ্ভাবন কেবল যে উদ্দেশ্যে লাইসেন্স প্রদত্ত হইয়াছে সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাইবে এবং ইহার জন্য পেটেন্টের স্বত্বাধিকারীকে সরকার কর্তৃক, বিধি দ্বারা নির্ধারিত, পারিতোষিক পরিশোধ করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে লাইসেন্সি কর্তৃক পেটেন্ট এর অসম প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার সংশোধনের আবেদন বিবেচনা করিতে হইবে।
(৪) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ শুনানি করিতে চাহিলে, শুনানি গ্রহণের পর সরকার বিরোধীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
(৫) উপ-ধারা (১) এর দফা (ঘ) অধীন পেটেন্টকৃত পণ্যের অপর্যাপ্ততার কারণে বা পেটেন্টকৃত পদ্ধতিতে পণ্য উৎপাদনের কারণে পেটেন্ট আবেদন দাখিলের তারিখ হইতে ৪ (চার) বৎসর বা পেটেন্ট মঞ্জুরের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর, যে সময়কাল পরে অতিক্রান্ত হয়, কোনো বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রযোজ্য হইবে না এবং বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান অস্বীকার করা হইবে, যদি না পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী এইরূপ নিস্ক্রিয়তা বা অপর্যাপ্ত পদক্ষেপের যুক্তিসঙ্গত কারণ উপস্থাপন করিতে সক্ষম হন।
(৬) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী, বা কোনো সরকারি সংস্থা বা পেটেন্টপ্রাপ্ত উদ্ভাবন ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে, সরকার, কোনো পক্ষ বা উভয় পক্ষ শুনানির ইচ্ছা প্রকাশ করিলে, পক্ষগণকে শুনানির সুযোগ প্রদানপূর্বক, পেটেন্টপ্রাপ্ত উদ্ভাবন ব্যবহারের শর্তাবলি পরিবর্তন করিতে পারিবে।
(৭) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে, কোনো পক্ষ বা উভয় পক্ষ শুনানির ইচ্ছা প্রকাশ করিলে, পক্ষগণকে শুনানির সুযোগ প্রদানপূর্বক, সরকার, যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, উহার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখিবার জন্য উপযুক্ত কারণ বিদ্যমান রহিয়াছে বা উহার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব বা সরকারি সংস্থা বা তৎকর্তৃক মনোনীত অন্য কোনো ব্যক্তি উক্ত সিদ্ধান্তের শর্তাবলি পালনে ব্যর্থ হইয়াছেন, তাহা হইলে সরকার বাধ্যতামূলক লাইসেন্স বাতিল করিতে পারিবে।
(৮) উপ-ধারা (৭) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোনো সরকারি সংস্থা বা তৎকর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তির আইনগত স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সিদ্ধান্ত বহাল রাখিবার উপযুক্ত পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বা যদি উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন অসম প্রতিযোগিতার প্রতিকার লাভের জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয় এবং বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের শর্তাবলির পুনরাবৃত্তি সম্ভবপর হয়, তাহা হইলে সরকার বাধ্যতামূলক লাইসেন্স বাতিল করিবে না।
(৯) পেটেন্টপ্রাপ্ত উদ্ভাবন যে ব্যক্তির উদ্যোগ বা ব্যবসার স্বার্থে ব্যবহৃত হইতেছে, উহা কেবল উক্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার নামে বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার অংশের নামে হস্তান্তর করা যাইবে।
(১০) বাধ্যতামূলক লাইসেন্স একচেটিয়া হইবে না, এবং উহাতে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা :¾
(ক) উৎপাদনের বা আমদানির মাধ্যমে বা উভয়বিধভাবে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উদ্ভাবনের ব্যবহার;
(খ) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক লাইসেন্স চুক্তির সমাপ্তি; এবং
(গ) এই আইনের ধারা ২৪ এর অধীন, পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী কর্তৃক অধিকারের অব্যাহত ব্যবহার।
(১১) বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের আবেদন সরকারের নিকট দাখিল করিতে হইবে এবং আবেদনের সহিত এই মর্মে সাক্ষ্য-প্রমাণ দাখিল করিতে হইবে যে, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রত্যাশী ব্যক্তি পেটেন্টের স্বত্বাধিকারীর নিকট চুক্তিভিত্তিক লাইসেন্সের আবেদন করিয়াছিলেন, তবে তাহাকে যুক্তিসংগত বাণিজ্যিক শর্তে এবং সময়ের মধ্যে উক্তরূপ লাইসেন্স প্রদান করা হয় নাই এবং উক্ত পরিস্থিতিতে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী আবেদনকারীর নিকট হইতে আবেদন গ্রহণের পর এবং পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক স্বেচ্ছাধীন লাইসেন্সের প্রস্তাব অস্বীকারের সিদ্ধান্ত অবহিত হইবার পর অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে সরকারের নিকট আবেদন করিতে হইবে।
(১২) উপ-ধারা (১১) এর অধীন স্বেচ্ছাধীন লাইসেন্স অর্জনের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্যাদি, জাতীয় জরুরি অবস্থা বা অন্যান্য চরম জরুরি পরিস্থিতি বা সরকার কর্তৃক অবাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বা বিচারিক বা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় অসম প্রতিযোগিতা প্রতিকারের বিষয়ে লাইসেন্স মঞ্জুরির প্রয়োজন হইবে না এবং উক্তরূপ পরিস্থিতিতে পেটেন্টের স্বত্বাধিকারীকে, যথাশীঘ্র সম্ভব, সরকারের সিদ্ধান্ত অবহিত করিতে হইবে।
(১৩) কোনো সরকারি সংস্থা বা সরকার কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক, ঔষধ পণ্য বা ঔষধ পণ্য প্রস্ত্ততের প্রক্রিয়ায় পেটেন্টের দাবি সংশ্লিষ্ট বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ব্যতীত, উদ্ভাবনের ব্যবহার প্রধানত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে, যদি না উক্ত সমজাতীয় পণ্য প্রস্ত্ততের বিকল্প প্রক্রিয়া অজ্ঞাত হয় বা সহজলভ্য না হয়, এবং পেটেন্টেপ্রাপ্ত পণ্য বা ধারা ৩৮ এর অধীন অব্যাহতিপ্রাপ্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশি ভূখণ্ডে বা, উৎপাদন-সামর্থহীন বা অপর্যাপ্ত উৎপাদন-সামর্থ, কোনো দেশে রপ্তানি করাই লাইসেন্সের উদ্দেশ্য হয়।
(১৪) সেমি-কন্ডাক্টর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, উদ্ভাবনের বাধ্যতামূলক লাইসেন্স কেবল সরকার কর্তৃক অবাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মঞ্জুর করা হইবে বা যেক্ষেত্রে কোনো আদালত বা সংস্থা কর্তৃক স্থিরীকৃত হয় যে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী বা লাইসেন্সি কর্তৃক, পেটেন্টভুক্ত উদ্ভাবনের ব্যবহারের প্রক্রিয়া অসম প্রতিযোগিতামূলক এবং সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, স্বেচ্ছাধীন নয় এমন কোনো লাইসেন্সের মঞ্জুরি উক্ত প্রচলিত রীতিতে যথাযথ প্রতিকার হইতে পারে সেইক্ষেত্রে এইরূপ ব্যবহারের জন্য মঞ্জুর করা হইবে।
(১৫) উপ-ধারা (১) এর দফা (ঙ) এর অধীন বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হইলে¾
(ক) প্রথম পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী দ্বিতীয় পেটেন্টের দাবিকৃত উদ্ভাবন ব্যবহারের জন্য যুক্তিসঙ্গত শর্তে লাইসেন্স প্রাপ্তির অধিকারী হইবেন; এবং
(খ) দ্বিতীয় পেটেন্টের স্বত্ব প্রদান ব্যতীত প্রথম পেটেন্টের লাইসেন্সের স্বত্ব প্রদানযোগ্য হইবে না।
(১৬) এই ধারার বিধানাবলি, ক্ষেত্রমত, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধনসহ, পেটেন্টপ্রাপ্ত পণ্যের অপর্যাপ্ততা বা পেটেন্টপ্রাপ্ত প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্র ব্যতীত, অনিষ্পন্ন পেটেন্ট আবেদনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।
(১৭) যদি বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুরি লাভের পর, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদার প্রতি যথাযথভাবে মনোযোগ প্রদান করা না হয়, তাহা হইলে যে কোনো ব্যক্তি পেটেন্ট বাজেয়াপ্তির জন্য আদালতের নিকট আবেদন করিতে পারিবেন :
তবে শর্ত থাকে যে, প্রথম বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুরের পর ২ (দুই) বৎসর অতিক্রান্ত হইবার পূর্বে পেটেন্ট বাজেয়াপ্তির আবেদন করা যাইবে না।
(১৮) নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানির জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে, যথা :¾
(ক) যে সকল দেশে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের ব্যবস্থা গৃহীত হইয়াছে এবং যে সকল দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য অপর্যাপ্ত বা উক্ত পণ্য তৈরি করিবার সামর্থ নাই, সেই সকল দেশে পেটেন্টেড ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য তৈরি এবং রপ্তানি;
(খ) রেজিস্ট্রার, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আবেদন প্রাপ্তির পর কেবল সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনের জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুরের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করিবেন এবং উক্ত পণ্য, বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্তাবলি সাপেক্ষে, অন্য কোনো দেশে রপ্তানির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জন্য আবেদনের কপি সরকারের নিকট প্রেরণ;
(গ) দফা (ক) এবং (খ) এর বিধান মোতাবেক বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের মাধ্যমে যে সকল ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য তৈরি করা হইয়াছে উহা এই আইনের প্রযোজ্য অন্য কোনো বিধান অনুযায়ী রপ্তানি করা যাইবে।
ব্যাখ্যা।¾এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য’’ বলিতে কোনো পেটেন্টকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, বা পেটেন্টকৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরিকৃত কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল দ্রব্য যাহা জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় এবং উক্ত পণ্য তৈরির উপাদান এবং রোগ নির্ণয়ক কিটও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।