প্রিন্ট ভিউ

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭

( ২০১৭ সনের ১৭ নং আইন )

বাংলাদেশে মোটরযান ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, পরিকল্পিত ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং তদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু বাংলাদেশের মোটরযান ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু, পরিকল্পিত ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং তদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
 
 
 
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-
 
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১। (১) এই আইন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭ নামে অভিহিত হইবে।

 
 
 

*(২) সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে।

 

 

 

* এস, আর, নং ৩৪২-আইন/২০১, তারিখঃ ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ইং দ্বারা ১৬ কার্তিক, ১৪২ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১ নভেম্বর, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ হতে উক্ত আইন কার্যকর

সংজ্ঞা
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
(ক) ‘‘আউট সোর্সিং’’ অর্থ কর্তৃপক্ষের কোনো বিশেষায়িত কাজ বা সেবা সরকারের বিধি-বিধান অনুসরণ করিয়া কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দ্বারা সম্পন্ন করা;
 
(খ) ‘‘উপদেষ্টা পরিষদ’’ অর্থ ধারা ১০ এর অধীন গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ;
 
(গ) ‘‘কর্তৃপক্ষ’’ অর্থ ধারা ৪ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ;
 
(ঘ) ‘‘কোম্পানি’’ অর্থ কোম্পানি আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি;
 
(ঙ) ‘‘চেয়ারম্যান’’ অর্থ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান;
 
(চ) ‘‘পরিচালনা পরিষদ’’ অর্থ ধারা ১৩ এর অধীন গঠিত পরিচালনা পরিষদ;
 
(ছ) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ ধারা ২৬ এর অধীন প্রণীত প্রবিধান;
 
(জ) ‘‘বিধি’’ অর্থ ধারা ২৫ এর অধীন প্রণীত বিধি;
 
(ঝ) ‘‘সদস্য’’ অর্থ এই আইনের অধীন গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ বা পরিচালনা পরিষদের কোন সদস্য; এবং
 
(ঞ) ‘‘সভাপতি’’ অর্থ উপদেষ্টা পরিষদ অথবা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি।
আইনের প্রাধান্য
৩। আপাতত কার্যকর অন্য কোনো আইন, চুক্তি বা আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন অন্য কোনো দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।
কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা
৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে Motor Vehicles Ordinance, 1983 (Ord. No. LV of 1983) এর Chapter IA এর section 2A এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Bangladesh Road Transport Authority (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ) এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত।
 
(২) কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।
কর্তৃপক্ষের কার্যালয়
৫। (১) কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।
 
(২) কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে উহার অধস্তন বা শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
৬। কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হইবে নিম্নরূপ যথা:-
 
(ক) আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর, সুশৃঙ্খল ও দক্ষ সড়ক পরিবহন সেবা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা;
 
(খ) সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব করিয়া গড়িয়া তোলা;
 
(গ) সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কারিগরি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ চালক সৃষ্টি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকরণ।
কর্তৃপক্ষের প্রশাসন ও কার্যক্রম পরিচালনা
৭। (১) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের প্রশাসন ও কার্যক্রম পরিচালিত হইবে।
 
(২) কর্তৃপক্ষ উহার প্রশাসন ও কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন, বিধি, প্রবিধান ইত্যাদি এবং পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করিবে।
কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি
৮। কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
(ক) মোটরযান চালনার ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং ইনস্ট্রাক্টর লাইসেন্স, রুটপারমিট ইত্যাদি প্রদান;
 
(খ) মোটরযান প্রস্তুতকারী ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযান বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, মোটরযান ওয়ার্কশপ, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল, মোটরযান দূষণ পরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির রেজিস্ট্রেশন প্রদান;
 
(গ) যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ সার্ভিস কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ;
 
(ঘ) সরকারি মোটরযান মেরামত ও অকেজো ঘোষণার নিমিত্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রদান;
 
(ঙ) সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত মোটরযানের পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রদান;
 
(চ) সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত কার্যক্রম গ্রহণ;
 
(ছ) ট্রাফিক চিহ্ন, সংকেত, গতিসীমা ইত্যাদি নির্ধারণ;
 
(জ) ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) অধিক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় সমন্বিত রুটনেটওয়ার্ক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
 
(ঝ) মোটরযানের টাইপ ও শ্রেণির নমুনা অনুমোদন এবং তদনুযায়ী নির্মাণ ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ;
 
(ঞ) মোটরযানের এক্সেল লোড ও ওজনসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ;
 
(ট) আঞ্চলিক পরিবহণ কমিটি গঠন ও ইহার কার্যক্রম তদারকি, পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়;
 
(ঠ) মোটরযানের কর ও ফি আদায় এবং সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে মোটরযানের ফি নির্ধারণ;
 
(ড) গণপরিবহণের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন;
 
(ঢ) যে কোন এলাকা বা অধিক্ষেত্রের মধ্যে সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে মোটরযান ও গণপরিবহণের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ;
 
(ণ) উপরি-উক্ত কোন বিষয়ের সহিত প্রাসঙ্গিক অন্য যে কোন কাজ; এবং
 
(ত) সরকার কর্তৃক সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো আইন, বিধি, প্রবিধান দ্বারা প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব।
কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা
৯। কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
(১) সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে মোটরযান ও ইহার চালককে যেইরূপ উপযুক্ত মনে করিবে সেইরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হইতে বাধ্য করিতে পারিবে এবং যেইরূপ যথাযথ মনে করিবে সেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
 
(২) কর্তৃপক্ষ ইহার অধঃস্তন কোন কার্যালয় কর্তৃক ইস্যুকৃত মোটরযান নিবন্ধন সনদ, ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি পুনঃ পর্যালোচনা করিয়া যেইরূপ নির্দেশ প্রদান করিবে অধঃস্তন কার্যালয় সেইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
উপদেষ্টা পরিষদ ও উহার গঠন
১০। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকিবে এবং উক্ত উপদেষ্টা পরিষদ নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা:-
 
(ক) মন্ত্রী, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
 
(খ) মেয়র, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন;
 
(গ) মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন;
 
(ঘ) সচিব, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ;
 
(ঙ) সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়;
 
(চ) সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ;
 
(ছ) সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়;
 
(জ) সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়;
 
(ঝ) সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়;
 
(ঞ) সচিব, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়;
 
(ট) সচিব, সেতু বিভাগ;
 
(ঠ) মহাপুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ;
 
(ড) প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর;
 
(ঢ) নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ;
 
(ণ) সরকার কর্তৃক মনোনীত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি;
 
(ত) সরকার কর্তৃক মনোনীত সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির একজন প্রতিনিধি;
 
(থ) সরকার কর্তৃক মনোনীত সড়ক পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের একজন প্রতিনিধি; এবং
 
(দ) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।
 
(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত উদ্দেশ্য ও মেয়াদের জন্য যে কোনো ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসাবে কো-অপ্ট করিতে পারিবে।
উপদেষ্টা পরিষদের কার্যাবলি, ইত্যাদি
১১। (১) উপদেষ্টা পরিষদের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
(ক) কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি নির্ধারণ;
 
(খ) স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন;
 
(গ) সড়ক নিরাপত্তা বিধানে কৌশল উদ্ভাবন এবং বাস্তবায়নের দিক-নির্দেশনা প্রদান;
 
(ঘ) দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে পরামর্শ প্রদান;
 
(ঙ) আন্তঃমন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির সমন্বয় সাধন;
 
(চ) পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ;
 
(ছ) জনবান্ধব, ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী দক্ষ গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান;
 
(জ) সরকার কর্তৃক সময় সময় প্রেরিত বিষয়াদি নিষ্পত্তিকরণ।
 
(২) উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক প্রণীত নীতি, সুপারিশ, নির্দেশনা ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করিবে।
উপদেষ্টা পরিষদের সভা
১২। (১) উপদেষ্টা পরিষদের সভা প্রত্যেক ৪ (চার) মাসে একবার অনুষ্ঠিত হইবে, তবে জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময় সভা অনুষ্ঠান করা যাইবে।
 
(২) উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি উহার সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তৎকর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কোনো সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
 
(৩) উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য-সচিব, উহার সভাপতির সহিত পরামর্শক্রমে, উপদেষ্টা পরিষদের সভা আহবান করিবেন এবং এইরূপ সভা উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত সময় ও স্থানে অনুষ্ঠিত হইবে।
 
(৪) উপদেষ্টা পরিষদ উহার সভায় কোন আলোচ্য বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখিতে সক্ষম বা পারদর্শী এইরূপ যে কোন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করিতে পারিবে এবং উক্তরূপে আমন্ত্রিত কোন ব্যক্তি সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন।
 
(৫) শুধুমাত্র উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না তদ্‌সম্পর্কে কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।
পরিচালনা পরিষদ ও উহার গঠন
১৩। কর্তৃপক্ষের একটি পরিচালনা পরিষদ থাকিবে এবং নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে পরিচালনা পরিষদ গঠিত হইবে, যথা :-
 
(ক) কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
 
(খ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন কর্মচারী;
 
(গ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন কর্মচারী;
 
(ঘ) সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূ যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন কর্মচারী;
 
(ঙ) অর্থ বিভাগ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন কর্মচারী;
 
(চ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত উহার অন্যূন পরিচালক পদমর্যাদার ২(দুই) জন কর্মচারী; এবং
 
(ছ) কর্তৃপক্ষের সচিব, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।
পরিচালনা পরিষদের কার্যাবলি
১৪। পরিচালনা পরিষদের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
(ক) বিদ্যমান আইন, বিধি, নীতিমালা, গাইডলাইন ইত্যাদি এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন, পরিপত্র, অফিস আদেশ, পত্র ইত্যাদি অনুসরণে কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা;
 
(খ) উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়ন করা;
 
(গ) কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অন্য কোন কর্মকাণ্ড।
পরিচালনা পরিষদের সভা
 
১৫। (১) পরিচালনা পরিষদের সভা প্রত্যেক ৩ (তিন) মাসে একবার অনুষ্ঠিত হইবে, তবে জরুরি প্রয়োজনে যে কোনো সময় সভা অনুষ্ঠান করা যাইবে।
 
(২) পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উহার সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তদ্‌কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কোনো সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
 
(৩) পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত সময় ও স্থানে উহার সভা অনুষ্ঠিত হইবে।
 
(৪) ন্যূনতম একজন বহিঃসদস্যসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হইবে।
 
(৫) শুধুমাত্র পরিচালনা পরিষদের কোনো সদস্য পদে শূন্যতা পরিচালনা বা পরিষদ গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে পরিচালনা পরিষদের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তদ্‌সম্পর্কে কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।
 
চেয়ারম্যান
১৬। (১) কর্তৃপক্ষের একজন চেয়ারম্যান থাকিবে।
 
(২) চেয়ারম্যান প্রজাতন্ত্রের কর্মে কর্মরত কর্মচারীগণের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে।
 
(৩) চেয়ারম্যান কর্তৃপক্ষের মুখ্য নির্বাহী কর্মচারী হইবেন এবং তিনি এই আইন এবং তদধীন প্রণীত বিধি ও প্রবিধানের বিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষের প্রশাসন পরিচালনার জন্য দায়ী থাকিবেন।
 
(৪) চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হইলে বা অনুপস্থিতি বা অন্য কোনো কারণে চেয়ারম্যান তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে উক্ত শূন্য পদে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত, অথবা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক মনোনীত কোনো কর্মচারী চেয়ারম্যানরূপে দায়িত্ব পালন করিবেন।
 
কমিটি গঠন
১৭। কর্তৃপক্ষ উহার কার্যাবলি দক্ষতার সহিত সম্পাদনে সহায়তা করিবার জন্য, প্রয়োজনে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করিতে পারিবে এবং উক্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা, কার্যাবলি ও কর্মপরিধি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
কর্মচারী নিয়োগ, ইত্যাদি
 
১৮। (১) কর্তৃপক্ষ উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে।
 
(২) কর্তৃপক্ষের কর্মচারীগণ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বলিয়া গণ্য হইবেন।
 
(৩) কর্তৃপক্ষের সকল কর্মচারী নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি নিয়োগ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
বার্ষিক বাজেট বিবরণী
 
১৯। কর্তৃপক্ষ, প্রতি অর্থ বছর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থবৎসরের বার্ষিক বাজেট প্রস্তুত করিয়া সরকারের নিকট দাখিল করিবে।
হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা
২০। (১) কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে উহার হিসাবরক্ষণ করিবে, হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে এবং সরকারের নিকট দাখিল করিবে।
 
(২) চেয়ারম্যান প্রত্যেক অর্থ বৎসরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরীক্ষক দ্বারা নিরীক্ষা করাইবেন এবং নিরীক্ষক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিবেন।
 
(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উপর কোনো আপত্তি উত্থাপিত হইলে উহা নিষ্পত্তির জন্য কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
 
(৪) কর্তৃপক্ষের সকল প্রকার ব্যয় প্রাক-নিরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিশোধিত হইবে।
 
(৫) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বলিয়া উল্লিখিত, প্রতি অর্থ বৎসর কর্তৃপক্ষের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপোর্টের একটি অনুলিপি সরকার ও কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিবেন।
 
(৬) উপ-ধারা (৫) মোতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কিংবা তাঁহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও কর্তৃপক্ষের অন্যান্য কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
কোম্পানি গঠনের ক্ষমতা
২১। কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এর অধীন এক বা একাধিক কোম্পানি গঠন করিতে পারিবে।
আউট সোর্সিং করার ক্ষমতা
২২। কর্তৃপক্ষ সরকারের বিধি-বিধান অনুসরণ করিয়া উহার কাজ বা সেবা আউট সোর্সিং করিতে পারিবে।
নির্দেশনা প্রদানের ক্ষমতা
 
২৩। সরকার, সময় সময়, কর্তৃপক্ষকে, তদ্‌বিবেচনায় যেরূপ উপযুক্ত মনে করিবে, সেইরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষ উহা পালন করিতে বাধ্য থাকিবে।
ক্ষমতার্পণ
২৪। কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে, লিখিতভাবে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, উক্ত আদেশে বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে, যদি থাকে, এই আইনের অধীন উহার কোনো ক্ষমতা চেয়ারম্যান, পরিচালনা পরিষদের কোনো সদস্য বা কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
২৫। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের সহিত সামঞ্জ্যপূর্ণ বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
২৬। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
রহিতকরণ ও হেফাজত
২৭। (১) The Motor Vehicles Ordinance. 1983 (Ord. No. LV of 1983) এর Chapter IA এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
 
(২) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও -
 
(ক) সকল সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, প্রকল্প এবং অন্য সকল প্রকার দাবি ও অধিকার কর্তৃপক্ষের সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, সম্পত্তি, অর্থ, প্রকল্প এবং দাবি ও অধিকার হিসাবে গণ্য হইবে;
 
(খ) সকল ঋণ ও দায়-দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের ঋণ ও দায়-দায়িত্ব বলিয়া গণ্য হইবে;
 
(গ) বিরুদ্ধে বা তদ্‌কর্তৃক দায়েরকৃত কোন মামলা, গৃহীত কার্যধারা বা সূচিত যে কোন কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এমনভাবে চলমান থাকিবে ও নিষ্পন্ন হইবে যেন উহা এই আইনের অধীন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বা তদ্‌কর্তৃক দায়েরকৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে;
 
(ঘ) সকল চুক্তি ও দলিল, যাহাতে উক্ত Authority পক্ষ ছিল, কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বা বিরুদ্ধে এমনভাবে বলবৎ ও কার্যকর থাকিবে যেন কর্তৃপক্ষ উহাতে পক্ষ ছিল;
 
(ঙ) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সকল বিধি, প্রবিধান, আদেশ, নির্দেশ, নীতিমালা বা ইনস্ট্রুমেন্ট কার্যকর থাকিবে; তবে যতটুকু এই আইনের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততটুকু বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
নির্ভরযোগ্য ইংরেজি পাঠ
 
২৮। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
 
(২) ইংরেজি ও বাংলা পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs