প্রিন্ট ভিউ

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬

( ২০১৬ সনের ২ নং আইন )

রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠন এবং উহার নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইন পরিমার্জনপূর্বক নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন), অতঃপর ‘‘পঞ্চদশ সংশোধনী’’ বলিয়া উল্লিখিত, দ্বারা সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১নং আইন) বিলুপ্তির ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক ফরমান দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহ, অতঃপর ‘‘উক্ত অধ্যাদেশসমূহ’’ বলিয়া উল্লিখিত, অনুমোদন ও সমর্থন (ratification and confirmation) সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ৩ ক এবং ১৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পায়; এবং
 
 
 
 
যেহেতু সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং ১০৪৪-১০৪৫/২০০৯ এ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ার ফলশ্রুতিতেও উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পায়; এবং
 
 
 
 
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহ ও উহাদের অধীনে প্রণীত বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন ইত্যাদি প্রজাতন্ত্রের কর্মের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন, জনগণের অর্জিত অধিকার সংরক্ষণ এবং বহাল ও অক্ষুণ্ণ রাখিবার নিমিত্ত, জনস্বার্থে, উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা প্রদান আবশ্যক; এবং
 
 
 
 
 
 
যেহেতু দীর্ঘ সময় পূর্বে জারিকৃত উক্ত অধ্যাদেশসমূহ যাচাই-বাছাইপূর্বক যথানিয়মে নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করা সময় সাপেক্ষ; এবং
 
 
 
 
যেহেতু পঞ্চদশ সংশোধনী এবং সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের প্রদত্ত রায়ের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট আইনী শূন্যতা সমাধানকল্পে সংসদ অধিবেশনে না থাকাবস্থায় আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হওয়ায় তিনি ২১ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে ২০১৩ সনের ১নং অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন; এবং
 
 
 
 
 
 
যেহেতু সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা পূরণকল্পে উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখিবার স্বার্থে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৬ নং আইন) প্রণীত হইয়াছে; এবং
 
 
 
 
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া যে সকল অধ্যাদেশ আবশ্যক বিবেচিত হইবে সেইগুলি সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলা ভাষায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত রহিয়াছে; এবং
 
 
 
 
যেহেতু সরকারের উপরিবর্ণিত সিদ্ধান্তের Railway Nirapatta Bahini Ordinance, 1976 (Ordinance No. XLVII of 1976) এর বিষয়বস্তু বিবেচনাক্রমে উহা পরিমার্জনপূর্বক রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠন এবং উহার নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও পরিচালনার জন্য নূতনভাবে আইন প্রণয়ন সমীচীন ও প্রয়োজন;
 
 
 
 
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬ নামে অভিহিত হইবে।
 
 
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
২। (১) বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
 
(১) ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা’’ অর্থ ধারা ৫ এর অধীন নিযুক্ত বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট, কমান্ড্যান্ট এবং সহকারী কমান্ড্যান্ট পদবীর যে কোনো কর্মকর্তা;
 
 
(২)‘‘চীফ কমান্ড্যান্ট’’ অর্থ বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট;
 
 
(৩)‘‘বাহিনী’’ অর্থ ধারা ৪ এর অধীন গঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী;
 
 
(৪)‘‘বাহিনীর সদস্য’’ অর্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যতীত ধারা ৬ এ উল্লিখিত বাহিনীতে নিযুক্ত যে কোনো ব্যক্তি;
 
 
(৫)‘‘বিধিমালা’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালা;
 
 
(৬) ‘‘রেলওয়ে সম্পত্তি’’ অর্থ রেলওয়ে প্রশাসনের মালিকানাধীন বা জিম্মায় বা অধিকারে যে কোনো মালামাল, অর্থ, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, মূল্যবান জামানত বা প্রাণী।
 
 
(২) এই আইনে ব্যবহৃত যে সকল শব্দ বা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই, সেই সকল শব্দ বা অভিব্যক্তি Railway Act, 1890 (Act No. IX of 1890) এ যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে প্রযোজ্য হইবে।
আইনের প্রাধান্য
৩। আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গঠন
৪। (১) Railway Nirapatta Bahini Ordinance, 1976 (Ordinance No. XLVII of 1976) এর অধীন গঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন গঠিত হইয়াছে।
 
 
(২) নির্ধারিত সংখ্যক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্য সমন্বয়ে বাহিনী গঠিত হইবে।
 
 
(৩) রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২ অনুসারে শৃঙ্খলা-বাহিনী যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে একটি শৃঙ্খলা-বাহিনী হইবে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ
৫। সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি এবং শর্তাধীনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।
বাহিনীর সদস্যদের শ্রেণী ও পদমর্যাদা
৬। বাহিনীর সদস্যদের পদমর্যাদা নিম্নবর্ণিত শ্রেণী এবং ক্রমানুসারে হইবে, যথা:-
 
 
(ক) কর্মকর্তার শ্রেণী -
 
 
(১) চীফ ইন্সপেক্টর;
 
 
(২) ইন্সপেক্টর;
 
 
(৩) সাব-ইন্সপেক্টর; এবং
 
 
(৪) সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর;
 
 
(খ) অন্যান্য পদমর্যাদার শ্রেণী -
 
 
(১) হাবিলদার;
 
 
(২) নায়েক; এবং
 
 
(৩) সিপাহী।
বাহিনীর সদস্য নিয়োগ
৭। (১) চীফ কমান্ড্যান্ট, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি এবং শর্তে, বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করিবেন :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, চীফ কমান্ড্যান্ট কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এই ধারার অধীন বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করিতে পারিবেন।
 
 
(২) নিয়োগ প্রাপ্তির পর বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য এই আইনের তফসিল মোতাবেক চাকুরিতে নিযুক্তির সনদ পাইবেন এবং কোনো কারণে তাহার নাম বাহিনীর সদস্য বা বাহিনী হইতে বাদ দেওয়া হইলে, উক্ত সনদ বাতিল হইয়া যাইবে।
বাহিনীর তত্ত্বাবধান এবং প্রশাসন
৮। (১) বাহিনীর তত্ত্বাবধান সরকারের উপর ন্যস্ত থাকিবে।
 
 
(২) বাহিনীর প্রশাসন চীফ কমান্ড্যান্টের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং তিনি এই আইন এবং বিধি অনুযায়ী, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক এর তত্ত্বাবধানে, কার্য সম্পাদন করিবেন।
 
 
(৩) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই আইনের অধীন প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাহিনীর সদস্যদের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কর্তৃত্ব করিবেন।
বাহিনীর সদস্যের শাস্তি
৯। (১) বাহিনীর কোনো সদস্য অবাধ্য, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ, দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা বা শিথিলতা বা অন্য কোনো কার্যের দ্বারা নিজেকে কর্তব্য পালনে অযোগ্য প্রতিপন্ন করিবার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হইলে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, কারণ উল্লেখপূর্বক, নিম্নবর্ণিত যে কোনো এক বা একাধিক শাস্তি প্রদান করিতে পারিবেন, যথা:
 
 
(ক) বরখাস্ত;
 
 
(খ) অপসারণ;
 
 
(গ) বাধ্যতামূলক অবসর;
 
 
(ঘ) পদাবনমিত;
 
 
(ঙ) পদোন্নতি স্থগিতকরণ;
 
 
(চ) অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসরের জন্য জ্যেষ্ঠতা স্থগিতকরণ;
 
 
(ছ) অনূর্ধ্ব ১ (এক) মাসের বেতন ও ভাতাদি বাজেয়াপ্তকরণ;
 
 
(জ) বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ;
 
 
(ঝ) অনূর্ধ্ব ১ (এক) মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা;
 
 
(ঞ) অনূর্ধ্ব ১৪ (চৌদ্দ) দিনের কোয়ার্টার গার্ডে আটক রাখাসহবা ব্যতীত ড্রিল (Drill), এক্সট্রা গার্ড (Extra Guard), ফ্যাটিগ (Fatigue) বা অন্য ডিউটি প্রদান; বা
 
 
(ট) তিরস্কার।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) অনুসারে বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকালে তদন্ত করিবার প্রয়োজন হইলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করিতে পারিবেন এবং সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তাহার চাকুরির সনদ অকার্যকর থাকিবে।
 
 
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে-
 
 
(ক) চীফ কমান্ড্যান্ট কর্তৃক আদেশ প্রদত্ত হইয়া থাকিলে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ; এবং
 
 
(খ) কমান্ড্যান্ট বা সহকারী কমান্ড্যান্ট কর্তৃক আদেশ প্রদত্ত হইয়া থাকিলে, চীফ কমান্ড্যান্ট এর নিকট;
 
 
আপিল করা যাইবে।
 
 
(৪) এই ধারার অধীন প্রদত্ত আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।
রেলওয়ে কর্মচারী বলিয়া গণ্য
১০। এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্য Railway Act, 1890 (Act No. IX of 1890) এর অধ্যায় VIA ব্যতীত অন্য সকল অর্থে রেলওয়ে কর্মচারী বলিয়া গণ্য হইবেন এবং রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য প্রদত্ত সুবিধাদির অধিকারী হইবেন এবং রেলওয়ে কর্মচারীদের ন্যায় ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্যদের কর্তব্য
১১। প্রত্যেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্যের দায়িত্ব হইবে নিম্নরূপ, যথা:
 
 
(ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনসঙ্গতভাবে প্রদত্ত সকল আদেশ অবিলম্বে প্রতিপালন করা;
 
 
(খ) রেলওয়ে সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা প্রদান এবং রক্ষা করা;
 
 
(গ) রেলওয়ে চলাচলে যে কোনো বাধা দূর করা;
 
 
(ঘ) রেলওয়ে যাত্রী এবং যাত্রী এলাকার অধিকতর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে পুলিশকে সহায়তা প্রদান করা;
 
 
(ঙ) Railway Act, 1890 (Act No. IX of 1890) এর বিধান অনুযায়ী রেলওয়ে কর্মচারীর উপর অর্পিত দায়িত্ব, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পালন করা;
 
 
(চ) রেলওয়ে এলাকায় আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, ক্ষেত্রমত, আইন প্রয়োগকারী শৃঙ্খলা বাহিনী, সংস্থা এবং প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা; এবং
 
 
(ছ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, অর্পিত বা নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করা।
 
 
ব্যাখ্যা। দফা (ঘ) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে-
 
 
(ক) ‘‘যাত্রী’’ অর্থে বৈধ টিকেট বা পাশ দ্বারা ট্রেনে ভ্রমণকারী ব্যক্তি; এবং
 
 
(খ) ‘‘যাত্রী এলাকা’’ অর্থ রেলওয়ে স্টেশন, প্লাটফরম, ইয়ার্ড ও ট্রেন এবং যাত্রী সাধারণ কর্তৃক বহুল ব্যবহৃত হয় এমন এলাকাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
পরোয়ানা ব্যতীত তল্লাশি, গ্রেফতার, ইত্যাদি করিবার ক্ষমতা
১২। (১) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ব্যতীত, নিম্নবর্ণিত কারণে যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিতে পারিবেন, যদি-
 
 
(ক) রেলওয়ে সম্পত্তির বিষয়ে ৬ (ছয়) মাসের ঊর্ধ্বে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধের সহিত উক্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা থাকে বা রহিয়াছে বলিয়া যুক্তিসঙ্গতসন্দেহ হয়; বা
 
 
(খ) যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, রেলওয়ে সম্পত্তি চুরি বা ক্ষতিসাধন ও অপরাধ সংঘটন করিবার উদ্দেশ্যে উক্ত ব্যক্তি রেলওয়ে সীমানার মধ্যে আত্মগোপন করিবার প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেছিল।
 
 
(২) যদি কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা হাবিলদার পদমর্যাদার নিম্নে নহেন এমন কোনো বাহিনীর সদস্যের বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে, কোন ব্যক্তি কর্তৃক উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে এবং তল্লাশি পরোয়ানা সংগ্রহ করিবার প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে অপরাধী পলায়ন করিতে পারে বা অপরাধের আলামত নষ্ট করিতে পারে, তাহা হইলে তিনি, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ব্যতীত, তাহাকে আটক এবং তৎক্ষণাৎ তাহার দেহ ও তাহার দখলে থাকা মালামাল তল্লাশি করিতে পারিবেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিতে পারিবেন।
 
 
(৩) এই ধারার অধীন তল্লাশি বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এর বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
গ্রেফতার পরবর্তী কার্যক্রম
১৩। কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য ধারা ১২ এর অধীন কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিলে, উক্ত গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র সম্ভব কোনো পুলিশ কর্মকর্তার নিকট বা, পুলিশ কর্মকর্তা না থাকিলে, নিকটতম থানায় হাজির করিবেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাহিনীর সদস্যগণের কর্তব্য পালন
১৪। (১) প্রত্যেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্য, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে সার্বক্ষণিক কর্তব্যরত বলিয়া গণ্য হইবেন এবং যে কোনো সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের যে কোনো অংশে দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকিবেন।
 
 
(২) কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য এই আইনের অধীন নির্ধারিত দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কর্তব্য ব্যতীত অন্য কোনো কার্যে নিজেকে নিযুক্ত করিতে পারিবেন না।
অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন
১৫। সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশ ও আরোপিত শর্ত সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, বাহিনীর সদস্যগণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন ও অস্ত্রসহ কর্তব্য পালন করিতে পারিবেন।
বাক-স্বাধীনতা, সংগঠন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, ইত্যাদি সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতা
১৬। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাহিনীর সদস্যগণ
 
 
(ক) অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনোট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাজনৈতিক সংগঠন বা শ্রেণিভুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন বা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করিতে অথবা উহার সদস্য বা কর্মকর্তা হইতে পারিবেন না, বা উহার সহিত কোনো প্রকারের সংশ্রব রাখিতে পারিবেন না;
 
 
(খ) কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সংবাদপত্র বা কোনো প্রকার প্রকাশনায় কোনো সংবাদ, পুস্তক, চিঠি বা অন্য কোনো প্রকার দলিল প্রকাশ বা প্রকাশে সহযোগিতা করিবেন না বা প্রকাশ করিবার কারণ হইবেন না; বা
 
 
(গ) কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে গঠিত সংগঠনের কোনো মিছিল, সমাবেশ বা সভায় অংশগ্রহণ বা বক্তব্য প্রদান করিবেন না বা অন্যের দ্বারা করাইবার উদ্যোগ গ্রহণ করিবেন না :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার বা চীফ কমান্ড্যান্ট বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পূর্বানুমোদন গ্রহণ সাপেক্ষে পেশা সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধি বা বাহিনীর স্বার্থে পেশাজীবী সংঘ বা সংগঠনের সদস্য হইতে এবং উপ-ধারা (খ) এ বর্ণিত কার্য করিতে পারিবেন।
দণ্ড
১৭। ধারা ৯ এ বর্ণিত বিধানের সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, বাহিনীর কোনো সদস্য যদি
 
 
(ক) প্রহরাবস্থায় কোনো চৌকি, ইউনিট বা পোস্ট বা প্রহরাস্থল বিনা অনুমতিতে পরিত্যাগ করেন বা উক্ত কার্য করিতে বাহিনীর অন্য কোন সদস্যকে বাধ্য বা প্ররোচনা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
 
 
(খ) ধারা ১২ এর অধীন দায়িত্ব পালন না করেন বা অপরাধীদের সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ;
 
 
(গ) তাহার অস্ত্র, গোলাবারুদ, যন্ত্রপাতি, সাজ-সরঞ্জাম, পোশাক-পরিচ্ছদ বা অন্য কোনো সামগ্রী, যাহা সরকারি বা বাহিনীর সম্পত্তি অথবা রেলওয়ে সম্পত্তি, ইচ্ছাকৃতভাবে বিনষ্ট করেন বা হারাইয়া ফেলেন বা পরিত্যাগ করেন বা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ;
 
 
(ঘ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আইনসংগত আদেশ অমান্য করেন বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রতি অপরাধজনক বল প্রয়োগ ও হুমকি প্রদান করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন ;
 
 
(ঙ) দফা (ক), (খ), (গ) ও (ঘ) এ উল্লিখিত অপরাধ ব্যতীত অন্য কোন অপরাধ করেন, তাহা হইলে, তিনি দেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দণ্ডিত হইবেন।
 
 
ব্যাখ্যা। দফা (ক) এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে-
 
 
(ক) ‘‘ইউনিট বা পোস্ট’’ অর্থ বাহিনীর সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কোনো ইউনিট বা পোস্ট; এবং
 
 
(খ) ‘‘চৌকি’’ অর্থ রেলওয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর কোনো ইউনিট বা পোস্ট যে স্থান হইতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, তদন্ত ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ
১৮। চীফ কমান্ড্যান্ট বা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ করিবে না।
আমলযোগ্যতা
১৯। এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধ আমলযোগ্য (cognizable) হইবে।
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সীমাবদ্ধতা
২০। অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক, এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত বা সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হইলে উক্ত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধ সংঘটিত হইবার ৩ (তিন) মাসের মধ্যে কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারী কার্যক্রম দায়ের করিতে হইবে এবং কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারী কার্যক্রম দায়েরের অন্যূন ১ (এক) মাস পূর্বে এতদসংক্রান্ত লিখিত নোটিশ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্য এবং তাহার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে প্রদান করিতে হইবে।
সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ
২১। এই আইনের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজকর্মের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা তাহার ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে তজ্জন্য সরকার, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা বা অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা যাইবে না।
বিধিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা
২২। এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে।
রহিতকরণ ও হেফাজত
২৩। (১) এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে Railway Nirapatta Bahini Ordinance, 1976 ( Ordinance No. XLVII of 1976) রহিত হইবে।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত Ordinance এর অধীন-
 
 
(ক) কৃত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা চলমান কোন কার্যক্রম এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা চলমান বলিয়া গণ্য হইবে;
 
 
(খ) গঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সদস্য বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাহিনীর সদস্য হিসাবে গণ্য হইবেন এবং এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে তাহারা যে শর্তে চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন সেই সকল শর্তে নিযুক্ত থাকিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহাদের চাকুরির শর্তাবলী পরিবর্তিত হয়;
 
 
(গ) গঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সকল অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তি বাহিনীর নিকট তৎক্ষণাৎ স্থানান্তরিত এবং অর্পিত হইবে;
 
 
(ঘ) প্রণীত বিধি, এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত, বলবৎ থাকিবে;
 
 
(ঙ) দায়েরকৃত কোনো মামলা বা কার্যধারা কোনো আদালতের নিকট চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে যেন উক্ত Ordinance রহিত হয় নাই; এবং
 
 
(চ) বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় কার্যধারা চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে যেন উক্ত Ordinance রহিত হয় নাই।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs