প্রিন্ট ভিউ
Fish and Fish Products (Inspection and Quality Control) Ordinance, 1983 রহিতক্রমে উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক আদেশ দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহের, অতঃপর উক্ত অধ্যাদেশ বলিয়া উল্লিখিত, অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তপশিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইয়াছে এবং সিভিল আপিল নং ৪৮/২০১১ এ সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পাইয়াছে; এবং
যেহেতু ২০১৩ সনের ৭ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হইয়াছে; এবং
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং
যেহেতু সরকারের উপরি-বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে Fish and Fish Products (Inspection and Quality Control) Ordinance, 1983 (Ordinance No. XX of 1983) রহিতক্রমে উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে একটি নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজন;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
১। (১) এই আইন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(১) ‘অপদ্রব্য’ অর্থ কৃত্রিমভাবে মৎস্যের ওজন বৃদ্ধি করিতে পারে বা উহার আকার বা গুণগত মান নষ্ট করিতে পারে এমন কোনো দ্রব্য, পদার্থ বা বস্তু;
(২) ‘অপরাধ’ অর্থ এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধ;
(৩) ‘অনাপত্তিপত্র’ অর্থ ধারা ২৩ এর অধীন প্রদত্ত অনাপত্তিপত্র;
(৪) ‘অভ্যন্তরীণ বাজার’ অর্থ বাংলাদেশের কোনো স্থান বা স্থাপনা, যেখানে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা হয়;
(৫) ‘আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (Regional Competent Authority)’ অর্থ ধারা ৬ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ;
(৬) ‘আমদানি’ অর্থ কোনা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জল, স্থল ও আকাশপথে বাংলাদেশে আনয়ন;
(৭) ‘আমদানিকারক’ অর্থ জল, স্থল ও আকাশপথে বিদেশ হইতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আনয়নকারী লাইসেন্সধারী ব্যক্তি;
(৮) ‘কারখানা’ অর্থ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি, বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে উহা প্রক্রিয়াজাতকরণ, মোড়কজাতকরণ ও সংরক্ষণ সুবিধা সংবলিত কোনো স্থান, ঘর-বাড়ি, আঙ্গিনা বা নৌযান (Vessel) সহ যে কোনো যান যেখানে পাঁচ বা ততোধিক কর্মচারী বা শ্রমিক কর্মরত থাকে;
(৯) ‘কিউরড মৎস্য (Cured Fish)’ অর্থ শুষ্ক, লবণাক্ত শুষ্ক, লবণাক্ত, ধূমায়িত (Smoked), লবণাক্ত ধূমায়িত, ফারমেন্টেড, মেরিনেটেড, পিকলড অথবা উক্ত পদ্ধতিসমূহের একাধিক সংমিশ্রণে প্রক্রিয়াজাত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য;
(১০) ‘কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (Central Competent Authority)’ অর্থ ধারা
৬ এর উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ;
(১১) ‘কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার’ অর্থ ধারা ৫ এ উল্লিখিত কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানেজার;
(১২) ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ’ অর্থ ফরমালিন, কীটনাশক বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থ;
(১৩) ‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ অর্থ ধারা ৪৫ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা;
(১৪) ‘জালিয়াতি (Forgery)’ অর্থ Penal Code, 1860 এর section 463 তে বর্ণিত জালিয়াতি;
(১৫) ‘টাটকা মৎস্য’ অর্থ সদ্য ধৃত বা আহরণকৃত মৎস্য বা গুণগত মানসম্পন্ন (Quality) মৎস্য যাহা বরফায়িত ব্যতীত অন্য কোনো পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয় নাই;
(১৬) ‘‘ট্রেসিবিলিটি (Traceability)” অর্থ মৎস্য উৎপাদন ও আহরণ সংশ্লিষ্ট মৎস্য খামারের তথ্যাদি, মৎস্য খামার ব্যতীত অন্যান্য আহরণস্থল বা কারখানা ও স্থাপনার তথ্যাদি বা মৎস্য পরিচর্যা, পরিবহণ ও সংরক্ষণের তথ্যাদি এবং মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণের বিভিন্ন ধাপে গৃহীত কার্যক্রমের তথ্যাদি সংরক্ষণের পদ্ধতি যাহা কোনো এক বা একাধিক ধাপে গৃহীত কার্যক্রম ও তাহার উৎস অনুসন্ধান ও শনাক্তকরণের জন্য ব্যবহারযোগ্য;
(১৭) ‘‘দূষিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য’’ অর্থ যে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু অথবা কোনো বিষাক্ত দ্রব্য অথবা ক্ষতিকর বা ভেজাল বা মানুষের রুচি বিগর্হিত কোনো পদার্থ রহিয়াছে, সেই মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বা পঁচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য;
(১৮) ‘ধারা’ অর্থ এই আইনের কোনো ধারা;
(১৯) ‘নিবন্ধন’ অর্থ ধারা ১৫ এর অধীন প্রদত্ত নিবন্ধন;
(২০) ‘নির্ধারিত’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি দ্বারা নির্ধারিত;
(২১) ‘পঁচা’ অর্থ টাটকা মৎস্যের গুণাগুণ বিদ্যমান নাই এবং ঝাঁঝাল গন্ধ, বিকৃত বর্ণ, বিস্বাদ, ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য;
(২২) ‘পরিদর্শক’ অর্থ মৎস্য অধিদপ্তর এর পরিদর্শক, মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ;
(২৩) ‘পরিদর্শন’ অর্থ ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত পরিদর্শন;
(২৪) ‘পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা’ অর্থ মৎস্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক বা পরিদর্শন সংক্রান্ত কার্যের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোনো কর্মকর্তা;
(২৫) ‘পাত্র (Container)’ অর্থ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য মোড়কজাতকরণ অথবা বাজারজাতকরণের জন্য ব্যবহার উপযোগী যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত আধার, প্যাকেট, মোড়ক, কনফাইনিং ব্যান্ড, ইত্যাদি;
(২৬) ‘বরফায়িত মৎস্য (Chilled fish)’ অর্থ বরফ দ্বারা বা অন্য কোনো উপায়ে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস হইতে (+)৫ (পাঁচ) ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য;
(২৭) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(২৮) ‘ব্যক্তি’ অর্থ মৎস্য উৎপাদন বা আহরণ বা পরিবহণে নিয়োজিত নৌযান এবং এয়ারক্রাফটসহ যে কোনো যানবাহন অথবা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, পরিচর্যা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাতকরণ অথবা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য ব্যবহারের জন্য বরফ উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ, বিপণন অথবা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য ব্যবসায় জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা কোম্পানি এবং ইহার মালিক, পরিচালক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারী;
(২৯) ‘ভেজাল’ অর্থ মৎস্য ও মৎস্যপণ্যে নির্ধারিত বা অনুমোদিত মাত্রার কম বা বেশি মিশ্রিত কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা অন্য কোনো বস্তু যাহা মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের গুণাগুণ নষ্ট করে বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর;
(৩০) ‘ভৌত গুণাগুণ পরীক্ষা’ অর্থ কোনো মৎস্য বা মৎস্যপণ্যের গুণাগুণ বা বাহ্যিক অবস্থা বিচার করিবার পদ্ধতি;
(৩১) ‘মৎস্য’ অর্থ কোমল ও কঠিন অস্থিবিশিষ্ট মৎস্য (Cartilaginous and Bony Fishes), স্বাদু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি (Prawn and Shrimp), উভচর জলজ প্রাণী (Amphibians), কচ্ছপ, কুমির (Crocodile), কাঁকড়া জাতীয় (Crustacean), শামুক অথবা ঝিনুক জাতীয় জলজ প্রাণী (Molluscs), সিলেন্টারেটস (Coelenterates), একাইনোডার্ম (Echinoderms), ব্যাঙ (Frog) এবং উল্লিখিত জলজ প্রাণী অথবা প্রাণীসমূহের জীবন্ত কোষ ও জীবনচক্রের যে কোনো ধাপ এবং সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত অন্য কোনো জলজ প্রাণী;
(৩২) ‘মৎস্য খামার’ অর্থ ঘের, পুকুর, দিঘি, পেন, জলাধার, চৌবাচ্চা অথবা জলজ খাঁচা যে স্থানে প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম অথবা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ করা হয় অথবা যে স্থানে মৎস্য উহার জীবন চক্রের যে কোনো ধাপে অথবা বাজারজাতকরণের উপযোগী আকার পর্যন্ত লালন-পালন করা হয়;
(৩৩) ‘মৎস্যপণ্য’ অর্থ কোনো মৎস্য হইতে উৎপন্ন পণ্য অথবা প্রক্রিয়াজাত মৎস্য (Processed fish) অথবা উপজাত পণ্য (By product);
(৩৪) ‘মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ (Fish Processing)’ অর্থ রপ্তানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাতকরণের নিমিত্ত পূর্ণ মৎস্যের (Whole fish), ড্রেসকরণ (Dressed), শুষ্ককরণ (Dry), মাথা, খোসা বা নাড়িভুঁড়ি ছাড়ানো এবং ইহাদের এক অথবা একাধিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করিয়া পূর্ণ অথবা ফালিকৃত, পরিষ্কৃত, বরফায়িত, হিমায়িত, কুকড, ব্লান্চড (Blanched) বা ধূমায়িতকরণ বা অন্য কোনো উপায়ে রক্ষণ বা কিউরড মৎস্য বা মৎস্যের কোনো অংশ যাহা মোড়কজাতকরণ বা কৌটাজাতকরণ করা হয়;
(৩৫) ‘মান নিয়ন্ত্রণ’ অর্থ মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নির্ধারিত মান (Standard) নিশ্চিতকরণের কোনো প্রক্রিয়া (Techinques);
(৩৬) ‘মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার (Laboratory)’ অর্থ ধারা ৪ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন স্থাপিত পরীক্ষাগার;
(৩৭) ‘মিথ্যা সনদ বা দলিল (False Document)’ অর্থে Penal Code, 1860 এর section 464 এ বর্ণিত উপায়ে সৃজিত মিথ্যা বা বানোয়াট সনদ বা দলিল;
(৩৮) ‘রপ্তানি’ অর্থ কোনো মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জল, স্থল ও আকাশপথে বাংলাদেশ হইতে বিদেশে প্রেরণ;
(৩৯) ‘রপ্তানিকারক’ অর্থ জল, স্থল ও আকাশপথে বাংলাদেশ হইতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রেরণকারী লাইসেন্সধারী ব্যক্তি;
(৪০) ‘লাইসেন্স’ অর্থ ধারা ১০ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন ইস্যুকৃত লাইসেন্স;
(৪১) ‘স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ’ অর্থ ধারা ২৮ এর প্রদত্ত স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ;
(৪২) ‘স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (Local Competent Authority)’ অর্থ ধারা ৬ এর উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ;
(৪৩) ‘স্থাপনা’ অর্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, পরিচর্যা কেন্দ্র, ডক, পাইকারী মৎস্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, মৎস্য বিক্রয়কেন্দ্র ও বাজার, নিলাম কেন্দ্র, মৎস্য ডিপো, আড়ত, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য সংরক্ষণের হিমাগার ও কোল্ড স্টোর, মৎস্য প্যাকিং সেন্টার, মৎস্য সংরক্ষণের নিমিত্ত ব্যবহৃত যান, বরফ উৎপাদনে স্থাপিত বরফকল, বরফ সংরক্ষণের স্থান, মৎস্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, নন প্যাকার রপ্তানিকারক, স্থানীয় বায়িং এজেন্টের অফিস, গুদামঘর; এবং
(৪৪) ‘হিমায়িত মৎস্য’ অর্থ কোনো মজুদাগারে (-)১৮০ সেলসিয়াস অথবা তদপেক্ষা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষিত মৎস্য বা মৎস্যপণ্য।
দ্বিতীয় অধ্যায়
মান নির্ধারণ, মান নিয়ন্ত্রণ, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, ইত্যাদি
৩। (১) কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের মান নির্ধারণ করিবে।
(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন নির্ধারিত মান ব্যতীত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি, রপ্তানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, পরিবহণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো ভোক্তার নিকট হস্তান্তর করিতে পারিবে না।
৪। (১) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, রপ্তানিযোগ্য, আমদানিকৃত বা বাজারজাতকরণযোগ্য মৎস্য ও মৎস্যপণ্য, উহা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে ব্যবহৃত দ্রব্য, পানি, বরফ, সোয়াব এবং মৎস্য খাদ্য বা খাদ্য উপকরণের মান পরীক্ষা বা উহার বিশুদ্ধতা নির্ণয়ের নিমিত্ত দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করিতে পারিবে।
(২) কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স ম্যানেজার, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে উপ-ধারা (১) এর অধীন স্থাপিত মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগারের স্বীকৃতির (Accreditation) জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবে।
৫। ধারা ৪ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন স্থাপিত মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স ম্যানেজারের কর্তৃত্বাধীনে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিচালিত হইবে।
৬। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে নিম্নলিখিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ থাকিবে, যথা :-
(ক) কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ;
(খ) আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ; এবং
(গ) স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ।
(২) মহাপরিচালক হইবেন কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এবং তিনি কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কার্যাবলি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন।
(৩) উপ-পরিচালক (মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) হইবেন আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এবং তিনি আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কার্যাবলি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন।
(৪) উপ-পরিচালক বা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হইবেন স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ এবং তিনি স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কার্যাবলি ও ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন।
ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘‘মহাপরিচালক’’ এবং ‘‘উপ-পরিচালক’’ বলিতে মৎস্য অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক এবং বিভাগীয় মৎস্য অফিসের উপ-পরিচালককে বুঝাইবে।
৭। কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র হইবে সমগ্র বাংলাদেশ এবং কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে আঞ্চলিক ও স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করিতে পারিবে।
তৃতীয় অধ্যায়
লাইসেন্স সংক্রান্ত সাধারণ বিষয়াদি
৮। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি, কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করিতে পারিবে না।
৯। আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য কোনো রপ্তানিকারককে বা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং এতদসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো কার্যের জন্য কোনো মালিককে কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য লাইসেন্স ইস্যু করিতে পারিবে।
১০। (১) ধারা ৯ এর অধীন কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার লক্ষ্যে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করিতে হইবে।
(২) আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদনপত্র যাচাইপূর্বক লাইসেন্স ইস্যু করিবেন।
১১। আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স ইস্যু করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে, যদি-
(ক) ধারা ১০ অনুযায়ী আবেদনপত্র সঠিক না পাওয়া যায়;
(খ) আবেদনপত্রে উল্লিখিত ও সংযোজিত তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট বা অপর্যাপ্ত হয়;
(গ) আবেদনকারী এই আইন বা অন্য কোনো আইনের অধীন লাইসেন্স প্রাপ্তির অযোগ্য হন; বা
(ঘ) নির্ধারিত অন্য কোনো শর্ত প্রতিপালন না করা হয়।
১২। (১) লাইসেন্সের মেয়াদ হইবে ৩(তিন) বৎসর এবং উহা হস্তান্তরযোগ্য বা বিক্রয়যোগ্য হইবে না।
(২) লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার ৩০(ত্রিশ) দিন পূর্বে লাইসেন্স নবায়ন করিতে হইবে।
(৩) লাইসেন্স নবায়নের জন্য আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আবেদন করিতে হইবে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীনে প্রাপ্ত আবেদন বিবেচনাপূর্বক, ধারা ১১ এর বিধান সাপেক্ষে, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স নবায়ন করিতে পারিবেন।
(৫) লাইসেন্স নবায়ন করা না হইলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উক্ত লাইসেন্স স্থগিত থাকিবে, তবে মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে ১ (এক) বছরের মধ্যে বিধিতে বর্ণিত লাইসেন্স নবায়ন ফিসহ উহার অতিরিক্ত লাইসেন্স ফি এর তিনগুণ পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে জমাদানপূর্বক লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করিতে পারিবেন।
১৩। (১) আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নিম্নলিখিত যে কোনো কারণে লাইসেন্স বাতিল, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্থগিত করিতে পারিবে, যদি লাইসেন্সগ্রহীতা-
(ক) এই আইন বা বিধি বা লাইসেন্সের কোনো শর্ত লংঘন করিয়া থাকেন;
(খ) কোনো অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপনপূর্বক লাইসেন্স গ্রহণ করিয়া থাকেন;
(গ) মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি, মৎস্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যে কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে লাইসেন্স ব্যবহার করিয়া থাকেন;
(ঘ) একাধারে ২(দুই) বার লাইসেন্স নবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হন;
(ঙ) লাইসেন্স হস্তান্তর বা বিক্রয় করেন;
(চ) তাহার স্থাপিত কারখানা বা স্থাপনা কর্তৃক নদী বা সমুদ্রের পানি বা পরিবেশ দূষণ করেন বা করিয়া থাকেন;
(ছ) মৃত্যুবরণ করেন;
(জ) এই আইনের অধীন ২(দুই) বার প্রশাসনিক জরিমানা বা অন্য কোনো অপরাধে দন্ডিত হন; বা
(ঝ) নির্ধারিত অন্য কোনো শর্ত প্রতিপালন না করিয়া থাকেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো লাইসেন্স বাতিল করিবার পূর্বে আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক লাইসেন্স বাতিলের কারণ উল্লেখ করিয়া সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সগ্রহীতাকে নোটিশ প্রাপ্তির ৭(সাত) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত বক্তব্য, যদি থাকে, উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়া নোটিশ প্রদান করিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশের জবাব প্রাপ্তির পর উক্ত জবাব সন্তোষজনক না হইলে আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, নোটিশে উল্লিখিত মেয়াদ অতিক্রান্ত হইবার ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া লাইসেন্স বাতিল করিতে পারিবেন।
(৪) উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত বক্তব্য সন্তোষজনক হইলে আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সগ্রহীতাকে তাহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিবেন।
চতুর্থ অধ্যায়
কারখানা, বাজার, ইত্যাদি পরিদর্শন
১৪। (১) মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নির্ধারিত মান নিশ্চিত করিবার জন্য পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যে কোনো সময় যে কোনো কারখানা, স্থাপনা, মৎস্য আহরণে নিয়োজিত নৌযান, মৎস্য পরিবহণে নিয়োজিত এয়ারক্রাফটসহ যে কোনো যানবাহন, মৎস্য বিক্রয়ের অভ্যন্তরীণ বাজার, মৎস্য খামার পরিদর্শন করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিদর্শনকালে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যদি দেখিতে পান যে, কারখানা বা স্থাপনায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা হয় নাই বা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে নির্ধারিত মান রক্ষা করা হয় নাই তাহা হইলে তিনি কারখানা বা স্থাপনার মালিককে অনধিক
৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপসহ উক্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জব্দ করিতে পারিবেন।
(৩) পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যদি উপ-ধারা (১) এর অধীন অভ্যন্তরীণ বাজার, কারখানা বা স্থাপনা পরিদর্শনকালে কোনো মৎস্য বা মৎস্যপণ্যের ভৌত গুণাগুণ বা অন্য কোনো কারিগরি পরীক্ষা করিয়া নিশ্চিত হন যে, কোনো মৎস্য বা মৎস্যপণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত করিয়া উহা ভোক্তার নিকট বিক্রয় করা হইয়াছে বা হইতেছে বা প্রক্রিয়াজাত করা হইয়াছে বা হইতেছে তাহা হইলে তিনি উক্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য সরবরাহকারী, বিক্রেতা, উৎপাদনকারী, কারখানা বা স্থাপনার মালিক বা উক্ত প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধারা ৩০ এর অধীন মামলা দায়ের করিবেন এবং তিনি নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জব্দ করিবেন।
(৪) পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যদি মৎস্য নৌযান, এয়ারক্রাফট, যানবাহন পরিদর্শন করিয়া দেখিতে পান যে, উক্ত নৌযান, এয়ারক্রাফট, যানবাহন দ্বারা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত বা অপদ্রব্য অনুপ্রবেশকৃত দূষিত বা পঁচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বহন করা হইতেছে তাহা হইলে তিনি উক্ত নৌযান, এয়ারক্রাফট এবং যানবাহনের চালক এবং মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মালিকের বিরুদ্ধে ধারা ৩০ এর অধীন মামলা দায়ের করিতে পারিবেন।
(৫) পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যদি কোনো কারখানা বা স্থাপনা পরিদর্শনকালে দেখিতে পান যে, উক্ত কারখানা বা স্থাপনায় ভেজাল বা পঁচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য হ্যান্ডলিং, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ বা বিক্রয় করা হইতেছে তাহা হইলে তিনি হ্যান্ডলিং, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বিক্রয়কারীর বিরুদ্ধে ধারা ৩১ এর অধীন মামলা দায়ের করিবেন এবং তিনি নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জব্দ ও নিষ্পত্তি করিবেন।
(৬) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিদর্শনকালে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কারখানা বা স্থাপনার কোনো রেজিস্টার, নথিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, রেকর্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করিয়া ছায়ালিপি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে এতদ্সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।
(৭) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিদর্শন এবং উপ-ধারা (২), (৩), (৪), (৫) এবং (৬) এর অধীন কোনো আদেশ বা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বাধা সৃষ্টি করিতে পারিবে না।
পঞ্চম অধ্যায়
মৎস্য খামার নিবন্ধন, ইত্যাদি
১৫। (১) প্রত্যেক মৎস্য খামারের মালিক বা পরিচালনাকারীকে তাহার মৎস্য খামারে উৎপাদিত মৎস্যের ট্রেসিবিলিটি ও নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণার্থে নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে মৎস্য খামারের নিবন্ধন গ্রহণ করিতে হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোনো মৎস্য খামারে উৎপাদিত মৎস্য রপ্তানি বা কোনো কারখানায় পক্রিয়াজাত বা মৎস্যপণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করা যাইবে না।
১৬। (১) কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত নিষিদ্ধ ঔষধ (Banned Aquaculture Medicinal Products) এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মৎস্য খামারে ব্যবহার করা যাইবে না :
তবে শর্ত থাকে যে, মৎস্যের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ঔষধ বা রাসায়নিক পদার্থ নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৎস্য চাষে ব্যবহার করা যাইবে।
(২) প্রত্যেক নিবন্ধিত মৎস্য খামারের উত্তম মৎস্য চাষ পদ্ধতি (Good Aquaculture Practice) অনুসরণ করিয়া মানসম্পন্ন নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন করিতে হইবে।
১৭। (১) কোনো মৎস্য খামারের মালিক এই আইন বা এই আইনের অধীন প্রণীত বিধির কোনো শর্ত ভঙ্গ করিলে স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ মৎস্য খামারের মালিককে যুক্তিসঙ্গত কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া মৎস্য খামারের নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবেন।
(২) স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে উপ-ধারা (১) এর অধীন স্থগিত বা বাতিলকৃত মৎস্য খামার পুনঃনিবন্ধন করিতে পারিবে।
ষষ্ঠ অধ্যায়
কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
১৮। (১) কোনো কারখানা বা স্থাপনায় ধারা ৩ এর অধীন নির্ধারিত মান অনুসারে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করিতে হইবে।
(২) প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় টাটকা ও সম্পূর্ণ মৎস্য (Whole fish) গ্রহণ করিতে হইবে।
১৯। কারখানা বা স্থাপনার মালিককে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, কারখানা বা স্থাপনার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং স্যানিটারি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করিতে হইবে।
২০। (১) সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার বা রেজিস্টার্ড কোনো চিকিৎসকের নিকট হইতে সংক্রামক কোনো রোগে আক্রান্ত নহে, এইরূপ চিকিৎসা সনদ ব্যতীত কারখানা বা স্থাপনায় কোনো কর্মচারী বা শ্রমিককে মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহণ বা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য হ্যান্ডলিং সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োগ করা যাইবে না।
(২) কারখানা বা স্থাপনায় কর্মরত অবস্থায় কোনো কর্মচারী বা শ্রমিক কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হইলে উক্ত রোগমুক্তির পূর্ব পর্যন্ত তাহাকে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কার্য সম্পাদন হইতে বিরত রাখিতে হইবে এবং উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত চিকিৎসা সনদ ব্যতীত তাহাকে পুনরায় কারখানা বা স্থাপনার কোনো কাজে নিয়োগ করা যাইবে না।
ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘‘সংক্রামক রোগ’’ অর্থ টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়া, কুষ্ঠরোগ, যক্ষ্মা বা সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত কোনো রোগ।
(৩) কোনো কারখানা বা স্থাপনার মালিক বা ম্যানেজারকে উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত চিকিৎসা সনদ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, সংরক্ষণ করিতে হইবে এবং কারখানা বা স্থাপনা পরিদর্শনের সময় পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাকে উক্ত সনদ প্রদর্শন করিতে হইবে।
(৪) কারখানা বা স্থাপনার মালিক বা ম্যানেজার উপ-ধারা (১), (২) এবং (৩) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা তাহাকে অনধিক ৪ (চার) লক্ষ টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করিতে এবং নির্ধারিত পদ্ধতিতে যে কোনো আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
২১। প্রত্যেক কারখানা বা স্থাপনার মালিক বা ম্যানেজারকে তাহার কারখানা বা স্থাপনায় কর্মরত কর্মচারী বা শ্রমিকের যাবতীয় তথ্য নির্ধারিত ফরম বা রেজিস্টারে সংরক্ষণ করিতে হইবে এবং পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা পরিদর্শনের সময় চাহিবামাত্র উক্ত ফরম বা রেজিস্টার প্রদর্শন করিতে হইবে।
সপ্তম অধ্যায়
মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি, রপ্তানি, ইত্যাদি
২২। (১) এই আইনের কোনো বিধান বা অন্য কোনো আইন, আদেশ বা বিধি দ্বারা নিষিদ্ধ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বা পঁচা, দূষিত, ভেজাল ও অপদ্রব্য মিশ্রিত, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থযুক্ত কোনো মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি করা যাইবে না।
(২) কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকস, অনুজীব, হেভী মেটাল, কীটনাশক, রঞ্জক পদার্থ, এডিটিভস, স্টেরয়েডস, হরমোন এবং অন্য কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ এর অনুমোদিত মাত্রা নির্ধারণ করিতে পারিবে।
২৩। (১) কোনো আমদানিকারক কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ ব্যতিরেকে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি কারিতে পারিবে না।
(২) আমদানিকারককে অনাপত্তিপত্রের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে আমদানিতব্য মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের বিবরণসহ উহা আমদানির অন্যূন ১৫ (পনের) দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে হইবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে এই আইনসহ প্রযোজ্য অন্যান্য আইন, বিধি বা আদেশের বিধান সাপেক্ষে অনাপত্তিপত্র ইস্যু করিতে পারিবে।
২৪। (১) আমদানিকারককে আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানির প্রতিটি কনসাইনমেন্টের সহিত রপ্তানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ, ট্রেসিবিলিটি ও হালাল সনদ দাখিল করিতে হইবে।
(২) আমদানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে আমদানিকারককে কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য সম্পর্কে ঘোষণা প্রদান করিতে হইবে।
(৩) হিমায়িত ও কিউরড মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানির প্রতিটি কনসাইনমেন্টের সহিত রপ্তানিকারক দেশের ইস্যুকৃত স্বাস্থ্যকরত্ব সনদের সহিত আমদানিকারক দেশের বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরি কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক, প্যাথোজেনিক ও নন-প্যাথোজেনিক অনুজীব, কীটনাশক, হেভী মেটাল, রঞ্জক পদার্থ, এডিটিভস, স্টেরয়েডস, হরমোন এবং অন্য কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ পরীক্ষণের প্রতিবেদন দাখিল করিতে হইবে।
২৫। (১) পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আমদানিকৃত বরফায়িত, হিমায়িত, কিউরড বা অন্য কোনো উপায়ে প্রক্রিয়াজাত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের কনসাইনমেন্ট পরিদর্শন, বন্দর হইতে ছাড়করণ, ভৌত গুণাগুণ পরীক্ষা করিবেন এবং অণুজীব, এন্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল, কীটনাশক, হরমোন, রঞ্জক পদার্থ ও অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহ করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরীক্ষিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা অধিক অণুজীব পাওয়া গেলে অথবা নিষিদ্ধ এন্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সনাক্ত হইলে অথবা অনুমোদিত এন্টিবায়োটিক ও রাসায়নিক পদার্থ নির্ধারিত মাত্রা অপেক্ষা অধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকিলে, পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, আমদানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বিনষ্ট করিতে বা রপ্তানিকারকের নিকট ফেরত প্রদানের আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।
(৩) কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে উপ-ধারা (২) এর উল্লিখিত ক্ষেত্র বিবেচনা করিয়া সংশ্লিষ্ট দেশ হইতে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিতে পারিবে।
২৬। কোনো আমদানিকারক এই আইন বা বিধি বা অনাপত্তিপত্রে উল্লিখিত কোনো শর্ত লঙ্ঘন করিলে সংশ্লিষ্ট উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া তাহাকে প্রদত্ত অনাপত্তিপত্র বাতিল করিতে পারিবেন।
২৭। (১) কোনো রপ্তানিকারক এখতিয়ারসম্পন্ন আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত অনাপত্তিপত্র গ্রহণপূর্বক এবং এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করিতে পারিবে।
(২) উপধারা (১) এ যাহাই উল্লেখ থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ গ্রহণ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করিতে পারিবে না।
২৮। (১) আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত পরীক্ষণ, উপ-ধারা (২) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদন এবং এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ প্রদান করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ গ্রহণের জন্য রপ্তানিকারককে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করিতে হইবে।
(৩) এই ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিমায়িত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের ক্ষেত্রে মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা ব্যতিরেকে যে কোনো বন্দরে কেবল ভৌত গুণাগুণ পরীক্ষা সাপেক্ষে ১০(দশ) কেজি পর্যন্ত বাণিজ্যিক নমুনার (Trade sample) স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ প্রদান করিতে পারিবে।
২৯। (১) আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ প্রদান করিবেন না, যথা :-
(ক) ধারা ৮, ১২(২), ১২(৫), ১৫, ১৬, ১৮, ২০ এবং ৪৩ এর ব্যত্যয় ঘটিলে;
(খ) উৎপাদিত অথবা প্রক্রিয়াজাতকৃত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের ট্রেসিবিলিটি, আমদানিকারকের ইনভয়েস না থাকিলে;
(গ) আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষণ প্রতিবেদন এবং সঠিক লেবিলিং না থাকিলে;
(ঘ) নির্ধারিত অন্য কোনো কারণে।
(২) কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান বা বিধি লঙ্ঘন করিলে তাহার স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ বাতিল হইবে।
অষ্টম অধ্যায়
অপরাধ, তদন্ত, গ্রেফতার, বিচার, দণ্ড, ইত্যাদি
৩০। কোনো ব্যক্তি মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করিবার জন্য উহাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসরের, কিন্তু ৫(পাঁচ) বৎসরের নিম্ন নহে, কারাদণ্ড এবং অন্যূন ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৩১। (১) কোনো ব্যক্তি রপ্তানি বা অভ্যন্তরীণ বাজারে বাজারজাত করিবার উদ্দেশ্যে মৎস্য বা মৎস্যপণ্যে ভেজাল মিশ্রণ বা অপদ্রব্য অনুপ্রবেশ করাইলে বা নির্ধারিত পরিবেশ এবং পাত্র ব্যতীত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ বা পরিবহণ করিলে বা নির্ধারিত মানের পানি ব্যবহার ব্যতীত বরফ তৈরি, সংরক্ষণ বা ব্যবহার করিলে; বা
(২) কোনো ব্যক্তি মৎস্য খামারে নিষিদ্ধ ঔষধ এবং রাসায়নিক ও ক্ষতিকারক পদার্থ ব্যবহার করিলে বা মৎস্য খামারে উত্তম মৎস্য চাষ পদ্ধতি অনুসরণ না করিলে-
উহা হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২(দুই) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৮ (আট) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৩২। কোনো ব্যক্তি স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ গ্রহণ ব্যতীত বা মিথ্যা স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ ব্যবহার করিয়া বা স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ জালিয়াতি করিয়া মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি করিলে বা রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০(দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৩৩। কোনো ব্যক্তি পঁচা বা দূষিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি, রপ্তানি ও বিক্রয় করিলে তাহার উপর অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা প্রশাসনিক জরিমানা আরোপ করা যাইবে এবং উক্ত মৎস্য বাজেয়াপ্ত হইবে।
৩৪। কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত কারখানা বা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করিলে উক্ত কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ১(এক) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৪(চার) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৩৫। কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইবার পর পুনরায় একটি অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৩৬। (১) কোনো কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে, উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে উক্ত কোম্পানির এইরূপ মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব, অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী উক্ত অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে এবং উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোম্পানি আইনগত সত্ত্বা হইলে, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়াও উক্ত কোম্পানিকে পৃথকভাবে একটি কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে, তবে উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে শুধু অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে।
ব্যাখ্যা- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘‘কোম্পানি’’ অর্থ কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২ এর দফা (ঘ) তে সংজ্ঞায়িত কোম্পানি এবং যে কোনো সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, অংশীদারী কারবার, সমিতি বা এক বা একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন বা সংস্থাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
৩৭। (১) এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটকের ক্ষেত্রে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) অনুসরণ করিতে হইবে।
(২) Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা, ক্ষেত্রমত, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে।
৩৮। এই আইনের অধীন সংঘটিত সকল অপরাধ আমলযোগ্য (Cognizable) কিন্তু জামিনযোগ্য (Bailable) হইবে :
তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৩০ এবং ৩২ এর অধীন সংঘটিত অপরাধের প্রকৃত ও ক্ষেত্র বিবেচনা করিয়া আদালত জামিন প্রদানের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবে।
৩৯। এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছু থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে, মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫৯ নং আইন) এর তপশিলভুক্ত হওয়া সাপেক্ষে, মোবাইল কোর্ট দণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।
৪০। এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে যে মৎস্য, মৎস্যপণ্য, কারখানা বা স্থাপনার যন্ত্রপাতি, উপকরণ, আধার, পাত্র, মোড়ক সহযোগে উক্ত অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে সেইগুলি নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাজেয়াপ্তযোগ্য হইবে।
৪১। এই আইনের অধীন আটককৃত কোনো মৎস্য ও মৎস্যপণ্য দ্রুত পঁচনশীল হইয়া থাকিলে উহা সংরক্ষণ না করিয়া নির্ধারিত পদ্ধতিতে উহার ব্যবহার, হস্তান্তর, ধ্বংস বা অন্য কোনো প্রকারে বিলি বন্দোবস্ত করা যাইবে।
৪২। কাঁচা মৎস্য এবং দ্রুত পঁচনশীল কোনো মৎস্যপণ্য কোনো খুচরা মৎস্য বিক্রেতা, হকার বা ফেরিওয়ালার নিকট বা কোনো দোকানে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণে পঁচিয়া যাওয়া অবস্থায় পাওয়া গেলে উক্ত কারণে উক্ত খুচরা মৎস্য বিক্রেতা, হকার, ফেরিওয়ালা বা দোকানদারকে দায়ী করিয়া কোনো ফৌজদারি বা প্রশাসনিক কার্যক্রম বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যদি না ইহা সহজেই বোধগম্য হয় যে, পঁচিয়া গিয়াছে জানিয়াও তিনি উক্ত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বিক্রয়ের জন্য রাখিয়াছেন বা বিক্রয়ের চেষ্টা করিয়াছেন।
নবম অধ্যায়
বিবিধ
৪৩। সরকার, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, জাতীয় রেসিডিউ কন্ট্রোল প্লান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করিবে।
৪৪। এই আইনের অধীন আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত কোনো আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উক্ত আদেশ প্রদানের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট এবং কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সরকারের নিকট আপিল দায়ের করিতে পারিবে এবং সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
৪৫। (১) সরকার, বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা ব্যতীত, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ উহার যে কোনো ক্ষমতা, নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির নিম্নে নহেন এমন যে কোনো কর্মকর্তাকে অর্পণ করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) উল্লিখিত কোনো কর্মকর্তা এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে গণ্য হইবেন।
৪৬। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, আঞ্চলিক উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় উপর্যুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা চাহিলে সংশ্লিষ্ট বাহিনী সহায়তা প্রদান করিবে।
৪৭। সরকার, নির্ধারিত পদ্ধতিতে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন এবং মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগারে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মান পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকরত্ব সনদ বা অনাপত্তি পত্র প্রদান বাবদ নির্ধারিত হারে ফি আরোপ ও আদায় করতে পারিবে।
৪৮। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ক্ষমতার সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, নিম্নবর্ণিত সকল বা যে কোনো বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করা যাইবে, যথা :-
(ক) মৎস্য আহরণ, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য হ্যান্ডলিং, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গ্রেডিং, হিমায়িতকরণ, বরফায়িতকরণ, প্যাকেজিং, লেবেলিং, মার্কিং, বাজারজাতকরণ, মজুদ, সংরক্ষণ, পরিবহণের পদ্ধতি নির্ধারণ;
(খ) মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মোড়ক সামগ্রী বিনির্দেশিকা, ধরন (Type), মান নির্ধারণ এবং উহা শনাক্তকরণ ও পরিদর্শনের পদ্ধতি নির্ধারণ;
(গ) কারখানা বা স্থাপনার সরঞ্জাম, নির্মাণকার্য এবং মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি কার্যে ব্যবহৃত যানবাহন সম্পর্কিত শর্তাবলী নির্ধারণ;
(ঘ) মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বরফ তৈরিতে পানীয় জলের ব্যবহার, উহার মান নির্ধারণ, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, এডিটিভিস, প্রিজারভেটিভ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ব্যবহার এবং উহার মাত্রা নির্ধারণ;
(ঙ) রপ্তানিকৃত মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বিদেশ হইতে ফেরত আসা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ;
(চ) রপ্তানিকৃত বা ঘোষিত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের কনসাইনমেন্টের নন-কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে পণ্য দূষণের উৎস শনাক্তকরণের জন্য খামার, ডিপো, সরবরাহকারী ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নির্ধারণ;
(ছ) প্রক্রিয়াজাতকৃত মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মান নিশ্চিতকরণের জন্য Hazard Analysis Critical Control Point (HACCP) পদ্ধতি বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয় নির্ধারণ;
(জ) কারাখানা বা প্রতিষ্ঠান বা মৎস্য খামারের মালিক কর্তৃক মৎস্য ও মৎস্যপণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান সংক্রান্ত বিষয় নির্ধারণ;
(ঝ) মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উহার ব্যয় ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নির্ধারণ;
(ঞ) মৎস্য ও মৎস্যপণ্য সংক্রান্ত যে কোনো ঝুঁকি (Risk) ও সংকট (Crisis) ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নির্ধারণ;
(ট) মৎস্য ও মৎস্যপণ্যে ব্যবহারের জন্য স্থাপিত বরফকলের লাইসেন্স, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও শর্তাবলি নির্ধারণ; এবং
(ঠ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, নির্ধারিত অন্য যে কোনো বিষয়।
৪৯। (১) Fish and Fish Products (Inspection and Quality Control) Ordinance, 1983 (Ordinance No. XX of 1983) অতঃপর রহিত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, রহিত Ordinance এর অধীন-
(ক) ইস্যুকৃত লাইসেন্স, কৃত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচীত কোনো কার্যধারা এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা সূচীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;
(খ) দায়েরকৃত কোনো মামলা বা কার্যধারা (Proceedings) অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে বা চলমান থাকিবে যেন উক্ত Ordinance রহিত হয় নাই;
(গ) সম্পাদিত কোনো চুক্তি, দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন সম্পাদিত হইয়াছে।
(৩) উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও রহিত Ordinance এর অধীন প্রণীত কোনো বিধি, জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ, অনুমোদন, উক্তরূপ রহিতকরণের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে, এই আইনের বিধানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উহা এই আইনের অনুরূপ বিধানের অধীন প্রণীত, জারিকৃত, প্রদত্ত এবং অনুমোদিত বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত বা পুনঃপ্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
৫০। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।
(২) এই আইন ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে এই আইন প্রাধান্য পাইবে।