প্রিন্ট ভিউ

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪

( ২০১৪ সনের ১৪ নং আইন )

শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরিয়া পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন

যেহেতু শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিকরণ এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উক্ত জনগোষ্ঠীর জীবিকায়ন আবশ্যক; এবং

 
 

যেহেতু উক্ত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকরণ আবশ্যক; এবং

 
 

যেহেতু বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরিয়া পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

 
 

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১। (১) এই আইন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ নামে অভিহিত হইবে।

 
 

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে।

* এস, আর, ও নং ২৫৩-আইন/২০২০, তারিখঃ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ইং দ্বারা ২২ আষাঢ়, ১৪২২ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ০৬ জুলাই, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ হতে উক্ত আইন কার্যকর ।

সংজ্ঞা
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
 
(১) ‘‘অব্যাহত শিক্ষা’’ অর্থ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মৌলিক শিক্ষার (সাক্ষরতা ও প্রাথমিক শিক্ষা এবং জীবনদক্ষতা) বাহিরে জীবিকায়ন, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও জীবনব্যাপী শিখন-প্রক্রিয়ার আওতায় উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ;
 
 
(২) ‘‘উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা’’ অর্থ এই আইনের আওতায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাহিরে ঝরিয়া পড়া ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং পদ্ধতিগতভাবে বিন্যস্ত শিখন প্রক্রিয়া যাহা জীবনব্যাপী শিক্ষা পর্যন্ত বিস্তৃত;
 
 
(৩) ‘‘কম্যুনিটি লার্নিং সেন্টার’’ অর্থ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাহিরে শহর বা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিষ্ঠিত এবং স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে পরিচালিত কম্যুনিটি এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য চাহিদাভিত্তিক বিভিন্ন রকমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত শিক্ষা কেন্দ্র;
 
 
(৪) ‘‘চেয়ারম্যান’’ অর্থে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনকারী সদস্যও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন;
 
 
(৫) ‘‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামো’’ অর্থ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামো;
 
 
(৬) ‘‘জীবনব্যাপী শিক্ষা’’ অর্থ প্রাতিষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যক্তির সমগ্রজীবনে নানা বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ যাহা চিত্তের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি, অর্জিত দক্ষতার ক্রমবিকাশ কিংবা জীবনমানের অব্যাহত উন্নয়নের সহায়ক হয় এইরূপ শিক্ষা;
 
 
(৭) ‘‘তহবিল’’ অর্থ ধারা ২৪ এর অধীন গঠিত তহবিল;
 
 
(৮) ‘‘নির্ধারিত’’ অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;
 
 
(৯) ‘‘পরিচালক’’ অর্থ বোর্ডের পরিচালক;
 
 
(১০) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;
 
 
(১১) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
 
 
(১২) ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও যুব নারী -পুরুষ’’ অর্থ ঐ সকল শিশু ও যুব নারী-পুরুষ যাহাদের নিম্নরূপ যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধিতা রহিয়াছে, যথা:-
 
 
(ক) অটিজম ও অটিজমস্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডারস;
 
 
(খ) শারীরিক প্রতিবন্ধিতা;
 
 
(গ) মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা;
 
 
(ঘ) দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা;
 
 
(ঙ) বাকপ্রতিবন্ধিতা;
 
 
(চ) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা;
 
 
(ছ) শ্রবণপ্রতিবন্ধিতা;
 
 
(জ) শ্রবণ-দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা;
 
 
(ঝ) সেরিব্রাল পালসি;
 
 
(ঞ) ডাউন সিনড্রোম;
 
 
(ট) বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতা; এবং
 
 
(ঠ) অন্য কোন প্রতিবন্ধিতা;
 
 
(১৩) ‘‘বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বা বিদ্যালয়’’ অর্থ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, জীবনব্যাপী শিক্ষা, প্রি-ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কোর্স প্রদানকারী কোন প্রতিষ্ঠান;
 
 
(১৪) ‘‘বোর্ড’’ অর্থ ধারা ১৫ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাবোর্ড;
 
 
(১৫) ‘‘ব্যুরো’’ অর্থ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো;
 
 
(১৬) ‘‘মহাপরিচালক’’ অর্থ ব্যুরোর মহাপরিচালক;
 
 
(১৭) ‘‘সদস্য’’ অর্থ বোর্ডের সদস্য এবং চেয়ারম্যানও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন;
 
 
(১৮) ‘‘সমতুল্য শিক্ষা’’ অর্থ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সমতুল্যতা নিশ্চিত করিবার জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি স্তরের জন্য নির্ধারিত মূল যোগ্যাতার সাথে সামঞ্জস্য রাখিয়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষা;
 
 
(১৯) ‘‘সাধারণ শিক্ষা’’ অর্থ Technical Education Act, 1967 (Act No. I of 1967) এর অধীনে পরিচালিত কারিগরি শিক্ষা ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা; এবং
 
 
(২০) ‘‘সাক্ষরতা’’ অর্থ পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করিতে পারা, যোগাযোগ স্থাপন করিতে পারা এবং গণনা করিতে পারা।
আইনের প্রাধান্য
৩। আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুকা না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ, শিক্ষার আওতা ও পরিধি, ইত্যাদি

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ ও বয়স-সীমা
৪। (১) প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীবিভাগ হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
 
(ক) উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা; এবং
 
 
(খ) উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষা।
 
 
(২) উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষার বয়সসীমা হইবে ৮(আট) হইতে ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর বয়সের শিশু, যাহারা কখনও স্কুলে যায় নাই বা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করিবার পূর্বেই স্কুল হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে।
 
 
(৩) উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক ও জীবনব্যাপী শিক্ষার বয়সসীমা হইবে ১৫(পনের) ও তদূর্ধ্ব বয়সের নারী-পুরুষ, যাহারা কখনও স্কুলে যায় নাই বা প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে বা নব্য-সাক্ষর হইয়াছে বা চাহিদাভিত্তিক জীবন-দক্ষতা ও জীবিকায়ন-দক্ষতা অর্জন অব্যাহত রাখিতে চায়।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
৫। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা :-
 
 
(ক) সাক্ষরতা, মৌলিক শিক্ষা বা অষ্টম শ্রেণী সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রি-ভোকেশনাল-২ স্তর পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষা;
 
 
(খ) অর্জিত সাক্ষরতা, জীবিকায়ন, দক্ষতা ও মৌলিক শিক্ষাকে শাণিত, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন;
 
 
(গ) জীবন ও জীবিকায়ন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য অব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম;
 
 
(ঘ) সকল ধরনের অব্যাহত শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ধারায় বৃত্তিমূলক, উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়তা প্রদান;
 
 
(ঙ) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম;
 
 
(চ) তথ্য প্রযুক্তি সাক্ষরতা;
 
 
(ছ) কৃষি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, বন ও পরিবেশ, মৎস্য ও পশু পালন, কুটির শিল্প, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সড়ক ব্যবহার/সড়ক নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, এইচআইভি-এইডস বা অন্য কোন জীবনঘনিষ্ট বিষয়,
 
 
(জ) প্রতিবন্ধিতা ও অটিজম।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি
৬। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিধি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
 
(ক) যে সকল শিশু বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত হইয়াছে তাহাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে সমতুল্য মানের মৌলিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(খ) কিশোর-কিশোরী, যাহারা বিভিন্ন কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় নাই কিংবা বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়িয়াছে, তাহাদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার সমতুল্য মানের মৌলিক শিক্ষার দ্বিতীয় বা বিকল্প সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(গ) শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত সকল বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য সাক্ষরতা এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-২ স্তর পর্যন্ত ভোকেশনাল শিক্ষার মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষতার ব্যবস্থা করা এবং অব্যাহত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি;
 
 
(ঘ) আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক কারণে অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, হাওড়, চর, উপকূলীয় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, চা-বাগান, বা এইরূপ কোন অনগ্রসর এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠী;
 
 
(ঙ) দুঃস্থ জনগোষ্ঠী (যেমন: পথশিশু, বস্তিবাসী, বেকার যুব নারী-পুরুষ, স্বল্প আয়ের শ্রমিক ও কর্মজীবী নারী-পুরুষ, ইত্যাদি);
 
 
(চ) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও যুব নারী-পুরুষদের জন্য বিশেষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান
৭। (১) বোর্ড কর্তৃক আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিপরীতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার শ্রেণীমান নির্ধারিত হইবে।
 
 
(২) বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনাকারী সকল ব্যক্তি, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত পাঠক্রম এবং বিষয়বস্তু অনুসরণ করিতে হইবে।
 
 
(৩) বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনাকারী সকল ব্যক্তি, সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশিক্ষণধারী শিক্ষক নিয়োগ করিতে হইবে।
 
 
(৪) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাবোর্ড সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কোর্স সমাপনকারীদের যোগ্যতা, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, যাচাইয়ের পর সনদ প্রদান করিবে।
 
 
(৫) কোন ব্যক্তি তাহার অতীত শিখনের স্বীকৃতি পাইতে চাহিলে তাহাকে সমতুল্যমান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় শিখন মান যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিতে হইবে এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত সনদের ভিত্তিতে পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে।
 
 
(৬) উপ-ধারা (৪) এর অধীন প্রাপ্ত সনদের ভিত্তিতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কোন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে এবং অনুরূপভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সনদপ্রাপ্ত কোন শিক্ষার্থী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পরবর্তী স্তরে ভর্তি হইতে পারিবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যম
৮। (১) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠদানের মাধ্যম হইবে বাংলা:
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য তাহাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিজস্ব ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করা যাইবে।
 
 
(২) বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও যুব নারী-পুরুষকে বাংলা ইশারা ভাষায় এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে পাঠদান করা যাইবে।
 
 
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, শিক্ষার্থীকে প্রয়োজন অনুযায়ী ইংরেজীসহ নির্ধারিত অন্যান্য ভাষায়ও পাঠদান করা যাইবে।

তৃতীয় অধ্যায়

পাঠক্রম ও সমতাস্থাপন

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠক্রম
৯। (১) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সমতুল্যমানের আওতাভুক্ত সকল পাঠক্রম এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-১ ও ২ স্তরের পাঠক্রম ব্যুরো কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে।
 
 
(২) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-১ ও ২ স্তরের প্রতি স্তরের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমতুল্যমানের মূল যোগ্যতা নিরূপণ এবং অনুসারে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উক্তরূপ পাঠক্রম প্রণয়ন করিতে হইবে।
 
 
(৩) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-১ ও ২ স্তরের পাঠক্রম চাকুরীর বাজার এবং নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের আলোকে প্রণীত হইবে এবং সেই অনুসারে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা, নিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করিতে হইবে।
 
 
(৪) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বাসস্তবায়নরত অথবা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নয়নে আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা চাহিদাভিত্তিক নতুন পাঠক্রম, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং তদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও উন্নয়ন করিতে পারিবে এবং পরবর্তী ৩ (তিন) বৎসরের মধ্যে ব্যুরো বরাবর উহা অনুমোদনের জন্য পেশ করিতে হইবে।
সমতামান
১০। (১) আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সমতামান নিশ্চিত করা হইবে।
 
 
(২) আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি স্তরের জন্য নির্ধারিত মূল যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রাখিয়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করা হইবে এবং উক্ত মূল যোগ্যতার ভিত্তিতে পাঠক্রম প্রণীত হইবে।

চতুর্থ অধ্যায়

বাস্তবায়ন কাঠামো

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো
১১। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো নামে একটি ব্যুরো স্থাপন করিবে, যাহার প্রধান হইবেন মহাপরিচালক।
 
 
(২) মহাপরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাহার চাকুরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে।
 
 
(৩) ব্যুরোর কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে নিয়োগ করা যাইবে।
 
 
(৪) ব্যুরোর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে এবং সরকার বাংলাদেশের যে কোন স্থানে ইহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
 
 
(৫) এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে সরকারি সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যমান উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো উপ-ধারা (১) এর অধীন স্থাপিত ব্যুরো বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত ব্যুরোতে কর্মরত মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আইনের অধীন নিযুক্ত মহাপরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলিয়া গণ্য হইবেন।
ব্যুরোর কার্যাবলী
১২। এই আইনের অধীন ব্যুরোর কার্যাবলী হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
 
(ক) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানকারী বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, অংশীদারী বেসরকারি সংস্থা, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, নিয়োগকর্তা বা সংস্থা, উদ্যোগ উন্নয়ন ও বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে সহযোগিতামূলক কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
 
 
(খ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কার্যরত বা আগ্রহী সকল সরকারি সংস্থা, বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাসমূহকে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ দক্ষতা বৃদ্ধির সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান;
 
 
(গ) সকল সরকারি সংস্থা, বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য একটি তথ্য-ভান্ডার এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Management Information System) প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা;
 
 
(ঘ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও অব্যাহত শিক্ষা প্রদানে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক উপানুষ্ঠাক শিক্ষার তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Management Information System) এর জন্য যেইরূপ তথ্য যে পদ্ধতিতে চাহিবেন সেইরূপ তথ্য প্রদান;
 
 
(ঙ) বিভিন্ন পরিবেশের, বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীদের সহজ অংশগ্রহণের সুযোগ সম্বলিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার যথাযথ বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন;
 
 
(চ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যক্রম উন্নয়নের জন্য গবেষণা পরিচালনা, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা;
 
 
(ছ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে বিষয়ভিত্তিক কমিটি ও উপ-কমিটি গঠন।
স্থানীয় সমন্বয়
১৩। (১) জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকার স্বীয় অধিক্ষেত্রে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন এবং সরকার নির্দেশিত সহযোগিতা প্রদান করিবে।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব
১৪। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিগণকে সম্পৃক্তকরণসহ বেসরকারি অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা হইবে।

পঞ্চম অধ্যায়

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা
১৫। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর, যথাশীঘ্র সম্ভব, সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা এক বা একাধিক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে।
 
 
(২) বোর্ড একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং বোর্ড ইহার নিজ নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড গঠন
১৬। (১) নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ড গঠিত হইবে, যথা :-
 
 
(ক) ব্যুরোর মহাপরিচালক, পদাধিকার বলে, যিনি ইহার চেয়ারম্যানও হইবেন;
 
 
(খ) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উক্ত মন্ত্রণালয়ের অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(গ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব, পদাধিকার বলে, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন;
 
 
(ঘ) উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক;
 
 
(ঙ) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত উক্ত অধিদপ্তরের পরিচালক বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(চ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত উক্ত অধিদপ্তরের পরিচালক বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(ছ) কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত উক্ত অধিদপ্তরের পরিচালক বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(জ) মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত উক্ত বোর্ডের পরিচালক বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(ঝ) জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা তদ্কর্তৃক মনোনীত পরিচালক বা সমপদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা;
 
 
(ঞ) সরকার কর্তৃক মনোনীত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ তিনজন প্রতিনিধি;
 
 
(ট) সরকার কর্তৃক মনোনীত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পরিচালনাকারী বেসরকারি সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী কেন্দ্রীয় সংস্থার নির্বাহী পরিচালক।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (ঞ) ও (ট) এর অধীন মনোনীত সদস্যগণ মনোনয়নের তারিখ হইতে ৩(তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন:
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার যে কোন সময় কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে তাহার মনোনয়ন বাতিল করিতে পারিবে।
 
 
(৩) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত মনোনীত কোন সদস্য চেয়ারম্যান এর নিকট লিখিত স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, চেয়ারম্যান কর্তৃক গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত কোন পদত্যাগ কার্যকর হইবে না।
মনোনীত সদস্যগণের অযোগ্যতা ও অপসারণ
১৭। ধারা ১৬ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান সত্ত্বেও সরকার বোর্ডের যে কোন মনোনীত সদস্যকে লিখিত আদেশের মাধ্যমে যে কোন সময় অপসারণ করিতে পারিবে, যদি তিনি-
 
 
(ক) এই আইনের অধীন তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদনে ব্যর্থ হন বা অস্বীকার করেন বা সরকারের বিবেচনায় দায়িত্ব সম্পাদনে অক্ষম হন; বা
 
 
(খ) সরকারের বিবেচনায় সদস্য হিসাবে তাহার পদের অপব্যবহার করেন; বা
 
 
(গ) বোর্ডের লিখিত অনুমতি ব্যতীত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজে বা কোন অংশীদারের মাধ্যমে জ্ঞাতসারে বোর্ডের পক্ষে সম্পাদিত কোন চুক্তি বা চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন শেয়ার বা স্বার্থ অর্জন করেন বা অধিকারে রাখেন।
সদস্যপদে শূন্যতার কারণে কার্য বা কার্যধারা অবৈধ না হওয়া
১৮। শুধুমাত্র কোন সদস্যপদে শূন্যতা বা বোর্ড গঠনে ক্রটি থাকিবার কারণে বোর্ডের কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না।
বোর্ডের সভা
১৯। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, বোর্ড উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
 
 
(২) বোর্ডের সভা উহার চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে ও সময়ে অনুষ্ঠিত হইবে।
 
 
(৩) প্রতি ৩(তিন) মাসে বোর্ডের অন্যূন ১(এক)টি সভা অনুষ্ঠিত হইবে, তবে জরুরী প্রয়োজনে স্বল্পতম সময়ের নোটিশে সভা আহবান করা যাইবে।
 
 
(৪) বোর্ডের সভায় কোরাম গঠনের জন্য উহার মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে, তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোন কোরামের প্রয়োজন হইবে না।
 
 
(৫) চেয়ারম্যান বোর্ডের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে সভায় উপস্থিত সদস্যগণের মধ্য হইতে মনোনীত কোন সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
 
 
(৬) বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে, তবে প্রদত্ত ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে।
বোর্ডের কার্যাবলী
২০। বোর্ডের কার্যাবলী হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
 
(ক) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-১ ও ২ স্তরের প্রতি স্তরের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমতুল্যমানের মূল যোগ্যতার ভিত্তিতে সমতুল্যমান কাঠামো অনুমোদন;
 
 
(খ) আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের সাথে সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানে আগ্রহী সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহের যোগ্যতা ও অবকাঠামোগত সুবিধা বিবেচনা করিয়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং প্রিভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের অনুমোদন প্রদান;
 
 
(গ) মানসম্মত সমতুল্যমানের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকদের জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষকদের অনুরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার নির্দিষ্টমান নির্ধারণ এবং উক্তরূপ নির্ধারিত মানের শিক্ষকদের অনুমোদন প্রদান;
 
 
(ঘ) জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল-১ ও ২ স্তরের প্রশিক্ষকদের দক্ষতার নির্দিষ্টমান নির্ধারণ এবং উক্তরূপ নির্ধারিত মানের শিক্ষকদের অনুমোদন প্রদান;
 
 
(ঙ) প্রতিষ্ঠানসমূহের যোগ্যতা ও অবকাঠামোগত সুবিধা বিবেচনা করিয়া প্রিভোকেশনাল টেস্টিং সেন্টার অনুমোদন প্রদান এবং ব্যক্তির দক্ষতা, যোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বিবেচনায় পরীক্ষক হিসাবে অনুমোদন প্রদান;
 
 
(চ) সরকার কর্তৃক নির্ধারিত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাঠামোর প্রিভোকেশনাল শিক্ষার ১ ও ২ স্তরে পরীক্ষা গ্রহণ এবং সনদ প্রদান;
 
 
(ছ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক ও গভর্ণিং বোর্ড বা ম্যানেজিং কমিটির মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির বা সালিশের ব্যবস্থা গ্রহণ;
 
 
(জ) নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় সম্পর্কে মতামত প্রদান;
 
 
(ঝ) বিদ্যমান সরকারি বিধি বিধান অনুসরণক্রমে পদ সৃষ্টি ও বিলুপ্ত করাসহ সকল প্রশাসনিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ ও তৎসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ;
 
 
(ঞ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ফি নির্ধারণ, দাবি ও গ্রহণ;
 
 
(ট) এই আইন, বিধি ও প্রবিধান দ্বারা ইহার উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবার জন্য চুক্তি সম্পাদন ও উহা বাস্তবায়ন।
কমিটি, ইত্যাদি
২১। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বোর্ড প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিটি গঠন করিতে পারিবে।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কমিটির গঠন, দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য, সভা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

৬ষ্ঠ অধ্যায়

বোর্ডের প্রধান নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ইত্যাদি

বোর্ডের প্রধান নির্বাহী ও সচিব
২২। (১) চেয়ারম্যান বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হইবেন।
 
 
(২) বোর্ডের একজন সচিব থাকিবেন, যিনি সরকারের অন্যূন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট শর্তে নিযুক্ত হইবেন।
 
 
(৩) সচিব বোর্ডের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হইবেন।
 
 
(৪) সচিব বোর্ড এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক সময় সময় তাহার উপর অর্পিত দায়িত্বসহ নির্ধারিত কার্যাবলী সম্পাদন করিবেন।
 
 
(৫) সচিব এর পদ শূন্য হইলে কিংবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে তিনি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে শূন্য পদে নবনিযুক্ত সচিব কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা সচিব পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার সচিব এর দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে তদ্‌বিবেচনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, ইত্যাদি
২৩। (১) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী বোর্ড উহার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাহাদের চাকুরির শর্তাবলী প্রবিধানমালা দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন চেয়ারম্যান, জরুরী প্রয়োজনে, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অনধিক ৩ (তিন) মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারি নিয়োগ করিতে পারিবেন।

সপ্তম অধ্যায়

বোর্ডের তহবিল, ইত্যাদি

বোর্ডের তহবিল, ইত্যাদি
২৪। (১) বোর্ডের একটি তহবিল থাকিবে এবং উহাতে নিম্নবর্ণিত উৎস হইতে অর্থ জমা হইবে, যথা:-
 
 
(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;
 
 
(খ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কোন বিদেশী সরকার, সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা হইতে প্রাপ্ত অনুদান;
 
 
(গ) বোর্ডের সম্পত্তি বিনিয়োগ হইতে অর্জিত আয়;
 
 
(ঘ) এই আইনের অধীন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সেবা বাবদ আদায়কৃত ফি; এবং
 
 
(ঙ) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অন্য কোন উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
 
 
(২) তহবিল হইতে বোর্ডের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা হইবে।
 
 
(৩) বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোন তফসিলি ব্যাংকে তহবিলের অর্থ জমা রাখা যাইবে।
 
 
(৪) তহবিলের অর্থ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা যাইবে।
 
 
(৫) সচিব এবং বোর্ডের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে তহবিলের হিসাব পরিচালিত হইবে।
বাজেট
২৫। বোর্ড প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থবৎসরের বার্ষিক বাজেট এবং রাজস্ব বাজেট বিবরণী সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থবৎসরে সরকারের নিকট হইতে কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।

অষ্টম অধ্যায়

উপদেষ্টা পরিষদ

উপদেষ্টা পরিষদ
২৬। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, জাতীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণে সরকারকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও চলমান কাজ মূল্যায়নের জন্য পেশাজীবী, বিশেষজ্ঞ, সরকারি, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করিবে।
 
 
(২) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হইবেন।
 
 
(৩) উপদেষ্টা পরিষদের কার্যপরিধি ও সভা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

নবম অধ্যায়

হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা, ইত্যাদি

হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা
২৭। (১) সরকার কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতিতে বোর্ড উহার অর্থ ব্যয়ের যথাযথ হিসাবরক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।
 
 
(২) বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহাহিসাব নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর বোর্ডের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও বোর্ডের নিকট প্রেরণ করিবেন।
 
 
(৩) উপ-ধারা (২) অনুযায়ী হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহাহিসাব নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি বোর্ডের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভান্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং বোর্ডের যে কোন সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
 
 
(৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত নিরীক্ষা ছাড়াও বোর্ড কর্তৃক প্রত্যেক অর্থবৎসরে একবার Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O.No.2 of 1973) এর Article 2 (1) (b) তে সংজ্ঞায়িত চার্টার্ড একাউনটেন্ট দ্বারা বোর্ডের হিসাব পরীক্ষিত ও নিরীক্ষিত হইবে।
 
 
(৫) প্রত্যেক অর্থ বৎসর সমাপ্তির ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে বোর্ডের হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুমোদিত হইতে হইবে।

দশম অধ্যায়

অপরাধ ও দণ্ড

অপরাধ ও দণ্ড
২৮। যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করেন বা এই আইনের অধীন দায়িত্বপালনকারী কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে তাহার দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা প্রদান করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৬(ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির প্রয়োগ
২৯। এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন কোন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপীল এবং আনুষঙ্গিক সকল বিষয়ে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898) এর বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ
৩০। মহাপরিচালক বা তদ্‌কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন মামলা বিচারার্থ গ্রহণ করিবে না।

একাদশ অধ্যায়

বিবিধ

বার্ষিক প্রতিবেদন
৩১। (১) বোর্ড প্রতি অর্থ বৎসরে উহার সম্পাদিত কার্যাবলীর বিবরণ সম্বলিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন পরবর্তী অর্থ বৎসরের ৩১ শে জানুয়ারি এর মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করিবে।
 
 
(২) সরকার প্রয়োজনমত বোর্ডের নিকট হইতে যে কোন সময় উহার যে কোন বিষয়ের উপর বিবরণী, রিটার্ন ও প্রতিবেদন আহবান করিতে পারিবে এবং বোর্ড উহা সরকারের নিকট সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।
ক্ষমতা অর্পণ
৩২। (১) বোর্ড এই আইন বা ইহার অধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধানে নির্ধারিত শর্তাধীনে, চেয়ারম্যান বা কোন কর্মকর্তাকে ইহার যে কোন ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে।
 
 
(২) চেয়ারম্যান এই আইন বা ইহার অধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধান অনুযায়ী তাহার উপর অর্পিত, উপ-ধারা (১) এর অধীন চেয়ারম্যানকে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যতীত, যে কোন ক্ষমতা বোর্ডের যে কোন কর্মকর্তাকে অর্পণ করিতে পারিরেন।
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
৩৩। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
৩৪। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বোর্ড, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ
৩৫। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
 
 
(২) বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs