প্রিন্ট ভিউ

চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ আইন, ২০২৩

( ২০২৩ সনের ০৭ নং আইন )

Chittagong Shahi Jame Masjid Ordinance, 1986 রহিতক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন

যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সনের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক আদেশ দ্বারা জারীকৃত অধ্যাদেশসমূহের, অতঃপর উক্ত অধ্যাদেশ বলিয়া উল্লিখিত, অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তপশিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইয়াছে এবং সিভিল আপিল নং ৪৮/২০১১ এ সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা লোপ পাইয়াছে; এবং

যেহেতু ২০১৩ সনের ৭ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হইয়াছে; এবং

যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নূতন আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং

যেহেতু সরকারের উপরি-বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে, Chittagong Shahi Jame Masjid Ordinance, 1986 (Ordinance No. II of 1986) রহিতক্রমে সময়ের চাহিদার প্রতিফলনে একটি নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১।   (১) এই আইন চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ আইন, ২০২৩ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

২।  বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে-

(ক) ‘অধ্যাদেশ' অর্থ Chittagong Shahi Jame Masjid Ordinance, 1986 (Ordinance No. II of 1986);

(খ) ‘তপশিল’ অর্থ এই আইনের তপশিল;

(গ) ‘প্রবিধান’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত কোনো প্রবিধান;

(ঘ) ‘ফাউন্ডেশন’ অর্থ Islamic Foundation Act, 1975 (Act No. XVII of 1975) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন;

(ঙ) ‘বিধি” অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত কোনো বিধি;

(চ) ‘মসজিদ’ অর্থ চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ।

মসজিদের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ

৩।  (১) ফাউন্ডেশন মসজিদের ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারের পক্ষে পরিচালনা করিবে।

(২) ফাউন্ডেশন বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে, মসজিদের জন্য বা উহার পক্ষে সম্পত্তি অর্জন, ধারণ বা হস্তান্তর করিতে পারিবে।

(৩) চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ তহবিল নামে মসজিদের একটি তহবিল থাকিবে এবং উক্ত তহবিলে সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান, দান বা মসজিদের সম্পত্তি হইতে প্রাপ্ত আয় জমা থাকিবে।

(৪) ফাউন্ডেশন প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তহবিল পরিচালনা করিবে; তবে প্রবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশন, আদেশ দ্বারা, উক্ত তহবিল পরিচালনা করিতে পারিবে।

(৫) ফাউন্ডেশন, মসজিদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো সাপেক্ষে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে।

(৬) তহবিলের অর্থ, ফাউন্ডেশনের অনুমোদনক্রমে, কোনো তপশিলি ব্যাংকে জমা রাখিতে হইবে এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ফাউন্ডেশন কর্তৃক উক্ত তহবিল হইতে অর্থ উত্তোলন করা যাইবে।

ব্যাখ্যা।-“তপশিলি ব্যাংক” বলিতে Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No. 127 of 1972) এর Article 2(j) তে সংজ্ঞায়িত Scheduled Bank কে বুঝাইবে।

(৭) ফাউণ্ডেশন মসজিদের ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যে তহবিলের অর্থ ব্যয় করিতে পারিবে।

মসজিদের সম্পত্তির আইনি সুরক্ষা

৪।  আদালতের কোনো রায়, ডিক্রি, আদেশ অথবা ঘোষণায় যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন সরকার, কোনো কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তা কর্তৃক তপশিলে বর্ণিত স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ এবং এতদুদ্দেশ্যে জারীকৃত সকল নোটিশ, বিজ্ঞপ্তি, আদেশ বা নিষ্পন্ন কার্য বৈধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে মামলা দায়ের করা যাইবে না।

হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা

৫। (১) ফাউন্ডেশন মসজিদের সকল আয়-ব্যয় সংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র হিসাব সংরক্ষণ এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।

(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক হিসাবে অভিহিত, প্রতি বৎসর মসজিদের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং বিদ্যমান আইনের বিধান মোতাবেক নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করিবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষা ছাড়াও ফাউন্ডেশন প্রত্যেক বৎসর Bangladesh Chartered Accountants Order, 1973 (P.O. No. 2 of 1973) এর Article 2 (1) (b) তে সংজ্ঞায়িত Chartered Accountant দ্বারা মসজিদের হিসাব নিরীক্ষা করিতে পারিবে এবং এতদুদ্দেশ্যে ফাউন্ডেশন এক বা একাধিক Chartered Accountant নিয়োগ করিতে পারিবে ।

(৪) হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক বা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি বা উপ-ধারা (৩) এর অধীন নিয়োগকৃত Chartered Accountant মসজিদের সকল রেকর্ড, দলিল দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং ফাউন্ডেশনের বা মসজিদের কোনো কর্মচারীর জবানবন্দী গ্রহণ করিতে পারিবেন।

অপরাধ ও দন্ড

৬।   (১) কোনো ব্যক্তি তপশিলে বর্ণিত কোনো সম্পত্তি বেআইনিভাবে দখল করিলে বা দখলের উদ্যোগ গ্রহণ করিলে অথবা তাহার দখল, জিম্মা বা নিয়ন্ত্রণাধীন অনুরূপ কোনো সম্পত্তি ফাউন্ডেশনের নিকট যথাযথভাবে হস্তান্তর না করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

(২) সরকার উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তির দখলে থাকা মসজিদের কোনো সম্পত্তি আইনগত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক দখল মুক্ত করিয়া ফাউন্ডেশনের নিকট হস্তান্তর করিতে পারিবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ

৭।   এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল, ইত্যাদির ক্ষেত্রে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।

ক্ষমতা অর্পণ

৮।  ফাউন্ডেশন, আদেশ দ্বারা, উহার কোনো ক্ষমতা ফাউন্ডেশন বা মসজিদের কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

৯।  এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

১০।  এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ফাউন্ডেশন, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূৰ্ণ নহে, এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

তপশিল সংশোধন

১১।  সরকার, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা তপশিল সংশোধন করিতে পারিবে।

রহিতকরণ এবং হেফাজত

১২।  (১) এই আইন কার্যকর হইবার সঙ্গে সঙ্গে Chittagong Shahi Jame Masjid Ordinance, 1986 (Ordinance No. II of 1986), অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, রহিত হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত Ordinance এর অধীন-

(ক) মসজিদের উদ্দেশ্যে অধিগ্রহণকৃত এবং ফাউন্ডেশনে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত তপশিলে বর্ণিত ভূমি এবং উহার উপরিস্থিত সকল প্রকার ইমারত, কাঠামো ও স্থাপনা মসজিদের সম্পত্তি বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) ফাউন্ডেশনের অনুকূলে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত সকল অস্থাবর সম্পত্তি, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, প্রাধিকার এবং সকল দান, অনুদান, নগদ অর্থ ও ব্যাংক-স্থিতি, সকল বিনিয়োগ এবং এইরূপ সম্পত্তি হইতে উদ্ভূত সকল অধিকার ও আয় মসজিদের বলিয়া গণ্য হইবে;

(গ) কৃত কোনো কার্য, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বা সূচিত কোনো কার্যধারা বৈধভাবে কৃত, গৃহীত বা সূচিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঘ) সৃষ্ট ঋণ, দায়, মসজিদের সহিত সম্পাদিত চুক্তি এই আইনের অধীন ফাউন্ডেশনের ঋণ, দায়, চুক্তি বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঙ) ফাউন্ডেশন কর্তৃক বা উহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো মামলা বা গৃহীত কোনো কার্য বা ব্যবস্থা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা উক্ত Ordinance এর অধীন এইরূপভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে যেন উহা রহিত করা হয় নাই;

(চ) প্রণীত কোনো বিধি বা প্রবিধান, যদি থাকে, প্রদত্ত কোনো মঞ্জুরি, জারিকৃত কোনো প্রজ্ঞাপন, প্রদত্ত কোনো আদেশ, নির্দেশ বা অনুমোদন এবং রক্ষিত কোনো হিসাব উপ-ধারা (১) এর অধীন রহিতের অব্যবহিত পূর্বে বলবৎ থাকিলে, এই আইনের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়া সাপেক্ষে, এই আইনের অনুরূপ বিধানের অধীন প্রণীত, প্রদত্ত, জারিকৃত, অনুমোদিত ও রক্ষিত বলিয়া গণ্য হইবে এবং এই আইনের অধীন রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকিবে;

(ছ) ফাউন্ডেশনে ন্যস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারী এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিতপূর্বে যে শর্তাধীনে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন সেই একই শর্তে চাকরিতে নিয়োজিত থাকিবেন।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs