প্রিন্ট ভিউ

বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২৩

( ২০২৩ সনের ৫৩ নং আইন )

সপ্তম অধ্যায়

পেটেন্ট কার্যকরকরণ, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স এবং সরকার কর্তৃক ব্যবহার

পেটেন্ট উদ্ভাবন কার্যকরকরণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সাধারণ বিবেচনা (General principle)

৩৫।   এই আইনের কোনো বিধান ক্ষুণ্ন না করিয়া, এই অধ্যায়ে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি সাধারণ বিবেচনায় লইতে হইবে, যথা:-

(ক)উদ্ভাবনের প্রতি উৎসাহিত করিবার জন্য এবং উদ্ভাবনটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে কার্যকর এবং উহা অযাচিত বিলম্ব ব্যতীত স্বাভাবিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ইহা নিশ্চিত করিবার জন্য পেটেন্ট মঞ্জুর করা হইবে;

(খ) কেবল পেটেন্টপ্রাপ্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করিবার জন্য পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীকে সক্ষম করিবার উদ্দেশ্যে পেটেন্ট মঞ্জুর করা হইবে না;

(গ) পেটেন্ট অধিকার সুরক্ষা ও প্রয়োগের মাধ্যমে নূতন প্রযুক্তির অগ্রগতি সাধিত হয়, প্রযুক্তির হস্তান্তর ও প্রচার ঘটে, উৎপাদক ও প্রযুক্তির ভোক্তাদের পারস্পরিক সুবিধা নিশ্চিত হয় এবং উহার পদ্ধতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণে ফলপ্রসূ এবং উহা অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে ভারসাম্যতা সৃষ্টি করে;

(ঘ) মঞ্জুরকৃত পেটেন্ট জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির সুরক্ষা ব্যাহত করে না এবং জনস্বার্থের অগ্রগতি, বিশেষ করিয়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ খাতের অগ্রগতির নিয়ামক হিসাবে ভূমিকা রাখে;

(ঙ) মঞ্জুরকৃত পেটেন্ট কোনোভাবেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে না;

(চ) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী বা তাহার নিকট হইতে পেটেন্টের অধিকার বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো পেটেন্টের অপব্যবহার হয় না এবং এইরূপ চর্চায় পরিণত হয় না যাহা অযৌক্তিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে বা প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে; এবং

(ছ) পেটেন্টপ্রাপ্ত উদ্ভাবনের ফলাফল সুলভ মূল্যে জনগণের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়ার জন্য পেটেন্ট মঞ্জুর করা হয়।

বাধ্যতামূলক লাইসেন্স (Compulsory licensing)

৩৬।  ১। নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) জনস্বার্থ, বিশেষত জাতীয় নিরাপত্তা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য বা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য আবশ্যক হয়;

(খ) কোনো আদালত বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে যে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী বা লাইসেন্সি কর্তৃক উদ্ভাবন ব্যবহারের পদ্ধতি অসম প্রতিযোগিতামূলক;

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অসম প্রতিযোগিতা অর্থে নিয়ন্ত্রণকারী অবস্থানের অপব্যবহার, যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত শর্তে লাইসেন্স প্রদানে অস্বীকৃতি অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(গ) পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী কর্তৃক তাহার একচেটিয়া অধিকারের অপব্যবহার;

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, একচেটিয়া অধিকারের অপব্যবহার অর্থে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা:-

(অ) পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনটি জনগণের যৌক্তিক প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ হইয়াছে;

(আ) পেটেন্টকৃত উদ্ভাবনটি জনগণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সহজলভ্য নহে;

(ঘ) পেটেন্টকৃত উদ্ভাবন আমদানি ব্যতীত স্থানীয়ভাবে বাংলাদেশে কার্যক্ষম নহে এবং পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হয় যে, অর্থনৈতিকভাবে বা প্রযুক্তিগতভাবে উহা পূর্ণাঙ্গভাবে বা আংশিকভাবে উৎপাদন সম্ভব;

(ঙ) কোনো দ্বিতীয় পেটেন্ট আবেদনে এইরূপ কোনো উদ্ভাবনের দাবি করা হয়, যাহা প্রথম পেটেন্টে দাবিকৃত উদ্ভাবনের সহিত সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, উন্নত কারিগরি জ্ঞান বিষয়ক এবং প্রথম পেটেন্ট লঙ্ঘন না করিয়া দ্বিতীয় পেটেন্ট কাজে লাগানো সম্ভব নহে;

(চ) পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী যৌক্তিক কারণ ব্যতীত আবেদনের তারিখ হইতে অনধিক ৪ (চার) মাসের মধ্যে লাইসেন্স মঞ্জুর করিতে অস্বীকার করে;

(ছ) কোনও অপরিহার্য পরিষেবার সুযোগ পাওয়া (প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য করা), যাহার মধ্যে ফিক্সড্‌-ডোজ কম্বিনেশন মেডিসিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অন্তর্ভুক্ত হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর মহাপরিচালক, প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করিতে পারিবেন এবং আবেদনের তারিখ হইতে ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের আবেদন বিবেচনা ও নিষ্পত্তি করিতে হইবে।

(৩) যদি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো আবেদন দাখিল করা হয়, তাহা হইলে আবেদনকারী পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীর নিকট হইতে যথাযথ বাণিজ্যিক শর্ত সাপেক্ষে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রচেষ্টা চালাইবেন এবং যদি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে এইরূপ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহা হইলে উক্ত বিধান উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

(৪) উপ-ধারা (১) এর দফা (ঘ) এর অধীন পেটেন্টকৃত পণ্যের অকার্যকরতা বা অপর্যাপ্ত কার্যকরতার কারণে পেটেন্ট আবেদন দাখিলের তারিখ হইতে ৪ (চার) বৎসর বা পেটেন্ট মঞ্জুরের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর, যে সময়কাল পরে অতিক্রান্ত হয়, কোনো বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রযোজ্য হইবে না এবং বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান অস্বীকার করা হইবে না, যদি না পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী এইরূপ নিষ্ক্রিয়তা বা অপর্যাপ্ত পদক্ষেপের যুক্তিসঙ্গত কারণ উপস্থাপন করিতে সক্ষম হন।

(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত বাধ্যতামূলক লাইসেন্স একচেটিয়া হইবে না এবং হস্তান্তরযোগ্যও হইবে না, এমনকি সাব-লাইসেন্সের মাধ্যমেও, তবে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বা সুনামের এইরূপ অংশের জন্য হস্তান্তরযোগ্য হইবে যাহার ক্ষেত্রে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহৃত হয়।

(৬) বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের অধীন উদ্ভাবনের ব্যবহার প্রধানত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে, যদি না অসম প্রতিযোগিতা প্রতিকারের উদ্দেশ্যে উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন উক্ত বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয় বা ধারা ৩৯ এর অধীন উৎপাদন-সামর্থহীন বা অপর্যাপ্ত উৎপাদন-সামর্থ কোনো বিদেশি ভূখণ্ডে রপ্তানি করাই লাইসেন্সের উদ্দেশ্য হয়।

(৭) সেমি-কন্ডাক্টর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, উদ্ভাবনের বাধ্যতামূলক লাইসেন্স কেবল মহাপরিচালক কর্তৃক অবাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মঞ্জুর করা হইবে বা যেক্ষেত্রে কোনো আদালত বা আইনানুগভাবে গঠিত সংস্থা কর্তৃক স্থিরীকৃত হয় যে, পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী বা লাইসেন্সি কর্তৃক, পেটেন্টভুক্ত উদ্ভাবনের ব্যবহারের প্রক্রিয়া অসম প্রতিযোগিতামূলক এবং সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, বাধ্যতামূলক নহে এমন কোনো লাইসেন্সের মঞ্জুরি উক্ত প্রচলিত রীতিতে যথাযথ প্রতিকার হইতে পারে, সেইক্ষেত্রে এইরূপ পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হইবে।

(৮) উপ-ধারা (১) এর দফা (ঙ) এর অধীন বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হইলে-

(ক) প্রথম পেটেন্টের স্বত্বাধিকারী দ্বিতীয় পেটেন্টের দাবিকৃত উদ্ভাবন ব্যবহারের জন্য যুক্তিসঙ্গত শর্তে লাইসেন্স প্রাপ্তির অধিকারী হইবেন; এবং

(খ) দ্বিতীয় পেটেন্টের স্বত্ব প্রদান ব্যতীত প্রথম পেটেন্টের লাইসেন্সের স্বত্ব প্রদানযোগ্য হইবে না।

বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুরির প্রক্রিয়া

৩৭।   (১) মহাপরিচালক, ধারা ৩৬ এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর পেটেন্ট আবেদনকারী বা পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীকে উক্ত আবেদনের একটি কপিসহ নোটিশ প্রদান করিবেন।

(২) পেটেন্ট আবেদনকারী বা পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী যিনি উক্ত আবেদনের বিরোধিতা করিতে আগ্রহী, তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিরোধের নোটিশ প্রদান করিতে পারিবেন।

(৩) এইরূপ বিরোধের কোনো নোটিশ প্রদান করা হইলে, মহাপরিচালক বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে অবহিত করিবেন এবং ধারা ৩৬ এর উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত মেয়াদের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের পূর্বে আবেদনকারী ও বিরোধিতাকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদান করিবেন।

(৪) ধারা ৩৬ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা হইলে, মহাপরিচালক পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীকে প্রদেয় যথাযথ পারিতোষিক, যাহা মোট বিক্রয়ের অনধিক ৪% (চার শতাংশ) হইবে এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য শর্ত নির্ধারণ করিবেন।

(৫) ধারা ৩৬ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে, পারিতোষিকের পরিমাণ নির্ধারনের ক্ষেত্রে লাইসেন্সি কর্তৃক পেটেন্ট এর অসম প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার সংশোধনের আবেদন বিবেচনা করিতে হইবে।

(৬) পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহাপরিচালক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স কার্যকর রাখিবার মতো প্রয়োজনীয় অবস্থা সমাপ্ত হইয়াছে এবং উহার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব, বা বাধ্যতামূলক লাইসেন্সি লাইসেন্সের বিধান পালন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন, তাহা হইলে মহাপরিচালক, বাধ্যতামূলক লাইসেন্সির আইনগত স্বার্থের যথাযথ সুরক্ষার শর্ত সাপেক্ষে, বাধ্যতামূলক লাইসেন্স বাতিল করিতে পারিবেন, তবে লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে লাইসেন্সিকে শুনানির সুযোগ প্রদান করিতে হইবে।

প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স

৩৮।   ধারা ৩৬ এর উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, জাতীয় জরুরি অবস্থা বা অন্যান্য চরম জরুরি পরিস্থিতি বিদ্যমান বা সরকার কর্তৃক অবাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উক্ত পেটেন্টের সিলিং এর পর যে কোনো সময় বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করা প্রয়োজন, তাহা হইলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই মর্মে একটি ঘোষণা প্রদান করিতে পারিবে এবং এতদ্‌সঙ্গে নিম্নবর্ণিত বিধানাবলি কার্যকর হইবে, যথা:-

(ক) মহাপরিচালক, প্রজ্ঞাপন জারির পর যে কোনো সময়, কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি যেরূপ মনে করিবেন সেইরূপ শর্তে, আবেদনকারীর অনুকূলে লাইসেন্স মঞ্জুর করিবেন;

(খ) এই ধারার অধীন লাইসেন্স মঞ্জুর করিবার ক্ষেত্রে, মহাপরিচালক নিশ্চিত হইবার প্রচেষ্টা করিবেন যে, উক্ত লাইসেন্সের অধীন উৎপাদিত পণ্য জনগণ সুলভ মূল্যে পাইবেন;

(গ) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ধারা ৩৬ এর উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত শর্তাবলির বিধান এবং ধারা ৩৭ এর উপ-ধারা (১), (২) ও (৩) এর কার্যপদ্ধতি এই ধারার অধীন লাইসেন্স মঞ্জুরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না;

(ঘ) এই ধারার অধীন দাখিলকৃত আবেদন ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হইবে এবং এইরূপ পরিস্থিতিতে, যতদ্রুত সম্ভব, লাইসেন্সের স্বত্বাধিকারীকে মহাপরিচালকের সিদ্ধান্ত অবহিত করা হইবে।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, “পরিস্থিতি” অর্থে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থাসহ, জনস্বাস্থ্য সংকট, এইডস্‌, এইচআইভি, যক্ষা (Tuberculosis), ম্যালেরিয়া বা অন্য কোনো মহামারি (Pandemic) এবং অসংক্রামক রোগ, যেমন- কর্কট (Cancer), বহুমূত্র (Diabetes), হৃদযন্ত্রের জটিলতা (Cardiovascular Disorder), বা সমজাতীয় রোগের প্রতিষেধকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হইবে।

পেটেন্টপ্রাপ্ত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানির বাধ্যতামূলক লাইসেন্স

৩৯।  নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানির জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে, যথা:-

(ক) যে সকল দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন অপর্যাপ্ত বা উৎপাদনে সক্ষমতা নেই, সেই সকল দেশে পেটেন্টকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ বা রপ্তানির জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ দেশ কর্তৃক বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করিতে হইবে বা, ক্ষেত্রমত, প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশ হইতে পেটেন্টকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমদানির অনুমোদন প্রদান করিতে হইবে;

(খ) মহাপরিচালক, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আবেদন প্রাপ্তির পর কেবল সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বাধ্যতামূলক লাইসেন্স মঞ্জুর করিবেন;

(গ) দফা (ক) এবং (খ) এর বিধান মোতাবেক বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের মাধ্যমে যে সকল ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য তৈরি করা হইয়াছে উহা এই আইনের প্রযোজ্য অন্য কোনো বিধান অনুযায়ী রপ্তানি করা যাইবে।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য’’ বলিতে কোনো পেটেন্টকৃত ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, বা পেটেন্টকৃত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য যাহা জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় এবং উক্ত পণ্য উৎপাদনের উপাদান এবং রোগ নির্ণয়ক কিটও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।

(ঘ) ধারা ৪০ এর উপ-ধারা ৪ এর বিধান প্রযোজ্য হইবে।

সরকার কর্তৃক উদ্ভাবন ব্যবহারের ক্ষমতা

৪০।  (১) এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অধিদপ্তরে কোনো পেটেন্টের আবেদন দাখিলের পর বা পেটেন্ট মঞ্জুরের পর, সরকার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, সরকারের প্রয়োজনে, এই ধারার বিধান মোতাবেক যে কোনো সময় উক্ত উদ্ভাবন ব্যবহার করিতে পারিবে।

ব্যাখ্যা।- “সরকারের প্রয়োজনে” বলিতে জনস্বার্থ, জনস্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবেশ, পেটেন্টকৃত পণ্যের বিদ্যমান চাহিদা, পেটেন্টকৃত পণ্যের চড়া মূল্য, সরকার কর্তৃক গেজেটভুক্ত কোনো প্রকারের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সত্ত্বেও, যে কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন সরকারের উদ্দেশ্যে ক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকারের নিকট আবেদন করিতে পারিবে, এবং এইরূপ আবেদনের ক্ষেত্রে, আবেদনের ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, আবেদনকারী ও পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীকে শুনানির সুযোগ প্রদানের পর, কারণসহ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হইবে।

(৩) কোনো উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সরকার, পেটেন্ট মঞ্জুরের পূর্বে হউক বা পরে, এই ধারার অধীন ক্ষমতা প্রদান করিতে পারিবে এবং আবেদনকারী বা পেটেন্ট স্বত্বাধিকারী কর্তৃক, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হউক বা না হউক, যে কোনো ব্যক্তিকে উক্ত উদ্ভাবন উৎপাদন, ব্যবহার, চর্চা বা বিক্রয়ের জন্য অথবা যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম বা উক্ত পেটেন্টের আওতাভুক্ত অন্য কোনো পণ্য বা ঔষধ বা ড্রাগ আমদানির জন্য এইরূপ ক্ষমতা প্রদান করা যাইবে।

(৪) সরকার এইরূপ ব্যবহারের জন্য পেটেন্ট স্বত্বাধিকারীকে ন্যায্য বিক্রির অনধিক ৪% (চার শতাংশ) পারিতোষিক প্রদান করিবে।

বাধ্যতামূলক লাইসেন্স সম্পর্কিত অধিকতর বিধান (Additional provision)

৪১।   (১) যদি ধারা ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ বা ৪০ এর কোনো একটির অধীন বাধ্যতামূলক লাইসেন্স ইস্যু করা হয়, তাহা হইলে পেটেন্ট বা পেটেন্ট আবেদনের সুরক্ষিত বিষয়বস্তু উৎপাদন, ব্যবহার, বিক্রির জন্য প্রস্তাব, বিক্রি, আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে লাইসেন্সিকে প্রাসঙ্গিক তথ্য, যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ডসিয়ার, পরীক্ষা ফলাফল বা অন্যান্য উপাত্ত সরবরাহ করিবার জন্য আবেদনকারী বা পেটেন্টিকে নির্দেশ প্রদান করা যাইবে।

(২) পেটেন্ট আবেদনকারী বা পেটেন্টি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অনুরোধ পালন করিতে অস্বীকার করিলে, কোনো রেগুলেটরি এজেন্সি, অন্য কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানকে, যাহাদের নিকট এইরূপ প্রাসঙ্গিক তথ্য, যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় ডসিয়ার, পরীক্ষা ফলাফল বা অন্যান্য উপাত্ত রহিয়াছে, উহা সরবরাহ করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs