প্রিন্ট ভিউ

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮

( ২০১৮ সনের ৫১ নং আইন )

Bangladesh (Freedom Fighters) Welfare Trust Order, 1972 রহিতক্রমে পরিমার্জনপূর্বক যুগোপযোগী করিয়া উহা নূতনভাবে প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণ সাধনকল্পে Bangladesh (Freedom Fighters) Welfare Trust Order, 1972 (Presidesnt's Order No. 94 of 1972) এর অধীন গঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এবং অন্যান্য সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণ সাধনকল্পে উক্ত Bangladesh (Freedom Fighters) Welfare Trust Order, 1972 রহিতক্রমে পরিমার্জনপূর্বক যুগোপযোগী করিয়া উহা নূতনভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
 
 
 
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
 

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।
 
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
 
(১) ‘‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’’ অর্থ স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের কারণে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম বা বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা;
 
(২) ‘‘চেয়ারম্যান’’ অর্থ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান;
 
(৩) ‘‘ট্রাস্ট’’ অর্থ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট;
 
(৪) ‘‘ট্রাস্টি’’ অর্থ ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য;
 
(৫) ‘‘ট্রাস্টি বোর্ড’’ অর্থ ধারা ৮ এর অধীন গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড;
 
(৬) ‘‘তহবিল’’ অর্থ ধারা ১৭ এর অধীন গঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল;
 
(৭) ‘‘নির্বাহী কমিটি’’ অর্থ ধারা ১৩ এর অধীন গঠিত নির্বাহী কমিটি;
 
(৮) ‘‘পরিবার’’ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার;
 
(৯) ‘‘পঙ্গুত্ব’’ অর্থ যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার আহত হওয়ার মাত্রা;
 
(১০) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;
 
(১১) ‘‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’’ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাঁহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ই. পি. আর. নৌ কমান্ডো, কিলো ফ্লাইট আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নিম্নবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকগণ, উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন, যথা :-
 
(ক) যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাহাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলেন;
 
(খ) যে সকল বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রাখিয়াছিলেন এবং যে সকল বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন;
 
(গ) যাঁহারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করিয়াছিলেন;
 
(ঘ) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সহিত সম্পৃক্ত সকল এম. এন. এ (Member of National Assembly) বা এম. পি. এ (Member of Provincial Assembly), যাঁহারা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য (Member of Constituent Assembly) হিসাবে গণ্য হইয়াছিলেন;
 
(ঙ) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিতা সকল নারী (বীরাঙ্গনা); তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নির্যাতিতা নারী বা বীরাঙ্গনার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমা প্রযোজ্য হইবে না;
 
(চ) স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সকল শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং দেশ ও দেশের বাহিরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিক;
 
(ছ) স্বাধীনবাংলা ফুটবল দলের সকল খেলোয়াড়; এবং
 
(জ) মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিক্যাল টিমের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারী;
 
(১২) ‘‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’’ অর্থ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক;
 
(১৩) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
 
(১৪) ‘‘মুক্তিযুদ্ধ’’ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও জামায়াতে ইসলামী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত যুদ্ধ;
 
(১৫) ‘‘যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা’’ অর্থ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে আহত হইয়াছেন এইরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাঁহার শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ বা গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে;
 
(১৬) ‘‘শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা’’ অর্থ এইরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়া শহিদ হইয়াছেন;
 
(১৭) ‘‘সুবিধাভোগী’’ অর্থ-
 
(ক) বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্ষেত্রে-
 
(অ) বীর মুক্তিযোদ্ধা; বা
 
(আ) বীর মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী; বা
 
(ই) বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁহার স্ত্রী বা স্বামীর অবর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা; বা
 
(ঈ) বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী এবং পিতা-মাতার অবর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান; বা
 
(উ) (অ)-(ঈ) পর্যন্ত বর্ণিত ব্যক্তিগণের অবর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোন;
 
(খ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্ষেত্রে-
 
(অ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা; বা
 
(আ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী; বা
 
(ই) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁহার স্ত্রী বা স্বামীর অবর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা; বা
 
(ঈ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী এবং পিতা-মাতার অবর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান; বা
 
(উ) (অ)-(ঈ) পর্যন্ত বর্ণিত ব্যক্তিগণের অবর্তমানে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাই- বোন;
 
(গ) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্ষেত্রে-
 
(অ) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা; বা
 
(আ) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার অবর্তমানে তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী; বা
 
(ই) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁহার স্ত্রী বা স্বামীর অবর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা; বা
 
(ঈ) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁহার স্ত্রী বা স্বামী এবং পিতা-মাতার অবর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান; বা
 
(উ) (অ)-(ঈ) পর্যন্ত বর্ণিত ব্যক্তিগণের অবর্তমানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোন;
 
(ঘ) শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ক্ষেত্রে-
 
(অ) শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা স্বামী; বা
 
(আ) শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা স্বামীর অবর্তমানে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতা-মাতা; বা
 
(ই) শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বা স্বামী এবং পিতা-মাতার অবর্তমানে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান; বা
 
(ঈ) (অ)-(ই) পর্যন্ত বর্ণিত ব্যক্তিগণের অবর্তমানে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাই-বোন।
 
(ঙ) (ক)-(ঘ) এ যাহা কিছু থাকুক না কেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা বা যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারীগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না হইলে এই আইনের আওতায় সুবিধাভোগী হিসাবে গণ্য হইবেন না।

দ্বিতীয় অধ্যায়

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণ, ইত্যাদি

বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণ সাধন
৩। (১) সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণে সম্মানী ভাতা, উৎসব ভাতা বা অন্য কোনো নামে অন্য কোনো ভাতা, সম্মানী বা অন্য কোনো সুবিধা প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করিবে।
 
(২) উপ-ধারা (১) এ অধীন কার্যক্রম, সময়ে সময়ে, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করিতে হইবে।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা জাগ্রতকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম
৪। (১) সরকার নূতন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা জাগ্রতকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করিবে।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কার্যক্রম, সময়ে সময়ে, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করিতে হইবে।

তৃতীয় অধ্যায়

ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা, ট্রাস্টের কার্যাবলি, ইত্যাদি

ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা
৫। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে Bangladesh (Freedom Fighters) Welfare Trust Order, 1972 (Presidesnt's Order No. 94 of 1972) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।
 
(২) ট্রাস্ট একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং উহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে উহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং উহা নিজ নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে উহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।
ট্রাস্টের কার্যালয়
৬। (১) ট্রাস্টের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।
 
(২) ট্রাস্ট, উহার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে উহার আঞ্চলিক বা শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
ট্রাস্টের কার্যাবলি
৭। ধারা ২ এর দফা (১৭) এর উপ-দফা (খ), (গ) ও (ঘ) এ বর্ণিত সুবিধাভোগীদের কল্যাণে ট্রাস্টের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
(ক) ট্রাস্টকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ ও সামর্থ্যবান করিবার জন্য ট্রাস্টের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং সম্পত্তি অর্জনের যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ;
 
(খ) সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে সম্মানী ভাতা, উৎসব ভাতা বা অন্য কোনো ভাতা, সম্মানী বা সুবিধা প্রদান;
 
(গ) ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অর্থ, পণ্য বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো সহায়তা প্রদান;
 
(ঘ) বিভিন্ন প্রকল্প বা কর্মসূচি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও উহার ব্যবস্থাপনা;
 
(ঙ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে ঔষধপত্রসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান;
 
(চ) যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বিশেষায়িত চিকিৎসার নিমিত্ত ক্লিনিক, ডিসপেনসারি বা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং উহার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন;
 
(ছ) শহিদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের জন্য পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণসহ উহার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন;
 
(জ) সুবিধাভোগীদের শিক্ষা বৃত্তি প্রদান;
 
(ঝ) স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন, ধারণ ও সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে হস্তান্তর ও বিক্রয়;
 
(ঞ) তহবিল গঠন ও উহার ব্যবস্থাপনা;
 
(ট) ট্রাস্টের জন্য অর্থ, সিকিউরিটিজ, দলিলাদি অথবা অন্য কোনো অস্থাবর সম্পত্তি গ্রহণ;
 
(ঠ) ট্রাস্টের অর্থ ও তহবিল বিনিয়োগ এবং প্রয়োজনবোধে বিনিয়োগ পরিবর্তন;
 
(ড) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যে কোনো সিকিউরিটিজ ক্রয়, বিক্রয়, পৃষ্ঠাঙ্কন, হস্তান্তর, বিনিময় বা এই প্রকারের কার্যক্রম সম্পন্নকরণ;
 
(ঢ) সরকারের অনুমোদনক্রমে যে কোনো ব্যক্তি বা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদন এবং এতদ্‌সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় দলিলাদি সম্পাদন;
 
(ণ) দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহিত যৌথভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও সম্পাদন;
 
(ত) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

চতুর্থ অধ্যায়

ট্রাস্টি বোর্ড, নির্বাহী কমিটি, ইত্যাদি

ট্রাস্টি বোর্ড গঠন
৮। (১) ট্রাস্ট পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকিবে এবং নিম্নবর্ণিত সদস্যগণের সমন্বয়ে উহা গঠিত হইবে, যথা :-
 
(ক) প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইহার চেয়ারম্যানও হইবেন;
 
(খ) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপ-মন্ত্রী, যিনি ইহার ভাইস-চেয়ারম্যানও হইবেন;
 
(গ) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত ৪ (চার) জন সংসদ সদস্য (বীর মুক্তিযোদ্ধা বা বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের অবর্তমানে তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগণ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হইবেন);
 
(ঘ) সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়;
 
(ঙ) সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়;
 
(চ) সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়;
 
(ছ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) এ উল্লিখিত মনোনীত সদস্য মনোনয়নের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন :
 
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার, প্রয়োজনবোধে, উক্ত সদস্যকে মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বে, কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে, অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে :
 
আরও শর্ত থাকে যে, চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে উক্ত সদস্য স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।
 
(৩) কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা ট্রাস্টি বোর্ড গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোথাও কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না।
ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যাবলি
৯। ট্রাস্টি বোর্ডের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
(ক) ট্রাস্টের কার্যক্রম সার্বিকভাবে পরিচালনা, পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ;
 
(খ) ট্রাস্টের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ;
 
(গ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অন্য যে কোনো কার্য সম্পাদন; এবং
 
(ঘ) সরকার কর্তৃক, সময়ে সময়ে, জারিকৃত আদেশ ও নির্দেশ ইত্যাদি অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
ট্রাস্টি বোর্ডের সভা
১০। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, ট্রাস্টি বোর্ড উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
 
(২) ট্রাস্টি বোর্ডের সভা, চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে উহার সদস্য-সচিব কর্তৃক আহুত হইবে এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত স্থান, তারিখ ও সময়ে অনুষ্ঠিত হইবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, প্রতি বৎসর অন্যূন একটি সভা অনুষ্ঠান করিতে হইবে :
 
আরও শর্ত থাকে যে, জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের নোটিশে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা আহবান করা যাইবে।
 
(৩) চেয়ারম্যান বোর্ডের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাঁহার অনুপস্থিতিতে তাঁহার সম্মতিক্রমে ভাইস চেয়ারম্যান সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
 
(৪) ট্রাস্টি বোর্ডের সভার কোরামের জন্য ৬ (ছয়) জন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে।
 
(৫) ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় প্রত্যেক সদস্যের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারীর দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
১১। (১) ট্রাস্টের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকিবে, যিনি ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী হইবেন।
 
(২) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাঁহার চাকরির মেয়াদ ও শর্তাবলি সরকার কর্তৃক নিধারিত হইবে।
 
(৩) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্রাস্টের সার্বক্ষণিক এবং প্রধান নির্বাহী হিসাবে-
 
(ক) ট্রাস্টি বোর্ড এবং নির্বাহী কমিটির সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য দায়ী থাকিবেন;
 
(খ) ট্রাস্টের কার্যাবলি ও প্রশাসন পরিচালনা করিবেন;
 
(গ) বোর্ড এবং নির্বাহী কমিটি কর্তৃক, সময় সময়, তাঁহার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করিবেন।
 
(৪) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্য পদে নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বা তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা পরিচালকরূপে দায়িত্ব পালন করিবেন।
কর্মচারী নিয়োগ
১২। (১) ট্রাস্ট উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে।
 
(২) ট্রাস্টের কর্মচারীদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
নির্বাহী কমিটি
১৩। ট্রাস্টের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বোর্ডের নিম্নরূপ ট্রাস্টিগণের সমন্বয়ে একটি নির্বাহী কমিটি থাকিবে, যথা :-
 
(ক) ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
 
(খ) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রাস্টি হিসাবে মনোনীত সংশ্লিষ্ট ৪ (চার) জন জাতীয় সংসদ সদস্য;
 
(গ) সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়;
 
(ঘ) সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়;
 
(ঙ) সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়;
 
(চ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।
নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি
১৪। নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
 
(ক) ট্রাস্টের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য আইন, বিধি ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বা বোর্ড কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব, কার্যাবলি ও নির্দেশনা প্রতিপালন;
 
(খ) ট্রাস্টের কার্যাবলি তদারকি;
 
(গ) ট্রাস্ট এবং ট্রাস্টের অধীন সকল বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও উহা বাস্তবায়ন;
 
(ঘ) ট্রাস্ট কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সকল পরিকল্পনার অগ্রগতি পর্যালোচনা, হিসাব পরিবীক্ষণ, ভবিষৎ কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ ও উহা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ; এবং
 
(ঙ) ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক, সময়ে সময়ে, প্রদত্ত অন্যান্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
নির্বাহী কমিটির ক্ষমতা
১৫। নির্বাহী কমিটি ট্রাস্ট ও উহার অধীন সকল চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও সম্প্রসারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ও বন্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় চালুকরণ অথবা উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প ব্যবহার সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবার ক্ষমতার অধিকারী হইবে :
 
তবে শর্ত থাকে, নির্বাহী কমিটি ট্রাস্টি বোর্ডের পূর্বানুমোদন গ্রহণ ব্যতিরেকে ট্রাস্টের কোনো স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়, হস্তান্তর, কোনো প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা প্রদান বা অন্য কোনো বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে না।
নির্বাহী কমিটির সভা
১৬। (১) এই ধারার অন্যন্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, নির্বাহী কমিটি উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
 
(২) নির্বাহী কমিটির সকল সভা উহার সভাপতি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান, তারিখ ও সময়ে অনুষ্ঠিত হইবে :
 
তবে শর্ত থাকে, প্রতি ২ (দুই) মাসে নির্বাহী কমিটির অন্যূন ১ (এক) টি সভা অনুষ্ঠিত হইবে।
 
(৩) সভাপতি নির্বাহী কমিটির সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাঁহার অনুপস্থিতিতে উপস্থিত ট্রাস্টিগণ কর্তৃক তাহাদের মধ্য হইতে মনোনীত কোনো ট্রাস্টি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
 
(৪) নির্বাহী কমিটির সভার কোরামের জন্য ৫ (পাঁচ) জন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে।

পঞ্চম অধ্যায়

ট্রাস্টের তহবিল, নিরীক্ষা, বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট

ট্রাস্টের তহবিল
১৭। (১) ট্রাস্টের একটি তহবিল থাকিবে যাহা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তহবিল নামে অভিহিত হইবে।
 
(২) নিম্নবর্ণিত উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা তহবিল গঠিত হইবে, যথা :-
 
(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান, সাহায্য বা মঞ্জুরি;
 
(খ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোনো বিদেশি সরকার, আন্তর্জাতিক কোনো এজেন্সি, সংস্থা, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে প্রাপ্ত অনুদান;
 
(গ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, ট্রাস্ট কর্তৃক গৃহীত ঋণ;
 
(ঘ) ট্রাস্টের সম্পত্তি বা যে কোনো কার্যক্রম হইতে লব্ধ আয়;
 
(ঙ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা অনুরূপ কোনো সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;
 
(চ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কোনো ব্যক্তি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে প্রাপ্ত অনুদান;
 
(ছ) তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হইতে অর্জিত মুনাফা;
 
(জ) ট্রাস্টের নিজস্ব উৎস হইতে প্রাপ্ত আয়; এবং
 
(ঝ) ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত অন্য কোনো বৈধ উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
 
(৩) তহবিলের অর্থ কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা রাখিতে হইবে এবং ব্যাংক হইতে উক্ত অর্থ উত্তোলনের পদ্ধতি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে তহবিল পরিচালিত হইবে।
 
ব্যাখ্যা- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘তপশিলি ব্যাংক’ অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (P. O. No. 127 of 1972) এর Article 2(j) তে সংজ্ঞায়িত Scheduled Bank ।
 
(৪) সরকারের নিয়মনীতি ও বিধি বিধান অনুসরণক্রমে তহবিল হইতে ট্রাস্টের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিতে হইবে।
 
(৫) তহবিলের ব্যাংক হিসাব সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হইবে।
বাজেট
১৮। (১) নির্বাহী কমিটির অনুমোদনক্রমে ট্রাস্ট প্রত্যেক বৎসর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত সময়ের মধ্যে উহার সম্ভাব্য আয়-ব্যয়সহ পরবর্তী অর্থ বৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী অনুমোদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ বৎসরে সরকারের নিকট হইতে ট্রাস্টের সম্ভাব্য কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।
 
(২) প্রতি অর্থ বৎসর সমাপ্ত হইবার অব্যবহিত পর রাজস্ব বাজেট হইতে প্রাপ্ত অর্থের অব্যয়িত অর্থ পরবর্তী অর্থ বৎসরের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের কল্যাণে ব্যয় করিবার প্রয়োজন অপরিহার্য হইলে উহা অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে পরবর্তী অর্থ বৎসরের ট্রাস্টের বাজেট বিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করা যাইবে।
হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা
১৯। (১) ট্রাস্ট উহার আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাবরক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।
 
(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বলিয়া উল্লিখিত, প্রতি বৎসর ট্রাস্টের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও ট্রাস্টের নিকট প্রেরণ করিবেন এবং ট্রাস্ট উহার উপর মন্তব্য বা আপত্তি, যদি থাকে, সরকারের নিকট প্রেরণ করিবে।
 
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষার প্রয়োজনে মহা হিসাব-নিরীক্ষক বা এতদুদ্দেশ্যে তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি ট্রাস্টের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং ট্রাস্টি বোর্ডের যে কোনো সদস্য বা ট্রাস্টের যে কোনো কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
 
(৪) উপ-ধারা (২) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষা ছাড়াও Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (President’s Order No. 2 of 1973) এর Article 2(1)(b) তে সংজ্ঞায়িত চার্টার্ড একাউন্টেন্ট দ্বারা ট্রাস্টের হিসাব নিরীক্ষা করা যাইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে ট্রাস্ট এক বা একাধিক চার্টার্ড একাউন্টেন্ট নিয়োগ করিতে পারিবে এবং তাঁহারা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত হারে পারিতোষিক প্রাপ্য হইবেন।
 
(৫) ট্রাস্ট যথাশীঘ্র সম্ভব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে চিহ্নিত কোনো দোষত্রুটি বা অনিয়ম প্রতিকার করিবার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
বার্ষিক প্রতিবেদন
২০। (১) ট্রাস্ট প্রতি অর্থ বৎসর সমাপ্ত হইবার পরবর্তী ৯০(নববই) দিনের মধ্যে উক্ত বৎসরের সম্পাদিত কার্যাবলির বিবরণ সম্বলিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করিবে।
 
(২) সরকার, প্রয়োজনে, ট্রাস্টের নিকট হইতে যে কোনো বিষয়ের উপর উহার বিবরণী, প্রতিবেদন ও রিটার্ন অথবা অন্য কোনো তথ্য আহবান করিতে পারিবে এবং ট্রাস্ট উহা সরকারের নিকট দাখিল করিতে বাধ্য থাকিবে।

ষষ্ঠ অধ্যায়

বিবিধ

ক্ষমতা অর্পণ
২১। ট্রাস্টি বোর্ড, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, এই আইনের অধীন উহার উপর অর্পিত যে কোনো ক্ষমতা, উক্ত আদেশে উল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা ট্রাস্টের অন্য কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
২২। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা
২৩। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বোর্ড, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
অসুবিধা দূরীকরণ
২৪। এই আইনের কোনো বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলির সহিত সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অপস্পষ্টতা বা অসুবিধা দূর করিতে পারিবে।
রহিতকরণ ও হেফাজত
২৫। (১) এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে Bangladesh (Freedom Fighters) Welfare Trust Order, 1972 (President’s Order No. 94 of 1972), অতঃপর উক্ত Order বলিয়া উল্লিখিত, রহিত হইবে।
 
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিত হওয়া সত্ত্বেও, উক্ত Order এর অধীন-
 
(ক) কৃত কোনো কাজ-কর্ম ও গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;
 
(খ) গৃহীত কোনো কার্য বা ব্যবস্থা অনিষ্পন্ন বা চলমান থকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পন্ন করিতে হইবে বা চলমান থাকিবে যেন উক্ত Order রহিত হয় নাই;
 
(গ) প্রতিষ্ঠিত Trust এর তহবিল, সকল সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ এবং এতদ্‌সংশ্লিষ্ট সকল হিসাব বই, রেজিস্টার, রেকর্ডপত্রসহ অন্যান্য সকল দলিল-দস্তাবেজ, প্রকল্প এবং অন্য সকল প্রকার দাবি এই আইনের অধীন গঠিত ট্রাস্টের তহবিল, সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, সম্পত্তি, অর্থ, রেজিস্টার, দলিল-দস্তাবেজ, প্রকল্প এবং দাবি হিসাবে গণ্য হইবে;
 
(ঘ) সকল ঋণ ও দায়-দায়িত্ব এবং উহার দ্বারা বা উহার পক্ষে বা উহার সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের ঋণ ও দায়-দায়িত্ব এবং উহার দ্বারা বা উহার পক্ষে বা উহার সহিত সম্পাদিত চুক্তি বলিয়া গণ্য হইবে;
 
(ঙ) প্রতিষ্ঠিত Trust এর বিরুদ্ধে বা তদ্‌কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বা ট্রাস্ট কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা বলিয়া গণ্য হইবে;
 
(চ) প্রণীত সকল বিধি, প্রবিধান, জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ ও নীতিমালা, যদি থাকে এই আইনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন নূতনভাবে প্রণীত বা জারি না হওয়া পর্যন্ত বা, ক্ষেত্রমত, বিলুপ্ত না করা পর্যন্ত, প্রয়োজনীয় অভিযোজনসহ, পূর্বের ন্যায় এমনভাবে চলমান, অব্যাহত ও কার্যকর থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রণীত, জারিকৃত ও প্রদত্ত হইয়াছে;
 
(ছ) বিদ্যমান বোর্ড, কমিটি, কারিগরি কমিটি অথবা অন্যান্য কমিটি বা উপ-কমিটি, যদি থাকে, উহার কার্যক্রম, বিদ্যমান মেয়াদ অবসানের পূর্বে বিলুপ্ত করা না হইলে, এমনভাবে অব্যাহত থাকিবে যেন উক্ত বোর্ড, কমিটি বা কারিগরি কমিটি এই আইনের অধীন গঠিত হইয়াছে;
 
(জ) নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিতপূর্বে যে শর্তাধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, সেই একই শর্তে ট্রাস্টের চাকরিতে নিয়োজিত থাকিবেন এবং পূর্বের নিয়মে বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হইবেন।
ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ
২৬। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
 
(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs