প্রিন্ট ভিউ
Marine Fisheries Ordinance, 1983 রহিতক্রমে উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সনের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক আদেশ দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহের, অতঃপর উক্ত অধ্যাদেশ বলিয়া উল্লিখিত, অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তপশিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইয়াছে এবং সিভিল আপিল নং ৪৮/২০১১ এ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পাইয়াছে; এবং
যেহেতু ২০১৩ সনের ৭ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হইয়াছে; এবং
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং
যেহেতু সরকারের উপরি-বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে, Marine Fisheries Ordinance, 1983 (Ordinance No. XXXV of 1983) রহিতক্রমে উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে একটি নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজন;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
১। (১) এই আইন সামুদ্রিক মৎস্য (Marine Fisheries) আইন, ২০২০ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় অথবা প্রসংগের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(১) ‘‘অপরাধ’’ অর্থ এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় কোনো অপরাধ;
(২) ‘‘অনুমতিপত্র’’ অর্থ ধারা ২১ এর অধীন আর্টিসানাল নৌযানের অনুকূলে মৎস্য আহরণের জন্য প্রদত্ত অনুমতি;
(৩) ‘‘আর্টিসানাল নৌযান’’ কোনো মৎস্য নৌযান যাহার ধারণ ক্ষমতা নেট ১৫ (পনেরো) টন বা তাহার নীচে;
(৪) ‘‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’’ অর্থ ধারা ৪৩ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত মৎস্য অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা;
(৫) ‘‘গভীর সমুদ্র’’ অর্থ রাষ্ট্রীয় জলসীমা (Territorial Water) এবং একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive Economic Zone) এর বহির্ভূত আন্তর্জাতিক জলসীমা;
(৬) ‘‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’’ অর্থ ধারা ৩২ এর অধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা;
(৭) ‘‘নির্ধারিত’’ অর্থ বিধি দ্বারা নির্ধারিত;
(৮) ‘‘পরিচালক’’ অর্থ এই আইনের অধীন ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত মৎস্য অধিদপ্তরের কোনো পরিচালক;
(৯) ‘‘বাণিজ্যিক ট্রলার’’ অর্থ ট্রলিং বা লংলাইনিং বা পার্সেনিং পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণে সক্ষম কোনো মৎস্য নৌযান;
(১০) ‘‘বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমা’’ অর্থ দেশীয় কোনো আইন দ্বারা ঘোষিত রাষ্ট্রীয় জলসীমা (Territorial Water) Ges United Nations Convention on the Law of the Sea, 1982 Gi Article 33 Øviv wba©vwiZ msjMœ AÂj (Contiguous Zone) এবং Article 55 দ্বারা নির্ধারিত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (Exclusive Economic Zone) বা সরকার কর্তৃক আইন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী ঘোষিত জলসীমা;
(১১) ‘‘বিদেশি মৎস্য নৌযান’’ অর্থ মৎস্য আহরণের স্থানীয় নৌযান ব্যতীত অন্য কোনো নৌযান যাহার শতকরা অন্যূন ৫১ (একান্ন) ভাগ স্বত্ব বিদেশি কোনো ব্যক্তির;
(১২) ‘‘বিধি’’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(১৩) ‘‘মহাপরিচালক’’ অর্থ মহাপরিচালক মৎস্য অধিদপ্তর;
(১৪) ‘‘ব্যক্তি’’ অর্থ কোনো ব্যক্তি, নৌযানের মালিক, যে কোনো ধরনের কোম্পানি, সংঘ, সমিতি, অংশীদারী কারবার, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা অন্য কোনো কৃত্রিম আইনগত সত্তা;
(১৫) ‘‘মৎস্য’’ অর্থ জীবন্ত বা প্রক্রিয়াজাতকৃত সামুদ্রিক সম্পদের যে কোনো প্রজাতি এবং উহার বাচ্চা, পোনা, ডিম এবং স্পন;
(১৬) ‘‘মৎস্য আহরণ’’ অর্থ নির্ধারিত উপায়ে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় মৎস্য অনুসন্ধান বা সংগ্রহ করা, ধরা, একত্রীভূত করা, প্রলুব্ধ করা বা এইরূপ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ;
(১৭) ‘‘মৎস্য নৌযান’’ অর্থ সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য স্থানীয় বা বিদেশি নৌযান, যে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক ট্রলার, যান্ত্রিক নৌযান, আর্টিসানাল নৌযান, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মজুতকরণের জন্য ব্যবহৃত নৌযান বা মৎস্য আহরণে সহায়ক হিসাবে ব্যবহৃত যে কোনো নৌযান;
(১৮) ‘‘যান্ত্রিক মৎস্য নৌযান’’ অর্থ ট্রলিং বা লংলাইনিং বা পার্সেনিং পদ্ধতি ব্যতীত ইঞ্জিন চালিত কোনো মৎস্য নৌযান যাহার ধারণ ক্ষমতা নেট ১৫ (পনেরো) টন এর বেশি;
(১৯) ‘‘লাইসেন্স’’ অর্থ ধারা ৮ এর অধীন ইস্যুকৃত কোনো লাইসেন্স;
(২০) ‘‘সমুদ্র যাত্রা’’ অর্থ ধারা ১৬ তে উল্লিখিত সমুদ্র যাত্রা;
(২১) ‘‘সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র’’ অর্থ ধারা ১৬ তে উল্লিখিত সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র (Sailing Permission);
(২২) ‘‘সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকা’’ অর্থ ধারা ৩ এর অধীন ঘোষিত সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকা;
(২৩) ‘‘স্কিপার’’ অর্থ মৎস্য নৌযানের কমান্ড বা উহার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি; এবং
(২৪) ‘‘স্থানীয় মৎস্য নৌযান’’ অর্থ এমন কোনো মৎস্য নৌযান, যাহা-
(ক) সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নাগরিকের স্বত্বাধীন, বা
(খ) আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী, সংগঠন (Society) বা অন্য কোনো সংঘ (Association) এর সম্পূর্ণ স্বত্বাধীন নৌযান যাহার মোট স্বত্বের অন্যূন শতকরা ৫১ (একান্ন) ভাগ বাংলাদেশের নাগরিকের এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত এবং যৌথ উদ্যোগে বা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে অন্য কোনো সমন্বয়ে বাংলাদেশের পতাকাবাহি হিসাবে মৎস্য আহরণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী নৌযান, বা
(গ) সম্পূর্ণ সরকারের স্বত্বাধীনে বা বাংলাদেশের আইনে সংবিধিবদ্ধ সংস্থার স্বত্বাধীনে পরিচালিত কোনো নৌযান।
দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রশাসনিক
৩। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমাকে সমুদ্রের গভীরতার ভিত্তিতে বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি অনুসরণে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকা ঘোষণা করিতে পারিবে এবং উক্ত এলাকায়, কোন ধরনের নৌযানের সাহায্যে মৎস্য আহরণ করা যাইবে উহা নির্দিষ্ট করিতে পারিবে।
(২) সরকার, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের জন্য, প্রয়োজনবোধে, উপ-ধারা (১) এর অধীন ঘোষিত সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় সকল বা যে কোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিতে পারিবে।
(৩) কোনো ব্যক্তি যদি উপ-ধারা (২) এর অধীন আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করিয়া মৎস্য আহরণ করে তাহা হইলে তাহার উপর আহরিত মৎস্যের মূল্যের সমপরিমাণ প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ এবং আহরিত মৎস্য বাজেয়াপ্ত করা যাইবে।
৪। মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, টেকসই ও আহরণযোগ্য মজুদ বজায় রাখিবার জন্য এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজনে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় বা গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের লাইসেন্স প্রদানের জন্য, সময় সময়, নৌযানের সংখ্যা নির্ধারণ এবং শ্রেণিবিন্যাস করিতে পারিবে।
৫। (১) সরকার অবৈধ, অনুল্লিখিত এবং অ-নিয়ন্ত্রিত (Illegal, Unreported and Unregulated) মৎস্য আহরণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) মহাপরিচালক, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার মৎস্য সম্পদের, প্রজাতি ভিত্তিক বা সার্বিক, জরিপ পরিচালনা, মজুদ এবং অনুমোদিত আহরণের পরিমাণ (Allowable catch) নির্ধারণ এবং মৎস্য সম্পদের সর্বোচ্চ টেকসই উৎপাদন (Maximum sustainable yield) নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান (Monitoring, Controlling and Surveillance) এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৩) উপধারা (১) এর অধীন সরকার কর্তৃক জারিকৃত আদেশ বা নির্দেশ কোনো ব্যক্তি বা স্কিপার লঙ্ঘন করিলে উহা অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য স্থানীয় মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা স্কিপার বা উভয়ই অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৬। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সুনীল অর্থনীতি (Blue Economy) প্রসারে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় মেরিকালচার এলাকা (Mariculture area) ঘোষণা করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ঘোষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হইবে।
ব্যাখ্যা- এই ধারায় ‘‘মেরিকালচার’’ অর্থ উপকূলসহ সমুদ্রে বিশেষভাবে চিহ্নিত এলাকা যেখানে অস্থায়ী আবদ্ধ ক্ষেত্র প্রস্তুতপূর্বক বা কোনো জলাশয়ে সমুদ্রের পানি (Marine and brakish water) ব্যবহার করিয়া খাদ্য বা অন্য কোনো পণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সামুদ্রিক জীবিত সম্পদ চাষ করা হয়।
তৃতীয় অধ্যায়
লাইসেন্স সংক্রান্ত সাধারণ বিষয়াদি
৭। (১) ধারা ২১ এর বিধান সাপেক্ষে লাইসেন্স বা অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় বা গভীর সমুদ্রে নৌযানের সাহায্যে বা অন্য কোনো প্রকারে মৎস্য আহরণ করিতে পারিবে না :
তবে শর্ত থাকে যে, বিদেশি মৎস্য নৌযান কর্তৃক গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে এই ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিয়া মৎস্য আহরণ করিলে বা করিবার উদ্যোগ গ্রহণ বা সহায়তা করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং মৎস্য নৌযান ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত হইবে।
৮। (১) পরিচালক, মৎস্য নৌযানের মালিক বরাবরে, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় বা গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এবং যান্ত্রিক মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, লাইসেন্স ইস্যু করিতে পারিবে।
(২) পরিচালক, ধারা ৪ এর অধীন নির্ধারিত সংখ্যক মৎস্য নৌযানের অধিক নৌযান বরাবর লাইসেন্স ইস্যু করিতে পারিবেন না।
৯। (১) কোনো মৎস্য নৌযানের মালিককে মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিচালকের নিকট আবেদন করিতে হইবে।
(২) আবেদনপত্রের সহিত নিম্নলিখিত দলিল বা তথ্য সংযুক্ত করিতে হইবে, যথা :-
(ক) আবেদনকারীর নাগরিকত্ব বা জাতীয়তা প্রমাণের সনদপত্র;
(খ) মৎস্য নৌযানের আমদানি বা প্রস্তুতের বৈধ দলিলাদি;
(গ) স্থানীয় মৎস্য নৌযানের ক্ষেত্রে, Bangladesh Merchant Shipping Ordinance, 1983 (Ordinance No. XXVI of 1983) এর অধীন ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন এবং সার্টিফিকেট অব ইন্সপেকশন এর কপি;
(ঘ) মৎস্য নৌযানের মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র;
(ঙ) নির্ধারিত ফি প্রদানের রসিদ;
(চ) নির্ধারিত অন্য কোনো সনদ বা তথ্য।
(৩) কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযানের মালিককে উপ-ধারা (২) এর দফা (খ) এবং (গ) এ উল্লিখিত দলিলের পরিবর্তে তাহার দেশের সংশ্লিষ্ট মৎস্য নৌযান নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনুরূপ সনদপত্র সংযুক্ত করিতে হইবে।
(৪) পরিচালকের নিকট, উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্ত আবেদনপত্রে উল্লিখিত তথ্যাবলি বা সংযোজিত দলিলাদি যাচাই-বাছাইপূর্বক, সঠিক বলিয়া বিবেচিত হইলে ধারা ১৯ এবং ২২ এর বিধান সাপেক্ষে, তিনি উহা দাখিলের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আবেদনকারী বরাবর লাইসেন্স ইস্যু করিতে পারিবেন।
১০। লাইসেন্স হস্তান্তরযোগ্য বা বিক্রয়যোগ্য হইবে না :
তবে শর্ত থাকে যে, ব্যক্তিমালিকানার ক্ষেত্রে লাইসেন্স গ্রহীতার মৃত্যু হইলে মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারী বা নৌযানের মালিকানা পরিবর্তন হইলে নূতন মালিক বরাবরে ধারা ৮ এর বিধান সাপেক্ষে, নূতন লাইসেন্স প্রদান করা যাইবে।
১১। (১) লাইসেন্সের মেয়াদ হইবে ২ (দুই) বৎসর।
(২) লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার ৩০ (ত্রিশ) দিন পূর্বে নবায়নের জন্য পরিচালকের নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করিতে হইবে এবং নবায়নের জন্য প্রাপ্ত আবেদন বিবেচনাপূর্বক, ধারা ১২ এর বিধান সাপেক্ষে, পরিচালক লাইসেন্স নবায়ন করিতে পারিবেন।
১২। (১) পরিচালক, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, লাইসেন্স নবায়নের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
(২) পরিচালক বিশেষ বিবেচনায় লাইসেন্সের জন্য নির্ধারিত ফি এর দ্বিগুণ ফি আদায় করিয়া কেবল একবার লাইসেন্স নবায়ন করিতে পারিবেন।
১৩। (১) পরিচালক নিম্নবর্ণিত যে কোনো কারণে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবেন, যদি মৎস্য নৌযানের মালিক-
(ক) এই আইন বা বিধি বা লাইসেন্সের কোনো শর্ত লঙ্ঘন করিয়া থাকেন;
(খ) কোনো অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনপূর্বক লাইসেন্স গ্রহণ করিয়া থাকেন;
(গ) মৎস্য আহরণ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মৎস্য নৌযানটি ব্যবহার করিয়া থাকেন;
(ঘ) একাধারে ৩ (তিন) বৎসর লাইসেন্স নবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হন;
(ঙ) লাইসেন্স হস্তান্তর বা বিক্রয় করেন;
(চ) তাহার মৎস্য নৌযান কর্তৃক নদী বা সমুদ্রের পানি বা পরিবেশ দূষণ করেন বা করিয়া থাকেন;
(ছ) তাহার মৎস্য নৌযানের সাহায্যে সংঘটিত কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হইয়া থাকেন;
(জ) মৃত্যুবরণ করেন;
(ঝ) এই আইনের অধীন ২ (দুই) বার প্রশাসনিক জরিমানা বা অন্য কোনো অপরাধে দণ্ডিত হন; বা
(ঞ) নির্ধারিত অন্য কোনো শর্ত প্রতিপালন না করিয়া থাকেন।
(২) পরিচালক উপ-ধারা (১) এর অধীন লাইসেন্স বাতিলের পূর্বে তাহার লাইসেন্স কেন বাতিল করা হইবে না এই মর্মে নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য মৎস্য নৌযানের মালিককে নোটিশ প্রদান করিবেন এবং নোটিশে উল্লিখিত অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাহার লাইসেন্স স্থগিত করিতে পারিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশের জবাব প্রাপ্তির পর-
(ক) জবাব সন্তোষজনক হইলে পরিচালক লাইসেন্সের উপর প্রদত্ত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারপূর্বক মৎস্য নৌযানের মালিককে তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবেন;
(খ) জবাব সন্তোষজনক না হইলে তাহাকে ব্যক্তিগত শুনানীর সুযোগ প্রদান করিয়া তাহার নামে ইস্যুকৃত লাইসেন্স বাতিল করিতে পারিবেন।
১৪। প্রতিটি লাইসেন্স উহাতে বর্ণিত মৎস্য প্রজাতি এবং মৎস্য আহরণের যন্ত্রপাতি বা পদ্ধতি বা নির্দিষ্টকৃত এলাকার জন্য বৈধ থাকিবে।
১৫। (১) পরিচালক, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে বা উপ-ধারা (৩) দ্বারা নির্ধারিত, শর্ত আরোপ করিতে পারিবেন, যথা:-
(ক) মৎস্য আহরণের জন্য অনুমোদিত এলাকা বা সময়কাল;
(খ) যে মৎস্য আহরণ এবং বহন করা হইবে উহার প্রজাতি, আকার, লিঙ্গ, বয়স এবং পরিমাণ;
(গ) মৎস্য আহরণ এবং বহনের পদ্ধতি;
(ঘ) মৎস্য নৌযান কর্তৃক ব্যবহৃত হইতে পারে এইরূপ মৎস্য ধরিবার যন্ত্রপাতির ধরন, আকার ও পরিমাণ;
(ঙ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, জারীকৃত আদেশ বা নির্দেশ পালন সংক্রান্ত;
(চ) মৎস্য নৌযান বরাবরে ইস্যুকৃত লাইসেন্স মৎস্য নৌযানে রাখা সংক্রান্ত বিষয়;
(ছ) মৎস্য নৌযান চিহ্নিতকরণ এবং উহা সনাক্তকরণের অন্যান্য উপায়;
(জ) নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষেত্র।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আরোপিত শর্তের অতিরিক্ত হিসাবে সরকার, বিদেশি মৎস্য নৌযানের লাইসেন্সের ক্ষেত্রে অন্য যে কোনো শর্ত আরোপ করিতে পারিবে।
(৩) এই আইনের অধীন বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত উপ-ধারা (১) এর অধীন লাইসেন্সে আরোপনীয় শর্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, নির্ধারণ করিতে পারিবেন।
(৪) কোনো ব্যক্তি এই ধারার অধীন বা নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্সে আরোপিত কোনো শর্ত অমান্য করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
১৬। (১) প্রত্যেক লাইসেন্সপ্রাপ্ত মৎস্য নৌযানকে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিচালকের নিকট হইতে সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র (Sailing Permission) গ্রহণ করিতে হইবে।
(২) মৎস্য নৌযানের মালিককে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমুদ্রে যাতায়াতের বিষয়, সমুদ্রে অবস্থানকালীন মেয়াদ, মৎস্য আহরণের লগবুক ও স্ট্যাকিং শীট সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন জারীকৃত সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্রের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি পরবর্তী যাত্রায় মৎস্য আহরণের জন্য উক্তরূপ অনুমতিপত্রের জন্য আবেদন করিতে পারিবেন না।
(৪) মৎস্য আহরণ শেষে বন্দরে প্রত্যাবর্তনের অন্যূন ২৪ (চবিবশ) ঘণ্টা পূর্বে মৎস্য নৌযানের অবস্থান, মৎস্য খালাসের সময় উল্লেখ করিয়া পরিচালক বরাবর আগমনী বার্তা প্রেরণ করিতে হইবে এবং ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আহরিত মৎস্য খালাস করিতে হইবে।
(৫) ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-ধারা (৪) এর অধীন আগমনী বার্তা প্রাপ্তির পর মৎস্য খালাসের সময়, মৎস্য আহরণের পরিমাণ, ধরন বা প্রকৃতি, ইত্যাদি পরীক্ষা করিতে পারিবেন।
(৬) উপ-ধারা (৫) এর অধীন পরীক্ষাকালে যদি প্রতীয়মান হয় যে, সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র বা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করিয়া মৎস্য আহরণ করা হইয়াছে, তাহা হইলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহরিত মৎস্যের বাজারমূল্যের ৩ (তিন) গুণ প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ এবং উক্ত আহরিত মৎস্য বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।
(৭) সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্রের নির্ধারিত শর্ত ভঙ্গ করিলে, পরিচালক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিখিত আদেশ দ্বারা পরবর্তী সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র স্থগিত বা সমুদ্র যাত্রার অনুমতির আবেদন নামঞ্জুর করিতে পারিবেন।
(৮) উপ-ধারা (৭) অনুসারে স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে বা আবেদনপত্র নামঞ্জুরের ক্ষেত্রে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিচালক সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র প্রদান করিতে পারিবেন।
(৯) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (৪) এর অধীন আগমনী বার্তা প্রেরণ না করিয়া কোনো মৎস্য নৌযান হইতে মৎস্য খালাস করিলে তাহার উপর খালাসকৃত মৎস্যের বাজারমূল্যের সমপরিমাণ প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ এবং খালাসকৃত মৎস্য বাজেয়াপ্ত করা যাইবে।
ব্যাখ্যা-এই ধারায় ‘‘আগমনী বার্তা’’ অর্থ কোনো মৎস্য নৌযান কর্তৃক উপকূল বা সমুদ্র হইতে মৎস্য আহরণ শেষে বন্দরে মৎস্য খালাসের জন্য মৎস্য অধিদপ্তরকে প্রদত্ত আগাম বার্তা।
১৭। (১) সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি আহরণকৃত মৎস্য সংক্রান্ত বিবরণী এবং বিক্রয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নির্ধারিত ফরম ও পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করিবেন এবং উহার অনুলিপি পরিচালকের নিকট দাখিল করিবেন।
(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান অমান্য করিলে তাহার উপর অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করা যাইবে।
১৮। কোনো মৎস্য নৌযান এইরূপভাবে পরিচালনা করা যাইবে না যাহাতে নৌ বা জাহাজ চলাচলের স্বীকৃত নৌপথে বিঘ্ন সৃষ্ট হয়।
চতুর্থ অধ্যায়
স্থানীয় মৎস্য নৌযান কর্তৃক মৎস্য আহরণ কার্যক্রম
১৯। পরিচালক স্থানীয় মৎস্য নৌযান বরাবরে লাইসেন্স ইস্যু করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে, যদি-
(ক) ধারা ৯ অনুযায়ী আবেদনপত্র সঠিক পাওয়া না যায়;
(খ) আবেদনপত্রে উল্লিখিত ও সংযোজিত তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট বা অপর্যাপ্ত হয়;
(গ) সামুদ্রিক মৎস্য শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে এবং মৎস্য ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুসারে কোনো বিশেষ মৎস্য জলসীমার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য লাইসেন্স প্রদান না করা প্রয়োজন হয়;
(ঘ) আবেদনকারী এই আইন অথবা অন্য কোনো আইনের অধীন লাইসেন্স প্রাপ্তির অযোগ্য হন;
(ঙ) যে মৎস্য নৌযান বরাবরে লাইসেন্স ইস্যু করা হইয়াছে সেই নৌযান এই আইন, বিধি বা লাইসেন্সে উদ্ধৃত কোনো শর্ত লঙ্ঘন করিয়া উহা ব্যবহার করিয়া থাকে;
(চ) যে মৎস্য নৌযানের সাহায্যে মৎস্য আহরণের জন্য আবেদন করা হইয়াছে সেই নৌযানটি Bangladesh Merchant Shipping Ordinance, 1983 (Ordinance No. XXVI of 1983) এর অধীন নিবন্ধিত না হয়; বা
(ছ) নির্ধারিত অন্য কেনো শর্ত প্রতিপালন না করা হয়।
২০। (১) সরকার কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত নমুনা (Specification) অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক ট্রলার আমদানি বা স্থানীয়ভাবে তৈরী করিতে হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত নমুনা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ট্রলার আমদানি বা স্থানীয়ভাবে তৈরী করা না হইলে উহার মালিক লাইসেন্স প্রাপ্ত হইবেন না।
(৩) উপধারা (১) মোতাবেক প্রাপ্ত নির্দিষ্টকৃত নমুনা মতে বাণিজ্যিক ট্রলার আমদানি বা স্থানীয়ভাবে তৈরির জন্য সরকারের প্রদত্ত অনুমতিপত্র হস্তান্তরযোগ্য হইবে না এবং হস্তান্তর করা হইলে তাহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
(৪) অন্য কোনো আইনে যাহাই উল্লেখ থাকুক না কেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত নির্দিষ্টকৃত নমুনা ব্যতীত কোনো মৎস্য নৌযান আমদানি বা স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হইলে উক্ত মৎস্য নৌযানের রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা যাইবে না।
২১। (১) প্রত্যেক আর্টিসানাল নৌযানের মালিককে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় মৎস্য আহরণের অনুমতির জন্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিচালকের নিকট আবেদন করিতে হইবে।
(২) পরিচালক, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদন অনুযায়ী আবেদনকারীকে অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন অনুমতিপ্রাপ্ত আর্টিসানাল নৌযান ব্যতীত অন্য কোনো আর্টিসানাল নৌযান সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় মৎস্য আহরণ করিতে পারিবে না।
(৪) এই ধারা অধীন প্রদত্ত অনুমতিপত্র হস্তান্তরযোগ্য বা বিক্রয়যোগ্য হইবে না।
(৫) এই ধারার অধীন প্রদত্ত অনুমতি সরকার বা পরিচালক কর্তৃক পুনরাদেশ দ্বারা বাতিল না করা পর্যন্ত বহাল থাকিবে।
(৬) সরকার, বা ক্ষেত্রমত পরিচালক, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত অনুমতি বাতিল করিতে পারিবে।
(৭) এই ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার আর্টিসানাল নৌযানকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই ধারার অধীন অনুমতি গ্রহণ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।
(৮) এই ধারার অধীন অনুমতি গ্রহণ ব্যতীত কোনো আর্টিসানাল নৌযান সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ এলাকায় মৎস্য আহরণ করিলে আহরিত মৎস্যের সমপরিমাণ মূল্য প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ এবং আহরিত মৎস্য বাজেয়াপ্ত করা যাইবে।
পঞ্চম অধ্যায়
বিদেশি মৎস্য নৌযান কর্তৃক মৎস্য আহরণ কার্যক্রম
২২। সরকার, কারণ উল্লেখপূর্বক বা উপযুক্ত বিবেচনায় কারণ উল্লেখ ব্যতিরেকে, বিদেশি মৎস্য নৌযান বরাবরে ধারা ৮ এর অধীন লাইসেন্স ইস্যু করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে।
২৩। (১) কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযান লাইসেন্স ব্যতীত বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় প্রবেশ করিতে পারিবে না।
(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপ-ধারা (৩) ও (৪) এর বিধান সাপেক্ষে, কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযান কেবল নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় প্রবেশ এবং যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য অবস্থান করিতে পারিবে, যথা :-
(ক) বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার বাহিরের কোনো স্থানে গমণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার উপর দিয়া অতিক্রমণের উদ্দেশ্যে;
(খ) যেক্ষেত্রে নৌযান ও উহার নাবিকের নিরাপত্তা বিপদাপন্ন, সেক্ষেত্রে আসন্ন বিপদ এড়াইবার জন্য;
(গ) বিপদগ্রস্ত ও সংকটাপন্ন ব্যক্তি, নৌযান অথবা উড়োজাহাজকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে;
(ঘ) কোনো নাবিকের জরুরি চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনে;
(ঙ) আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, যাহা নির্দোষ অতিক্রমণ (Innocent Passage) এর আওতাভুক্ত।
(৩) উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত যে কোনো উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় প্রবেশকারী বিদেশি মৎস্য নৌযান-
(ক) এই আইনসহ দেশে বলবৎ অন্য আইন প্রতিপালন করিতে বাধ্য থাকিবে; এবং
(খ) যে উদ্দেশ্যে প্রবেশ করিয়াছে উহা পূরণ হইবার পর যথাশীঘ্র সম্ভব উক্ত জলসীমার বাহিরে চলিয়া যাইবে।
(৪) উপ-ধারা (২) বর্ণিত উদ্দেশ্যে কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযানকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় আগমন এবং বহির্গমন সম্পর্কে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, সরকার বা, ক্ষেত্রমত, পরিচালককে অবহিত করিতে হইবে।
ব্যাখ্যা- এই ধারায় ‘‘নির্দোষ অতিক্রমণ’’ অর্থ United Nations Convention on the Law of the Sea, 1982 তে বর্ণিত নির্দোষ অতিক্রমণ।
২৪। যদি কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযান লাইসেন্স ব্যতীত-
(ক) বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় প্রবেশ করে;
(খ) মৎস্য আহরণ করে বা আহরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে;
(গ) মৎস্য বোঝাই (load), খালাশ (unload) বা এক নৌযান হইতে অন্য নৌযানে মৎস্য স্থানান্তর (tranship) বা ক্রয়-বিক্রয় করে;
(ঘ) বেআইনিভাবে মৎস্য পরিবহন, পাচার বা অন্য কোনোভাবে মৎস্য সম্পদ বা পরিবেশের কোনো ক্ষতিসাধন করে বা ক্ষতিসাধন হইতে পারে এমন কোনো কাজ করে বা কাজ করিবার উদ্যোগ গ্রহণ করে বা উক্ত কাজে সহায়তা করে; বা
(ঙ) জ্বালানি সরবরাহ বোঝাই বা খালাশ করে;
তাহা হইলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ।
২৫। (১) যদি কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযান কর্তৃক ধারা ২৪ এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহা হইলে উক্ত নৌযানের মালিক, স্কিপার এবং নৌযানে অবস্থানরত অপরাধ সংঘটনকারী অন্য কোনো ব্যক্তি উক্ত অপরাধের জন্য অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
(২) ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কোনো শৃঙ্খলা বাহিনী ধারা ২৪ এ উল্লিখিত অপরাধ সংঘটনের দায়ে কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযান, উহার মালিক, স্কিপার এবং নৌযানে আরোহণকৃত অপরাধ সংঘটনকারী অন্য কোনো ব্যক্তিকে আটক করিতে পারিবে এবং আটকের পর উক্ত নৌযানকে কোনো নিকটবর্তী বন্দরে নোঙরপূর্বক ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং আটক ব্যক্তি এবং মৎস্য নৌযানে রক্ষিত মালামালের বর্ণনাসহ একটি প্রতিবেদন পরিচালকের নিকট দাখিল করিবেন।
(৩) পরিচালক উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আটককৃত মৎস্য নৌযান এবং অভিযুক্ত মালিক, স্কিপার এবং মৎস্য নৌযানে অবস্থানরত অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
(৪) পরিচালক উপ-ধারা (২) এর অধীন আটককৃত মৎস্য নৌযান, মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম এবং আহরিত মৎস্য বাজেয়াপ্ত করিবেন।
(৫) পরিচালক উপ-ধারা (৪) এর অধীন বাজেয়াপ্ত মৎস্য নৌযান, মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম এবং আহরিত মৎস্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিলামে বিক্রয় করিয়া বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা রাখিবেন।
(৬) পরিচালক উপ-ধারা (২) ও (৩) এ উল্লিখিত তথ্য এবং গৃহীত ব্যবস্থাদি তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন আকারে মহাপরিচালকের মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করিবেন।
২৬। সরকার লাইসেন্স দ্বারা কোনো বিদেশি মৎস্য নৌযানকে শুল্ক, কর, ইমিগ্রেশন, স্বাস্থ্য, সমুদ্রোপযোগিতা এবং নিরাপত্তা সনদ সম্পর্কিত আইন দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা বা অবশ্য পালনীয় শর্ত প্রতিপালন হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে না :
তবে শর্ত থাকে যে, সরকার কারণ উল্লেখপূর্বক লিখিত আদেশ দ্বারা বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় জরীপ বা গবেষণা কাজে ব্যবহৃত বিদেশি কোনো মৎস্য নৌযানকে উক্তরূপ বাধ্যবাধকতা হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।
ষষ্ঠ অধ্যায়
মৎস্য আহরণের কতিপয় নিষিদ্ধ পদ্ধতি
২৭। (১) কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায়-
(ক) মৎস্য নিধন করে অথবা হতচেতন বা অক্ষম করিয়া মৎস্য আহরণ করে বা অন্য কোনো উপায়ে সহজে মৎস্য ধরিবার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক, বিষ বা অন্য কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার করে বা ব্যবহার করিবার উদ্যোগ গ্রহণ করে;
(খ) দফা (ক) তে বর্ণিত উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিস্ফোরক, বিষ বা অন্য কোনো ক্ষতিকর দ্রব্য বহন করে বা নিজ দখল বা নিয়ন্ত্রণে রাখে;
(গ) মৎস্য আহরণের জন্য ঘোষিত নিষিদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করে বা উক্ত পদ্ধতি প্রয়োগ করিবার উদ্যোগ গ্রহণ করে বা মৎস্য আহরণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সরঞ্জাম মৎস্য নৌযানে বহন করে বা দখল বা নিয়ন্ত্রণে রাখে; বা
(ঘ) এই ধারা বা বিধি লঙ্ঘন করিয়া মৎস্য আহরণ করা হইয়াছে জানিয়াও বা তাহা বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকা সত্ত্বেও উক্ত মৎস্য গ্রহণ করে বা বৈধ কোনো কারণ ব্যতীত তাহার দখলে রাখে;
তাহা হইলে তাহার উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত বিস্ফোরক, বিষ বা অন্য কোনো ক্ষতিকর পদার্থ বা মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম কোনো মৎস্য নৌযানে পাওয়া গেলে, বিপরীত কিছু প্রমাণিত না হইলে, ধরিয়া লওয়া হইবে যে উহা উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত উদ্দেশ্যে রাখা হইয়াছে।
(৩) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার পরিবেশ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হইতে পারে এইরূপ যে কোনো পদ্ধতি বা সরঞ্জাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করিতে পারিবে।
২৮। কোনো ব্যক্তি যদি বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় মৎস্য আহরণের জন্য নির্ধারিত আকারের জাল ব্যতীত অন্য কোনো জাল, মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে, দখলে বা মৎস্য নৌযানে রাখে তাহা হইলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
সপ্তম অধ্যায়
সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, ইত্যাদি
২৯। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার মধ্যে নিম্নবর্ণিত এলাকাকে মৎস্য অভয়ারণ্য বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত (Protected) এলাকা হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবে, যথা :-
(ক) বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার মধ্যে যে সকল এলাকায় জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল সংকটাপন্ন বা বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে রহিয়াছে, সে সকল এলাকা; অথবা
(খ) যে সকল এলাকায় সামুদ্রিক জলজ জীব ক্রমহ্রাসমান পর্যায়ে রহিয়াছে, সে সকল এলাকা।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত মৎস্য অভয়ারণ্য বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ও আবাসস্থলের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক পুনরুৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি এবং বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা ও গবেষণা কর্মের প্রসারে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন, পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে।
৩০। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ধারা ২৯ এর অধীন ঘোষিত মৎস্য অভয়ারণ্য বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় পরিচালক বা, ক্ষেত্রমত, সরকারের অনুমতি ব্যতীত-
(ক) মৎস্য আহরণ করে বা করিবার উদ্যোগ গ্রহণ করে, বা
(খ) ড্রেজিং, বালি ও কাঁকড় আহরণ করে, বর্জ্য বা অন্য কোনো দূষিত পদার্থ নিক্ষেপ বা জমা করে বা অন্য কোনোভাবে মৎস্য বা মৎস্যের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র বা আবাসস্থলের ব্যাঘাত ঘটায় বা পরিবর্তন বা ধ্বংস সাধন করে, বা
(গ) উক্ত সংরক্ষিত এলাকায় কোনো ইমারত বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে,
তাহা হইলে তাহার উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডণীয় হইবেন।
(২) মৎস্য অভয়ারণ্য বা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বা ধারা ২৯ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অনুরূপ কোনো কার্য সম্পাদনের প্রয়োজন রহিয়াছে বলিয়া মনে করিলে পরিচালক উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কার্যাদি সম্পাদনের জন্য লিখিত অনুমতি প্রদান করিতে পারিবেন।
৩১। (১) সরকার লিখিতভাবে এবং নির্ধারিত শর্তে, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় মৎস্য সম্পর্কিত গবেষণা বা জরিপ কাজে নিয়োজিত কোনো নৌযান, ব্যক্তি বা বাংলাদেশি, আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক কোনো সংস্থাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অনুমতি প্রদান করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান সাপেক্ষে গবেষণা পরিচালনাকারী নৌযান, ব্যক্তি বা সংস্থা গবেষণার ফলাফল সরকারের নিকট দাখিল করিবে এবং সরকার যে পরিমাণ তথ্য প্রকাশের অনুমতি প্রদান করিবে শুধু সেই পরিমাণ তথ্য প্রকাশ ও ব্যবহার করিতে পারিবে।
(৩) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (২) এর বিধান লংঘন করিলে তাহাকে অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করা যাইবে।
অষ্টম অধ্যায়
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নৌযানের গতিরোধ, তল্লাশি, জব্দ, বাজেয়াপ্তি, ইত্যাদি
৩২। সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, পরিদর্শক পদমর্যাদার নিম্নে নহেন মৎস্য অধিদপ্তরের এইরূপ কর্মকর্তা, পেটি অফিসার পদমর্যাদার নিম্নে নহেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদস্য, যে কোনো শুল্ক কর্মকর্তা বা সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (Authorised Officer) হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবে।
৩৩। যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় কোনো মৎস্য নৌযানের সাহায্যে এই আইন বা বিধি লংঘন করিয়া মৎস্য আহরণ করা হইয়াছে বা হইতেছে বা উক্ত মৎস্য পরিবহণ করা হইতেছে বা নৌযানে উক্ত মৎস্য মজুদ রাখা হইয়াছে বা মৎস্য নৌযানের সাহায্যে এই আইন বা বিধির অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে, তাহা হইলে তিনি পরোয়ানা ব্যতীত-
(ক) উক্ত মৎস্য নৌযানে বহনকৃত মৎস্য আহরণের যন্ত্রপাতি, জাল, সরঞ্জাম, নাবিক বা বহনকৃত মৎস্য পরীক্ষা এবং তল্লাশি করিতে পারিবেন এবং তল্লাশিকালে যদি উক্ত মৎস্য নৌযানে অবৈধভাবে আহরণকৃত মৎস্য পাওয়া যায় বা এইরূপ প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত মৎস্য নৌযানের সাহায্যে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ করা হইয়াছে বা হইতেছে বা উক্ত মৎস্য পরিবহণ করা হইতেছে তাহা হইলে তিনি উক্ত মৎস্য নৌযান, নৌযানে সংরক্ষিত মৎস্য, মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম জব্দ করিতে এবং উক্ত অপরাধের সহিত জড়িত মৎস্য নৌযান পরিচালনাকারী ব্যক্তিকে আটক করিয়া নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করিতে পারিবেন;
(খ) মৎস্য আহরণের লাইসেন্স, অনুমতিপত্র, সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্র বা এতদসংক্রান্ত যে কোনো দলিল পরীক্ষা করিতে পারিবেন এবং প্রয়োজনে উহার অনুলিপি দাখিল করিতে মৎস্য নৌযানের স্কিপার বা মালিককে আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
৩৪। (১) যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, কোনো গৃহে বা গুদামে বা আঙ্গিনায় বা কোনো স্থানে এই আইন বা বিধি লংঘন করিয়া আহরণকৃত মৎস্য এবং এতদসংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম মজুদ রাখা হইয়াছে বা কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হইতেছে বা অপরাধ সংঘটনের সরঞ্জাম মজুদ রাখা হইয়াছে, তাহা হইলে তিনি পরোয়ানা ব্যতীত উক্ত গৃহে বা গুদামে বা আঙ্গিনায় বা স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশি করিতে পারিবেন এবং
(ক) উক্ত স্থানে রক্ষিত মৎস্য, মৎস্য নৌযান, আসবাবপত্র, আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম, যানবাহন জব্দ করিতে পারিবেন; এবং
(খ) অপরাধ সংঘটনকারী বা অপরাধ সংঘটনের প্রস্ত্ততি গ্রহণকারী ব্যক্তিকে আটক করিয়া নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করিতে পারিবেন।
(২) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এর অধীন আটককৃত দ্রব্য বা সরঞ্জামের একটি লিখিত তালিকা প্রস্তুতপূর্বক উহার একটি কপি পরিচালক এবং একটি কপি আটককৃত ব্যক্তি বা তাহার প্রতিনিধিকে প্রদান করিবেন।
৩৫। (১) এই আইন বা বিধির উদ্দেশ্য পূরণকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক কোনো নৌযানের গতিরোধ করিবার প্রয়োজন হইলে, তাহার কর্তৃত্বে থাকা নৌযান বা উড়োজাহাজ হইতে আন্তর্জাতিক সংকেত, কোড বা অন্য কোনো স্বীকৃত পদ্ধতির মাধ্যমে উক্ত নৌযানের গতিরোধ করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্ত নৌযান গতিরোধ না করিলে বা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার বাহিরেও উহাকে অনুসরণ করা যাইবে এবং গতিরোধের জন্য সতর্কতা স্বরূপ বন্দুকের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করা যাইবে এবং উক্তরূপ সতর্কতার পরেও উক্ত নৌযান না থামিলে উহাতে লক্ষ্য করিয়া গুলি বর্ষণ করা যাইবে।
(২) কোনো নৌযানের গতিরোধ করিবার লক্ষ্যে উপ-ধারা (১) এর অধীন পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়া উহার গতিরোধ করা সম্ভব হইলে, উক্ত নৌযানকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার বাহিরেও আটক করা যাইবে এবং আটকের পর উক্ত নৌযানসহ উহার নাবিককে নিকটস্থ বন্দর বা থানায় সোপর্দ করিতে হইবে।
৩৬। কোনো ব্যক্তিকে এই আইনের অধীন গ্রেফতার করা হইলে উক্ত ব্যক্তিকে, যথাশীঘ্র সম্ভব, নিকটবর্তী থানায় হাজির করিতে হইবে এবং উক্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইন, বিধি এবং Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) মোতাবেক তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
৩৭। (১) এই আইনের অধীন আটককৃত কোনো মৎস্য নৌযান, মৎস্য আহরণের গিয়ার বা সরঞ্জাম, বিস্ফোরক, বিষ বা অন্য কোনো ক্ষতিকর পদার্থ বা যন্ত্রপাতি বা ধারা ৪১ এর অধীন প্রাপ্ত বিক্রয়লব্ধ অর্থ, উপ-ধারা (৩) এর বিধান সাপেক্ষে,-
(ক) যদি এই আইনের অধীন কোনো মামলা দায়ের হইয়া থাকে, তাহা হইলে উক্ত মামলা নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে আটক থাকিবে;
(খ) যদি এই আইনের অধীন কোনো মামলা দায়ের না হইয়া থাকে, তাহা হইলে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, অনধিক ৩০ (ত্রিশ) দিন পর্যন্ত আটক থাকিবে এবং উক্ত সময় অতিক্রান্ত হইবার পর সরকার বরাবরে বাজেয়াপ্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে, যদি না উক্ত সময়ের মধ্যে আটককৃত মালামালের প্রকৃত মালিক লিখিতভাবে কোনো দাবী উত্থাপন করেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (খ) এর অধীন কোনো লিখিত দাবি পাওয়া গেলে পরিচালক কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া প্রয়োজনে অঙ্গীকারনামা, বা ক্ষেত্রমত, জামানত গ্রহণপূর্বক দাবিকৃত মালামাল বা অর্থ অবমুক্ত করিয়া দাবিদার মালিকের নিকট হস্তান্তর করিতে পারিবেন।
(৩) আদালত, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত মালামাল বা সরঞ্জামের মালিকের আবেদনক্রমে প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা, বা ক্ষেত্রমত, জামানত বা ধারা ৩৪ এর বিধান কার্যকর করিবার পূর্বশর্ত আরোপ করিয়া আবেদনকারী বরাবর আটককৃত মৎস্য নৌযান বা মৎস্য আহরণের সরঞ্জাম অবমুক্তির আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
৩৮। কোনো ব্যক্তি এই আইন বা বিধি লঙ্ঘনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হইয়া থাকিলে অথবা এই আইন বা বিধির অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে মর্মে আদালতের নিকট প্রমাণিত হইলে, আদালত আরোপিত দণ্ডের অতিরিক্ত-
(ক) মৎস্য নৌযান, আসবাবপত্র, আনুষঙ্গিক বস্তু, স্টোরের মালামাল, কার্গো, মৎস্য আহরণের গিয়ার, জাল অথবা সংঘটিত অপরাধে ব্যবহৃত মৎস্য আহরণের কোনো সরঞ্জাম বাজেয়াপ্তির আদেশ দিতে পারিবে বা আদালত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইসেন্স স্থগিত রাখিতে বা লাইসেন্স বাতিলের আদেশ প্রদান করিতে পারিবে; এবং
(খ) অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে আহরিত মৎস্য বা ধারা ৪১ অনুসারে বিক্রয়লব্ধ অর্থ এবং অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত কোনো বিস্ফোরক, বিষ অথবা অন্য কোনো ক্ষতিকর পদার্থ বাজেয়াপ্তির আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
৩৯। সরকার, ধারা ৩৭ বা ৩৮ অনুসারে বাজেয়াপ্ত হিসাবে গণ্য বা আদেশপ্রাপ্ত কোনো মৎস্য নৌযান, আসবাবপত্র, আনুষঙ্গিক বস্তু, স্টোরের মালামাল, কার্গো, মৎস্য আহরণের গিয়ার, জাল বা অন্যান্য সরঞ্জাম, বিস্ফোরক, বিষ অথবা অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ এবং মৎস্য হইতে বিক্রয়লব্ধ অর্থ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিষ্পত্তি করিবে।
৪০। এই আইন বা বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করিয়া সংঘটিত অপরাধে ব্যবহৃত মৎস্য নৌযানে যে সকল মৎস্য পাওয়া যাইবে, বিপরীত কিছু প্রমাণিত না হইলে উহা বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমা হইতে অবৈধভাবে ধৃত হইয়াছে বলিয়া অনুমিত হইবে।
৪১। আটককৃত মৎস্য ও অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য পরিচালক স্বীয় উদ্যোগে, বা ক্ষেত্রমত, আদালতের নির্দেশে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিষ্পত্তি করিবেন এবং উক্ত দ্রব্য বিক্রয় করা হইলে বিক্রয়লব্ধ অর্থ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করিতে হইবে।
৪২। এই আইন বা বিধির অধীন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকালে উক্ত ব্যক্তি চাহিবামাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাহার পরিচয়পত্র বা লিখিত কর্তৃত্ব দাখিল করিবেন, যাহাতে যুক্তিসংগতভাবে প্রমাণিত হয় যে তিনি এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
৪৩। সরকার, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ব্যতীত, তাহার অন্য কোনো ক্ষমতা মহাপরিচালককে, মহাপরিচালক তাহার ক্ষমতা অতিরিক্ত মহাপরিচালক বা পরিচালককে এবং পরিচালক তাহার ক্ষমতা প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে লিখিত আদেশ দ্বারা যে কোনো কর্মকর্তাকে অর্পণ করিতে পারিবেন।
৪৪। এই আইনের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজকর্মের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা তাহার ক্ষতিগ্রস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকিলে তজ্জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে না।
নবম অধ্যায়
প্রশাসনিক আপিল
৪৫। (১) পরিচালক কর্তৃক লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়নে অস্বীকৃতির আদেশ, লাইসেন্স বাতিলের আদেশ বা এই আইনের অধীন প্রদত্ত জরিমানা আরোপের আদেশসহ অন্য কোনো প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি উক্ত আদেশদানের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, সরকারের নিকট আপিল দায়ের করিতে পারিবেন।
(২) সরকার উপ-ধারা (১) এর অধীন দায়েরকৃত আপিল আবেদন উহা প্রাপ্তির ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিষ্পত্তি করিবে।
(৩) আপিল আবেদনের উপর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
দশম অধ্যায়
অপরাধ ও দণ্ড
৪৬। কোনো ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে বাধা প্রদান করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৪৭। কোনো ব্যক্তি মৎস্য নৌযান, খুঁটি, গিয়ার বা মৎস্য আহরণের সরঞ্জামের ক্ষতি সাধন বা ধ্বংস করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৪৮। কোনো ব্যক্তি আটক বা চিহ্নিতকরণ এড়াইবার জন্য মৎস্য, মৎস্য আহরণের যন্ত্রপাতির ও সরঞ্জাম, বিস্ফোরক দ্রব্য, বিষ, কোনো ক্ষতিকর পদার্থ বা অন্য কোনো প্রমাণ ধ্বংস করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৪৯। কোনো নৌযানের মালিক বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমায় নির্ধারিত পদ্ধতিতে মার্কিং ব্যতীত কোনো মৎস্য নৌযান পরিচালনা করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৫০। নৌযানে আরোহণকৃত কোনো ব্যক্তি যদি এই আইন বা বিধির অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন তাহা হইলে উক্ত নৌযানের স্কিপার উক্ত অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হইবেন এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৫১। কোনো ব্যক্তি যদি জ্ঞাতসারে বেআইনিভাবে ধৃত মৎস্য সংরক্ষণ, মজুদ বা বিক্রয় করেন, তাহা হইলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে তবে এই ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের এক তৃতীয়াংশের কম নহে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৫২। কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৫৩। এই আইনে উল্লিখিত কোনো অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হইবেন।
৫৪। (১) পরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, এই আইনে নির্ধারিত প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ ও আদায় করিতে পারিবেন।
(২) কোনো ব্যক্তি এই ধারার অধীন তাহার উপর আরোপিত প্রশাসনিক জরিমানা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, পরিশোধ করিতে ব্যর্থ হইলে উহা Public Demands Recovery Act, 1913 (Act No. IX of 1913) এর অধীন সরকারি দাবি গণ্যে আদায়যোগ্য হইবে।
একাদশ অধ্যায়
অপরাধের অধিক্ষেত্র, বিচার, জামিনযোগ্যতা, ইত্যাদি
৫৫। এই আইন বা বিধি লঙ্ঘন করিয়া বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য জলসীমার মধ্যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত কোনো অপরাধ, এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশের যে কোনো আদালত কর্তৃক এমনভাবে বিচার্য হইবে যেন উক্ত অপরাধটি উক্ত আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রের আওতায় বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে সংঘটিত হইয়াছে।
৫৬। Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) বা অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন-
(ক) এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বা ক্ষেত্রমত, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে;
(খ) প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দোষী সাব্যসত্ম ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য এই আইনে অনুমোদিত যে কোনো দণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।
৫৭। (১) এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধ আমলযোগ্য (Cognizable) ও জামিনযোগ্য (Bailable) হইবে।
(২) ধারা ৭ এবং ২৪ এ বর্ণিত অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ আপসযোগ্য (Compoundable) হইবে।
৫৮। (১) Code of Criminal Procedure, 1898, (Act No. V of 1898) এ যাহাই উল্লেখ থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন আপসযোগ্য অপরাধের মামলা নিষ্পত্তি হইবার পূর্বে পরিচালক এবং অভিযুক্ত উভয়ের স্বাক্ষরযুক্ত আপসনামা আদালতে দাখিল করা হইলে আদালত অপরাধের সংশ্লিষ্ট ধারায় বর্ণিত অর্থদণ্ডের সর্বাধিক পরিমাণের তিন চতুর্থাংশ পরিমাণ অর্থ, অর্থদণ্ড হিসাবে আরোপক্রমে অব্যাহতি প্রদান করিয়া মামলা নিষ্পত্তি করিতে পারিবেন।
(২) উপধারা (১) এ যাহাই উল্লেখ থাকুক না কেন, অপরাধ সংশ্লিষ্ট আটককৃত নৌযান, আহরণকৃত মৎস্য, যদি থাকে, এবং অন্যান্য সকল আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আদালত এই আইনের অধীনে নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
৫৯। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন দণ্ডনীয় অপরাধের ক্ষেত্রে, মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর তফসিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে, মোবাইল কোর্ট দণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।
দ্বাদশ অধ্যায়
বিবিধ
৬০। (১) এই আইন বা বিধির উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কোনো ব্যক্তির উপর কোনো নোটিশ জারি করিতে হইলে-
(ক) যে ব্যক্তির প্রতি নোটিশ জারি করিতে হইবে, তাহাকে ব্যক্তিগতভাবে উহার অনুলিপি সরবরাহ করিয়া অথবা তাহার বাড়ীর প্রকাশ্য কোনো স্থানে ঐ নোটিশের অনুলিপি সাঁটিয়া দিয়া; অথবা
(খ) যদি নোটিশটি নৌযানের স্কিপার বা কোনো আরোহীর উপর জারি করিতে হয়, তাহা হইলে তাহার পক্ষে নৌযানের স্কিপার বা মৎস্য নৌযানটি ঐ সময়ে যাহার কর্তৃত্বাধীন রহিয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়, তাহার নিকট উহা সরবরাহ করিয়া; অথবা
(গ) উক্ত ব্যক্তির সর্বশেষ জ্ঞাত আবাসস্থল, ব্যবসা কেন্দ্র বা কর্মস্থলের ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকারসহ রেজিস্টার্ড ডাকযোগে প্রেরণ করিয়া জারি করিতে হইবে।
(২) নোটিশের বিষয় অন্য কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবহিত হইয়াছে বলিয়া পরিচালক বা সরকারের নিকট স্পষ্ট হইলে শুধু নোটিশ জারির পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে গৃহীত কার্যক্রম বাতিল হইবে না।
৬১। (১) সরকার, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নৌযানের মৎস্য আহরণের ক্ষমতা এবং শ্রেণি অনুযায়ী লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন এবং সমুদ্র যাত্রার অনুমতিপত্রের জন্য ফি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন নির্ধারিত ফি পরিচালক বা কর্মকর্তা কর্তৃক আদায়যোগ্য হইবে।
৬২। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৬৩। (১) Marine Fisheries Ordinance, 1983 (Ordinance No. XXXV of 1983), অতঃপর রহিতকৃত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, রহিতকৃত Ordinance এর অধীন-
(ক) ইস্যুকৃত লাইসেন্স, কৃত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা, এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;
(খ) দায়েরকৃত কোনো মামলা বা কার্যধারা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে বা চলমান থাকিবে যেন উক্ত Ordinance রহিত হয় নাই;
(গ) সম্পাদিত কোনো চুক্তি, দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন সম্পাদিত হইয়াছে;
(ঘ) ইতোমধ্যে যে সকল মৎস্য নৌযানকে শ্রেণিতে বিভক্ত করা হইয়াছে উহা এই আইনের অধীন সংশোধিত ও পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ ও কার্যকর থাকিবে।
(৩) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিতকৃত Ordinance এর অধীন প্রণীত কোনো বিধি, জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ উক্তরূপ রহিতকরণের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে, এই আইনের কোনো বিধানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উহা এই আইনের অধীন প্রণীত, জারীকৃত এবং প্রদত্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত বা পুনঃপ্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
৬৪। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।
(২) এই আইন ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে এই আইন প্রাধান্য পাইবে।