প্রিন্ট ভিউ
Mongla Port Authority Ordinance, 1976 রহিত করিয়া উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক ফরমান দ্বারা জারিকৃত অধ্যাদেশসমূহের অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তপশিলের ৩ক ও ১৮ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইয়াছে এবং সিভিল আপিল নং ১০৪৪-১০৪৫/২০০৯-এ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন, ১৯৭৯ (১৯৭৯ সনের ১নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পাইয়াছে; এবং
যেহেতু ২০১৩ সনের ৬ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হইয়াছে; এবং
যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনাপূর্বক আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে বাংলায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং
যেহেতু সরকারের উপরিউক্ত সিদ্ধান্তের আলোকে, Mongla Port Authority Ordinance, 1976 (Ordinance No. LIII of 1976) রহিত করিয়া উহার বিধানাবলি বিবেচনাক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-
প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
১। (১) এই আইন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে―
(১) ‘ওয়ার্ফ (wharf)’ অর্থ সমুদ্র বা নদীর তীর বা উপকূল, এইরূপ তীর বা উপকূলে চারিদিক বা কোনো পার্শ্ব যাহা পণ্য বোঝাই বা খালাসের জন্য উন্নয়ন করা হইয়াছে এবং পণ্য বোঝাই বা খালাসের জন্য ব্যবহৃত সমুদ্র বা নদীর তীর এবং তৎসংলগ্ন দেওয়াল;
(২) ‘কর্তৃপক্ষ’ অর্থ ধারা ৪ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ;
(৩) ‘চেয়ারম্যান’ অর্থ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান; যিনি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান;
(৪) ‘জাহাজ (vessel)’ অর্থ নৌপথে যাত্রী, পণ্য পরিবহণ, পরিদর্শন, উদ্ধার কার্যে অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহৃত কোনো জাহাজ, নৌকা, বার্জ, র্যাফট, ক্র্যাফট অথবা অন্য যে কোনো ধরনের নৌযান;
(৫) ‘টার্মিনাল’ অর্থ সমুদ্র ও নদী সংশ্লিষ্ট পশ্চাৎ সুবিধাদি সংবলিত এইরূপ কোনো স্থাপনা যাহাতে জাহাজ নোঙর করা যায় যেখানে, জাহাজ হইতে পণ্য খালাস এবং জাহাজে পণ্য বোঝাই করা যায়, কন্টেইনারে পণ্য স্টাফিং এবং কন্টেইনার হইতে আনস্টাফিংপূর্বক শেডে সংরক্ষণ করা যায় ও পরবর্তীকালে অন্য কোনো যানবাহনে পরিবহণের জন্য বা আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের চাহিদানুযায়ী গন্তব্যস্থলে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়;
(৬) ‘ডক’ অর্থ বেসিন, কপাটকল (lock), খাল (cuts), কি (quay), ওয়ার্ফ (wharf), পণ্যাগার, রেলপথ এবং ডক সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনা;
(৭) ‘তহবিল’ অর্থ কর্তৃপক্ষের তহবিল;
(৮) ‘নোঙরস্থান (mooring)’ অর্থ কোনো জাহাজ নোঙর করিবার স্থান যে স্থানে জাহাজ হইতে পণ্য খালাস বা জাহাজে পণ্য বোঝাই করা হয় অথবা জাহাজ অবস্থান করে;
(৯) ‘নির্ধারিত’ অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;
(১০) ‘পণ্য’ অর্থ যে কোনো ধরনের সামগ্রী, পণ্যদ্রব্য এবং কন্টেইনার;
(১১) ‘পিয়ার (pier)’ অর্থ সমুদ্র সংলগ্ন যে কোনো ধাপ, সিঁড়ি, অবতরণস্থল, নদী বা সমুদ্রের ভেতর কিছুদুর পর্যন্ত নির্মিত পাটাতন বা জেটি, ভাসমান বার্জ বা পন্টুন এবং যে কোনো সেতু বা সেতু সংলগ্ন স্থাপনা;
(১২) ‘প্রবিধান’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;
(১৩) ‘ফৌজদারি কার্যবিধি’ অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898);
(১৪) ‘বন্দর’ অর্থ মোংলা বন্দর;
(১৫) ‘বন্দর পরিচালনা’ অর্থ পণ্য বোঝাই বা খালাস, পণ্য গ্রহণ ও হস্তান্তর, জাহাজ নিয়ন্ত্রণ, জাহাজ পরিদর্শন এবং বন্দর চ্যানেল বা বন্দর এলাকার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড;
(১৬) ‘বার্থ’ অর্থ এইরূপ কোনো স্থাপনা যাহাতে প্ল্যাটফরম, স্টেজ, র্যাম্প, কি (quay), ওয়ার্ফ থাকে এবং যাহাতে জাহাজ নোঙর করিতে পারে ও পণ্য খালাস, বোঝাই ও ট্রান্সশিপমেন্ট করা যায়;
(১৭) ‘বোর্ড’ অর্থ ধারা ৭ এর অধীন গঠিত বোর্ড;
(১৮) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;
(১৯) ‘ভূমি’ অর্থে মাটিতে স্থাপিত দালান বা তৎসংলগ্ন স্থাপনা, নদীর চরসহ সর্বোচ্চ জোয়াররেখার নিম্নের নদীর তলদেশও অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(২০) ‘মাষ্টার’ অর্থ জাহাজের ক্ষেত্রে, পাইলট বা পোতাশ্রয় মাষ্টার ব্যতীত, জাহাজ পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বা জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি;
(২১) ‘মালিক’ অর্থে পণ্যের ক্ষেত্রে, কনসাইনার (consigner), কনসাইনি (consignee), জাহাজিকারক (shipper) বা জাহাজের এজেন্ট এবং বিক্রয়, সংরক্ষণ, জাহাজিকরণ, খালাস বা অপসারণ কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং জাহাজের ক্ষেত্রে, জাহাজের আংশিক মালিক, চার্টারার, কনসাইনি ও বন্ধক গ্রহীতাও অন্তর্ভুক্ত হইবে;
(২২) ‘সর্বোচ্চ জোয়ার রেখা (high watermark)’ অর্থ বৎসরের যে কোনো মৌসুমে বা ঋতুতে স্বাভাবিক ভরা জোয়ারের সময় পানির সর্বোচ্চ অবস্থানের চিহ্নিত বা অঙ্কিত রেখা; এবং
(২৩) ‘সদস্য’ অর্থ কর্তৃপক্ষের সদস্য, যাহারা বোর্ডেরও সদস্য।
৩। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, Mongla Port Authority Ordinance, 1976 (Ordinance No. LIII of 1976) এর অধীন নির্ধারিত Mongla Port এর সীমানা, মোংলা বন্দরের সীমানা হিসাবে গণ্য হইবে এবং উহা এমনভাবে বহাল থাকিবে, যেন উহা এই আইনের অধীন নির্ধারিত হইয়াছে এবং সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সময় সময় উক্ত সীমানা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত বন্দরের সীমানা (port limit) জাহাজ চলাচল পথের যে কোনো অংশে, বহিঃনোঙর অথবা সমুদ্রের যে কোনো অংশে, নদী, নদীর তীর, নদীর পাড় অথবা সংলগ্ন ভূমি পর্যন্ত বর্ধিত করা যাইবে এবং যে কোনো ধরনের ডক, পিয়ার, শেড অথবা জনস্বার্থে জাহাজ চলাচল, নৌপরিবহণ, পণ্য উঠানামা, জাহাজের নিরাপত্তা অথবা বন্দরের উন্নয়ন, সংরক্ষণ বা সুষ্ঠু বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত অন্যান্য কার্য অথবা নদী এবং উহার প্রবেশপথসমূহ যাহা জোয়ার-ভাটার ভিতরে অথবা বাইরে যেস্থানেই হউক না কেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তির অধিকার সংরক্ষণ সাপেক্ষে, উচ্চজোয়ার রেখার ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত স্থলভাগ, পাড়, ভূমি অথবা ভূমির যে কোনো অংশ বন্দরের নিয়ন্ত্রণ থাকিবে।
(৩) নদী শাসন, সংরক্ষণ, খনন বা অন্য কোনো ভৌত কারণে বন্দর সীমানার মধ্যে কোনো ভূমি বা চর সৃষ্ট হইলে, অন্য কোনো আইনে যাহাই থাকুক না কেন, উক্ত ভূমি বা চর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন ন্যস্ত হইবে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা, কমিটি, ইত্যাদি
৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, Mongla Port Authority Ordinance, 1976 (Ordinance No. LIII of 1976) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Mongla Port Authority, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (Mongla Port Authority) নামে অভিহিত হইবে এবং উহা এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।
(২) কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং উহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকিবে এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে উহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং কর্তৃপক্ষ স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাইবে।
৫। (১) কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় অবস্থিত হইবে।
(২) কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে কর্তৃপক্ষের শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।
৬। (১) কর্তৃপক্ষের পরিচালনা ও প্রশাসন একটি বোর্ডের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং কর্তৃপক্ষ যে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্য সম্পাদন করিতে পারিবে বোর্ডও সেই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্য সম্পাদন করিতে পারিবে।
(২) বোর্ড উহার ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময় সময় প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করিবে।
৭। (১) কর্তৃপক্ষের বোর্ড একজন চেয়ারম্যান এবং অনধিক ৪ (চার) জন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যাহারা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদে ও শর্তাধীনে কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত হইবেন।
(২) চেয়ারম্যান কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হইবেন।
(৩) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ কর্তৃপক্ষেরও চেয়ারম্যান ও সদস্য হইবেন এবং এই আইনের দ্বারা বা অধীন অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিবেন।
(৪) চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হইলে বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্য পদে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কর্মভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বা চেয়ারম্যান পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করিবেন।
৮। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, বোর্ড উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(২) বোর্ডের সভা চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হইবে।
(৩) বোর্ড সভায় কোরামের জন্য অন্যূন ৩ (তিন) জন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে।
(৪) বোর্ড সভায় প্রত্যেক সদস্যের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং সমান সংখ্যক ভোটের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের একটি দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট (casting vote) থাকিবে।
(৫) চেয়ারম্যান বোর্ডের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তদ্কর্তৃক মনোনীত সদস্য অথবা কোনো কারণে তিনি মনোনীত করিতে না পারিলে উপস্থিত সদস্যদের সমর্থনপ্রাপ্ত একজন সদস্য উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।
(৬) সভায় কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে মতামত, বক্তব্য, তথ্য বা ব্যাখ্যা উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাইতে পারিবেন এবং তিনি সভায় তাহার বিশেষজ্ঞ মতামত, বক্তব্য, তথ্য বা ব্যাখ্যা উপস্থাপন করিতে পারিবেন।
(৭) আমন্ত্রিত ব্যক্তির সভায় ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে না।
(৮) বোর্ডের কোনো কার্য বা কার্যধারা কেবল বোর্ডের কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা বোর্ড গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে অবৈধ হইবে না এবং তদ্সম্পর্কে কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।
৯। কর্তৃপক্ষ উহার দায়িত্ব পালনে সহায়তা প্রদানের জন্য, প্রয়োজনে, উহার যে কোনো সদস্য, কর্মচারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কমিটি গঠন এবং এইরূপ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
তৃতীয় অধ্যায়
কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি ও ক্ষমতা
১০। কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-
(ক) বন্দর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ;
(খ) বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের সেবা ও সুবিধাদি প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রবেশ পথ (approach) চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণসহ যথাযথ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ;
(গ) বন্দরের মধ্যে সকল ধরনের জাহাজ চলাচল, নোঙর করানো ও এতদ্সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্য নিয়ন্ত্রণ;
(ঘ) প্রয়োজনীয় জনবল সংগ্রহ, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা;
(ঙ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বন্দরের কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্য সম্পাদন।
১১। (১) কর্তৃপক্ষ, এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ক্ষমতার সামগ্রিকতার আওতায় কর্তৃপক্ষ নিম্নবর্ণিত ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে, যথা :-
(ক) বন্দর সীমার মধ্যে ডক, মুরিং, পিয়ার এবং সেতুসহ প্রয়োজনীয় রাস্তা, রেলপথ, নালা, ছাদ, কালভার্ট, বেড়া, প্রবেশপথ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা;
(খ) বন্দরের পণ্য বোঝাই, খালাসিকরণ এবং মজুদের প্রয়োজনে যে কোনো কার্য সম্পাদন;
(গ) বন্দর এলাকার মধ্যে যাত্রী, যানবাহন এবং পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যে ফেরি সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পরিচালনা;
(ঘ) জাহাজ হইতে পণ্য নামানো, জাহাজিকরণ বা অন্য কোনো কারণে পণ্য পরিবহন, গ্রহণ, পরিচালনা এবং মজুতের উদ্দেশ্যে রেলওয়ে, ওয়্যারহাউজ, শেড, ইঞ্জিন, ক্রেন, স্কেল (scales) এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ এবং পরিচালনা;
(ঙ) জলমগ্ন অবস্থা হইতে নদীর তীর বা তলদেশ উদ্ধার (reclaim), উত্তোলন, খনন, ঘেরাও বা বেড়া প্রদান;
(চ) জাহাজের বার্থিং ও পণ্য বোঝাই এবং খালাসিকরণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি প্রস্তুত, সংগ্রহ, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা;
(ছ) জাহাজ এবং উহাতে রক্ষিত জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে এবং জাহাজের নিরাপদ বার্থিং এবং ডুবন্ত জাহাজ বা সম্পদ উদ্ধারকল্পে উপযুক্ত জাহাজ (vessel), নির্মাণ, সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা;
(জ) জাহাজে জ্বালানি বা পানি সরবরাহ;
(ঝ) বন্দরের অগ্নি নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা গ্রহণ;
(ঞ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো কিছু অর্জন, ভাড়া, ক্রয়, নির্মাণ, স্থাপন, প্রস্তুত, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামত;
(ট) বন্দর বা বন্দর সংলগ্ন এলাকার জোয়ার রেখার উচ্চসীমার উপর বা নিম্নে যাহাই হউক, ডক বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ এবং অন্যান্য কার্য নিয়ন্ত্রণ;
(ঠ) বন্দরের ভূমি ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন;
(ড) বন্দর বা সংলগ্ন এলাকার প্রতিবন্ধকতা, অবৈধ দখল ও কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং অবৈধ নির্মাণাদি অপসারণ;
(ঢ) বন্দর সীমানার মধ্যে Customs Act, 1969 (Act No. IV of 1969) এর অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্টগণের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ;
(ণ) বন্দরের প্রয়োজনে উহার অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণক্রমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ প্রদান;
(ত) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বন্দর ব্যবহারকারীগণের নিকট হইতে আদায়যোগ্য কর, টোল, রেইট ও ফি এর তপশিল প্রণয়ন;
(থ) কর্তৃপক্ষের বার্ষিক বাজেট প্রস্তুতকরণ, সরকারের অনুমোদন গ্রহণ ও বাজেট বাস্তবায়ন;
(দ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, যে-কোনো ধরনের চুক্তি, বণ্ড বা অনুরূপ আইনগত দলিলাদি সম্পাদন;
(ধ) বন্দর সীমানায় চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষার্থে ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী নদী খনন, বালি, মাটি, পাথর উত্তোলন এবং নদী সংরক্ষণের জন্য ট্রেনিং ওয়ালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ, ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা;
(ন) নদীর গতিপথ ও নাব্যতা রক্ষার্থে জরীপ, গবেষণা, পরিবীক্ষণ এবং কারিগরি গবেষণা অথবা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান অথবা বিশেষজ্ঞ দ্বারা কারণ অন্বেষণ, পরিবীক্ষণ বা কারিগরি গবেষণায় সহযোগিতা গ্রহণ;
(প) চ্যানেল খনন, ঢেউ প্রতিরোধক নির্মাণ, টার্মিনালের জন্য স্থান ও স্থাপনা নির্মাণ এবং বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ড সম্পাদন;
(ফ) বন্দর সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যের জন্য যে কোনো স্থানীয়, বিদেশি বা সরকারি সংস্থার নিকট হইতে পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ;
(ব) বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠিত দেশি বা বিদেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সংস্থার সহিত সমঝোতাস্মারক বা অনুরূপ আইনগত দলিলাদি স্বাক্ষর;
(ভ) রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজন মনে করিলে বন্দর স্থাপনা এবং উহার সংযোগকারী কোনো রাস্তা বা উহার অংশবিশেষের ব্যবহার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধকরণ;
(ম) এই আইনের উদ্দেশ্যে পূরণকল্পে, বন্দর সংক্রান্ত সরকারের সকল সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনা বাস্তবায়ন; এবং
(য) বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখিবার স্বার্থে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন।
১২। বন্দরের সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এবং সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে, বন্দর সীমানার অন্তর্ভুক্ত সকল স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষিত বন্দর এলাকা হিসাবে গণ্য হইবে; তবে ইহার ফলে সম্পত্তির মালিকানার কোনো পরিবর্তন হইবে না।
১৩। (১) কর্তৃপক্ষের কি (quay), ওয়ার্ফ (wharf) বা পিয়ার (pier) এ পণ্য তাৎক্ষণিক নামানো/খালাস (Unloading) পর পণ্য বিনষ্ট হওয়া রোধকল্পে কর্তৃপক্ষ উহার গুদাম, শেড বা অন্য কোনো স্থানে উক্ত পণ্য যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করিবে।
(২) এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন পণ্যের ক্ষতি, ধ্বংস ও বিনষ্টের জন্য কর্তৃপক্ষ এইরূপ দায়ী থাকিবে যেইরূপ Contract Act, 1872 (Act No. IX of 1872) এর section 151, 152, 161 এবং 164 এর অধীন একজন বেইলি (bailee) দায়ী থাকেন:
তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো পণ্যের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের তারিখ হইতে ১০ (দশ) দিন অতিক্রান্ত হইবার পর এই উপ-ধারার অধীন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা যাইবে না।
১৪। (১) কোনো আইনের অধীন শুল্ক ও তদ্সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকির উদ্দেশ্যে এবং শুল্ক কর্মকর্তাগণের কার্যের সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন জেটি, ডক, মুরিং, পিয়ার বা শেডে প্রয়োজনীয় স্থান সংরক্ষণ করিতে হইবে এবং শুল্ক কর্তৃপক্ষ উক্ত স্থান ব্যবহারজনিত মাশুল বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করিবে।
(২) কর্তৃপক্ষ শুল্ক কর্মকর্তাগণের কার্যের জন্য উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত স্থানসমূহ নির্ধারণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
১৫। (১) কর্তৃপক্ষ বন্দরে জাহাজ আগমন বা নির্গমনের জন্য Ports Act, 1908 (Act No. XV of 1908) এর বিধান অনুসারে পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন পাইলট নিয়োগ করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পাইলট সার্ভিস প্রদানের জন্য উহার ব্যবহারকারী কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত হারে সকল ফি প্রদান করিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ এইরূপ কোনো ব্যক্তিকে পাইলট হিসাবে নিয়োগ করিবে না, যিনি Ports Act, 1908 (Act No. XV of 1908) এর বিধান অনুযায়ী জাহাজ পরিচালনা করিতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত (authorised) নহেন।
১৬। (১) কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, নির্দিষ্টকৃত শর্তে লিখিতভাবে বন্দর সীমানায় কোনো বেসরকারি স্থাপনা নির্মাণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে পারিবে।
(২) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘনপূর্বক কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা স্থাপন করিলে উহা অপসারণযোগ্য হইবে এবং উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত স্থাপনা নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে উহা অপসারণ না করিলে কর্তৃপক্ষ উহা অপসারণ করিতে পারিবে এবং সময় অতিক্রান্ত হইবার পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অন্যূন ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জরিমানা আরোপ করা যাইবে।
(৩) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্থাপনা অপসারণের ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অপসারণের সমুদয় খরচ বহন করিতে বাধ্য থাকিবে।
১৭। কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বন্দর সীমানায় আগত সমুদ্রগামী জাহাজ হইতে বন্দরের কোনো বার্থ, টার্মিনাল, জেটি, ঘাট, গুদাম, ওয়ার্ফ, কি, পিয়ার, নোঙরস্থান, ডক এবং একই ধরনের যেকোনো স্থানে পণ্য খালাস, বা বোঝাই হউক বা না হউক, পণ্যের উপর নদী ব্যবহার মাশুল (River-dues) আরোপ করিতে পারিবে।
১৮। (১) কর্তৃপক্ষ বন্দরে পণ্য গ্রহণ, বোঝাই, সংরক্ষণ, খালাস ও সরবরাহের জন্য, প্রয়োজন মনে করিলে, বন্দরের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষে প্রচলিত আইন বা বিধিমালা অনুসরণপূর্বক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বার্থ বা টার্মিনাল অপারেটর হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত অপারেটরের দায়িত্বাধীন পণ্যের ক্ষেত্রে ধারা ১৩ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান, প্রয়োজনীয় অভিযোজন সাপেক্ষে, প্রযোজ্য হইবে।
১৯। কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বন্দর সীমানার জোয়ার রেখার উচ্চসীমা হইতে ৫০ (পঞ্চাশ) মিটারের মধ্যে এবং বন্দর কর্তৃক সময় সময় নির্দিষ্টকৃত এলাকায় কোনরূপ স্থাপনা নির্মাণ, অপসারণ, মাটি খনন বা ভরাট করিতে পারিবে না।
২০। (১) কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ দ্বারা উহার অধীন ডক, পিয়ার, বার্থ, টার্মিনাল, মুরিং, অ্যাংকরেজ, অথবা অন্য কোনো স্থান হইতে জাহাজ বা যন্ত্রপাতি নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে অপসারণ করিবার জন্য ইহার স্বত্বাধিকারী মাস্টার বা এজেন্টকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত নোটিশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যদি উহার স্বত্বাধিকারী মাস্টার বা এজেন্ট উক্ত জাহাজ অপসারণ করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ ধারা ২১ অনুযায়ী নির্ধারিত হারে মাশুল আরোপ করিতে পারিবে যাহা উক্ত জাহাজের স্বত্বাধিকারী, মাস্টার বা এজেন্ট পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবেন।
(৩) যদি কোনো জাহাজের মালিক, মাস্টার বা এজেন্ট উপ-ধারা (১) এর অধীন নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অপসারণ করিতে ব্যর্থ হন, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ উক্ত জাহাজ ও যন্ত্রপাতি তদ্কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে অপসারণ করিতে পারিবে এবং উক্তরূপে কোনো জাহাজ অপসারণ করা হইলে উহার অপসারণ বাবদ যে অর্থ ব্যয়িত হইবে উক্ত ব্যয়িত অর্থের দ্বিগুণ অর্থ সংশ্লিষ্ট জাহাজের স্বত্বাধিকারী মাস্টার বা এজেন্টের নিকট হইতে আদায়যোগ্য হইবে।
চতুর্থ অধ্যায়
ফি, মাশুল, ইজারা, ইত্যাদি
২১। (১) কর্তৃপক্ষ, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বন্দর ব্যবহারকারীগণের নিকট হইতে আদায়যোগ্য ভাড়া, টোল, রেইট, ফিস বা মাশুলের তপশিল প্রণয়ন করিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সামগ্রিকতাকে ক্ষুণ্ণ না করিয়া, বিশেষত, নিম্নরূপ সকল বা যে কোনো বিষয়ে ভাড়া, টোল, রেইট, ফি বা মাশুলের তপশিল প্রণয়ন করিতে পারিবে, যথা :-
(ক) সমুদ্রগামী বা সমুদ্রগামী নহে এইরূপ জাহাজ হইতে কোনো পণ্য বন্দর সীমানার মধ্যে এবং কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক নির্মিত ডক, বার্থ, জেটি, টার্মিনাল, ‘কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন’ ও নোঙরস্থানে খালাস বা উক্ত স্থান হইতে জাহাজে বোঝাইকরণ;
ব্যাখ্যা।- এ দফায় ‘কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস)’ অর্থ যাহাতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধাদি সংবলিত কাস্টমস বন্ডেড ওয়্যার হাউজ অথবা এরিয়া যেইস্থানে প্রধানত রপ্তানিজাত পণ্য পরীক্ষা ও খালি কন্টেইনার স্টাফিং করা হয়, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত নির্দিষ্ট আমদানি পণ্য সিল্ড (Sealed) কন্টেইনারে পরিবহণ ও খালাস প্রদান করা হয় অথবা উক্ত এক বা একাধিক ধরনের কার্যাবলি পরিচালনা করা হয়;
(খ) দফা (ক) তে উল্লিখিত জাহাজ কর্তৃক উক্ত ডক, জেটি বা নোঙরস্থান ব্যবহার;
(গ) কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত কোনো স্থান বা প্রাঙ্গণে পণ্য সংরক্ষণ বা গুদামজাতকরণ;
(ঘ) পণ্য অপসারণ;
(ঙ) কর্তৃপক্ষ বা ইহার কর্মচারী কর্তৃক কোনো জাহাজ বা পণ্যের জন্য প্রদত্ত সেবা;
(চ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কোনো পূর্ত কার্য, যন্ত্র বা সরঞ্জামাদির ব্যবহার;
(ছ) কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন বা ভাড়াকৃত জাহাজের মাধ্যমে পরিবাহিত যাত্রী, পণ্য এবং তাহাদের ব্যক্তিগত দ্রব্যাদি পরিবহণ;
(জ) জাহাজকে ঘুরানো বা টানিয়া নেওয়া (towing) এবং বন্দর সীমানা বা বন্দর সীমানার বাহিরে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করিবার উদ্দেশ্যে কোনো নৌ-যান, টাগ, নৌকা বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান।
২২। কর্তৃপক্ষ, বিশেষ ক্ষেত্রে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, ধারা ২১ এর অধীন প্রণীত তপশিল অনুযায়ী আদায়যোগ্য টোল, রেইট, ফি ও মাশুল সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করিতে পারিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, অনধিক ১,০০০০০ (একলক্ষ) টাকা পর্যন্ত আদায়যোগ্য টোল, রেইট, ফি ও মাশুল মওকুফের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হইবে না।
২৩। এই আইনের অধীন অনাদায়ি ভাড়া, ফি, টোল, রেইট, মাশুল, জরিমানা ও বকেয়া Public Demands Recovery Act, 1913 (Act No. III of 1913) এর অধীন সরকারি দাবি হিসাবে আদায়যোগ্য হইবে।
২৪। (১) বন্দর সীমানায় চলাচলকারী সকল অভ্যন্তরীণ নৌ-যানসমূহ যাহাদের উপর Customs Act, 1969 (Act No. IV of 1969) প্রয়োগযোগ্য নহে, তাহাদেরকে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হারে ফি এবং অন্যান্য মাশুল প্রদান সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, কর্তৃপক্ষের নিকট তালিকাভুক্ত করিতে হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তালিকাভুক্ত সকল অভ্যন্তরীণ নৌ-যানের মাস্টারকে বন্দরে প্রবেশ অথবা বন্দর ত্যাগ করিবার প্রাক্কালে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে রিপোর্ট করিতে হইবে এবং এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট হইতে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মাস্টার বা তাহার
নৌ-যান নির্ধারিত স্থান হইতে স্থান ত্যাগ করিতে পারিবে না।
(৩) উপ-ধারা (২) এ অধীন প্রদত্ত রিপোর্টে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ছকে নৌ-যানে পরিবাহিত পণ্যের প্রকৃতি ও পণ্যের মূল্য বিষয়ে ঘোষণা প্রদান করিতে হইবে।
ব্যাখ্যা।- এই ধারায় ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-যান’ অর্থ বাষ্প, তৈল, বিদ্যুৎ অথবা অন্য কোনো যান্ত্রিক পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবাহিত এবং পরিচালিত জাহাজ।
২৫। (১) এই আইনের অধীন কোনো পণ্যের উপর ধার্যকৃত ভাড়া, জরিমানা, টোল, রেইট, ফি, মাশুল ও অন্যান্য পাওনা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত পণ্যের উপর কর্তৃপক্ষের পূর্বস্বত্ব থাকিবে এবং উক্তরূপ পাওনাদি সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত না হইলে কর্তৃপক্ষ উক্ত পণ্য জব্দ বা আটক রাখিতে পারিবে।
(২) কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন দালান, গুদাম, ভূমি বা পণ্য মওজুতের স্থানসহ অন্যান্য স্থান ব্যবহারজনিত কারণে কর্তৃপক্ষের পাওনা যথাযথভাবে দাবি করা সত্ত্বেও পরিশোধিত না হইলে উক্ত পাওনা আদায়ের জন্য উক্ত দালান, গুদাম, ভূমি বা পণ্য মওজুতের স্থানে রক্ষিত পণ্যের উপর কর্তৃপক্ষের পূর্বস্বত্ব বজায় থাকিবে এবং উক্ত পাওনা পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ উক্ত পণ্য জব্দ বা আটক রাখিতে পারিবে।
(৩) জাহাজ হইতে কোনো পণ্য খালাসের পর অনতিবিলম্বে উক্ত পণ্যের উপর প্রযোজ্য জরিমানা, টোল, রেইট, ফি ও মাশুলসহ যাবতীয় পাওনা পরিশোধযোগ্য হইবে এবং বন্দর সংরক্ষিত এলাকা হইতে কোনো পণ্য খালাস বা স্থানান্তরের বা রপ্তানিযোগ্য পণ্য জাহাজিকরণের পূর্বেই যাবতীয় পাওনাদি পরিশোধযোগ্য হইবে।
(৪) জাহাজের ভাড়া, প্রাইমেজ (primage) বা জেনারেল অ্যাভারেজ (general average) অথবা সরকারি অন্য কোনো পাওনা ব্যতীত কর্তৃপক্ষের মাশুল, টোল, রেইট, ফি ও মাশুল সংক্রান্ত সকল পূর্বস্বত্ব ও দাবি অন্য যে-কোনো পূর্বস্বত্ব ও দাবি অপেক্ষা অগ্রাধিকার পাইবে।
২৬। (১) কোনো জাহাজের স্বত্বাধিকারী বা মাস্টার জাহাজ হইতে বন্দরের ডক বা পিয়ারে পণ্য নামানোর সময় বা পূর্বে এই মর্মে কর্তৃপক্ষকে যদি নোটিশ প্রদান করেন যে, উক্ত পণ্যের ভাড়া, প্রাইমেজ বা জেনারেল অ্যাভারেজ বাবদ অর্থ অনাদায়ি রহিয়াছে তাহা হইলে উক্ত পণ্যের উপর জাহাজের স্বত্বাধিকারী বা মাস্টারের পূর্বস্বত্ব বজায় থাকিবে এবং উক্ত দাবি পণ্যের মালিক কর্তৃক পরিশোধিত হইবার পর উক্ত পূর্বস্বত্ব অবসায়িত (discharge) হইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পণ্যের ভাড়া, প্রাইমেজ বা জেনারেল অ্যাভারেজ বাবদ অর্থ পণ্যের মালিক কর্তৃক পরিশোধিত হইবার পর এবং কর্তৃপক্ষ জাহাজের স্বত্বাধিকারী বা মাস্টার হইতে পূর্বস্বত্ব অবসায়নের পুনঃনোটিশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে, পণ্যের মালিককে পণ্য খালাস বা স্থানান্তরের অনুমতি প্রদান করিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন পূর্বস্বত্ব অবসায়িত না হওয়া পর্যন্ত উক্তরূপ পণ্য কর্তৃপক্ষের ওয়্যারহাউজ বা শেডে রাখিতে হইবে :
তবে শর্ত থাকে যে, শুল্ক কর্তৃপক্ষের কমিশনারের সম্মতি সাপেক্ষে পণ্যের মালিকের ঝুঁকি এবং খরচে উক্তরূপ পণ্য কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন ওয়্যারহাউজে রাখা যাইবে।
২৭। (১) কর্তৃপক্ষের কোনো ভাড়া, টোল, রেইট, ফি, মাশুল বা অন্যান্য পাওনা বা পূর্বস্বত্ব (lien) অনাদায়ি থাকিলে এবং জাহাজ হইতে পণ্য খালাস বা স্থানান্তরের ২ (দুই) মাসের মধ্যে বন্দরের এবং জাহাজের স্বত্বাধিকারীর পাওনা পরিশোধিত না হইলে উক্ত ২ (দুই) মাস সময় অতিক্রান্ত হইবার পর ২ (দুই) টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় এবং কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে ১৫ (পনের) দিনের লিখিত নোটিশ প্রদানপূর্বক পণ্য নিলামে বিক্রির মাধ্যমে বন্দরের এবং জাহাজের স্বত্বাধিকারীর পাওনা আদায় করা যাইবে।
(২) পচনশীল ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করিলে, পণ্য খালাস বা স্থানান্তরের
২৪ (চবিবশ) ঘণ্টা অতিক্রান্ত হইবার পর যত দ্রুত সম্ভব, উক্ত পণ্য সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করিতে পারিবে এবং এইক্ষেত্রে কনসাইনি বা তাহার প্রতিনিধিকে জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় নোটিশ জারির ব্যবস্থা করিতে হইবে।
(৩) পণ্যের মালিক বা তাহার এজেন্টের ঠিকানা পণ্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র হইতে বা অন্য কোনো ভাবে কর্তৃপক্ষ অবগত হইলে, আবশ্যিকভাবে পণ্যের মালিক বা তাহার এজেন্টকে ডাকযোগের পাশাপাশি ফোন, মেসেজ, ই- মেইল এবং আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমেও নোটিশ প্রদান বা অন্য কোনোভাবে নোটিশ প্রদান করিতে হইবে :
তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ নোটিশ প্রদান না করিবার কারণে, পণ্যসমূহ সরল বিশ্বাসে ক্রয়কারী (bonafide purchaser) ক্রেতার স্বত্ব বাতিল হইবে না বা প্রকৃতপক্ষে নোটিশ প্রেরণ করা হইয়াছে কিনা, সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করিতে ক্রেতা বাধ্য থাকিবে না।
২৮। (১) বন্দরে আগমনকারী কোনো জাহাজ এই আইনের অধীন আদায়যোগ্য কোনো টোল, রেইট, বকেয়া বা অন্য সকল পাওনা পরিশোধ না করিলে অথবা পরিশোধ করিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলে, কর্তৃপক্ষ উক্ত টোল, রেইট, বকেয়া, বা অন্য সকল পাওনা পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জাহাজ আটক করিতে অথবা বন্দর ত্যাগের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর বিধান অনুসারে জাহাজ আটক অথবা বিধি-নিষেধ আরোপের ২ (দুই) মাসের মধ্যে জাহাজ মালিক পাওনা পরিশোধ না করিলে অথবা জাহাজ আটকের ক্ষেত্রে সকল ব্যয় পরিশোধ না করিলে কর্তৃপক্ষ উক্ত আটককৃত জাহাজ বা উক্ত জাহাজে রক্ষিত পণ্য প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করিতে পারিবে।
(৩) কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (২) অনুসারে বিক্রয়লব্ধ অর্থ হইতে প্রাপ্য অর্থ সমন্বয় করিয়া অবশিষ্ট অর্থ, যদি থাকে, জাহাজের মালিক বা উহার প্রতিনিধিকে ফেরত প্রদান করিবে এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ হইতে প্রাপ্য অর্থ সমন্বয়ে ঘাটতি থাকিলে উহা Public Demands Recovery Act, 1913 (Act No. III of 1913) এর অধীন সরকারি দাবি হিসাবে আদায়যোগ্য হইবে।
২৯। কর্তৃপক্ষ যদি বন্দর ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে এই মর্মে নোটিশ প্রদান করে যে, কোনো জাহাজ বা জাহাজে রক্ষিত পণ্যের উপর এই আইন ও বিধির বিধান অনুযায়ী আদায়যোগ্য পাওনা বা জরিমানা অনাদায়ি রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি উক্ত পাওনা বা জরিমানা পরিশোধিত না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট জাহাজকে বন্দর ছাড়পত্র ইস্যু করিবেন না।
৩০। (১) কোনো পণ্যের স্বত্বাধিকারী উক্ত পণ্যের দাবি পেশ বা খালাসের জন্য বন্দরে উপস্থিত হইতে ব্যর্থ হইলে বা পণ্যের জন্য আদায়যোগ্য ফি, টোল, রেইট ও মাশুল পরিশোধ করিবার পর বন্দর হইতে পণ্য খালাস না করিলে উক্ত পণ্য কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দিন হইতে ৩০ (ত্রিশ) দিন অতিবাহিত হইবার পর সরাইয়া লইবার জন্য পণ্যের স্বত্বাধিকারীকে নোটিশ প্রদান করিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, যেই ক্ষেত্রে পণ্য সংশ্লিষ্ট সকল পাওনা পরিশোধ করা হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে, পণ্য, কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দিন হইতে ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিন অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত নোটিশ প্রদান করা যাইবে না।
(২) যেই ক্ষেত্রে মালিকানা অজ্ঞাত বা মালিক বরাবর নোটিশ জারি করা সম্ভব হয় নাই বা নোটিশ প্রাপ্তির পর তিনি উহা তামিল করেন নাই সেই ক্ষেত্রে উক্ত পণ্য কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার
৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিন অতিবাহিত হইবার পর কর্তৃপক্ষ উহা প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করিতে পারিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, যথাযথ কারণ বা পরিস্থিতিতে উপ-ধারা (১) এর অধীন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব না হইলে, পণ্য কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) দিন অতিবাহিত হইবার পর শুল্ক বিভাগ উহা নিজস্ব স্থানে স্থানান্তর করিতে পারিবে।
(৩) সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে-কোনো পণ্য বা যে-কোনো শ্রেণির পণ্যকে এই ধারার প্রয়োগ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।
৩১। (১) এই আইনের অন্যান্য ধারায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের ফি, টোল, রেইট, মাশুল বা ক্ষতিপূরণ অনাদায়ি থাকিলে কর্তৃপক্ষ উহার নিয়ন্ত্রণাধীন পণ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করিয়া অর্থ আদায় করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আদায়কৃত অর্থ অপর্যাপ্ত হইলে কর্তৃপক্ষ ধারা ২৩ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অবশিষ্ট পাওনা আদায় করিতে পারিবে।
৩২। কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত মনে করিলে বন্দরের কোনো স্থাপনা বা সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত মেয়াদ, শর্ত ও পদ্ধতিতে অনুমতি প্রদান করিতে পারিবে।
৩৩। (১) কর্তৃপক্ষ জাহাজ ভেড়ানো এবং পণ্য খালাস বা বোঝাইয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে বন্দর এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ঘাট ও জেটি নির্মাণ করিতে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঘাট ও জেটি, ইত্যাদি নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করিতে পারিবে।
(২) কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে, যেকোনো স্থায়ী স্থাপনার কর্তৃত্ব গ্রহণ করিতে পারিবে এবং অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণ, পরিবর্তন ও স্থানান্তর করিতে পারিবে এবং উক্ত স্থাপনাসমূহ ব্যবহার করা হইতে জনসাধারণকে নিবৃত্ত করিতে পারিবে।
পঞ্চম অধ্যায়
তহবিল, হিসাবরক্ষণ, ইত্যাদি
৩৪। (১) কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকিবে এবং উহাতে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথা :-
(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান অথবা ঋণ;
(খ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোনো বিদেশি সরকার, সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান অথবা ঋণ;
(গ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত ঋণ;
(ঘ) স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান অথবা ঋণ;
(ঙ) কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি বিক্রয়লব্ধ অর্থ;
(চ) কর্তৃপক্ষের অর্জিত বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত কর, টোল, রেইট, মাশুল, বকেয়া ও ফি;
(ছ) কর্তৃপক্ষ কর্তক প্রদত্ত সেবা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ;
(জ) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত চুক্তিমূলে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগকৃত পুঁজি; এবং
(ঝ) অন্য কোনো উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।
(২) তহবিলের অর্থ বোর্ডের অনুমোদনক্রমে কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা রাখিতে হইবে।
(৩) বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত তহবিল পরিচালনা করা হইবে।
৩৫। (১) বন্দরের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন, কর্তৃপক্ষের পরিচালনা ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় তহবিল হইতে নির্বাহ করা যাইবে।
(২) চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মচারীগণের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় তহবিল হইতে নির্বাহ করা যাইবে।
(৩) চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মচারীগণের বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও কল্যাণমূলক ব্যয় তহবিল হইতে পরিশোধ করা যাইবে।
(৪) কর্তৃপক্ষ উহার কর্মচারী এবং বিধিতে বর্ণিতে ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সামাজিক সুবিধা প্রদানের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য বাসস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া, বিনোদনমূলক কার্যক্রম ও নির্ধারিত অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ পরিবেশের উন্নয়নের জন্যও তহবিল ব্যবহার করিতে পারিবে।
(৫) তহবিলে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সময় সময় প্রণীত বিধি-বিধান ও নির্দেশনা-অনুসরণ করিতে হইবে।
৩৬। (১) কর্তৃপক্ষ, প্রয়োজনে, সরকারের লিখিত পূর্বানুমতি গ্রহণপূর্বক কোনো ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবে।
(২) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সরকারের নিকট হইতে অথবা সরকারের জামিনদারিত্বে কোনো ঋণ গ্রহণ করা হইলে উক্ত ঋণের শর্তাবলি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
৩৭। কর্তৃপক্ষ প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থ-বৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী অনুমোদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং প্রয়োজনে, উহাতে উক্ত অর্থ-বৎসরে সরকারের নিকট হইতে কর্তৃপক্ষের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।
৩৮। (১) কর্তৃপক্ষ, সরকার কর্তৃক হিসাব নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উহার হিসাবরক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বাৎসরিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।
(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর কর্তৃপক্ষের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক অনুলিপি সরকার ও কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উপর কোনো আপত্তি উত্থাপিত হইলে উহা নিষ্পত্তির জন্য কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
(৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত হিসাব নিরীক্ষা ছাড়াও Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O.No. 2 of 1973) এর Article 2(1) (b)- তে সংজ্ঞায়িত চার্টার্ড একাউনটেন্ট দ্বারা কর্তৃপক্ষের হিসাব নিরীক্ষা করা যাইবে।
(৫) উপ-ধারা (৪) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক চার্টার্ড একাউনটেন্ট নিয়োগ করিতে পারিবে এবং এইরূপ নিয়োগকৃত চার্টার্ড একাউনটেন্টকে, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্ধারিত হারে পারিশ্রমিক প্রদান করা যাইবে।
(৬) কর্তৃপক্ষের হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি অথবা উপ-ধারা (৪) এর অধীন নিয়োগকৃত চার্টার্ড একাউনটেন্ট, কর্তৃপক্ষের সকল রেকর্ড, দলিলাদি, বাৎসরিক ব্যালেন্স সিট, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ জামানত, ভান্ডার বা অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং চেয়ারম্যান, কোনো সদস্য বা কর্তৃপক্ষের যে কোনো কর্মচারীর নিকট ব্যাখ্যা চাহিতে পারিবেন।
৩৯। (১) প্রতি অর্থ বৎসর শেষ হইবার পরবর্তী ৩ (তিন) মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তদ্কর্তৃক উক্ত অর্থ-বৎসরে সম্পাদিত কার্যাবলীর বিবরণ এবং আয় ও ব্যয় সংবলিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করিবে।
(২) সরকার, প্রয়োজনে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে উহার কার্যাবলি বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কোনো তথ্য, পরিসংখ্যান, হিসাব নিকাশ, টেন্ডার ডকুমেন্ট, দলিল-দস্তাবেজ পেশ করিবার জন্য বলিতে পারিবে এবং কর্তৃপক্ষ উহা সরকারের নিকট পেশ করিবে।
ষষ্ঠ অধ্যায়
অপরাধ ও দণ্ড
৪০। কোনো ব্যক্তি যদি এই আইন ও বিধির কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৪১। কোনো ব্যক্তি বা জাহাজ যদি বন্দর সীমানার মধ্যে পানিতে, সৈকতে, তীরে বা ভূমিতে কোনো বর্জ্য, ছাই, তৈল বা তৈল জাতীয় পদার্থ বা অন্য কিছু নিক্ষেপ করে অথবা নিক্ষেপ করিবার অনুমতি প্রদান করে যাহা দ্বারা পানি ও পরিবেশ দূষিত হয়, এবং জলজ প্রাণী, উদ্ভিদ প্রভৃতির ক্ষতি হয়, তাহা হইলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (১৯৯৫ সনের ১ নং আইন) এর ধারা ১৫ (১) এর টেবিলের ১০ নং ক্রমিকের বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
৪২। যদি কোনো ব্যক্তি আইনগতভাবে প্রাপ্য বন্দরের কোনো ভাড়া, ফি, টোল, রেইট, মাশুল বা ক্ষতিপূরণ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে Penal Code, 1860 (Act No. XLV of 1860) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্যায়ভাবে পণ্য, জাহাজ, প্রাণি বা বাহন অপসারণ করে বা অপসারণের চেষ্টা করে বা অপসারণের জন্য প্ররোচিত করে, তাহা হইলে তাহার উক্ত কাজ হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৬(ছয়) মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
৪৩। কর্তৃপক্ষের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি ব্যতীত, কোনো জাহাজের মাস্টার, নাবিক বা ঐ জাহাজে কর্মে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির অবহেলার কারণে কোনো ডক, পিয়ার বা কোনো স্থাপনা বা কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মের ক্ষতি হইলে, উক্ত জাহাজের স্বত্বাধিকারী, মাস্টার বা এজেন্টের নিকট হইতে ক্ষতির পরিমাণ অনুসারে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাইবে।
৪৪। (১) কোনো কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে কোম্পানির এইরূপ প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী উক্ত অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে অথবা উক্ত অপরাধ রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
ব্যাখ্যা- এই ধারায়-
(ক) ‘কোম্পানি’ অর্থে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অংশীদারি কারবার, সমিতি, সংঘ এবং সংগঠনও অন্তর্ভুক্ত হইবে।
(খ) বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘পরিচালক’ অর্থ উহার কোনো অংশীদার বা পরিচালনা বোর্ডের সদস্য।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোম্পানি আইনগত ব্যক্তিসত্তাবিশিষ্ট হইলে, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়াও উক্ত কোম্পানিকে আলাদাভাবে একই কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে, তবে ফৌজদারি মামলায় উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে শুধু অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে এবং প্রয়োজনে কালো তালিকাভুক্তও করা যাইবে।
৪৫। এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল এবং অন্যান্য বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
৪৬। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩২ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির উপর এই আইনের কোনো ধারায় উল্লিখিত অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে একজন ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত ধারায় উল্লিখিত অর্থদণ্ড আরোপ করিতে পারিবেন।
৪৭। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত, কোনো আদালত, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনো অপরাধ বিচারার্থে গ্রহণ করিবে না।
৪৮। এই আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ, মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৯ নং আইন) এর তপশিলভুক্ত করিয়া বিচার করা যাইবে।
৪৯। এই আইনের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোনো কাজের ফলে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইলে বা হইবার সম্ভাবনা থাকিলে তজ্জন্য কর্তৃপক্ষ, বা উহার চেয়ারম্যান, কোনো সদস্য, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা রুজু করা যাইবে না বা অন্য কোনো আইনগত কার্যধারাও গ্রহণ করা যাইবে না।
ব্যাখ্যা- এই ধারার উদ্দেশ্য পুরণকল্পে ‘‘সরল বিশ্বাস’’ বলিতে অবহেলার সহিত করা হউক বা না হউক প্রকৃতপক্ষে সততার সহিত করা হইলে কোনো কিছু ‘‘সরল বিশ্বাস’’-এ করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
সপ্তম অধ্যায়
কর্মচারী নিয়োগ, ইত্যাদি
৫০। (১) অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে :
তবে শর্ত থাকে যে, সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করিতে পারিবে না।
(২) কর্তৃপক্ষের কর্মচারীগণের নিয়োগ পদ্ধতি ও চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
৫১। সরকার, জনস্বার্থে, কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যেকোনো সংস্থায় এবং উক্ত সংস্থাসমূহের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে কর্তৃপক্ষের যেকোনো উপযুক্ত পদে প্রেষণে নিয়োগ করিতে পারিবে।
৫২। কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য এবং অন্যান্য কর্মচারীগণ Penal Code, 1860 (Act No. XLV of 1860) এর section 21 এ জনসেবক (Public Servent) কথাটি যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে জনসেবক হিসাবে গণ্য হইবে।
৫৩। বোর্ড, সাধারণ অথবা কোনো বিশেষ আদেশ দ্বারা, উহার যে-কোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট শর্তে চেয়ারম্যান, সদস্য বা উহার কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।
অষ্টম অধ্যায়
বিবিধ
৫৪। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, চেয়ারম্যান, সদস্য বা তদ্কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী বন্দর ও ধারা ৩ এ উল্লিখিত বন্দর সীমানায় যেকোনো স্থান, স্থাপনা, ঘর-বাড়ি বা অঙ্গনে প্রবেশ, পরিদর্শন, জরিপ ও অনুসন্ধান করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন-
(ক) কোনো স্থান, ঘরবাড়ি বা অঙ্গনে প্রবেশের পূর্বে উক্ত ভূমির মালিক বা তত্ত্বাবধায়ককে অন্যূন ২৪(চব্বিশ) ঘণ্টার নোটিশ প্রদান করিতে হইবে; এবং
(খ) কোনো স্থান, ঘরবাড়ি বা অঙ্গনে প্রবেশের সময়কাল অবশ্যই সূর্যোদয়ের পর হইতে সূর্যাস্তের পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে হইতে হইবে।
৫৫। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য কোনো ভূমি প্রয়োজন হইলে তাহা জনস্বার্থে প্রয়োজন বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে উহা স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন, ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নং আইন) এর বিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষের জন্য হুকুমদখল বা অধিগ্রহণ করা যাইবে।
(২) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণকৃত ভূমি ব্যতীতও অন্য কোনো ভূমি ক্রয়, ইজারা, বিনিময় বা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন এবং নিষ্পত্তি করিতে পারিবে।
৫৬। (১) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে ইচ্ছুক ব্যক্তি, তাহার নাম ঠিকানাসহ মামলা দায়েরের কারণ সংবলিত লিখিত নোটিশ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিলের ১(এক) মাস অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি যিনি এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালন ও কার্য সম্পাদন করিতেছেন তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করিতে পারিবেন না।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো মামলা দায়ের করার অধিকার সৃষ্টির ২ (দুই) মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করিতে হইবে।
৫৭। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৫৮। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কর্তৃপক্ষ, সরকারের অনুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন ও বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
৫৯। (১) Mongla Port Authority Ordinance, 1976 (Ordinance No. LII of 1976), অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, রহিত Ordinance এর অধীন-
(ক) কৃত কোনো কর্ম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;
(খ) প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বা উহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো মামলা, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে এমনভাবে নিষ্পন্ন করিতে হইবে, যেন উহা এই আইনের অধীন দায়েরকৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে;
(গ) প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত কোনো চুক্তি, দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট এমনভাবে বহাল থাকিবে, যেন উহা এই আইনের অধীন সম্পাদিত হইয়াছে;
(ঘ) প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের সকল প্রকার ঋণ, দায় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা এই আইনের বিধান অনুযায়ী সেই একই শর্তে কর্তৃপক্ষের ঋণ, দায় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসাবে গণ্য হইবে;
(ঙ) কোনো চুক্তি বা চাকরির শর্তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে উক্ত কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যে শর্তাধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, তাহারা এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, সেই একই শর্তে কর্তৃপক্ষের চাকরিতে নিয়োজিত এবং, ক্ষেত্রমত, বহাল থাকিবেন; এবং
(চ) প্রতিষ্ঠিত কর্তৃপক্ষের সকল সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও সুবিধা, ফি, স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি, অনুমোদিত মূলধন, তহবিল, নগদ অর্থ, ব্যাংক জমা ও সিকিউরিটিজসহ সকল হিসাব এবং এতদ্সংশ্লিষ্ট সকল হিসাববহি, রেজিস্টার, রেকর্ডপত্রসহ অন্যান্য দলিল-দস্তাবেজ এই আইন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরিত হইবে এবং কর্তৃপক্ষ উহার অধিকারী হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতকরণ সত্ত্বেও, রহিত Ordinance এর অধীন প্রণীত কোনো বিধি বা প্রবিধান, জারীকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ, অনুমোদন, সুপারিশ, প্রণীত সকল পরিকল্পনা বা কার্যক্রম এবং অনুমোদিত সকল হিসাব বিবরণী ও বার্ষিক প্রতিবেদন উক্তরূপ রহিতের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে, এই আইনের কোনো বিধানের সহিত অসংগতিপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অনুরূপ বিধানের অধীন প্রণীত, জারীকৃত, প্রদত্ত এবং অনুমোদিত বলিয়া গণ্য হইবে, এবং মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অথবা এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
৬০। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।
(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।