প্রিন্ট ভিউ
আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিবহণসহ এতদ্সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আনুষঙ্গিক বিধানসমূহ যুগোপযোগী করিয়া একটি নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু বাংলাদেশ আকাশপথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যাত্রী, মালামাল ও কার্গো পরিবহণ নির্বিঘ্নকরণ এবং আকাশপথে পরিবহণে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ ও ন্যায়সংগত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ; এবং
যেহেতু আকাশপথে আন্তর্জাতিক পরিবহণ বিষয়ক Unification of Certain Rules Relating to International Carriage by Air signed in Warsaw on 12 October, 1929 অর্থাৎ Warsaw Convention, সংশ্লিষ্ট প্রটোকল এবং এতদ্সংশ্লিষ্ট বিধানাবলি যুগোপযোগী করিবার লক্ষ্যে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কানাডার মন্ট্রিল শহরে Unification of Certain Rules Relating to International Carriage by Air signed in Montreal on 28 May, 1999 সম্পাদিত হইয়াছে এবং বাংলাদেশ উহাতে স্বাক্ষর করিয়াছে; এবং
যেহেতু মন্ট্রিল কনভেনশনের অনুসমর্থন এবং উহার বিধানাবলি বাস্তবায়নের নিমিত্ত একটি নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হইল-
১। (১) এই আইন আকাশপথে পরিবহণ (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০ নামে অভিহিত হইবে।
(২) উড়োজাহাজের মাধ্যমে যাত্রী, মালামাল বা কার্গো পরিবহণের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, এই আইনের কোনো কিছুই শৃঙ্খলা বাহিনী, কাস্টমস এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য ব্যবহৃত উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।
(৩) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-
(ক) ‘অভ্যন্তরীণ পরিবহণ’ অর্থ আকাশপথে পরিবহণে পক্ষসমূহের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এইরূপ কোনো পরিবহণ যাহাতে পরিবহণকালীন কোনো বিরতি বা উড়োজাহাজ পরিবর্তনের ব্যবস্থা এবং প্রস্থানস্থল ও গন্তব্যস্থলের নির্দেশনা রহিয়াছে;
(খ) ‘এসডিআর’ অর্থ Special Drawing Rights যাহার মান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund) কর্তৃক নির্ধারিত ও সংরক্ষিত;
(গ) ‘তপশিল’ অর্থ এই আইনের তপশিল;
(ঘ) ‘পরিবারের সদস্য’ অর্থ স্ত্রী বা স্বামী, মাতা-পিতা, সৎ মাতা-পিতা, সন্তান, সৎ সন্তান, ভাই-বোন, সৎ ভাই-বোন, নাতি-নাতনি, দাদা-দাদি, বিবাহ বহির্ভূত সন্তান ও দত্তক সন্তান;
(ঙ) ‘পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র’ অর্থ মন্ট্রিল কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৫৩ ও ৫৬ অনুযায়ী উক্ত কনভেনশন স্বাক্ষর, অনুসমর্থন, গ্রহণ, অনুমোদনকারী রাষ্ট্র;
(চ) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি; এবং
(ছ) ‘মন্ট্রিল কনভেশন’ অর্থ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ২৮ মে তারিখে কানাডার মন্ট্রিলে সম্পাদিত the Convention for the Unification of Certain Rules for International Carriage by Air।
৩। এই আইন এবং তপশিলে উল্লিখিত মন্ট্রিল কনভেনশন দ্বারা যাত্রী, মালামাল, কার্গো, পরিবহণকারী, কনসাইনর (consignor), কনসাইনি (consignee) ও অন্যান্য ব্যক্তির অধিকার ও দায় নির্ধারিত হইবে এবং মন্ট্রিল কনভেনশন বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্যান্য আইনের ন্যায় মর্যাদাসম্পন্ন হইবে।
৪। (১) মন্ট্রিল কনভেনশনের প্রতিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র কোনো আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ১ (এক) জন আইনানুগ ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হইবে এবং আদালতের অধিক্ষেত্র Code of Civil Procedure, 1908 অনুসারে নির্ধারিত হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন মামলা দায়ের ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে Code of Civil Procedure, 1908 এর বিধান অনুসরণ করিতে হইবে।
(৩) এই ধারার কোনো কিছুই কোনো আদালতকে মন্ট্রিল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের কোনো সম্পত্তি আটক বা বিক্রয় করিবার অধিকার প্রদান করিবে না।
৫। (১) কোনো দুর্ঘটনায় যাত্রীর মৃত্যু ঘটিলে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর পরিবহণকারী উক্ত যাত্রীর পরিবারের সদস্যকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে দায়বদ্ধ থাকিবে।
(২) মৃত ব্যক্তির পরিবারের যে কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট পরিবহণকারীর নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে আদালতে মামলা দায়ের করিতে পারিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ১ (এক) জন যাত্রীর মৃত্যুর জন্য কেবল একটি মামলা দায়ের করা যাইবে এবং যাহার দ্বারাই উক্তরূপ মামলা দায়ের হউক না কেন, পরিবারের সকল সদস্য বাংলাদেশে বসবাসরত বা অনুপস্থিত উক্তরূপ মামলায় পক্ষভুক্ত হইতে পারিবেন।
(৩) এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, উপ-ধারা (২) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হইলে উক্ত মামলা দ্বারা আদায়কৃত অর্থ মৃত যাত্রীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আনুপাতিক হারে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভক্ত হইবে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন আদায়যোগ্য অর্থ হইতে পরিবহণকারী কর্তৃক কোনো অর্থ প্রদত্ত হইয়া থাকিলে তাহা কর্তনযোগ্য হইবে।
(৫) মন্ট্রিল কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের অর্থ নির্ধারিত হইবে এসডিআর এর ভিত্তিতে।
(৬) উপ-ধারা (৫) এর অধীন যে দিন উক্তরূপ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ বা নির্দেশ প্রদান করা হইবে সেই দিনের বিনিময় হারে এসডিআর এর সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় (টাকায়) রূপান্তর করিয়া ক্ষতিপূরণের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তাহার পরিবারের সদস্যকে প্রদান করিতে হইবে।
(৭) কোনো যাত্রীর মৃত্যুর সহিত সম্পর্কিত কোনো মামলার কার্যধারা চলমান থাকিবার যে কোনো পর্যায়ে আদালত এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবহণকারীর দায় সীমিত করিবার নিমিত্ত যথাযথ বিবেচনা করিয়া যে কোনো আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(৮) উপ-ধারা (৭) এর অধীন আদেশ বা নির্দেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে অনুরূপ কোনো মামলা চলমান থাকিলে উপযুক্ত প্রমাণ আদালতের বিবেচনার নিমিত্ত উপস্থাপন করিতে হইবে।
৬। (১) মৃত ব্যক্তির পরিবারের যে কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট পরিবহণকারী হইতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা দায়েরের পরিবর্তে আবেদন দাখিল করিতে পারিবে।
(২) ধারা ৫ এর উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী মামলা দায়ের করিলে যেইরূপ অর্থ প্রাপ্ত হইত, সেইরূপ অর্থ প্রাপ্তির জন্য এইরূপে আবেদন করিতে হইবে, যেন ধারা ৭ অনুযায়ী প্রদত্ত সনদে উল্লিখিত অনুপাতে পরিবারের সদস্যগণের মধ্যে উক্ত অর্থ বিভক্ত হয়।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন দায়েরকৃত আবেদনের সহিত ধারা ৭ অনুযায়ী প্রদত্ত সনদ না থাকিলে পরিবহণকারী আবেদনকারীকে উক্তরূপ সনদসহ আবেদন করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন।
৭। (১) যাত্রীর মৃত্যু হইলে উপযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে উত্তরাধিকার সনদ প্রাপ্তির নিমিত্ত আদালতে আবেদন করিতে হইবে।
(২) উক্তরূপ সনদে যাহাদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকিবে কেবল তাহারাই যাত্রীর পরিবারের সদস্য বলিয়া গণ্য হইবেন।
(৩) সনদে প্রত্যেক সদেস্যের অর্থ প্রাপ্তির আনুপাতিক হার উল্লেখ থাকিতে হইবে এবং উক্তরূপ আনুপাতিক হার সদস্যগণের স্বীয় সম্মতি অথবা ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হইবে।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন সম্মতির ভিত্তিতে উক্ত আনুপাতিক হার নির্ধারণ করা সম্ভব না হইলে আদালত কর্তৃক উক্তরূপ আনুপাতিক হার নির্ধারিত হইবে।
(৫) The Succession Act, 1925 (Act No. XXXIX of 1925) এর অধীন উত্তরাধিকার সনদের জন্য যেরূপ আবেদন ও পদ্ধতি অনুসরণ করা হইয়া থাকে এই বিধানের অধীন সনদের ক্ষেত্রেও সেইরূপ আবেদন ও পদ্ধতি অনুসরণ করিতে হইবে।
৮। কোনো পরিবহণকারী এই আইনের অধীন প্রদত্ত উত্তরাধিকারীর সনদ অনুযায়ী প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করিলে উক্ত পরিবহণকারী তাহার দায় হইতে পূর্ণ ও চূড়ান্তরূপে মুক্ত হইবে।
৯। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার কর্তৃক লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি, কোনো পরিবহণকারী, তাহার প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোনো ব্যক্তির দলিল ও রেকর্ডপত্র, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, পরিদর্শন ও পরীক্ষা করিতে পারিবে।
১০। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তপশিল সংশোধন করিতে পারিবে।
১১। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
১২। (১) The Carriage By Air Act, 1934 (Act No. XX of 1934), The Carriage by Air (International Convention) Act, 1966 (Act No. IX of 1966) এবং The Carriage by Air (Supplementary Convention) Act, 1968 (Act No. V of 1968), অতঃপর উক্ত ‘আংশিক রহিত আইনসমূহ’ বলিয়া উল্লিখিত, এর বিধানাবলি ও তপশিলের যে অংশসমূহ এই আইনের বিধানাবলি ও তপশিলের সহিত সম্পর্কিত উক্ত আইনসমূহের সেই অংশসমূহ এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও উক্ত আংশিক রহিত আইনসমূহের অধীন প্রণীত কোনো বিধি জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ, বিজ্ঞপ্তি বা প্রজ্ঞাপন, নোটিশ, কার্যধারা বা অন্য কোনো কার্যক্রম উক্তরূপ রহিতকরণের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে এবং এই আইনের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, প্রয়োজনীয় অভিযোজনসহ, এই আইনের অনুরূপ বিধানের অধীন কৃত, প্রণীত, জারিকৃত, দায়েরকৃত, পেশকৃত, মঞ্জুরিকৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
১৩। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
(২) ইংরেজি পাঠ এবং মূল বাংলা পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।