প্রিন্ট ভিউ

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩

( ২০২৩ সনের ৪০ নং আইন )

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ রহিতপূর্বক উহা সময়োপযোগী করিয়া নূতন আইন প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন

যেহেতু জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৩নং আইন) রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল:-

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১।  (১) এই আইন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩ নামে অভিহিত হইবে।

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে তারিখ নির্ধারণ করিবে সেই তারিখে এই আইন কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-

(১) “জাতীয় পরিচয়পত্র” অর্থ নিবন্ধক কর্তৃক কোনো নাগরিক বরাবর প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্র;

(২) “জাতীয় পরিচিতি নম্বর [National Identification Number (NID)]” অর্থ জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধক কর্তৃক প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর;

(৩) “তথ্য-উপাত্ত” অর্থ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে কোনো নাগরিকের নিকট হইতে সংগৃহীত এক বা একাধিক তথ্য-উপাত্ত এবং উক্ত নাগরিকের বায়োমেট্রিকস ফিচারও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(৪) “নাগরিক” অর্থ প্রচলিত আইনের অধীন বাংলাদেশের কোনো নাগরিক;

(৫) “নির্ধারিত” অর্থ বিধি দ্বারা নির্ধারিত;

(৬) “নিবন্ধক” অর্থ ধারা ৬ এ উল্লিখিত নিবন্ধক;

(৭) “নিবন্ধন” অর্থ এই আইনের অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন;

(৮) “নির্বাচন কমিশন” অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত নির্বাচন কমিশন;

(৯) “বায়োমেট্রিকস ফিচার (Biometrics feature)” অর্থ কোনো নাগরিকের নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য, যথা:-

(ক) আঙুলের ছাপ (Finger Print),

(খ) হাতের ছাপ (Hand Geometry),

(গ) তালুর ছাপ (Palm Print),

(ঘ) চক্ষুর কনীনিকা (Iris),

(ঙ) মুখাবয়ব (Facial Recognition),

(চ) ডিএনএ (Deoxyribonucleic acid),

(ছ) স্বাক্ষর (Signature),

(জ) কণ্ঠস্বর (Voice), এবং

(ঝ) সরকার কর্তৃক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সময় সময়, নির্ধারিত অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য;

(১০) “বিধি” অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি; এবং

(১১) “ব্যক্তি” অর্থে কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি, সমিতি, অংশীদারি কারবার, সংবিধিবদ্ধ বা অন্যবিধ সংস্থা বা উহাদের প্রতিনিধিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

পরিচয় নিবন্ধন, ইত্যাদি

পরিচয় নিবন্ধন, ইত্যাদি

৩। (১) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির জন্য প্রত্যেক নাগরিককে পরিচয় নিবন্ধন করিতে হইবে।

(২) পরিচয় নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের নিকট আবেদন করিতে হইবে।

(৩) এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সাধারণভাবে কোনো নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্দেশ্যে তাহার স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাসরত ঠিকানায় নিবন্ধন করা হইবে এবং উক্ত ঠিকানা অনুযায়ী জাতীয় পরিচিতি নম্বর প্রদান করিতে হইবে।

জাতীয় পরিচিতি নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্টার, ইত্যাদি

৪। (১) একজন নাগরিককে নিবন্ধক কর্তৃক কেবল একটি জাতীয় পরিচিতি নম্বর প্রদান করা যাইবে, যাহা উক্ত নাগরিকের একক পরিচিতি নম্বর (Unique Identification Number) হিসাবে সর্বত্র ব্যবহৃত হইবে।

(২) উপধারা (১) এর অধীন প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ভিত্তিতে একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হইবে।

(৩) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্টার থাকিবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাইবার অধিকার, ইত্যাদি

৫।  প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাইবার অধিকারী হইবেন।

নিবন্ধক, ইত্যাদি

৬।  (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন নিবন্ধক থাকিবে।

(২) নিবন্ধক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবে এবং তাহার চাকুরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হইবে।

(৩) নিবন্ধকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।

কর্মচারী নিয়োগ

৭।  (১) সরকার নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য, তৎকর্তৃক অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে।

(২) কর্মচারীগণের নিয়োগ এবং চাকুরির শর্তাবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা

৮।  নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সকল দায়িত্ব পালন করিবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন

৯। কোনো নাগরিকের অনুকূলে যে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হইয়াছে-

(ক) উক্ত তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হইলে নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্তৃক উহা সংশোধন করা যাইবে; অথবা

(খ) উক্ত তথ্য-উপাত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না হইলে উক্ত নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে নিবন্ধক কর্তৃক, কোনো প্রকার ফি প্রদান ব্যতিরেকে, উহা সংশোধন করা যাইবে।

নূতন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান

১০।  (১) কোনো নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র হারাইয়া গেলে বা অন্যভাবে নষ্ট হইয়া গেলে তিনি নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে নূতন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করিতে পারিবেন।

(২) উপধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর নিবন্ধক উক্ত নাগরিক বরাবরে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও সময়ে নূতন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করিবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল

১১। কোনো নাগরিকের নাগরিকত্বের অবসান হইলে তাহার জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বর অন্য কোনো নাগরিকের অনুকূলে প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহার করা যাইবে না।

কতিপয় সেবা গ্রহণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন

১২।  (১) সরকার, সরকারী গেজেটে এবং তদাতিরিক্ত ঐচ্ছিকভাবে ইলেকট্রনিক গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উহাতে উল্লিখিত যে কোনো সেবা বা নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, নাগরিকগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও উহার অনুলিপি দাখিলের ব্যবস্থা চালু করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশের সমগ্র এলাকায় সাধারণভাবে নাগরিকগণের অনুকূলে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এইরূপ প্রজ্ঞাপন জারি বা ব্যবস্থা চালু করা যাইবে না।

(২) উপধারা (১) এর অধীন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন, বা, ক্ষেত্রমত, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি দাখিল করিবার জন্য কোনো নাগরিককে বাধ্য করা যাইবে না এবং জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকিবার কারণে কোনো নাগরিককে নাগরিক সুবিধা বা সেবা পাইবার অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।

নিবন্ধককে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা প্রদান

১৩।  এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিবন্ধকের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা উহাদের নিকট সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত, ইত্যাদি নিবন্ধককে প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে এবং নিবন্ধকের দায়িত্ব পালনে নিবন্ধককে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করিবে।

তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ, গোপনীয়তা, সরবরাহ, ইত্যাদি

১৪।  (১) নিবন্ধক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করিবে।

(২) নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত গোপনীয় বলিয়া বিবেচিত হইবে।

(৩) উপধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত পাইবার জন্য আবেদন করিতে পারিবে এবং নিবন্ধক উক্তরূপ চাহিত তথ্য-উপাত্ত, ভিন্নরূপ বিবেচিত না হইলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করিবে।

নির্বাচন কমিশনের চাহিদামতে তথ্য প্রদান

১৫।  (১) নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক নিবন্ধক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রদান করিবে।

(২) উপধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিবন্ধকের কার্যালয় এর অধীন একটি সেল থাকিবে।

(৩) উক্ত সেলে নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী দায়িত্ব পালন করিবে।

তথ্য যাচাই

১৬।  কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পদ্ধতি ও সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে তথ্য-উপাত্তে সংরক্ষিত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করিবার জন্য নিবন্ধকের নিকট আবেদন করিতে পারিবে।

তৃতীয় অধ্যায়

সমন্বয় কমিটি

সমন্বয় কমিটি

১৭।  (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিবন্ধন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা, সমন্বয় ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি থাকিবে এবং উহা নিম্নরূপ সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা:-

(ক) সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, যিনি উহার সভাপতিও হইবেন;

(খ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(গ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন পরিচালক পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঘ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঙ) অর্থ বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(চ) স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ছ) তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(জ) সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঝ) জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঞ) সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ট) ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঠ) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি ;

(ড) সুরক্ষা সেবা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি; এবং

(ঢ) নিবন্ধক, যিনি উহার সদস্য-সচিবও হইবেন।

(২) সমন্বয় কমিটি, প্রয়োজনবোধে, যে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিকে কমিটির সদস্য হিসাবে কো-অপ্ট করিতে পারিবে বা সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাইতে পারিবে।

চতুর্থ অধ্যায়

অপরাধ ও দণ্ড

মিথ্যা তথ্য প্রদানের জন্য দণ্ড

১৮। কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিবৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিবার দণ্ড

১৯।  কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করিবার দণ্ড

২০। (১) নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লিখিত কোনো তথ্য বিকৃত অথবা বিনষ্ট করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৪০ (চল্লিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

তথ্য-উপাত্তে অননুমোদিত প্রবেশ বা উহাদের বেআইনি ব্যবহারের দণ্ড

২১।  কোনো ব্যক্তি তথ্য উপাত্তে অননুমোদিতভাবে প্রবেশ করিলে বা বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

তথ্য-উপাত্তের অননুমোদিত প্রকাশ

২২। নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী বা উহার প্রতিনিধি অননুমোদিতভাবে তথ্য-উপাত্ত কোনো ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করিবার দণ্ড

২৩। (১) কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করিলে বা জ্ঞাতসারে উক্তরূপ পরিচয়পত্র বহন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করিবার কাজে সহায়তা বা উক্তরূপ পরিচয়পত্র বহনে প্ররোচনা প্রদান করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

অন্য কোনো নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ধারণ কিংবা বহন করিবার দণ্ড

২৪।  কোনো ব্যক্তি কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত অন্য কোনো নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ধারণ বা বহন করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

দায়িত্বে অবহেলার দণ্ড

২৫।  (১) নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি, যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিরেকে, দায়িত্বে অবহেলা করিলে উহা তাহার অদক্ষতা ও অসদাচরণ বলিয়া গণ্য হইবে।

(২) উপধারা (১) এর অধীন কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অদক্ষতা ও অসদাচরণ প্রমাণিত হইলে, তাহার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার জন্য প্রচলিত বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে।

Act No. V of 1898 এর প্রয়োগ

২৬। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।

অপরাধের আমলযোগ্যতা, অ-আপোষযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা

২৭।  (১) এই আইনের অধীন সংঘটিত সকল অপরাধ আমলযোগ্য (cognizable) ও অ-আপোষযোগ্য (non-compoundable) হইবে।

(২) এই আইনের ধারা ১৮, ১৯, ২০ এর উপধারা (২) এবং ধারা ২৪ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ জামিনযোগ্য (bailable) হইবে এবং ধারা ২০ এর উপধারা (১), ধারা ২১, ২২ এবং ধারা ২৩ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ অ-জামিনযোগ্য (non-bailable) হইবে।

পঞ্চম অধ্যায়

বিবিধ

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

২৮।  (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

(২) উপধারা (১) এর অধীন বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত ও নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে সরকার এই আইনের উদ্দেশ্যের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে কোনো সাধারণ বা বিশেষ আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

২৯।  (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।

(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।

রহিতকরণ ও হেফাজত

৩০। (১) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৩ নং আইন), অতঃপর উক্ত আইন বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।

(২) উপধারা (১) এর অধীন উক্তরূপ রহিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিকট রক্ষিত এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংগৃহীত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্তের কপি এবং সম্পদ ও দায় দেনা ইত্যাদি নিবন্ধকের নিকট হস্তান্তরিত হইবে।

(৩) উপধারা (১) এর অধীন উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত আইনের অধীন-

(ক) প্রদত্ত আদেশ, কৃত কাজকর্ম, গৃহীত ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত, নাগরিক বরাবর প্রদত্ত ও বিতরণকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র, ইত্যাদি এই আইনের অধীনে প্রদত্ত, কৃত, গৃহীত, সংগৃহীত ও বিতরণকৃত বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) এই আইনের যাহা কিছু উল্লেখ থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন নিযুক্ত নিবন্ধক ও নিবন্ধকের কার্যালয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে শুরু না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করিতে পারিবে; এবং

(গ) গৃহীত কার্যধারা, দায়েরকৃত কোনো মামলা অনিষ্পন্ন বা চলমান থাকিলে উহা এমনভাবে নিষ্পত্তি করিতে হইবে যেন উক্ত আইন রহিত হয় নাই।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs