প্রিন্ট ভিউ

ঔষধ ও কসমেটিকস্ আইন, ২০২৩

( ২০২৩ সনের ২৯ নং আইন )

তৃতীয় অধ্যায়

ঔষধের লাইসেন্স, ইত্যাদি

ঔষধের উৎপাদন, বিক্রয়, মজুত, বিতরণ বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের জন্য লাইসেন্স গ্রহণ

১৪।  (১) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত অথবা লাইসেন্সে আরোপিত শর্ত বহির্ভূতভাবে ঔষধ উৎপাদন, বিক্রয়, মজুত, বিতরণ বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শন করিতে পারিবেন না:

তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোনো কিছুই, নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে, গবেষণা, বিশ্লেষণ অথবা চিকিৎসা বিষয়ক অধ্যয়নের জন্য স্বল্প পরিমাণে ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না:

আরও শর্ত থাকে যে, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতীত, ঔষধ উৎপাদনের জন্য কোনো নূতন প্রকল্প গ্রহণ কিংবা চলমান প্রকল্পের সম্প্রসারণ করা যাইবে না।

(২) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতীত অথবা লাইসেন্সে আরোপিত শর্ত বহির্ভূতভাবে কোনো ঔষধ বিক্রয়, মজুত, বিতরণ বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অথবা ওয়েব বেইজড প্রক্রিয়া ব্যবহার করিতে পারিবেন না।

(৩) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অসৎ উদ্দেশ্যে ঔষধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করিয়া অধিক মুনাফার অভিপ্রায়ে ঔষধ মজুত করিতে পারিবেন না।

(৪) লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা, লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়নের আবেদন, আবেদন মঞ্জুর ও নামঞ্জুর, লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়ন ফি এবং লাইসেন্সের শর্তসহ এতৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, সরকার, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়ন ফি এবং, ক্ষেত্রমত, বিলম্ব ফি পুনঃনির্ধারণ করিতে পারিবে।

লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন

১৫।  (১) লাইসেন্সের মেয়াদ হইবে প্রদানের তারিখ হইতে ২ (দুই) বৎসর এবং ইহা নবায়নযোগ্য হইবে।

(২) লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার অনধিক ৯০ (নব্বই) দিন পূর্বে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করিতে হইবে।

লাইসেন্স প্রদান এবং নবায়নের ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের অনুসরণীয় পদ্ধতি

১৬।  (১) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নের উদ্দেশ্যে, প্রয়োজনে, ঔষধ উৎপাদনকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের প্রিমিসেস পরিদর্শন করিবে এবং, এই আইন ও বিধি মোতাবেক, যে প্রিমিসেস উপযুক্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে কেবল সেই প্রিমিসেসের অনুকূলে লাইসেন্স প্রদান বা, ক্ষেত্রমত, প্রদত্ত লাইসেন্স নবায়ন করিবে।

(২) লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়নের আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করিবার ক্ষমতা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের উপর ন্যস্ত থাকিবে।

ঔষধের উৎপাদন এবং মান নিয়ন্ত্রণ, বিতরণ, সরবরাহ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত উত্তমচর্চা

১৭।  (১) ঔষধ উৎপাদনকারী বা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানকে ঔষধের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, বিতরণ অথবা সরবরাহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Good Practices (GxP) গাইডলাইন অনুসরণ করিতে হইবে।

(২) সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ স্বীকৃত অন্যান্য আন্তির্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রণীত গাইডলাইন অনুসরণপূর্বক ঔষধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, বিতরণ অথবা সরবরাহ ও সংরক্ষণ সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন করিতে পারিবে।

লাইসেন্স বাতিল, সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ, ইত্যাদি

১৮। (১) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত যে কোনো কারণে ঔষধের লাইসেন্স বাতিল বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সাময়িকভাবে স্থগিত করিতে পারিবে, যদি লাইসেন্স গ্রহীতা-

(ক) এই আইন বা বিধি বা লাইসেন্সে প্রদত্ত কোনো শর্ত ভঙ্গ বা লঙ্ঘন করিয়া থাকেন;

(খ) গুড ম্যনুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) অনুসরণ করিয়া ঔষধ উৎপাদন করিতে ব্যর্থ হন;

(গ) কোনো অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনপূর্বক লাইসেন্স গ্রহণ করিয়া থাকেন;

(ঘ) ঔষধ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে লাইসেন্স ব্যবহার করিয়া থাকেন;

(ঙ) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন গ্রহণ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রিমিসেসের ভৌত অবকাঠামো এমনভাবে পরিবর্তন করেন, যাহা ঔষধের গুণগতমানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে বা করিতে পারে; বা

(চ) কোনো নির্ধারিত শর্ত প্রতিপালন না করিয়া থাকেন।

(২) উপধারা (১) এর অধীন কোনো লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িকভাবে স্থগিত করিবার পূর্বে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাযথ কারণ ও সময়সীমা উল্লেখ করিয়া সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সগ্রহীতাকে লিখিত জবাব, যদি থাকে, উপস্থাপনের নোটিশ প্রদান করিবে।

(৩) উপধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশের লিখিত জবাব প্রাপ্তির পর উক্ত জবাব সন্তোষজনক না হইলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া লাইসেন্স বাতিল বা তৎকর্তৃক যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেইরূপ সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করিতে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঔষধ উৎপাদন বন্ধ করিতে পারিবে।

(৪) উপধারা (২) এ উল্লিখিত লিখিত জবাব সন্তোষজনক হইলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সগ্রহীতাকে তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিবে।

লাইসেন্স সাময়িক স্থগিতকরণ এবং উৎপাদন বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনা বা আপিল

১৯।  (১) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধারা ১৮ এর অধীন লাইসেন্স গ্রহীতার লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঔষধের উৎপাদন বন্ধ করা হইলে লাইসেন্সগ্রহীতা, অনূর্ধ্ব ৩০ (ত্রিশ) কর্মদিবসের মধ্যে, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করিতে অথবা সরকারের নিকট আপিল দায়ের করিতে পারিবেন।

(২) উপধারা (১) এ উল্লিখিত পুনর্বিবেচনার বা আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উহার সিদ্ধান্ত প্রদান করিবে।

(৩) পুনর্বিবেচনা বা আপিল নিষ্পত্তিকালে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

লাইসেন্স অ্যাগ্রিমেন্টের অধীন ঔষধের উৎপাদন, ইত্যাদি

২০।  (১) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশের কোনো ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পাদিত লাইসেন্স অ্যাগ্রিমেন্টের অধীন ঔষধ উৎপাদনকারী কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে, জনস্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপপূর্বক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঔষধ উৎপাদনের জন্য অনুমতি প্রদান করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ অনুমতি প্রদানের পূর্বে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত হইতে হইবে যে, উক্ত ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গবেষণালব্ধ কোনো ঔষধ ধারা ৪১ এর উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত কোনো দেশে একই বাণিজ্যিক নামে নিবন্ধিত।

(২) বাংলাদেশের কোনো ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে একই পদ্ধতির ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সহিত লিখিত চুক্তির অধীনে ঔষধ উৎপাদনের জন্য অনুমতি প্রদান করা যাইবে।

(৩) বাংলাদেশে ঔষধ উৎপাদন কারখানা নাই এমন বিদেশি কোম্পানি কেবল রপ্তানির উদ্দেশ্যে সকল স্বীকৃত পদ্ধতির ঔষধ স্ব স্ব পদ্ধতির কোম্পানির সহিত কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং বা লোন লাইসেন্সের আওতায় (Contract Manufacturing or Loan License) উৎপাদন করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত উৎপাদিত ঔষধ কোনোভাবেই স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা যাইবে না।

(৪) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, এই ধারার অধীন অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেইরূপ শর্ত আরোপ করিতে পারিবে।

(৫) লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, এই ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জনস্বাস্থ্যের অনিষ্ট সাধন পরিহার করিবার জন্য আবশ্যক বিবেচিত হইলে, তৎকর্তৃক কোনো বিদেশি ঔষধ উৎপাদনকারীকে কোনো ঔষধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রদত্ত অনুমোদন প্রত্যাহার করিতে পারিবে।

ব্যাখ্যা।- এই ধারায় উল্লিখিত-

(ক) “লোন লাইসেন্স” অর্থ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইস্যুকৃত এমন ধরনের লাইসেন্স, যাহার ঔষধ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা বা সুবিধা নাই, কিন্তু ঔষধ উৎপাদনের জন্য তিনি অন্য কোনো লাইসেন্সধারীর মালিকানাধীন ঔষধ উৎপাদন ব্যবস্থা বা সুবিধা গ্রহণে ইচ্ছুক এবং

(খ) “কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং” অর্থ কেবল রপ্তানির উদ্দেশ্যে স্বীকৃত পদ্ধতির ঔষধ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে ঔষধ উৎপাদন কারখানা নাই এইরূপ বিদেশি কোম্পানীর সহিত স্ব-স্ব পদ্ধতিতে বাংলাদেশে ঔষধ উৎপাদনকারী কোম্পানীর সম্পাদিত চুক্তি।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহিত সম্পাদিত লাইসেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট সংশোধন

২১।  (১) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঔষধ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের সহিত বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদিত কোনো লাইসেন্স অ্যাগ্রিমেন্টে জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোনো বিধান থাকিলে, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ, উক্ত প্রতিষ্ঠানকে অ্যাগ্রিমেন্টের সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(২) উপধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত নির্দেশ প্রতিপালন করিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হইলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঔষধ উৎপাদনের জন্য প্রদত্ত লাইসেন্স বাতিল করিতে পারিবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs