প্রিন্ট ভিউ

হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১

( ২০২১ সনের ০৯ নং আইন )

বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্য নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে পবিত্র হজ ও ওমরাহ পালন নিশ্চিতকরণ এবং এজেন্সিসমূহের নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রনীত আইন

যেহেতু বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের জন্য পবিত্র হজ ও ওমরাহ নির্বিঘ্নে ও সুষ্ঠুভাবে পালন নিশ্চিতকরণ এবং এজেন্সিসমূহের নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১। (১) এই আইন হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

২। বিষয়ে বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে―

(১) “এজেন্সি” অর্থ বেসরকারিভাবে পবিত্র হজ বা ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের জন্য এই আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো হজ বা ওমরাহ এজেন্সি;

(২) “ওমরাহ” অর্থ হজের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ব্যতীত শরিয়তের বিধান মোতাবেক নির্ধারিত পন্থায় পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ী করা;

(৩) “ওমরাহ এজেন্সি” অর্থ কেবল ওমরাহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের জন্য এই আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো এজেন্সি;

(৪) “ওমরাহযাত্রী” অর্থ কোনো মুসলিম যিনি ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ হইতে সৌদি আরবে গমন করেন এবং ওমরাহ পালন শেষে প্রত্যাবর্তন করেন;

(৫) “কর্তৃপক্ষ” অর্থ ধারা ৭ এর অধীন নির্ধারিত নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ;

(৬) “নির্ধারিত” অর্থ বিধি দ্বারা নির্ধারিত;

(৭) “বিধি” অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি:

(৮) “ব্যক্তি” অর্থে স্বাভাবিক ব্যক্তিসহ কোনো কোম্পানি, সমিতি বা সংঘ, এজেন্সি, প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ হউক বা না হউক, অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(৯) “হজ” অর্থ হিজরি সনের জিলহজ মাসের ৯ (নয়) তারিখে আরাফায় অবস্থানসহ ৮ (আট) হইতে ১৩ (তেরো) তারিখ পর্যন্ত পবিত্র কাবা শরীফ মীনা, মুযদালিফা এবং এতদ্‌সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থানসমূহে শরিয়ত মোতাবেক নির্ধারিত ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদন;

(১০) “হজ এজেন্সি” অর্থ কেবল পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের জন্য এই আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো এজেন্সি;

(১১) “হজ চুক্তি” অর্থ রাজকীয় সৌদি সরকারের সহিত বাংলাদেশ সরকারের সম্পাদিত পবিত্র হজ পালন সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি;

(১২) “হজ প্যাকেজ” অর্থ সরকার কর্তৃক, সময় সময়, ঘোষিত হজ সংক্রান্ত ব্যয় বিবরণী;

(১৩) “হজযাত্রী” অর্থ বাংলাদেশের কোনো মুসলিম নাগরিক যিনি পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অধীন নিবন্ধন করেন, যিনি পবিত্র হজ পালনের জন্য বাংলাদেশ হইতে সৌদি আরবে গমন করেন এবং পবিত্র হজ পালন শেষে প্রত্যাবর্তন করেন।

হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা

৩। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, পবিত্র হজ ওমরাহ ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত থাকিবে।

(২) সরকার, সুষ্ঠুভাবে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে, এক বা একাধিক বিষয়ে দায়িত্ব প্রদান বা স্বীয় ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে।

(৩) কোনো এজেন্সি এই আইনের বিধান মোতাবেক পবিত্র হজ বা ওমরাহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে।

(৪) সরকার, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, হজ পালনে ইচ্ছুক কোনো ব্যক্তির প্রাক-নিবন্ধন এবং অতঃপর নিবন্ধন করিতে পারিবে।

(৫) পবিত্র হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, আদেশ দ্বারা, প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয়াদি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি

৪।  (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, হজ ব্যবস্থাপনা পরিবীক্ষণ, সার্বিক পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, একটি জাতীয় কমিটি গঠন করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন গঠিত কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সভা সংক্রান্ত বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সভা সংক্রান্ত বিষয়াদি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটি

৫। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, হজ ব্যবস্থাপনা পরিবীক্ষণ, সার্বিক পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন গঠিত কমিটির কার্যপরিধি হইবে নিম্নরূপ, যথা:―

(ক) সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান;

(খ) হজ প্যাকেজ অনুমোদন;

(গ) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের সহিত সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান;

(ঘ) জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ;

(ঙ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো কার্য।

(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন গঠিত কমিটির সভা সংক্রান্ত বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, আদেশ দ্বারা, উক্ত কমিটির সভা সংক্রান্ত বিষয়াদি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

হজ পালনের যোগ্যতা ও শর্তাদি

৬। হজ পালনে ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তিকে―

(ক) বাংলাদেশের নাগরিক ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী হইতে হইবে;

(খ) নির্ধারিত মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক শারীরিক ও মানসিকভাবে যোগ্য ঘোষিত হইতে হইবে;

(গ) আর্থিক সচ্ছলতা থাকিতে হইবে;

(ঘ) নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধন করিতে হইবে;

(ঙ) নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করিতে হইবে;

(চ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশনা ও নির্ধারিত শর্তাদি প্রতিপালন করিতে হইবে;

(ছ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো যোগ্যতা অর্জন ও শর্তাদি প্রতিপালন করিতে হইবে।

নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ

৭। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, হজ ও ওমরাহ এজেন্সি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করিবে।

এজেন্সি নিবন্ধন

৮।  (১) এই আইনের অধীন নিবন্ধন সনদ গ্রহণ ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি হজ বা, ক্ষেত্রমত, ওমরাহ এজেন্সি প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনা করিবেন না।

(২) কর্তৃপক্ষ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক এজেন্সিকে ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে নিবন্ধন সনদ প্রদান করিতে পারিবে।

(৩) কোনো ব্যক্তিকে এই ধারার অধীন নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির জন্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে হইবে।

(৪) কোনো এজেন্সি উহার আওতাধীন হজযাত্রী বা ওমরাহযাত্রীকে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, চুক্তিবদ্ধ প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করিবে।

(৫) এই আইন কার্যকর হইবার পূর্বে নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত কোনো এজেন্সি, এই আইন এবং তদধীন প্রণীত বিধির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন নিবন্ধনপ্রাপ্ত হইয়াছে মর্মে গণ্য হইবে।

(৬) নিবন্ধন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকার, আদেশ দ্বারা, উক্তরূপ বিষয়াদি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

নিবন্ধন আবেদনের যোগ্যতা ও শর্তাদি

৯।  (১) কোনো ব্যক্তি এজেন্সি পরিচালনার জন্য নিবন্ধনের আবেদন করিবার যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন না, যদি তিনি―

(ক) বাংলাদেশের নাগরিক এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী না হন;

(খ) প্রাপ্তবয়স্ক না হন;

(গ) সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী না হন;

(ঘ) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হন;

(ঙ) রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হন;

(চ) নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির স্বত্বাধিকারী, পরিচালক বা অংশীদার না হন;

(ছ) হজ এজেন্সির ক্ষেত্রে অন্যূন ৪ (চার) বৎসর এবং ওমরাহ এজেন্সির ক্ষেত্রে অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনার পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন না হন;

(জ) এই আইন বা বিধি দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন না হন এবং শর্তাদি প্রতিপালন না করেন।

(২) কর্তৃপক্ষ, উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন যাচাই-বাছাই অন্তে সঠিক বিবেচনা করিলে, আবেদনকারীকে, নির্ধারিত পরিমাণ, জামানত প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করিবে।

(৩) কোনো এজেন্সিকে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, হজযাত্রী বা ওমরাহযাত্রীকে সেবা প্রদানের ঘোষণা প্রদান করিতে হইবে।

(৪) নিবন্ধনপ্রাপ্ত এজেন্সির কোনো স্বত্বাধিকারী, পরিচালক বা অংশীদার কেবল একটি হজ এজেন্সি ও একটি ওমরাহ এজেন্সির নিবন্ধনপ্রাপ্তির অধিকারী হইবেন।

নিবন্ধন নবায়ন

১০। (১) নিবন্ধন বা নিবন্ধন নবায়নের মেয়াদ শেষ হইবার অন্যূন ৩০ (ত্রিশ) দিন পূর্বে এজেন্সিকে নিবন্ধন নবায়নের জন্য, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করিতে হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীনপ্রাপ্ত আবেদন, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক, যথাযথ বিবেচিত হইলে নিবন্ধন নবায়ন করিবে এবং আবেদন যথাযথ বিবেচিত না হইলে কারণসহ উহা অনূর্ধ্ব ১৫ (পনেরো) দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন নিবন্ধন নবায়নের মেয়াদ হইবে অনুরূপ নবায়নের তারিখ হইতে ৩ (তিন) বৎসর।

(৪) নিবন্ধন নবায়ন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকার, তদ্‌কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিবন্ধন নবায়ন করিতে পারিবে।

নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর ও ঠিকানা পরিবর্তনের উপর বিধি-নিষেধ

১১।  (১) কোনো ব্যক্তি, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে, তদীয় এজেন্সির নিবন্ধন সনদ অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করিতে পারিবেন না।

(২) কোনো এজেন্সি, কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে, উহার ব্যবসায়িক ঠিকানা পরিবর্তন করিতে পারিবে না।

(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে, কর্তৃপক্ষ, ধারা ১৩ এর অধীন উক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।

অনিয়ম ও অসদাচরণ

১২। কর্তৃপক্ষ, কোনো এজেন্সির নিম্নবর্ণিত কোনো অনিয়ম বা অসদাচরণের জন্য ধারা ১৩ এর অধীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে, যথা:―

(ক) অসত্য তথ্য বা প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ;

(খ) নিবন্ধন সনদের কোনো শর্ত লঙ্ঘন;

(গ) নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তির পর কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়া;

(ঘ) রাষ্ট্রীয় ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হইতে পারে এইরূপ কোনো প্রচার ও প্রচারণা;

(ঙ) কোম্পানি, সংস্থা, অংশীদারি কারবার বা আইনগত সত্তার ক্ষেত্রে উহার অবসায়ন;

(চ) যথোপযুক্ত কারণ ব্যতিরেকে একাদিক্রমে ৩ (তিন) বৎসর কোনো হজ বা, ক্ষেত্রমত, ওমরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করিতে ব্যর্থতা;

(ছ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন নবায়নে ব্যর্থতা;

(জ) আইন, তদধীন প্রণীত বিধি ও সরকার কর্তৃক জারীকৃত নির্দেশনা লঙ্ঘন;

(ঝ) কোনো হজ বা ওমরাহযাত্রীর শারীরিক ক্ষতি;

(ঞ) এজেন্সির জন্য নির্ধারিত আচরণবিধির লঙ্ঘন;

(ট) কোনো হজ বা ওমরাহযাত্রীকে চুক্তিবদ্ধ প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করিতে ব্যর্থতা;

(ঠ) কোনো হজ বা ওমরাহযাত্রীকে হয়রানি বা ভোগান্তি;

(ড) কোনো এজেন্সির স্বত্বাধিকারী, পরিচালক বা অংশীদার কর্তৃক একাধিক এজেন্সির মালিক হিসাবে দায়িত্ব পালন;

(ঢ) বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোনো অনিয়ম, অসদাচরণ বা কার্য।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা

১৩। (১) কোনো এজেন্সি ধারা ১২ এর দফা (ক) হইতে দফা (জ) তে উল্লিখিত কোনো অনিয়ম বা অসদাচরণ করিলে, কর্তৃপক্ষ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ও শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া উক্ত এজেন্সির নিবন্ধন সনদ বাতিল করিতে পারিবে।

(২) কোনো এজেন্সি ধারা ১২ এর দফা (ঝ) হইতে দফা (ড) তে উল্লিখিত কোনো অনিয়ম বা অসদাচরণ করিলে, কর্তৃপক্ষ, নির্ধারিত পদ্ধতিতে, যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ও শুনানির সুযোগ প্রদান করিয়া উক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে নিম্নবর্ণিত যে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিত পারিবে, যথা:―

(ক) হজ এজেন্সির ক্ষেত্রে উক্ত এজেন্সি বা, ক্ষেত্রমত, স্বত্বাধিকারীকে অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা জরিমানা;

(খ) ওমরাহ এজেন্সির ক্ষেত্রে উক্ত এজেন্সি বা, ক্ষেত্রমত, স্বত্বাধিকারীকে অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা জরিমানা;

(গ) সংশ্লিষ্ট এজেন্সির আংশিক বা পূর্ণ জামানত সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তি;

(ঘ) সংশ্লিষ্ট এজেন্সির নিবন্ধন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য স্থগিতকরণ;

(ঙ) সংশ্লিষ্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারীকে তিরস্কার;

(চ) সংশ্লিষ্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারীকে সতর্কীকরণ।

(৩) কোনো এজেন্সি একাদিক্রমে দ্বিতীয়বার তিরস্কৃত হইলে উক্ত এজেন্সির কার্যক্রম পরবর্তী ১ (এক) বৎসরের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত হইয়া যাইবে এবং উক্তরূপ স্থগিতের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে লিখিতভাবে অবহিত করিতে হইবে।

(৪) কোনো এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল হইবার পর, উক্ত এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ও অংশীদারগণ পরবর্তীকালে হজ ও ওমরাহ এজেন্সি হিসাবে নিবন্ধন প্রাপ্তির অধিকারী হইবেন না বা অন্য কোনো এজেন্সির এতদ্‌সংক্রান্ত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে বা সম্পৃক্ত হইতে পারিবেন না।

(৫) কোনো এজেন্সির দায়িত্বে অবহেলা বা অন্য কোনো দায়িত্বহীনতার কারণে হজ বা ওমরাহযাত্রীর কোনো আর্থিক ক্ষতি সাধিত হইলে উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে, কর্তৃপক্ষ, তাহাকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে এবং উক্তরূপ নির্দেশনা প্রতিপালন না করিলে উক্ত এজেন্সি কর্তৃক প্রদত্ত জামানত হইতে উক্ত জরিমানার সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রদান করা যাইবে।

(৬) কোনো এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা হইলে, কর্তৃপক্ষ, উক্ত এজেন্সির আওতাভুক্ত প্রাক-নিবন্ধিত বা নিবন্ধিত হজ বা, ক্ষেত্রমত, ওমরাহযাত্রীদেরকে তাহাদের ইচ্ছা অনুযায়ী অন্য কোনো এজেন্সিতে স্থানান্তর করিতে পারিবে।

জরিমানার অর্থ আদায়

১৪। (১) কোনো এজেন্সির উপর আরোপিত জরিমানার অর্থ নগদ অর্থে আদায়যোগ্য হইবে, তবে অনুরূপভাবে জরিমানার অর্থ আদায় করা সম্ভব না হইলে সমপরিমাণ অর্থ উক্ত এজেন্সি কর্তৃক জামানত হিসাবে প্রদত্ত অর্থ হইতে কর্তন করা যাইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন জরিমানার সম্পূর্ণ অর্থ আদায় করা সম্ভব না হইলে উহা Public Demands Recovery Act, 1913 (Bengal Act)(Act No. III of 1913) এর অধীন সরকারি পাওনা হিসাবে আদায়যোগ্য হইবে।

(৩) এই ধারার অধীন আদায়কৃত বা জামানত হইতে কর্তনকৃত বা সরকারি পাওনা হিসাবে আদায়কৃত জরিমানার অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করিতে হইবে।

আপিল

১৫।(১) এই আইনের অধীন প্রদত্ত কোনো সিদ্ধান্ত দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা এজেন্সি সংক্ষুব্ধ হইলে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত প্রদানের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সরকারের নিকট আপিল আবেদন করিতে পারিবে।

(২) সরকার, আপিল শুনানি অন্তে এই আইনের অধীন প্রদত্ত কোনো সিদ্ধান্ত, ক্ষেত্রমত, বাতিল, পরিবর্তন বা বহাল রাখিতে পারিবে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ

১৬।  (১) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো এজেন্সির স্বত্বাধিকারী, অংশীদার, পরিচালক বা উহাতে কর্মরত অন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত ফৌজদারি অপরাধের দায়ে তাহার বিরুদ্ধে আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা যাইবে।

(২) কোনো এজেন্সির স্বত্বাধিকারী, অংশীদার, পরিচালক বা উহাতে কর্মরত অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কার্যধারা গ্রহণ করা সত্ত্বেও তাহার বা তাহাদের বিরুদ্ধে এই আইনের অধীন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো বাধা থাকিবে না।

আপৎকালীন তহবিল

১৭। (১) সরকার, কোনো দৈব-দুর্বিপাক, মৃত্যু, দুর্ঘটনা, হজযাত্রীদের সেবা প্রদানের জন্য উদ্ভূত আকস্মিক চাহিদা পূরণ বা অপ্রত্যাশিত ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি আপৎকালীন তহবিল গঠন করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন গঠিতব্য আপৎকালীন তহবিলের উৎস হইবে নিম্নরূপ, যথা:―

(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;

(খ) হজযাত্রী কর্তৃক প্রদত্ত অর্থ;

(গ) স্বীকৃত উপায়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;

(ঘ) সরকারের অনুমোদনক্রমে গৃহীত বৈদেশিক অনুদান ;

(ঙ) অন্য কোনো বৈধ উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।

(৩) আপৎকালীন তহবিল পরিচালনা সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, এই আইনের অধীন বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, তদ্‌কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উক্ত তহবিল পরিচালনা করিতে পারিবে।

চুক্তি সম্পাদন

১৮।  (১) সরকার, পবিত্র হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে, প্রয়োজনে, রাজকীয় সৌদি সরকারের সহিত চুক্তি সম্পাদন করিতে পারিবে।

(২) সরকার, পবিত্র হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে, প্রয়োজনে, দেশি বা বিদেশি কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহিত চুক্তি সম্পাদন করিতে পারিবে।

(৩) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, এতদ্‌সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

বহিঃবাংলাদেশ অফিস স্থাপন ও কার্যক্রম পরিচালনা

১৯। সরকার, পবিত্র হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে রাজকীয় সৌদি সরকারের সহিত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সম্পাদন বা উক্ত সরকারের সম্মতিক্রমে সৌদি আরবের যে কোনো স্থানে অফিস স্থাপন করিতে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করিতে পারিবে।

আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ

২০।  যদি কোনো এজেন্সি বাংলাদেশের সীমানার বাহিরে এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধিমালার কোনো বিধান লঙ্ঘন, কোনো অনিয়ম বা অসদাচরণ করে তাহা হইলে উহা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কৃত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ লঙ্ঘন, অনিয়ম বা অসদাচরণের জন্য এই আইনের অধীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

২১। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

অস্পষ্টতা দূরীকরণ

২২। এই আইনের কোনো বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা বা জটিলতা দেখা দিলে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত বিধানের স্পষ্টীকরণ বা ব্যাখ্যা প্রদান করিতে পারিবে।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

২৩। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।

(২) এই আইন এবং ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে এই আইন প্রাধান্য পাইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs