প্রিন্ট ভিউ

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২‌

( ২০২২ সনের ১৫ নং আইন )

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ রহিতক্রমে পরিমার্জনপূর্বক যুগোপযোগী করিয়া নূতনভাবে প্রণয়নের উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন

যেহেতু জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করিবার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গঠন করিবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে বিধান করা প্রয়োজন; এবং

যেহেতু জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ (২০০২ সনের ৮ নং আইন) রহিতক্রমে পরিমার্জনপূর্বক যুগোপযোগী করিয়া উহা নূতনভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১। (১) এই আইন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-

(১) ‘উপদেষ্টা পরিষদ’ অর্থ ধারা ৯ এর অধীন গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ;

(২) ‘কল্যাণ ট্রাস্ট আইন’ অর্থ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮ (২০১৮ সনের ৫১ নং আইন);

(৩) ‘কাউন্সিল’ অর্থ ধারা ৩ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা);

(৪) ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের কারণে বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম বা বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা;

(৫) ‘চেয়ারম্যান’ অর্থ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান;

(৬) ‘নিবন্ধক’ অর্থ ধারা ১৩ এ উল্লিখিত নিবন্ধক;

(৭) ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবার’ অর্থ কোনো মুক্তিযোদ্ধার স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা এবং মাতা;

(৮) ‘প্রধান উপদেষ্টা’ অর্থ উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা;

(৯) ‘প্রবিধান’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;

(১০) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;

(১১) ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া যাঁহারা দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিচ কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুজিব বাহিনী, মুক্তি বাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ই. পি. আর. নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার বাহিনীর সদস্য এবং নিম্নবর্ণিত বাংলাদেশের নাগরিকগণ, উক্ত সময়ে যাঁহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন, যথা:-

(ক) যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাহাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলেন;

(খ) যে সকল বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রাখিয়াছিলেন এবং যে সকল বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন;

(গ) যে সকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করিয়াছিলেন;

(ঘ) মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সহিত সম্পৃক্ত সকল এম. এন. এ. (Member of National Assembly) বা এম. পি. এ. (Member of Provincial Assembly), যাঁহারা পরবর্তীকালে গণপরিষদের সদস্য (Member of Constituent Assembly) হিসাবে গণ্য হইয়াছিলেন;

(ঙ) দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাহাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিতা সকল নারী (বীরাঙ্গনা); তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত নির্যাতিতা নারী বা বীরাঙ্গনার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমা প্রযোজ্য হইবে না;

(চ) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সকল শিল্পী ও কলা-কুশলী এবং দেশ ও দেশের বাহিরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সকল বাংলাদেশি সাংবাদিক;

(ছ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সকল খেলোয়াড়; এবং

(জ) মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী মেডিকেল টিমের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারী;

(১২) ‘মহাপরিচালক’ অর্থ কাউন্সিলের মহাপরিচালক;

(১৩) ‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিচ কমিটির বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ;

(১৪) ‘যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধে আহত হইয়াছেন এইরূপ বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাঁহার শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ বা গ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে;

(১৫) ‘শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা’ অর্থ এইরূপ বীর মুক্তিযুদ্ধ যিনি মুক্তিযুক্ত চলাকালে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়া শহিদ হইয়াছেন।

কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা

৩। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ (২০০২ সনের ৮ নং আইন) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।

(২) কাউন্সিল একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে ইহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং উক্ত নামে ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।

কাউন্সিলের কার্যালয়

৪। (১) কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।

(২) কাউন্সিল, উহার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের অন্য যে কোনো স্থানে উহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে।

কাউন্সিলের গঠন

৫। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠিত হইবে, যথা :-

(ক) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন; তবে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী সকলেই বিদ্যমান থাকিলে মন্ত্রী চেয়ারম্যান, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, অন্য দুইজন বা একজন ভাইস চেয়ারম্যানও হইবেন;

(খ) সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়;

(গ) প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সহিত সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মধ্য হইতে মনোনীত
৮ (আট) জন; এবং

(ঘ) মহাপরিচালক, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) এ উল্লিখিত মনোনীত সদস্যগণ মনোনয়নের তারিখ হইতে
৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন :

তবে শর্ত থাকে যে, প্রধান উপদেষ্টা উক্ত মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বেই উপ-ধারা (১) এর
দফা (গ) এ বর্ণিত কাউন্সিলের যে কোনো সদস্যকে তাহার পদ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবেন।

(৩) প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে মনোনীত যে কোনো সদস্য যে কোনো সময় স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।

কাউন্সিলের কার্যাবলি

৬। কাউন্সিলের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-

(ক) মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি রক্ষার্থে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়ন, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান;

(খ) প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(গ) গেজেটভুক্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নহে মর্মে তদন্তে প্রমাণিত হইলে তাহার গেজেট ও সনদ বাতিলের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(ঘ) অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে গেজেটভুক্ত ও সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(ঙ) ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাহারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিচ কমিটির সদস্য হিসাবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছে বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপ দ্বারা নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করিয়াছে অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে, সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করিয়াছে তাহাদের বিদ্যমান তালিকা প্রকাশের পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে ও প্রয়োজনে, যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে নূতন তালিকা এবং ১৯৭০ সনের নির্বাচনে যাহারা এম. এন. এ এবং এম. পি. এ নির্বাচিত হইয়া পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিল এবং বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বনের কারণে শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচনে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নির্বাচিত এম. এন. এ এবং এম. পি. এ-দের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ;

(চ) বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করিবার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণসহ তাহাদের সর্বোতভাবে পুনর্বাসন;

(ছ) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়সহ বিভাগ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ;

(জ) রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সকল স্তরে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা সমুন্নত রাখা ও কার্যকর করিবার লক্ষ্যে সকল শ্রেণির নারী, শিশু-কিশোর, যুবক, ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতি কর্মী, বুদ্ধিজীবীসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমন্বয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অঙ্গ সংগঠন গঠন, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান;

(ঝ) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণ;

(ঞ) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধন ফি, নবায়ন ফি, ইত্যাদি নির্ধারণ;

(ট) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন, সংঘ, সমিতি, ইত্যাদি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ প্রদান;

(ঠ) বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও সংগঠন কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতি, আদর্শ সংক্রান্ত সৌধ, ভাস্কর্য, জাদুঘর, ইত্যাদি নির্মাণের অনুমতি প্রদান ও তত্ত্বাবধান;

(ড) কাউন্সিলের মালিকানাধীন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ;

(ঢ) স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন, ধারণ ও সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে হস্তান্তর ও বিক্রয়;

(ণ) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের বাতিলকৃত কার্যনির্বাহী কমিটির ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগ;

(ত) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কার্যাবলি সম্পাদন; এবং

(থ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সময় সময়, সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্যান্য কার্যাবলি সম্পাদন।

কাউন্সিলের সভা

৭। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, কাউন্সিল উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) সভার আলোচ্যসূচি, তারিখ, সময় ও স্থান চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্ধারিত হইবে :

তবে শর্ত থাকে যে, প্রতি ২ (দুই) মাসে কাউন্সিলের অন্যূন একটি সভা অনুষ্ঠিত হইবে।

(৩) কাউন্সিলের সদস্য-সচিব, চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে, লিখিত নোটিশ দ্বারা কাউন্সিলের সভা আহবান করিবেন।

(৪) জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের লিখিত নোটিশে বিশেষ সভা আহবান করা যাইবে।

(৫) চেয়ারম্যান কাউন্সিলের সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে ভাইস-চেয়ারম্যান সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিক্রমে যে কোনো সদস্য উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

(৬) কাউন্সিলের সভার কোরামের জন্য ৪ (চার) জন সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে; তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোরামের প্রয়োজন হইবে না।

(৭) উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে এবং ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারীর দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে।

(৮) কোনো সদস্যপদে শূন্যতা বা কাউন্সিল গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে কাউন্সিলের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না এবং তৎসম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না।

(৯) কাউন্সিলের প্রতিটি সভার কার্যবিবরণী ও গৃহীত সিদ্ধান্তের অনুলিপি উপদেষ্টা পরিষদ ও সরকারের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে।

কাউন্সিলের নির্বাহী ক্ষমতা

৮। (১) কাউন্সিলের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকিবে।

(২) কাউন্সিলের নির্বাহী ক্ষমতা বা অন্য কোনো কার্য কাউন্সিলের নামে গৃহীত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

উপদেষ্টা পরিষদ

৯। (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কাউন্সিলের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকিবে এবং নিম্নবর্ণিত উপদেষ্টাগণের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হইবে, যথা :-

(ক) প্রধানমন্ত্রী, যিনি কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টাও হইবেন;

(খ) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী;

(গ) প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সেক্টর কমান্ডার, সাব-সেক্টর কমান্ডার অথবা উল্লিখিত কমান্ডসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সহিত সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের মধ্য হইতে মনোনীত ৫ (পাঁচ) জন; এবং

(ঘ) সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) এ উল্লিখিত মনোনীত উপদেষ্টাগণ মনোনয়নের তারিখ হইতে
৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন :

তবে শর্ত থাকে যে, সরকার প্রয়োজনবোধে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনক্রমে অন্যান্য উপদেষ্টাদের মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।

(৩) প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে, কোনো উপদেষ্টা যে কোনো সময় স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।

(৪) কোনো উপদেষ্টা পদে শূন্যতা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করা যাইবে না।

(৫) মহাপরিচালক উপদেষ্টা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন।

উপদেষ্টা পরিষদের কার্যাবলি

১০।  উপদেষ্টা পরিষদের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-

(ক) কাউন্সিলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা প্রদান; এবং

(খ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অন্য যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ।

উপদেষ্টা পরিষদের সভা

১১। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) সভার আলোচ্যসূচি, স্থান, তারিখ ও সময় প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত হইবে :

তবে শর্ত থাকে যে, প্রতি বৎসর উপদেষ্টা পরিষদের অন্যূন একটি সভা অনুষ্ঠিত হইবে।

(৩) মহাপরিচালক, প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিক্রমে, লিখিত নোটিশ দ্বারা উপদেষ্টা পরিষদের সভা আহবান করিবেন।

(৪) জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের লিখিত নোটিশে বিশেষ সভা আহবান করা যাইবে।

(৫) প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন, তবে তাহার অনুপস্থিতিতে তাহার সম্মতিক্রমে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

কমিটি

১২। কাউন্সিল উহার কার্যে সহায়তার জন্য, প্রয়োজনে, এক বা একাধিক কমিটি গঠন করিতে পারিবে এবং উক্তরূপ কমিটির সদস্য সংখ্যা, দায়িত্ব ও কার্যধারা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নিবন্ধন

১৩। (১) মহাপরিচালক, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নিবন্ধক হইবেন।

(২) কোনো ব্যক্তি এই আইন এবং তদধীন প্রণীত বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং পরিচালনা করিতে পারিবেন।

(৩) কোনো ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠন প্রতিষ্ঠা করিতে আগ্রহী হইলে তিনি, নিবন্ধনের জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, নিবন্ধকের নিকট আবেদন করিতে পারিবেন।

(৪) মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠন নিবন্ধন ও উক্ত সংগঠন পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

পরিদর্শন, ইত্যাদির ক্ষমতা

১৪। (১) এই আইন, তদধীন প্রণীত বিধি, প্রবিধান বা কাউন্সিল কর্তৃক প্রদত্ত কোনো নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তাহা নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা ৭ (সাত) দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া কোনো নিবন্ধিত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের স্থান, কার্যালয়, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ইত্যাদি সরেজমিনে পরিদর্শন ও তদন্ত করিতে পারিবেন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করিয়া ৭ (সাত) দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করিয়া মহাপরিচালকের নিকট দাখিল করিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত প্রতিবেদন মহাপরিচালক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত হইলে তিনি উহা কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করিবেন।

(৩) উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনাক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠনের কার্যক্রম সন্তোষজনক প্রতীয়মান না হইলে বা উহার কার্যক্রম সংগঠন পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি-বিধানের পরিপন্থি বলিয়া বিবেচিত হইলে কাউন্সিল উক্ত সংগঠনকে কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া উক্ত সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করিতে পারিবে।

(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন কোনো সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি বাতিল করা হইলে সেইক্ষেত্রে কাউন্সিল উক্ত সংগঠনের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করিতে পারিবে এবং প্রশাসকের কার্যক্রম বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিতকরণ

১৫। (১) ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনাক্রমে যদি দেখা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন আর্থিক অনিয়মের সহিত জড়িত হইয়াছে বা এইরূপ কার্যে সহায়তা করিয়াছে, তাহা হইলে নিবন্ধক উক্ত সংগঠনকে কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া আদেশ দ্বারা উহার নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করিতে পারিবেন।

(২) নিবন্ধক যদি উপ-ধারা (১) এর অধীন এক বা একাধিক কারণে কোনো সংগঠনের কার্যক্রম বা নিবন্ধন সাময়িকভাবে স্থগিত করেন তবে উক্ত কারণ নিরসনযোগ্য হইলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থগিত সংগঠনের নিবন্ধন পুনর্বহাল করিতে পারিবেন এবং উক্ত কারণ নিরসনযোগ্য না হইলে ধারা ১৬ এর অধীন উক্ত সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করিতে পারিবেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল

১৬। (১) ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনাক্রমে যদি দেখা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হইয়াছে বা এইরূপ কার্যে সহায়তা করিয়াছে অথবা নিবন্ধন গ্রহণের পর সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই, তাহা হইলে নিবন্ধক উক্ত সংগঠনকে কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া আদেশ দ্বারা নিবন্ধন বাতিল করিতে পারিবেন।

(২) এই আইনের অধীন কোনো সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করা হইলে মহাপরিচালক, উক্ত সংগঠনের অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, সিকিউরিটিজ অথবা যে সকল সম্পত্তি গচ্ছিত রহিয়াছে সে সকল সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে রাষ্ট্রের অনুকূলে উক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও নিষ্পত্তি করিতে পারিবেন।

 (৩) বাজেয়াপ্তকৃত সম্পত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মহাপরিচালক বা তাহার প্রতিনিধি উহা তত্ত্বাবধান করিবেন।

আপিল

১৭। (১) কোনো ব্যক্তি ধারা ১৫ বা ১৬ এ প্রদত্ত আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ হইলে তিনি উক্ত আদেশ প্রদানের তারিখ হইতে পরবর্তী ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে কাউন্সিলের নিকট আপিল করিতে পারিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন দায়েরকৃত আপিল শুনানির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে কাউন্সিল উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিবে এবং উক্ত বিষয়ে কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

মহাপরিচালক

১৮। (১) কাউন্সিলের একজন মহাপরিচালক থাকিবেন।

(২) মহাপরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।

(৩) মহাপরিচালকের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মহাপরিচালক তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্য পদে নূতন কোনো মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মচারী মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করিবেন।

(৪) মহাপরিচালক কাউন্সিলের সার্বক্ষণিক নির্বাহী হইবেন এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল কর্তৃক নির্দেশিত কার্যাবলি সম্পাদন, ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবেন।

কর্মচারী নিয়োগ

১৯। কাউন্সিল উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো সাপেক্ষে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবেন এবং তাহাদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

ক্ষমতা অর্পণ

২০। কাউন্সিল, লিখিত আদেশ দ্বারা, এই আইন বা বিধি বা প্রবিধানের অধীন উহার যে কোনো ক্ষমতা বা, সরকারি আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ সম্পর্কিত বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক, উহার আর্থিক ক্ষমতা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, সদস্য, মহাপরিচালক, কোনো কর্মচারী বা কোনো কমিটিকে অর্পণ করিতে পারিবে।

কাউন্সিলের তহবিল

২১। (১) কাউন্সিলের একটি তহবিল থাকিবে যাহা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) তহবিল নামে অভিহিত হইবে এবং তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথা:—

(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান, সাহায্য ও মঞ্জুরি;

(খ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কাউন্সিল কর্তৃক গৃহীত ঋণ;

(গ) কাউন্সিলের নিজস্ব আয়;

(ঘ) কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;

(ঙ) কোনো বিদেশি সরকার, সংস্থা বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা হইতে প্রাপ্ত অনুদান; এবং

(চ) অন্য কোনো উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।

(২) তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা রাখিতে হইবে এবং হিসাবটি সরকারি বিধি মোতাবেক পরিচালিত হইবে।

ব্যাখ্যা: এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, তপশিলি ব্যাংক অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President’s Order No. 127 of 1972) এর Article 2(j) তে সংজ্ঞায়িত Scheduled Bank।

(৩) সরকারের নিয়মনীতি ও বিধি-বিধান অনুসরণক্রমে তহবিল হইতে কাউন্সিলের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিতে হইবে।

(৪) তহবিলের ব্যাংক হিসাব সরকার কর্তৃক অনুমোদিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হইবে।

(৫) কাউন্সিলের তহবিল বা উহার অংশবিশেষ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করা যাইবে।

বাজেট

২২। (১) কাউন্সিল প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, পরবর্তী অর্থ বৎসরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ বৎসরে সরকারের নিকট হইতে কাউন্সিলের যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে।

(২) প্রতি অর্থ বৎসর সমাপ্ত হইবার অব্যবহিত পর রাজস্ব বাজেট হইতে প্রাপ্ত অর্থের অব্যয়িত অর্থ সরকারের নির্দেশ অনুসারে সরকারের কোষাগারে জমা থাকিবে।

হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা

২৩। (১) কাউন্সিল উহার আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব রক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবেন।

(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বলিয়া অভিহিত, প্রত্যেক বৎসর কাউন্সিলের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং এতদসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনের বিধান মোতাবেক নিরীক্ষা রিপোর্ট দাখিল করিবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষা ছাড়াও Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (President’s Order No. 2 of 1973) এর Article 2(1)(b) তে সংজ্ঞায়িত chartered accountant দ্বারা কাউন্সিলের হিসাব নিরীক্ষা করা যাইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে কাউন্সিল এক বা একাধিক chartered accountant নিয়োগ করিতে পারিবে।

(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন নিয়োগকৃত chartered accountant এতদুদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে পারিতোষিক প্রাপ্য হইবেন।

(৫) উপ-ধারা (২) ও (৩) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি অথবা, ক্ষেত্রমত, chartered accountant কাউন্সিলের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভান্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং কাউন্সিলের কোনো কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারবেন।

বাৎসরিক প্রতিবেদন

২৪। (১) মহাপরিচালক প্রতি অর্থ বৎসর সমাপ্ত হইবার পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে উক্ত অর্থ বৎসরে সম্পাদিত কার্যাবলির বিবরণ সংবলিত একটি বার্ষিক প্রতিবেদন কাউন্সিলের মাধ্যমে সরকারের নিকট পেশ করিবে।

(২) সরকার প্রয়োজনে, মহাপরিচালকের নিকট হইতে উহার যে কোনো বিষয়ের উপর প্রতিবেদন বা বিবরণী তলব করিতে পারিবে এবং মহাপরিচালক কাউন্সিলের মাধ্যমে উহা সরকারের নিকট সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।

ঋণ গ্রহণ

২৫। কাউন্সিল, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, প্রয়োজনে, ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবে এবং উক্ত ঋণ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকিবে।

চুক্তি

২৬। কাউন্সিল উহার কার্যাবলি সম্পাদনের প্রয়োজনে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কোনো দেশি, বিদেশি বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সহিত চুক্তি সম্পাদন করিতে পারিবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

২৭। সরকার এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, আইনের সহিত সংগতিপূর্ণ বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

২৮। কাউন্সিল, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে এবং সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধির সহিত সংগতিপূর্ণ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

বিশেষ বিধান

২৯। সরকার, কাউন্সিলের যে কোনো রেকর্ড, নথি এবং অন্যান্য দলিলাদি তলব ও অবলোকন করিতে পারিবে এবং কাউন্সিলের কার্যাবলি সম্পাদন, পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করিতে পারিবে।

অসুবিধা দূরীকরণ

৩০। এই আইনের কোনো বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দেখা দিলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলির সহিত সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা বা অসুবিধা দূর করিতে পারিবে।

রহিতকরণ ও হেফাজত

৩১। (১) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ (২০০২ সনের ৮ নং আইন) অতঃপর উক্ত আইন বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিত হওয়া সত্ত্বেও, উক্ত আইনের অধীন-

(ক) কৃত কোনো কার্য ও গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) গৃহীত কোনো কার্য বা ব্যবস্থা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পন্ন করিতে হইবে বা চলমান থাকিবে যেন উক্ত আইন রহিত হয় নাই;

(গ) প্রতিষ্ঠিত কাউন্সিলের-

(অ) তহবিল, সকল সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, ফি, স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ এবং এতৎসংশ্লিষ্ট সকল হিসাব বই, রেজিস্টার, রেকর্ডপত্রসহ অন্যান্য দলিল দস্তাবেজ, প্রকল্প এবং অন্য সকল প্রকার দাবি কাউন্সিলের তহবিল, সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, ফি, সম্পত্তি, অর্থ, রেজিস্টার, দলিল দস্তাবেজ, প্রকল্প এবং দাবি হিসাবে গণ্য হইবে;

(আ) সকল ঋণ ও দায়-দায়িত্ব এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা এই আইনের বিধান অনুযায়ী সেই একই শর্তে কাউন্সিলের ঋণ, দায় ও আইনগত বাধ্যবাধকতা হিসাবে গণ্য হইবে;

(ই) চুক্তি, দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট এই আইনের কোনো বিধানের সহিত অসংগতিপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এ আইনের অধীন সম্পাদিত হইয়াছে;

(ঈ) বিরুদ্ধে বা তৎকর্তৃক দায়েরকৃত কোনো মামলা বা আইনগত কার্যধারা কাউন্সিলের বিরুদ্ধে বা কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঘ) নিবন্ধিত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সংগঠন এই আইনের অধীন নিবন্ধিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঙ) প্রণীত সকল বিধিমালা, প্রবিধানমালা, জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ ও নীতিমালা, যদি থাকে, এই আইনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অধীন নূতনভাবে প্রণীত বা জারি না হওয়া পর্যন্ত বা, ক্ষেত্রমত, বিলুপ্ত না করা পর্যন্ত, প্রয়োজনীয় অভিযোজনসহ, পূর্বের ন্যায় এমনভাবে চলমান, অব্যাহত ও কার্যকর থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রণীত, জারিকৃত ও প্রদত্ত হইয়াছে;

(চ) কাউন্সিল, কারিগরি কমিটি অথবা অন্য কোনো কমিটি, যদি থাকে, উহার কার্যক্রম, বিদ্যমান মেয়াদ অবসানের পূর্বে বিলুপ্ত করা না হইলে, এমনভাবে অব্যাহত থাকিবে যেন উক্ত কাউন্সিল, কারিগরি কমিটি বা কমিটি এই আইনের অধীন গঠিত হইয়াছে; এবং

(ছ) মহাপরিচালক ও কর্মচারী এই আইন প্রবর্তনের পূর্বে যে শর্তাধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, তাহারা এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, সেই একই শর্তে কাউন্সিলের চাকরিতে নিয়োজিত এবং ক্ষেত্রমত, বহাল থাকিবেন এবং পূর্বের নিয়মে বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য হইবেন।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

৩২। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।

(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs