প্রিন্ট ভিউ
Lighthouse Act, 1927 রহিতপূর্বক সময়োপযোগী করিয়া নূতনভাবে প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু বাংলাদেশ একটি সমুদ্র উপকূলীয় দেশ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে চলাচলকৃত নৌযানের পথ প্রদর্শনের বিষয়ে বাংলাদেশের দায়-দায়িত্ব রহিয়াছে; এবং
যেহেতু বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে নিরাপদ নৌযান চলাচল এবং প্রয়োজনের নিরিখে উদ্ধারকার্য পরিচালনায় সহায়তা প্রদান এবং বন্দরে আগত জাহাজসমূহের পথ প্রদর্শনে সহায়তা করা আবশ্যক; এবং
যেহেতু উপরোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করিয়া বাংলাদেশের বাতিঘর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিদ্যমান Lighthouse Act, 1927 (Act No. XVII of 1927) রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতনভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিমরূপ আইন করা হইল:-
২। (১) বিষয় অথবা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(১) ‘অধিদপ্তর’ অর্থ অধ্যাদেশের অধীন স্থাপিত নৌপরিবহণ অধিদপ্তর (Department of Shipping);
(২) ‘অধ্যাদেশ’ অর্থ Bangladesh Merchant Shipping Ordinance, 1983 (Ord. No. XXVI of 1983);
(৩) ‘কাস্টমস-কমিশনার’ অর্থ Customs Act, 1969 (Act No. IV of 1969) এর অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো Commissioner of Customs;
(৪) ‘নৌবাণিজ্য দপ্তর’ অর্থ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Mercantile Marine Office;
(৫) ‘প্রধান পরিদর্শক’ অর্থ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক;
(৬)‘প্রধান কর্মকর্তা’ অর্থ নৌবাণিজ্য দপ্তর, চট্টগ্রাম এর প্রধান কর্মকর্তা;
(৭)‘পরিদর্শক’ অর্থ বাতিঘর পরিদর্শন কার্যে নিয়োজিত পরিদর্শক;
(৮) ‘বন্দর বাতিঘর’ অর্থ বিভিন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষের বাতিঘর;
(৯)‘বাতিঘর’ অর্থ কোনো একটি ভৌগোলিক অবস্থানে নির্মিত কোনো টাওয়ার, ভবন বা অন্য কোনো স্থাপনা যেখানে সমুদ্রপথে নাবিকদের সতর্ক সংকেত প্রদানের জন্য বিশেষ ধরনের বাতি লাগানো হয়; এবং পাইলটদের নৌযান চালনায় সহায়ক হয় এমন যন্ত্রপাতি, আলোকিত নৌযান, কুয়াশা নির্দেশক চিহ্ন, বয়া ও বিকন; এবং-
(ক) যাহা অন্যূন ১০ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন হইবে;
(খ) যাহা হইতে বিচ্ছুরিত আলো অন্যূন ১৫ নৌ-মাইল (নটিক্যাল মাইল) পর্যন্ত দৃশ্যমান হইবে;
(১০) ‘বাতিঘর অঞ্চল’ অর্থ ধারা ৩ এর বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সীমানাভুক্ত বাতিঘর এলাকা;
(১১) ‘বন্দর’ অর্থ কোনো আইনের অধীন সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্থাপিত সমুদ্র বন্দর;
(১২)‘বন্দর কর্তৃপক্ষ’ অর্থ বাংলাদেশের কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ, যাহার তত্ত্বাবধানে এবং ব্যবস্থাপনায় উক্ত বন্দর সংশ্লিষ্ট বাতিঘর পরিচালিত হইয়া থাকে;
(১৩)‘মহাপরিচালক’ অর্থ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক;
(১৪)‘মালিক’ অর্থে কোনো জাহাজের অংশীদার, চার্টারার অথবা বন্ধক গ্রহীতা যাহার দখলে কোনো জাহাজ থাকে এবং যে কোনো এজেন্ট যাহার জিম্মায় কোনো জাহাজ ন্যাস্ত করা হয়, অন্তর্ভুক্ত হইবেন; এবং
(১৫) ‘সাধারণ বাতিঘর’ অর্থ সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত কোনো সাধারণ বাতিঘর।
(২) এই আইনে ব্যবহৃত যে সকল শব্দ অথবা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নাই, সে সকল শব্দ অথবা অভিব্যক্তি অধ্যাদেশে যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সে অর্থে প্রযোজ্য হইবে।
৩। সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাতিঘর অঞ্চলের সীমানা নির্ধারণ করিতে পারিবে।
৪। (১) সকল বাতিঘরের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারীসহ একজন প্রধান পরিদর্শক, প্রত্যেক বাতিঘর অঞ্চলের জন্য একজন করিয়া তত্ত্বাবধায়ক এবং সকল বাতিঘর পরিদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিদর্শক থাকিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, অধিদপ্তর বা নৌবাণিজ্য দপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোর অধীন সামঞ্জস্যপূর্ণ পদে কর্মরত কর্মচারীগণের মধ্য হইতে তত্ত্বাবধায়ক এবং পরিদর্শক নিয়োগ করিতে পারিবে এবং অন্যান্য কর্মচারীও নিয়োগ করিতে পারিবে।
৫। (১) সরকার, এই আইন বাস্তবায়নের সহিত সম্পৃক্ত অথবা স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে এবং বাতিঘর সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এইরূপ ব্যক্তিগণের সমন্বয়ে, একটি বাতিঘর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করিবে।
(২) সরকার, বাতিঘর বিশেষজ্ঞ কমিটির সহিত পরামর্শক্রমে, নিম্নরূপ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে, যথা:-
(ক) নতুন কোনো বাতিঘর স্থাপন অথবা বিদ্যমান বাতিঘরে কোনো স্থাপনা তৈরি অথবা অপসারণ;
(খ) বাতিঘরের কোনো পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন অথবা পুনঃস্থাপন অথবা পুনর্বাসন;
(গ) বাতিঘরের বাতির বৈশিষ্ট্য, ব্যবহৃত পদ্ধতি অথবা পরিচালনার ব্যাপারে কোনো ব্যতিক্রম আনয়ন;
(ঘ) বাতিঘর সম্পর্কিত খরচের ব্যাপারে কোনো প্রস্তাবনা; এবং
(ঙ) বাতিঘরের জন্য নতুন বিধান প্রণয়ন অথবা পরিবর্তন অথবা পরিবর্ধন এই আইনের অধীন পরিচালিত বাতিঘর ব্যবহারের মাশুলের হার পরিবর্তন।
৬। (১) নৌপরিবহণ অধিদপ্তর, সরকারের অনুমোদনক্রমে, সাধারণ বাতিঘরগুলোর তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনা, নৌবাণিজ্য দপ্তরের উপর ন্যস্ত করিতে পারিবে।
(২) নৌবাণিজ্য দপ্তর যে কোনো সাধারণ বাতিঘর তত্ত্বাবধান এবং ব্যবস্থাপনার জন্য নিকটস্থ বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌ বাহিনী অথবা কোস্ট গার্ডের সাহায্য গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৩) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, জরুরি বা যুদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী অথবা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের স্থাপনার নিকটস্থ বাতিঘরসমূহের, নিরাপত্তার দায়িত্ব সাময়িকভাবে উক্ত বাহিনীর উপর ন্যস্ত করিতে পারিবে।
৭। (১) প্রধান পরিদর্শক, তত্ত্বাবধায়ক অথবা পরিদর্শক, যে কোনো সময়, যে কোনো বাতিঘরে প্রবেশ এবং পরিদর্শন করিতে পারিবেন।
(২) যে কোনো বাতিঘরের দায়িত্বে নিয়োজিত অথবা ব্যবস্থাপনার সহিত জড়িত কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তিকে এবং এতদ্সম্পর্কিত যে কোনো ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট তদ্কর্তৃক প্রার্থিত সকল তথ্য প্রদানে বাধ্য থাকিবে।
৮। (১) ধারা ৭ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন যে কোনো পরিদর্শন অথবা তদন্তের পর অথবা নিরাপত্তা ও নৌযান পরিচালনার স্বার্থে ,সরকার প্রয়োজনে, যে কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা নৌবাণিজ্য দপ্তরকে নিম্নরূপ নির্দেশনা প্রদান করিতে পারিবে যথা:-
(ক) যে কোনো বাতিঘর পরিচালনা বন্ধ রাখা অথবা বাতিঘর সরাইয়া ফেলা অথবা বাতিঘর বন্ধ রাখা হইতে অথবা সরাইয়া ফেলা হইতে বিরত থাকা অথবা বাতিঘরের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করা অথবা পরিবর্তন করা হইতে বিরত থাকা; এবং
(খ) যে কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা নৌবাণিজ্য দপ্তরের অধিক্ষেত্রে কোনো বাতিঘর তৈরি, স্থাপন অথবা রক্ষণাবেক্ষণ করা অথবা তৈরি, স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ হইতে বিরত থাকা।
(২) কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা নৌবাণিজ্য দপ্তর সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো বাতিঘর তৈরি, স্থাপন, সরানো অথবা পরিচালনা বন্ধ অথবা ব্যবহার পদ্ধতি অথবা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করিতে পারিবে না :
তবে শর্ত থাকে যে, জরুরি অবস্থায় কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ বা নৌবানিজ্য দপ্তর উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে এবং উক্ত বিষয়ে সরকারকে তাৎণিকভাবে অবহিত করিবে এবং যতদ্রুত সম্ভব, আগমনকারী এবং বাতিঘরের আলোক দূরত্বের অধীনে চলাচলকারী জাহাজকে উক্ত বিষয়ে অবহিত করিবে।
(৩) সরকার কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা নৌবাণিজ্য দপ্তরকে সরকারের সকল নির্দেশাবলী প্রতিপালন, যথাযথভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ বা যথাযথ দায়িত্ব পালনের জন্য এবং সরকারের সন্তুষ্টি অনুযায়ী কর্তব্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে আর্থিক সংস্থান করিবার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান ও উপযুক্ত সময়সীমা নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে, যদি উক্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ বা নৌবাণিজ্য দপ্তর-
(ক) উপ-ধারা (১) এর নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হয়;
(খ) বাতিঘর তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত প্রদত্ত অথবা প্রচলিত আইনের অধীন প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ অথবা ব্যবস্থা গ্রহণে অসমর্থ হয় অথবা যথাযথভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালনে অসমর্থ হয়; এবং
(গ) এই সকল কার্যের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সুবিধার সংস্থান করিতে অসমর্থ হয় ।
(৪) কোনো বন্দর কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অথবা সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত সময়সীমার মধ্যে সরকারের নির্দেশাবলী প্রতিপালনে অসমর্থ হইলে, সরকার উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রয়োগ, দায়িত্ব প্রতিপালন অথবা আর্থিক সংস্থান করিতে পারিবে, তবে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ উক্ত কার্যের জন্য ব্যয়িত অর্থ পরবর্তীতে সরকারকে ফেরত প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে।
৯। (১) বাংলাদেশের বন্দরে আগত এবং প্রত্যাগত ও এক বন্দর হইতে অন্য বন্দরে যাতায়াতের নিমিত্ত জাহাজসমূহকে পথ প্রদর্শনের সুবিধার্থে বাতিঘরের সেবা সুবিধা প্রদানের জন্য নৌবাণিজ্য দপ্তর, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রত্যেক আগমন ও প্রত্যাগমনকারী জাহাজের জন্য সময় সময়, বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণ এবং সেই অনুযায়ী মাশুল সংগ্রহ করিতে পারিবে।
(২) বাংলাদেশের যে কোনো বন্দরে আগমন ও প্রত্যাগমনের সময় জাহাজের মালিক অথবা এজেন্ট অথবা মাস্টার কর্তৃক বাতিঘর মাশুল পরিশোধ করিতে হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো জাহাজ কর্তৃক বাতিঘর মাশুল প্রদানের তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) দিবস অতিক্রান্ত না হইলে পুনরায় বাতিঘর মাশুল প্রদান করিতে হইবে না।
(৩) বাতিঘরের মাশুল নির্ধারণের ৩০ (ত্রিশ) দিবসের মধ্যে পুনরায় বাতিঘর মাশুল আরোপ, বাতিল অথবা বাতিঘরের মাশুল তারতম্য করিবার ক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
১০। (১) নৌবাণিজ্য দপ্তর অথবা উহার পক্ষে কাস্টমস কমিশনার সরাসরি অথবা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বাতিঘর মাশুল আদায় করিতে পারিবে।
(২) নৌবাণিজ্য দপ্তর অথবা কাস্টমস কমিশনার সরাসরি বাতিঘর মাশুল আদায়ের ক্ষেত্রে বাতিঘর মাশুল জমাদানকারীকে একটি লিখিত রশিদ প্রদান করিবে, যাহাতে নিম্নরূপ তথ্যাদি উল্লেখ থাকিবে, যথা:-
(ক) যে বন্দরে বাতিঘর মাশুল প্রদান করা হইবে সেই বন্দরের নাম;
(খ) টাকার পরিমাণ;
(গ) বাতিঘর মাশুল পরিশোধের তারিখ; এবং
(ঘ) জাহাজের নাম, টনেজ এবং জাহাজের অন্যান্য বর্ণনা যাহার উপর ভিত্তি করিয়া বাতিঘর মাশুল প্রদান করা হইয়াছে।
১১। (১) অধ্যাদেশের আলোকে নির্ধারিত নীট টনেজের ভিত্তিতে বাতিঘর মাশুল নির্ধারণ করিতে হইবে।
(২) যে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অথবা বাংলাদেশের বাহিরে নিবন্ধিত জাহাজ যাহার টনেজ অধ্যাদেশ অনুযায়ী অনুমোদিত থাকে সেই ক্ষেত্রে ঐ জাহাজের রেজিস্ট্রেশন সনদে অথবা অন্য কোনো সনদে উল্লিখিত টনেজ গ্রহণযোগ্য হইবে।
(৩) জাহাজের মালিক, মাস্টার অথবা যাহার কাছে নিবন্ধন সনদ (রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) অথবা অন্য কোনো সনদ থাকে যেখানে টনেজের বিষয়ে উল্লেখ রহিয়াছে, উহা টনেজ নির্ধারণের জন্য কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তার নিকট উপস্থাপন করিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, মাস্টার, মালিক অথবা যাহার নিকট নিবন্ধনসনদ রহিয়াছে এইরূপ কোনো ব্যক্তি নিবন্ধন সনদ অথবা টনেজ নির্দেশক সনদ উপস্থাপন করিতে অস্বীকার করিলে অথবা অবহেলা করিলে কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তা জাহাজটি সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক টনেজ নির্ধারণের ব্যবস্থা করিবেন।
(৪) অনিবন্ধিত জাহাজের মালিক অথবা মাস্টার অথবা এজেন্ট যথাযথ কাগজপত্র কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তার নিকট উপস্থাপন করিতে ব্যর্থ হইলে কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তা উক্ত জাহাজটিকে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক উহার টনেজ নির্ণয় করিতে পারিবেন এবং সেই ক্ষেত্রে জাহাজের মাস্টার টনেজ নির্ধারণের জন্য ব্যয়িত অর্থ ও সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ করিবেন।
(৫) উপ-ধারা (৪) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো জাহাজ নিবন্ধিত হইলে উহা যে বন্দরে অবস্থান করিবে অথবা বাংলাদেশের যে বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা আরম্ভ করিবে সেই বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক টনেজ সম্পর্কিত বিষয়ে যদি জাহাজকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাহা হইলে উক্ত জাহাজকে অনূর্ধ্ব ১০০০ (এক হাজার) মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা যাইবে।
১২। (১) কোনো মালিক অথবা মাস্টার কোনো জাহাজের বাতিঘর মাশুল এবং এই আইনের অধীন অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করিতে অস্বীকার করিলে, কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তা উক্ত জাহাজ এবং জাহাজের অ্যাপারেল এবং আসবাবপত্র জব্দ করিতে পারিবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত বাতিঘর মাশুল ও অন্যান্য পাওনা এবং আটক করিবার ব্যয় প্রদান করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত জাহাজ আটক (Detain) রাখিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান অনুযায়ী জাহাজ আটক হওয়ার ৫(পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে মালিক অথবা মাস্টার কর্তৃক বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি এবং খরচের টাকা পরিশোধ করা না হইলে, কাস্টমস কমিশনার অথবা প্রধান কর্মকর্তা জাহাজ এবং অন্যান্য জব্দকৃত দ্রব্য নিলামে বিক্রয় করিতে পারিবে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি ও বিক্রয় প্রক্রিয়ার খরচ পরিশোধ করিতে পারিবে এবং কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকিলে উহা মালিক পক্ষকে প্রদান করিতে হইবে।
১৩। কোনো মালিক অথবা মাস্টার কর্তৃক কোনো জাহাজের জন্য এই আইনের অধীন যতক্ষণ পর্যন্ত বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি, অন্যান্য খরচের টাকা ও জরিমানার অর্থ জমা না দেওয়া হয় অথবা এতদবিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জামানত প্রদান করা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বন্দর ছাড়পত্র জারি করিবার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ‘‘বন্দর-ছাড়পত্র’’ জারি করিবেন না।
১৪। এই আইনের অধীন প্রদেয় বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি, অন্যান্য খরচের টাকা ও জরিমানার অর্থ পরিশোধের বিষয়ে অথবা প্রদেয় বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি, অন্যান্য খরচের টাকা ও জরিমানার পরিমাণের বিষয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে বিরোধভুক্ত পক্ষগুলোর যে কোনো একপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই বন্দরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক শুনানিপূর্বক ব্যয়ের পরিমান নির্ধারণ করা যাইবে এবং উক্ত বিষয়ে ম্যাজিস্টেট্রের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হইবে।
১৫। (১) কোনো জাহাজের মাস্টার কোনো বন্দরের পাওনা বাতিঘর মাশুল পরিশোধ না করিয়া বন্দর ত্যাগপূর্বক বাংলাদেশের অন্য কোনো বন্দরে গমন করিলে প্রথমোক্ত বন্দরের কাস্টমস কমিশনার পরবর্তী বন্দরের কাস্টমস কমিশনারকে বকেয়া আদায়ের জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ করিবেন।
(২) কোনো কাস্টমস কমিশনারের নিকট উপ-ধারা (১) এর অধীন বকেয়া বাতিঘর মাশুল আদায়ের নিমিত্ত অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে, তিনি সংশ্লিষ্ট জাহাজের উপর এই আইনের অধীন প্রথম বন্দরে পরিশোধযোগ্য করের সমপরিমাণ কর আরোপ ও আদায় করিবেন এবং আদায়কৃত উক্ত অর্থের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক উক্ত কাস্টমস কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত রশিদ হিসাবে গ্রহণযোগ্য হইবে।
১৬। (১) কোনো জাহাজের মাস্টার বা মালিক যদি এই আইনের অধীন জাহাজের বাতিঘর মাশুল, পাওনাদি এবং অন্যান্য খরচের অর্থ পরিশোধ না করেন অথবা কোনোভাবে ফাঁকি দেন অথবা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহা হইলে যে বন্দরে উক্ত জাহাজ পাওয়া যাইবে অথবা যে বন্দরে উক্ত জাহাজ আগমন করিবে সেই বন্দরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত জাহাজের মালিক বা মাস্টারকে দোষী সাব্যস্তকরণপূর্বক প্রদেয় মাশুলের অনধিক পাঁচগুণ অর্থ জরিমানা ধার্য করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কার্যধারায় ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত রশিদ মাস্টার অথবা মালিক যে প্রদেয় মাশুল ফাঁকি দিয়াছেন তাহার প্রমাণ হিসাবে গণ্য হইবে, এবং মাস্টার অথবা মালিক উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত উক্ত অভিযোগ হইতে ততক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহতি পাইবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ইহা প্রমাণ করিতে পারেন যে, আইনগত কোনো জটিলতা, খারাপ আবহাওয়া অথবা গ্রহণযোগ্য অন্য কোনো কারণে মাশুল প্রদান ব্যতিরেকে বন্দর ত্যাগ করা হইয়াছে।
১৭। নিম্নবর্ণিত শ্রেণির কোনো জাহাজ এই আইনের অধীন আরোপিত বাতিঘরের মাশুলের আওতাবহির্ভূত থাকিবে, যথা:-
(ক) কোনো দেশি বা বিদেশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাহাজ যাহা কোনো ভাড়া আদায়ের উদ্দেশ্যে মালামাল অথবা যাত্রী পরিবহণ করে না;
(খ) ১০ (দশ) টনের নিম্নের যে কোনো জাহাজ; এবং
(গ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের দ্বারা, সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে অব্যাহতিপ্রাপ্ত অন্য যে কোনো শ্রেণির জাহাজ।
১৮। এই আইনের অধীন প্রদেয় বাতিঘর মাশুল পরিমাণের অতিরিক্ত বাতিঘর মাশুল প্রদান করা হইলে উক্ত অতিরিক্ত পরিমাণ মাশুলের অর্থ ফেরত পাওয়ার লক্ষ্যে ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে আবেদন করিতে হইবে এবং উক্ত সময় অতিক্রান্ত হইবার পর অতিরিক্ত মাশুলের অর্থ ফেরত পাওয়ার আবেদন গ্রহণযোগ্য হইবে না।
১৯। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, সরকার, এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, নিম্নরূপ এক অথবা একাধিক বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে, যথা :-
(ক) বাতিঘরের প্রধান পরিদর্শক, তত্ত্বাবধায়ক, পরিদর্শক, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ও প্রধান বাতিরক্ষকসহ সকল কর্মচারীর ক্ষমতা এবং দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ; এবং
(খ) এই আইনের অধীন গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির দায়-দায়িত্ব ও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ।
২০। (১) Lighthouse Act, 1927 (Act No. XVII of 1927), অতঃপর উক্ত Act বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্বারা রহিত করা হইল।
(২) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত Act এর অধীন কৃত সকল কাজকর্ম বা গৃহীত ব্যবস্থা এই আইনের অধীন কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
(৩) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত Act এর অধীন প্রণীত কোনো বিধি অথবা জারীকৃত কোনো আদেশ, বিজ্ঞপ্তি অথবা প্রজ্ঞাপন এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত, প্রণীত অথবা জারীকৃত বলিয়া গণ্য হইবে।
(৪) এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে উক্ত Act এর অধীন কোনো মামলা অথবা কার্যধারা কোনো আদালতে বিচারাধীন থাকিলে উহা উক্ত আদালত কর্তৃক এইরূপে শুনানি ও নিষ্পত্তি হইবে, যেন উক্ত Act রহিত হয় নাই।
২১। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ ((Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।