প্রিন্ট ভিউ

রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬

( ২০১৬ সনের ৩৫ নং আইন )

Railway Property (Unlawful Possession) Ordinance, 1979 এর বিষয়বস্তু বিবেচনাক্রমে উহা পরিমার্জনপূর্বক নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন), অতঃপর ‘‘পঞ্চদশ সংশোধনী’’ বলিয়া উল্লিখিত, দ্বারা সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১ নং আইন) বিলুপ্তির ফলশ্রুতিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক ফরমান দ্বারা জারীকৃত অধ্যাদেশসমূহ, অতঃপর ‘‘উক্ত অধ্যাদেশসমূহ’’ বলিয়া উল্লিখিত, অনুমোদন ও সমর্থন (ratification and confirmation) সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ৩ক ও ১৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পায়; এবং
 
 
 
 
যেহেতু সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপিল নং ১০৪৪-১০৪৫/২০০৯ তে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ার ফলশ্রুতিতেও উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পায়; এবং
 
 
 
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহ ও উহাদের অধীন প্রণীত বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন ইত্যাদি প্রজাতন্ত্রের কর্মের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন, জনগণের অর্জিত অধিকার সংরক্ষণ এবং বহাল ও অক্ষুণ্ণ রাখিবার নিমিত্ত, জনস্বার্থে, উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা প্রদান করা আবশ্যক; এবং
 
 
 
 
যেহেতু দীর্ঘসময় পূর্বে জারীকৃত উক্ত অধ্যাদেশসমূহ যাচাই-বাছাইপূর্বক যথানিয়মে নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করা সময়সাপেক্ষ; এবং
 
 
 
 
যেহেতু পঞ্চদশ সংশোধনী এবং সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রদত্ত রায়ের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট আইনি শূন্যতা সমাধানকল্পে সংসদ অধিবেশনে না থাকাবস্থায় আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হওয়ায় তিনি ২১ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে ২০১৩ সনের ১নং অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন; এবং
 
 
 
 
যেহেতু সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদের নির্দেশনা পূরণকল্পে উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখিবার স্বার্থে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারীকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ০৬নং আইন) প্রণীত হইয়াছে; এবং
 
 
 
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া যে সকল অধ্যাদেশ আবশ্যক বিবেচিত হইবে সেইগুলি সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলা ভাষায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত রহিয়াছে; এবং
 
 
 
যেহেতু সরকারের উপরি-বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে Railway Property (Unlawful Possession) Ordinance, 1979 (Ordinance No. XVII Of 1979) শীর্ষক অধ্যাদেশটির বিষয়বস্তু বিবেচনাক্রমে উহা পরিমার্জনপূর্বক নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
 
 
 
 
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬ নামে অভিহিত হইবে।
 
 
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
২। (১) বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
 
(ক) ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা’’ অর্থ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইনের অধীন নিযুক্ত বাহিনীর চিফ কমান্ড্যান্ট, কমান্ড্যান্ট এবং সহকারী কমান্ড্যান্ট পদবির যে কোন কর্মকর্তা;
 
 
(খ) ‘‘বাহিনী’’ অর্থ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইনের ধারা ৪ এর অধীন গঠিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী;
 
 
(গ) ‘‘বাহিনীর কর্মকর্তা’’ অর্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বাহিনীর অন্যূন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তা;
 
 
(ঘ) ‘‘বাহিনীর সদস্য’’ অর্থ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যতীত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইনের ধারা ৬ এর অধীন বাহিনীতে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি;
 
 
(ঙ) ‘‘রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন’’ অর্থ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০১৬ (২০১৬ সনের ২নং আইন);
 
 
(চ) ‘‘রেলওয়ে সম্পত্তি’’ অর্থে রেলওয়ে প্রশাসনের মালিকানাধীন বা জিম্মায় বা অধিকারে যে কোনো মালামাল, অর্থ, মূল্যবান জামানত বা প্রাণি অন্তর্ভুক্ত হইবে।
 
 
(২) এই আইনে ব্যবহৃত যে সকল শব্দ বা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই, সেই সকল শব্দ বা অভিব্যক্তি Railway Act, 1890 (Act No. IX of 1890) এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইনে যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে প্রযোজ্য হইবে।
আইনের প্রাধান্য
৩। আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।
রেলওয়ে সম্পত্তি চুরি, অবৈধ দখল, ইত্যাদির দণ্ড
৪। কোনো ব্যক্তি রেলওয়ে সম্পত্তি চুরি করিলে বা অবৈধভাবে অর্জন করিলে বা দখল করিলে বা দখলে রাখিলে উহা একটি অপরাধ হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হইবেন।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারীর দণ্ড
৫। কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হইবেন।
আপীল
৬। এই আইনের ধারা ৪ ও ৫ এর অধীন কোন দণ্ড আরোপের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আপীল দায়ের করিতে পারিবেন।
অপরাধের আমলযোগ্যতা
৭। এই আইনের অধীন অপরাধ আমলযোগ্য (congnizable) হইবে।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা, ইত্যাদি
৮। (১) বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধে জড়িত রহিয়াছেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করিতে পারিবেন।
 
 
(২) সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নের বাহিনীর কোনো সদস্য উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিলে অনতিবিলম্বে তাহাকে নিকটবর্তী বাহিনীর কর্মকর্তার নিকট হাজির করিতে হইবে।
তদন্ত, ইত্যাদি
৯। (১) বাহিনীর কর্মকর্তা ধারা ৮ এর অধীন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করিবেন।
 
 
(২) এই আইনের অধীন তদন্তের বিষয়ে বাহিনীর কর্মকর্তার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা থাকিবে :
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, বাহিনীর কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে-
 
 
(ক) অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের স্বপক্ষে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য বা সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে স্থানীয় অধিক্ষেত্রসম্পন্ন আদালতে চালান দিতে পারিবেন অথবা, জামিনদারসহ বা জামিনদার ব্যতীত, আদালতে হাজির হইবার শর্তে, একটি মুচলেকা সম্পাদনের পর ছাড়িয়া দিতে পারিবেন; অথবা
 
 
(খ) অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের স্বপক্ষে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ বা সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই, তাহা হইলে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে একটি মুচলেকা সম্পাদনের পর ছাড়িয়া দিতে পারিবেন।
সমন জারির ক্ষমতা
১০। (১) তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে বাহিনীর কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ, দলিল দাখিল বা কোনো ব্যক্তির উপস্থিতির প্রয়োজন মনে করিলে, উক্তরূপ ব্যক্তির উপর সমন জারি করিতে পারিবেন।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন সমন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে সমনে উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে বাহিনীর কর্মকর্তার সম্মুখে হাজির হইবেন:
 
 
তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীন হাজির হইবার ক্ষেত্রে Code of Civil Procedure, 1908 (Act No. V of 1908) এর section 132 এবং 133 এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
 
 
(৩) এই ধারার অধীন যে কোনো কার্যক্রম Penal Code, 1860 (Act No. XLV of 1860) এর section 193 এবং section 228 এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিচারিক কার্যক্রম বলিয়া গণ্য হইবে।
তল্লাশি, ইত্যাদি
১১। (১) কোনো স্থান চুরিকৃত বা অবৈধভাবে অর্জিত রেলওয়ে সম্পত্তি জমা বা বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হইতেছে বলিয়া বাহিনীর কর্মকর্তার বিশ্বাস করিবার কারণ থাকিলে, তিনি সংশ্লিষ্ট আদালতের নিকট উক্ত স্থান তল্লাশি করিবার জন্য আবেদন করিবেন।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর আদালত স্বীয় বিবেচনায় বাহিনীর যে কোনো কর্মকর্তাকে পরোয়ানার মাধ্যমে নিম্নবর্ণিতভাবে তল্লাশির আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন, যথা:
 
 
(ক) উক্ত স্থানে প্রবেশের সকল প্রকার সম্ভাব্য সহায়তা করিবার;
 
 
(খ) পরোয়ানায় বর্ণিত পদ্ধতিতে তল্লাশি করিবার;
 
 
(গ) চুরিকৃত বা অবৈধভাবে অর্জিত বা দখলকৃত রেলওয়ে সম্পত্তির দখল গ্রহণ করিবার; এবং
 
 
(ঘ) উক্তরূপ প্রাপ্ত রেলওয়ে সম্পত্তি আদালতের নিকট সোপর্দ করা বা ঘটনাস্থলে উক্ত মালামাল প্রহরার ব্যবস্থা গ্রহণ বা অন্য যে কোনো নিরাপদ স্থানে উক্ত মালামালের হেফাজতকরণ।
 
 
(৩) এই ধারার অধীন তল্লাশির ক্ষেত্রে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এ বর্ণিত তল্লাশির বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট বস্তু, যন্ত্রপাতি, যানবাহন, ইত্যাদির বাজেয়াপ্তি
১২। এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত বস্তু, যন্ত্রপাতি, প্রাণি, গাড়ি, যানবাহন, ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করা যাইবে এবং উহা রেলওয়ে সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হইবে।
রহিতকরণ ও হেফাজত
১৩। (১) Railway Property (Unlawful Possession) Ordinance, 1979 (Ordinance No. XVII of 1979), অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
 
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত Ordinance এর অধীন-
 
 
(ক) কৃত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা চলমান কোনো কার্যক্রম এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা চলমান বলিয়া গণ্য হইবে;
 
 
(খ) দায়েরকৃত কোনো মামলা বা কার্যধারা কোনো আদালতের নিকট চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে যেন উক্ত Ordinance রহিত হয় নাই।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs