প্রিন্ট ভিউ

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭

( ২০১৭ সনের ২৩ নং আইন )

Bangladesh Atomic Energy Commission Order, 1973 রহিতক্রমে উহা পুনঃপ্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন

যেহেতু আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণক্রমে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, উন্নয়ন, প্রসার, তদ্‌সংশ্লিষ্ট গবেষণা কর্ম, সেবা, শিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এতদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পাদনের জন্য Bangladesh Atomic Energy Commission Order, 1973 (P. O. No. 15 of 1973) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবং যুগোপযোগী আকারে একটি আইন পুনঃপ্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

 
 
 

সেহেতু, এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল, যথা:-

 
সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭ নামে অভিহিত হইবে।
 
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
 
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোন কিছু না থাকিলে, এই আইনে -
 
(১) ‘‘কমিশন’’ অর্থ ধারা ৩ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন;
 
(২) ‘‘চেয়ারম্যান’’ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান;
 
(৩) ‘‘তেজস্ক্রিয় পদার্থ’’ অর্থ যে পদার্থের অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াস ভাঙ্গন (disintegration) বা ক্ষয়প্রাপ্ত (decay) হওয়ায় বিকিরণ উৎপন্ন করে এমন পদার্থ;
 
(৪) ‘‘নির্ধারিত’’ অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;
 
(৫) ‘‘নির্ধারিত পদার্থ’’ অর্থে কমিশন কর্তৃক প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত, খনিজসহ যে কোন পদার্থ বা উপাদান যাহা উহার মতে পরমাণু শক্তি উৎপাদন বা ব্যবহারের জন্য বা এতদ্‌সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয় বা ব্যবহৃত হইতে পারে এবং ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম, থোরিয়াম, বেরিলিয়াম, ডিউটেরিয়াম বা উহা হইতে উৎপন্ন পদার্থ বা উপাদান (derivatives) বা যৌগ বা উপরি-উক্ত পদার্থের সহিত সম্পর্কিত যে কোন পদার্থ বা উপাদানও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(৬) ‘‘পরমাণু শক্তি’’ অর্থ পারমাণবিক নিউক্লিয়াস (atomic nucleus) এর রূপান্তর অথবা উহাদের মধ্যে বিক্রিয়ায় নির্গত বা উদ্ভূত শক্তি অথবা আয়োনাইজিং বিকিরণের মাধ্যমে এবং বিশেষ পারমাণবিক পদার্থের ফিশন (Fission) অথবা পারমাণবিক নিউক্লিয়াস ফিউশন (Fusion) এর ফলে সৃষ্ট শক্তি;
 
(৭) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;
 
(৮) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
 
(৯) ‘‘সদস্য’’ অর্থ কমিশনের সদস্য; এবং
 
(১০) ‘‘বিজ্ঞানী’’ অর্থ কমিশনে সায়েন্টিফিক অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার, মেডিকেল অফিসার ও জিওলজিস্ট পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তদূর্ধ্ব পদধারী কর্মকর্তা।
আইনের প্রাধান্য
৩। অন্য কোন আইন বা উহার অধীন প্রণীত বিধিতে এই আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।
কমিশন প্রতিষ্ঠা
৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, Bangladesh Atomic Energy Commission Order, 1973 (P. O. No. 15 of 1973) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।
 
(২) কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং উহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি সাপেক্ষে, উহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার এবং হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং কমিশন উহার নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।
কমিশনের কার্যালয়
৫। (১) কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।
 
(২) কমিশন, প্রয়োজনবোধে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে উহার এক বা একাধিক শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
কমিশন গঠন
৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ১(এক) জন চেয়ারম্যান ও অনধিক ৪ (চার) জন সদস্য সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হইবে।
চেয়ারম্যান ও সদস্যগণের নিয়োগ, মেয়াদ ও পদত্যাগ
৭। (১) চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে কমিশনে কর্মরত বিজ্ঞানীদের মধ্য হইতে এবং প্রয়োজনবোধে দেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং তাহারা সার্বক্ষণিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন।
 
(২) চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে সর্বোচ্চ ৩(তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন:
 
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার প্রয়োজনবোধে, চেয়ারম্যান বা কোন সদস্যকে পুনরায় সর্বোচ্চ ৩(তিন) বৎসরের জন্য নিয়োগ করিতে পারিবে।
 
(৩) উপ-ধারা (২) অনুসারে কার্যভার গ্রহণ করিবার পর চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য যে কোন সময় সরকার বরাবর স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
 
(৪) সরকার, যে কোন সময়, কোনরূপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে, চেয়ারম্যান বা কোন সদস্যকে তাহার কার্যভার হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।
প্রধান নির্বাহী
৮। (১) চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান নির্বাহী হইবেন।
 
(২) চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হইলে কিংবা তাহার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে চেয়ারম্যান তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্য পদে নূতন চেয়ারম্যান কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, কমিশনের জ্যেষ্ঠতম সদস্য চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন :
 
তবে শর্ত থাকে যে, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে জটিলতার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক মনোনীত কোন সদস্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করিবেন।
কমিশনের সভা

৯। (১) এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, কমিশন উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

 

(২) সভার আলোচ্যসূচি, তারিখ, সময় ও স্থান চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত হইবে এবং চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে, কমিশনের 1[পরিচালক (প্রশাসন)] এইরূপ সভা আহবান করিবেন।

 

(৩) কমিশনের প্রত্যেক সভায় চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে সদস্যগণের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠতম তিনি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

 

(৪) চেয়ারম্যানসহ অন্যূন ৩(তিন) জন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিশনের সভার কোরাম গঠিত হইবে।

 

(৫) কমিশনের সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রত্যেক সদস্যের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে, ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের অধিকার থাকিবে।

 

(৬) চেয়ারম্যান, সদস্যগণের সহিত আলোচনাপূর্বক, প্রয়োজনে, সভার আলোচ্যসূচির সহিত সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে এইরূপ যে কোন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে পরামর্শ প্রদানের জন্য সভায় আমন্ত্রণ জানাইতে পারিবেন, তবে সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির ভোটানের প্রদানের কোন অধিকার থাকিবে না।

 

(৭) সদস্যপদে শুধুমাত্র কোন শূন্যতা বা কমিশন গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে কমিশনের কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তদ্‌সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।

কমিশনের কার্যাবলি
১০। কমিশনের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-
 
(১) খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পরিবেশ ও শিল্পের ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের প্রসার;
 
(২) ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির নকশা ও প্রযুক্তি এবং ব্যবহারিক সামগ্রী উন্নয়ন;
 
(৩) শিক্ষা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও সেবা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা;
 
(৪) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও উহা হইতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং মহাকাশ ও ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলীয় (space and upper atmosphere) গবেষণা এবং ভারী ও পারমাণবিক খনিজ অনুসদ্ধান, আহরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে গবেষণাসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রকার কার্য ও বিষয়াদি সম্পাদন;
 
(৫) গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, সেবাদান কেন্দ্র এবং প্ল্যান্ট স্থাপন;
 
(৬) পারমাণবিক শক্তির উৎপাদন, উন্নয়ন, ব্যবহার বা গবেষণার জন্য প্রয়োজন রহিয়াছে বা প্রয়োজন হইতে পারে বা উহার সহিত সম্পর্ক রহিয়াছে এইরুপ নির্ধারিত পদার্থ বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন করা বা অন্য কোনভাবে সৃষ্টি করা, ক্রয় করা বা অন্য কোনভাবে অর্জন এবং উক্তরূপ উৎপাদিত, সৃষ্ট বা অর্জিত নির্ধারিত বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের গুদামজাতকরণ, পরিবহন, অপসারণ (Disposal), ব্যবস্থাপনা বা ডিকমিশনিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ;
 
(৭) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (Public Private Partnership) ব্যবস্থা গ্রহণ;
 
(৮) কমিশন কর্তৃক বালুস্তরে অন্বেষণ, পৃথকীকরণ, বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট গবেষণামূলক কার্য পরিচালনা এবং ভৌত, রাসায়নিক বা ধাতব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের এক বা একাধিক এলাকা হইতে ভারী খনিজ এবং তেজস্ক্রিয় খনিজ পদার্থ আহরণ;
 
(৯) কোন ভূমিতে, ভূমির অভ্যন্তরে বা পানিতে কোন পারমাণবিক ও ভারী খনিজ পদার্থ প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া গেলে বা ভূমির অভ্যন্তর হইতে, ভূমির উপর হইতে বা পানি হইতে অর্জিত বা সঞ্চিত বর্জ্য হইতে নির্ধারিত পদার্থ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে এবং উক্তরূপ খনিজ আহরণ করা প্রয়োজন হইলে, সরকারের অনুমোদনক্রমে, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত উক্ত ভূমি ক্ষতিপূরণ পরিশোধ সাপেক্ষে অধিগ্রহণ;
 
(১০) কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিটির সম্মানী নির্ধারণ;
 
(১১) কমিশন কর্তৃক, সরকারের অনুমোদনক্রমে, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক, সরকারি বা বেসরকারি সত্ত্বার (legal entity) সহিত সহযোগিতামূলক দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর;
 
(১২) কমিশন কর্তৃক উহার যে কোন ধরনের কারিগরি সেবা প্রদান এবং উহার জন্য উপযুক্ত ফি নির্ধারণ;
 
(১৩) বিনিয়োগ, সেবা ও রয়্যালটির আয় হইতে পরমাণু শক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য তহবিল বরাদ্দকরণ;
 
(১৪) কমিশন কর্তৃক, সরকারের অনুমোদনক্রমে, মহাকাশ ও ঊর্ধ্ববায়ুমণ্ডলীয় এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সংক্রান্ত গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রম এবং কমিশন ও সরকারের পারস্পরিক সম্মতিতে নির্ধারিত শর্তে অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন;
 
(১৫) তেজস্ক্রিয় পদার্থ উৎপাদন, খনি হইতে উত্তোলন, শোধন, গুদামজাতকরণ বা ব্যবহার করা হয় এইরূপ যে কোন বর্ণনার বা শ্রেণির আঙ্গিনা, স্থান অথবা বিকিরণ উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট, যন্ত্রপাতি বা সাজ-সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় এইরুপ আঙ্গিনা বা স্থানে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা এবং তাহাদের কর্মঘণ্টা, ন্যূনতম ছুটি নির্ধারণ, সময়ান্তিক মেডিকেল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ;
 
(১৬) উপ-দফা (১৫) তে বিধৃত স্থানসমূহসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে কমিশন, প্রয়োজনে, সরকারের অনুমোদনক্রমে, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যে কোন সংস্থার সহিত যোগাযোগ স্থাপন অথবা সহায়তা গ্রহণ; এবং
 
(১৭) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোন নির্দেশনা অনুসরণ।
পরিচালক (অর্থ) ও পরিচালক (প্রশাসন)

2[১১। সরকার, কমিশনকে সহায়তা প্রদানের জন্য, সার্বক্ষণিক একজন পরিচালক (অর্থ) ও একজন পরিচালক (প্রশাসন) নিয়োগ করিবে।]

বিশেষজ্ঞ কমিটি
১২। কমিশন, সময় সময়, আদেশ দ্বারা উহার কার্যে সহায়তাদানের জন্য এক বা একাধিক সদস্য, নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোন বিজ্ঞানী ও কর্মচারী বা এক বা একাধিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনসহ উহার দায়িত্ব, মেয়াদ, কার্যপরিধি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য শর্তাবলি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
কমিশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক যোগাযোগ
১৩। কমিশন, সরকারের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে, যে কোন বিদেশি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সহিত পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নে সহযোগিতা সম্পর্কিত কোন কর্মসূচি বা সহযোগিতা চুক্তির সুস্পষ্ট শর্তে, যাহাতে উক্ত বিদেশি কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা একটি পক্ষ, কিংবা এই আইন প্রবর্তনের পর অন্য কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে, সহযোগিতা করিতে বা বজায় রাখিতে পারিবে।
সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ, নির্দেশনা বাস্তবায়ন
১৪। সরকার, সময় সময়, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কমিশনকে নীতিগত বিষয়ে আদেশ ও নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে এবং কমিশন উক্ত আদেশ ও নির্দেশনা অনুসরণ এবং বাস্তবায়ন করিবে।
আবিষ্কার, উদ্ভাবন, ইত্যাদি
১৫। কমিশনের দায়িত্ব পালনের সময়, কমিশনের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কর্মরত কোন বিজ্ঞানী ও কর্মচারীর আবিষ্কার বা উদ্ভাবন এবং আবিষ্কৃত কোন উপাদান, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া (process), যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের যে কোন প্রকারের উন্নয়ন সম্পর্কিত সকল অধিকার বা মেধাস্বত্ব কমিশনে ন্যস্ত হইবে।
কোম্পানি গঠন
১৬। কমিশন, এই আইনের ধারা ৯ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোম্পানি গঠন করিতে পারিবে।
বাজেট
১৭। কমিশন প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্টকৃত সময়ের‌ মধ্যে পরবর্তী অর্থ-বৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ-বৎসরে সরকারের নিকট হইতে কমিশনের কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন উহার উল্লেখ থাকিবে।
কমিশনের প্রতিবেদন
১৮। (১) প্রতি অর্থ-বৎসর শেষ হইবার পরবর্তী ৩(তিন) মাসের মধ্যে উক্ত অর্থ-বৎসরে সম্পাদিত কার্যাবলির বার্ষিক প্রতিবেদন কমিশনের অনুমোদনসহ সরকারের নিকট দাখিল করিবে।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সত্ত্বেও সরকার যেইরূপ নির্ধারণ করিবে সেইরূপ সময় ও বিরতিতে, সরকারের নিকট নিম্নবর্ণিত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করিবে, যথা :-
 
(ক) সরকার কর্তৃক যাচিত সাময়িক প্রতিবেদন এবং সার-সংক্ষেপ;
 
(খ) প্রধান কার্যালয় এবং বিভিন্ন গবেষণা ও সেবাদান কেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং প্রকল্পসমূহের উপর বার্ষিক প্রতিবেদন;
 
(গ) সরকার কর্তৃক যাচিত সাময়িক রিটার্ন, হিসাব বিবরণী এবং পরিসংখ্যান;
 
(ঘ) কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সরকার কর্তৃক যাচিত তথ্য এবং মন্তব্য; এবং
 
(ঙ) সরকার কর্তৃক যাচিত দলিলাদির কপি।
কমিশনের বিজ্ঞানী ও কর্মচারী নিয়োগ
১৯। (১) কমিশন উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজ্ঞানী ও কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাহাদের চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
 
(২) কমিশন এই আইনের অধীনে প্রণীত প্রবিধানের বিধান অনুসারে উহার বিজ্ঞানী ও কর্মচারীগণকে বিশেষ প্রণোদনা, ভাতা ও ঝুঁকিভাতা দিতে পারিবে ।
কমিশনের তহবিল
 
২০। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন তহবিল নামে কমিশনের একটি তহবিল থাকিবে এবং উক্ত তহবিলে নিম্নবর্ণিত উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ জমা হইবে, যথা :-
 
(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;
 
(খ) দান এবং বৃত্তি;
 
(গ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোন ব্যক্তি, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থার নিকট হইতে প্রাপ্ত অনুদান;
 
(ঘ) সেবা, বিনিয়োগ এবং রয়্যালটি হইতে প্রাপ্ত আয়; এবং
 
(ঙ) অন্য কোন বৈধ উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
 
(২) তহবিলের অর্থ কমিশনের নামে কমিশন কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোন তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখিতে হইবে এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত তহবিল পরিচালনা করিতে হইবে।
 
ব্যাখ্যা।- ‘‘তফসিলি ব্যাংক’’ বলিতে Bangladesh Bank Order, 1972 (P.O. No. 127 of 1972) এর Article 2(j) তে সংজ্ঞায়িত Scheduled Bank কে বুঝাইবে।
 
(৩) তহবিলের অর্থ হইতে সরকারি নিয়ম-নীতি, বিধি-বিধান অনুসরণক্রমে কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা যাইবে এবং উদ্বৃত্ত অর্থ, যদি থাকে, সরকারি, কোষাগারে জমা হইবে।
হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা
 
২১। (১) কমিশন যথাযথভাবে হিসাব রক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।
 
(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপোর্টের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও কমিশনের নিকট পেশ করিবেন।
 
(৩) উপ-ধারা (২) মোতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি কমিশনের সকল রেকর্ড, দলিল দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং কমিশনের কোন সদস্য বা যে কোন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
 
(৪) উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত নিরীক্ষা ছাড়াও Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O. No. 2 of 1973) এর Article 2 (1) (b) তে সংজ্ঞায়িত কোন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দ্বারা কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করা যাইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে কমিশন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করিতে পারিবে।
গোপনীয়তা
২২। চেয়ারম্যান, সদস্য, বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য এবং কমিশনে কর্মরত বিজ্ঞানী ও কর্মচারীকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিশ্বস্ততা ও গোপনীয়তার ঘোষণা প্রদান করিতে হইবে।
জনসেবক
২৩। চেয়ারম্যান, সদস্য, বিজ্ঞানী ও কর্মচারীগণ কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে Penal Code, 1860 (Act No. XLV of 1860) এর section 21 এ যে অর্থে জনসেবক (public servant) কথাটি ব্যবহৃত হইয়াছে সে অর্থে জনসেবক (public servant) বলিয়া গণ্য হইবেন।
ক্ষমতা অর্পণ
২৪। (১) কমিশন, লিখিত আদেশ দ্বারা, উক্ত আদেশে উল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে, উহার যে কোন ক্ষমতা বা দায়িত্ব চেয়ারম্যান, সদস্য বা নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোন বিজ্ঞানী ও কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষমতা বা দায়িত্ব অর্পণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যোগ্যতা ও সামর্থ্য বিবেচনা করিতে হইবে।
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
২৫। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
২৬। কমিশন, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
রহিতকরণ ও হেফাজত
২৭। (১) Bangladesh Atomic Energy Commission Order, 1973 (President’s Order No. 15 of 1973), অতঃপর রহিতকৃত Order বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিত হওয়া সত্ত্বেও, রহিতকৃত Order এর অধীন প্রতিষ্ঠিত কমিশনের-
 
(ক) সকল সম্পত্তি এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত কমিশনে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত হইবে;
 
ব্যাখ্যা।- ‘‘সম্পত্তি’’ অর্থে সকল অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, প্রাধিকার, ভূমি ও দালানসহ সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং নগদ স্থিতি, ব্যাংক জমা, সংরক্ষিত তহবিল, বিনিয়োগ এবং অন্যান্য অধিকার এবং উক্ত সম্পত্তি হইতে অর্জিত সুদ এবং সকল হিসাব বই, রেজিস্টার, রেকর্ড এবং এতদ্‌সম্পর্কিত যে কোন প্রকারের দলিল অন্তর্ভুক্ত হইবে।
 
(খ) অর্জিত দায়-দায়িত্ব, গৃহীত বাধ্যবাধকতা, সম্পাদিত সকল চুক্তি, দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট এইরূপ বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন সম্পাদিত হইয়াছে;
 
(গ) বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোন মামলা বা গৃহীত কার্যধারা বা সূচিত যে কোন কার্যক্রম অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পন্ন করিতে হইবে যেন উহা এই আইনের অধীন দায়েরকৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে;
 
(ঘ) সকল প্রকারের ঋণ, দায় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা এই আইনের বিধান অনুযায়ী সেই একই শর্তে কমিশনের, ঋণ, দায় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসাবে গণ্য হইবে; এবং
 
(ঙ) কোন চুক্তি বা চাকরির শর্তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য ও বিজ্ঞানী এবং সকল কর্মচারী যে শর্তাধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, সেই সকল শর্তে নিযুক্ত থাকিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না কমিশন কর্তৃক তাহাদের চাকরির শর্তাবলি পরিবর্তিত হয়।
 
(৩) উক্ত Order রহিত হওয়া সত্ত্বেও উহার অধীন প্রণীত কোন বিধি বা প্রবিধান, জারীকৃত কোন প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোন আদেশ, নির্দেশ, অনুমোদন, সুপারিশ, প্রণীত সকল পরিকল্পনা বা কার্যক্রম এবং অনুমোদিত সকল বাজেট উক্তরূপ রহিতের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে, এই আইনের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অনুরুপ বিধানের অধীন প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত এবং অনুমোদিত বলিয়া গণ্য হইবে এবং মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত, বলবৎ থাকিবে।
ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ
২৮। এই আইন কার্যকর হইবার পর, সরকার প্রয়োজনবোধে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

  • 1
    “পরিচালক (প্রশাসন)” শব্দগুলি ও বন্ধনী “সচিব” শব্দটির পরিবর্তে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২২ (২০২২ সনের ১৮ নং আইন) এর ২ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত।
  • 2
    ধারা ১১ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২২ (২০২২ সনের ১৮ নং আইন) এর ৩ ধারাবলে প্রতিস্থাপিত।
Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs