প্রিন্ট ভিউ

আয়কর আইন, ২০২৩

( ২০২৩ সনের ১২ নং আইন )

দ্বিতীয় অধ্যায়

জরিপ, তল্লাশি ও জব্দ

জরিপের ক্ষমতা

২০৫। (১) এই আইনের অধীন কোনো ব্যক্তির কর সংক্রান্ত দায়বদ্ধতা জরিপের উদ্দেশ্যে বোর্ড বা কর কমিশনার কোনো আয়কর কর্তৃপক্ষকে ব্যবসা পরিচালিত হয় বা ভাড়া প্রদানের মাধ্যমে আয় হয় এইরূপ যেকোনো স্থানে বা প্রাঙ্গণে গমনের ও জরিপের ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে।

(২) আয়কর কর্তৃপক্ষ নিম্নরূপ ক্ষেত্রে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত স্থানে প্রবেশ করিবে, যথা:-

(ক) যদি উক্ত স্থানে ব্যবসাটি পরিচালিত হয়, তাহা হইলে কেবল যে সময়ে উক্ত স্থান ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত থাকে; এবং

(খ) অন্য কোনো ক্ষেত্রে, কেবল সূর্যোদয়ের পরে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে।

(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত স্থানে প্রবেশ করিয়া, আয়কর কর্তৃপক্ষ নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন, যথা:-

(ক) আয়, পরিসম্পদ ও দায় সম্পর্কিত যে রেকর্ড তদ্‌কর্তৃক পরিদর্শন করা হইয়াছে সেই রেকর্ডে পরিদর্শনের চিহ্ন প্রদান করত তাহা হইতে সারাংশ বা কপি সংগ্রহ;

(খ) তদ্‌কর্তৃক পরিদর্শনকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ড কারণ রেকর্ডপূর্বক জব্দকরণ ও হেফাজতে গ্রহণ;

(গ) নগদ, অর্থ জমা বা মূল্যবান সামগ্রীসমূহের তালিকা প্রস্তুতকরণ;

(ঘ) এই আইনের অধীন কোনো কার্যক্রমের জন্য প্রাসঙ্গিক হইলে কোনো ব্যক্তিকে শপথপূর্বক তাহার বিবৃতি পরীক্ষা; এবং

(ঙ) অন্য কোনো প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান।

(৪) প্রত্যেক মালিক, বেতনভোগী কর্মী বা অন্য কোনো ব্যক্তি যিনি কোনো ব্যবসা পরিচালনা করেন, বা কোনো ব্যক্তি যিনি উপ-ধারা (১) এর অধীন আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারে এইরূপ কোনো স্থান বা প্রাঙ্গণে বসবাস করেন, কর্তৃপক্ষকে নিম্নবর্ণিতভাবে উক্তরূপ কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা প্রয়োগে সহায়তা করিবে, যথা:-

(ক) কর্তৃপক্ষকে নিম্নবর্ণিত কার্য সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে-

(অ) আয়, পরিসম্পদ ও দায় সংক্রান্ত রেকর্ড পরিদর্শন ও প্রবেশ কর; অথবা

(আ) এইরূপ স্থান বা প্রাঙ্গণে প্রাপ্ত নগদ অর্থ, স্টক বা অন্য কোনো মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষণ; এবং

(খ) এই আইনের অধীন কোনো কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত বা প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ।

(৫) উপ-ধারা (৮) এর দফা (ঘ) এর অধীন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি এই আইনের অধীন কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে।

(৬) এই ধারার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আয়কর কর্তৃপক্ষ, প্রবেশকৃত স্থান বা প্রাঙ্গণ হইতে কোনো নগদ অর্থ, স্টক বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু অপসারণ করিবে না।

(৭) আয়কর কর্তৃপক্ষ কর কমিশনারের অনুমোদন ব্যতিরেকে এই ধারার অধীন হেফাজতে জব্দকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ড ১ (এক) মাসের অধিক সময়ের জন্য তাহার নিকট রাখিবে না।

(৮) কর পরিদর্শক ব্যতীত কোনো আয়কর কর্তৃপক্ষের ধারা ২২৩ এর উপ-ধারা (১) এর ক্ষমতা থাকিবে, যদি কোনো ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত কার্যাদি সম্পাদনে অপারগ হইলে বা অমান্য করিলে, যথা:-

(ক) হিসাবপত্র বা অন্যান্য দলিলপত্র পরীক্ষার জন্য আয়কর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা প্রদান;

(খ) কোনো নগদ অর্থ, স্টক বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী বা বস্তু যাচাই-বাছাই বা পরীক্ষা করিবার অনুমতি প্রদান;

(গ) কোনো তথ্য প্রদান; বা

(ঘ) রেকর্ড বা বিবৃতি প্রদান।

জব্দকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ড উপকর কমিশনারের নিকট হস্তান্তর

২০৭। (১) যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপকর কমিশনার পৃথক ব্যক্তি হন তাহা হইলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত আয় সংক্রান্ত রেকর্ড, তাহা যেই তারিখে রেকর্ড করা হয় উক্ত তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উপকর কমিশনারের নিকট হস্তান্তর করিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপকর কমিশনারকে পৃথক ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হইবে, যদি যে ব্যক্তির নিকট হইতে কোনো হিসাব বহি বা দলিলাদি জব্দ করা হয় সেই ব্যক্তির উপর অনুমোদিত কর্মচারীর কোনো কর্তৃত্ব না থাকে।

(৩) যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপকর কমিশনার একই ব্যক্তি হন, তবে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত আয় সম্পর্কিত রেকর্ডসমূহ যেই তারিখে জব্দ করা হয় উক্ত তারিখে তাহা উপকর কমিশনারের নিকট হস্তান্তর করা হইয়াছে মর্মে গণ্য হইবে।

(৪) যখন কোনো ব্যক্তির আয় সম্পর্কিত রেকর্ড অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে জব্দ করা হয় সেইক্ষত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ জব্দকৃত বিষয়বস্তু উক্ত ব্যক্তির উপর কর্তৃত্বসম্পন্ন উপকর কমিশনারের নিকট তাহা জব্দ করিবার তারিখের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে হস্তান্তর করিবেন।

জব্দকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ড সংরক্ষণের সময়সীমা

২০৮। (১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ডসমূহ জব্দ হইবার তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) কার্যদিবসের অধিক সময়ের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংরক্ষণে রাখিবেন না।

(২) তদন্তকারী আয়কর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বর্ধিত সময়সীমা পর্যন্ত আয় সম্পর্কিত রেকর্ড সংরক্ষণে রাখিতে পারিবেন এবং তদন্তকারী আয়কর কর্তৃপক্ষ কোনো বৎসরে এই আইনের অধীন কার্যক্রম সমাপ্ত হইবার পর সংশ্লিষ্ট রেকর্ডসমূহ সংরক্ষণের মেয়াদ ৩০ (ত্রিশ) দিনের অধিক বর্ধিত করিবে না।

(৩) ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত আয় সম্পর্কিত রেকর্ডের আইনগত অধিকারী কোনো ব্যক্তি, সংক্ষুব্ধ হইলে, তিনি উক্তরূপ সংরক্ষণের মেয়াদ বর্ধিতকরণের বিরুদ্ধে আবেদন দাখিল করিতে পারিবেন, এবং বোর্ড, আবেদনকারীকে যুক্তিসংগতভাবে শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া যেইরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করিবে সেইরূপ আদেশ জারি করিবে।

জব্দকৃত সম্পদের ব্যবস্থা

২০৯। (১) যেইক্ষেত্রে ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত কোনো অর্থ, মূল্যবান ধাতু, গহনা বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী বা জিনিস (অতঃপর সম্পদ বলিয়া উল্লিখিত), উপকর কমিশনারের নিকট হস্তান্তর করা হয়, সেইক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করিতে হইবে।

(২) উপকর কমিশনার, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সুযোগ প্রদান করিবেন এবং অতঃপর সম্পদ জব্দের ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে নিম্নবর্ণিত প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করিবেন,-

(ক) অপ্রদর্শিত আয় সম্পর্কে আনুমানিক হিসাব করিয়া অপ্রদর্শিত সম্পত্তি হইতে আয়সহ, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংক্ষেপে তাহার বিবেচনায় সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণ;

(খ) প্রদেয় অঙ্ক পরিগণনা, যাহা নিম্নবর্ণিত বিষয়াদির সমষ্টি হইবে, যথা:-

(অ) দফা (ক) এর প্রাক্কলনের ভিত্তিতে প্রদেয় কর এবং অন্য কোনো অঙ্ক; এবং

(আ) এইরূপ ব্যক্তির, বিদ্যমান যে করদায়ের জন্য করখেলাপি অথবা করখেলাপি হিসাবে বিবেচিত সেই করদায় পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্ক।

(৩) উপ-ধারা (২) এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, ৯০ (নব্বই) দিন সময় গণনাকালে, এই ধারার অধীন নির্ধারিত কোনো সময়সীমা, কোনো আদেশ বা নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো কার্যধারা বহিভূর্ত থাকিবে।

(৪) যেইক্ষেত্রে মোট আয় এবং করদায় পরিগণনার নিমিত্ত জব্দকৃত সম্পত্তি বা তাহার অংশ কোনো আয়বর্ষ বা বর্ষসমূহের সহিত সংশ্লিষ্ট তাহা নিরূপণ করা সম্ভব হয় নাই সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার উক্ত সম্পত্তি বা তাহার অংশবিশেষ, যাহা প্রযোজ্য, উক্ত ব্যক্তির যেই আয়বর্ষের সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পদ জব্দ করা হইয়াছে উক্ত বৎসরের হিসাবে বিবেচনা করিতে পারিবেন।

(৫) উপ-ধারা (২) এবং (৩) এর অধীন কার্যক্রম সম্পন্ন করিবার পর, কমিশনারের অনুমোদনক্রমে, উপকর কমিশনার, উপ-ধারা (২) এর দফা (খ)-তে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।

(৬) যেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনো অর্থ পরিশোধ করে বা সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সেইক্ষেত্রে উপকর কমিশনার জব্দকৃত সম্পদ ছাড় বা তাহার নিকট উপযুক্ত মর্মে বিবেচিত এইরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করিবেন।

(৭) যেইক্ষেত্রে উপ ধারা (২) এর অধীন পরিশোধ, পরিশোধের জন্য কোনো সন্তোষজনক ব্যবস্থা, গ্রহণ করা হয় নাই সেইক্ষেত্রে –

(ক) উক্ত ব্যক্তি অপরিশোধিত পরিমাণ কর প্রদানের জন্য করদাতা হিসাবে গণ্য হইবেন; এবং

(খ) ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত পরিমাণ সম্পত্তি যাহা করের অনাদায়ী অংশের আদায়ের জন্য যথেষ্ট সেই পরিমাণ সম্পদ উপকর কমিশনার হেফাজতে রাখিতে পারিবেন।

(৮) যদি উপকর কমিশনার এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, ধারা ২০৬ এর অধীন জব্দকৃত সম্পত্তি বা উহার কোনো অংশ কোনো ব্যক্তি বা অন্য কোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত, তাহা হইলে তিনি এই ধারার অধীন উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন এবং এই ধারার সকল বিধান যথাযথভাবে প্রয়োগযোগ্য হইবে।

(৯) যেকোনো ব্যক্তি যাহাকে উপ-ধারা (৪) এর অধীন নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করিতে হইবে, তিনি যদি সংক্ষুব্ধ হন, তাহা হইলে কর কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে আপত্তি উত্থাপন করিতে পারিবেন, এবং কমিশনার আবেদনকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া, যথোপযুক্ত আদেশ প্রদান করিবেন।

অধিকৃত সম্পত্তির ব্যবস্থা

২১০। (১) যেইক্ষেত্রে ধারা ২০৬ এর উপ-ধারা (৭) এর অধীন সংরক্ষণকৃত সম্পদ কেবল অর্থ হয়, বা আংশিক পরিমাণ অর্থ হয় এবং অন্যান্য অংশ হয় অন্যান্য সম্পদ, সেইক্ষেত্রে-

(ক) উপকর কমিশনার প্রথমে এই উপ-ধারার অধীন দায়ী করদাতা হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তির অনাদায়ী পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য এই অর্থ ব্যবহার করিবেন; এবং এইরূপ ক্ষেত্রে যেই পরিমাণ অর্থ উক্ত ব্যক্তির নিকট হইতে পরিশোধ করা হইয়াছে সেই পরিমাণ অর্থ দায়মুক্ত হইবে; এবং

(খ) যেইক্ষেত্রে, দফা (ক) এর অধীন অর্থ ব্যবহারের পর, উল্লিখিত পরিমাণের যেই পরিমাণ অংশ অবশিষ্ট থাকে, উপকর কমিশনার ট্যাক্স রিকোভারি কর্মচারীর মাধ্যমে অর্থ নহে এইরূপ কোনো অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া অবশিষ্ট অনাদায়ী অর্থ পুনরুদ্ধার করিতে পারিবেন; এতদুদ্দেশ্যে তাহার এই আইনের অধীন কর পুনরুদ্ধারকারীর ন্যায় সকল ক্ষমতা থাকিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর কোনো বিধান এবং ধারা ২০৬ এর উপ-ধারা (৭) এ উল্লিখিত কোনো কিছুই করদাতার নিকট হইতে এই আইনের অধীন যেকোনো উপায়ে পাওনা আদায়ের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করিবে না।

(৩) ধারা ২০৬ এর উপ-ধারা (৭) এ উল্লিখিত দায় পরিশোধের পর কোনো সম্পদ বা প্রাপ্তি অবশিষ্ট থাকিলে অবিলম্বে যাহার নিকট হইতে সম্পদের হেফাজত লওয়া হইয়াছিল তাহার নিকট হস্তান্তর করিতে হইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs