প্রিন্ট ভিউ
সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার গতিবিধির সহিত সংগতি রাখিয়া অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকল্পে প্রণীত আইন
যেহেতু সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার গতিবিধির সহিত সংগতি রাখিয়া অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকল্পে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হইল:—
১। (১) এই আইন অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় অথবা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে,—
(১) "অনিবাসী” অর্থ বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি নহেন এইরূপ কোনো ব্যক্তি;
(২) 'অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রা" অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No. 127 of 1972) এর Article 18 এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত কোনো বৈদেশিক মুদ্রা;
(৩) "অর্থনৈতিক অঞ্চল" অর্থ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৪২ নং আইন) এর ধারা ৫ এর অধীন ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চল;
(৪) "অফশোর ব্যাংকিং" অর্থ বহিঃউৎস এবং অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত উৎস হইতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত তহবিল দ্বারা এই আইনে বর্ণিত শর্তাধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী অনিবাসী বা, ক্ষেত্রমত, বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তির সহিত পরিচালিত ব্যাংকিং কার্যক্রম;
(৫) "অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট" অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এই আইনের অধীন ইস্যুকৃত লাইসেন্সের অধীনে বিশেষ শর্তাধীনে পরিচালিত কোনো তফসিলি ব্যাংকের একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক ইউনিট, শাখা, বুথ বা ডেস্ক;
(৬) "অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট” অর্থ কোনো তফসিলি ব্যাংকের ব্যবসায়িক ইউনিট যাহা অফশোর ব্যাংকিং ব্যতিরেকে অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে;
(৭) "তফসিলি ব্যাংক” অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No.127 of 1972) এর Article 2 এর clause (j)-এ সংজ্ঞায়িত Scheduled Bank;
(৮) "বিশেষায়িত অঞ্চল" অর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, হাইটেক পার্ক বা সরকার কর্তৃক, সময় সময়, ঘোষিত কোনো অঞ্চল;
(৯) "বহিঃউৎস" অর্থ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এবং ভৌগলিক সীমার বাহিরের যে সকল উৎস বাংলাদেশি উৎস হিসাবে গণ্য হইবে সেই সকল উৎস ব্যতিরেকে অন্যান্য সকল উৎস;
(১০) "বহিঃলেনদেন" অর্থ অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট কর্তৃক বৈদেশিক মুদ্রায় সম্পাদিত লেনদেন;
(১১) "বাংলাদেশে নিবাসী ব্যক্তি" অর্থ Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (Act No. VII of 1947) এর section 2 এর clause (hhh) এ সংজ্ঞায়িত নিবাসী ব্যক্তি:
(১২) "বাংলাদেশ ব্যাংক" অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No.127 of 1972) এর Article 2 এর clause (c)-এ সংজ্ঞায়িত বাংলাদেশ ব্যাংক;
(১৩) "বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল" অর্থ বাংলাদেশ বেসরকারী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল আইন, ১৯৯৬ (১৯৯৬ সনের ২০ নং আইন) এর ধারা ১১ এর অধীন রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষিত কোনো অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহ;
(১৪) "বৈদেশিক মুদ্রা" অর্থ Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (Act No. VII of 1947) এর section 2 এর clause (d)-এ সংজ্ঞায়িত বৈদেশিক মুদ্রা;
(১৫) "ব্যক্তি” অর্থ Foreign Exchange Regulation Act, 1947 (Act No. VII of 1947) এর section 2 এর clause (hh)-এ সংজ্ঞায়িত ব্যক্তি;
(১৬) "ব্যাংক" অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪ নং আইন) এর ধারা ৫ এর দফা (ণ) এ সংজ্ঞায়িত কোনো ব্যাংক-কোম্পানি;
(১৭) "ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি" অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪ নং আইন) এর ধারা ২৬গ অনুযায়ী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি;
(১৮) "রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল" অর্থ সরকার কর্তৃক Bangladesh Export Processing Zones Authority Act, 1980 (Act No. XXXVI of 1980) এর section 10 এর অধীন ঘোষিত অঞ্চল বা অঞ্চলসমূহ:
(১৯) "লাইসেন্স" অর্থ ধারা ৪ এর অধীন অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রদত্ত লাইসেন্স;
(২০) "হাই-টেক পার্ক" অর্থ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৮ নং আইন) এর ধারা ২ এর দফা (৬) অনুসারে বাংলাদেশে আইটি খাতের উন্নয়নকল্পে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারিত অঞ্চল; এবং
(২১) "সহায়তাকারী” অর্থ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর পক্ষে ও তাহার নির্দেশনা অনুযায়ী অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট ও অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে হিসাব পরিচালনাকারী।
৩। বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংক ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তি অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত হইবে না।
৪। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত হইবার লক্ষ্যে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের লাইসেন্সের জন্য আগ্রহী তফসিলি ব্যাংক আবেদন করিতে পারিবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স ইস্যুর পূর্বে আবেদনকারী তফসিলি ব্যাংকের নির্দিষ্ট কিংবা সামগ্রিক কার্যক্রম এবং অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা যাচাই করিবে।
(৩) প্রতিটি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট স্থাপনের জন্য তফসিলি ব্যাংক পৃথকভাবে লাইসেন্সের আবেদন করিবে।
(৪) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানের তফসিলি ব্যাংক শাখায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট স্থাপন করা যাইবে।
(৫) অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী তফসিলি ব্যাংকের বাংলাদেশের বাহিরের কোনো ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহিত করেসপন্ডেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্ক থাকিতে হইবে।
৫। (১) লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ হইতে ৬ (ছয়) মাস অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহার কার্যক্রম আরম্ভ করিবে, অন্যথায় উহার লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক উহার অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের কার্যক্রম আরম্ভ করিবার ৭ (সাত) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করিবে।
৬। বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট পরিচালনার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত কোনো ব্যাংক ব্যতিরেকে অন্য কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান উহার নামের অংশ হিসাবে এইরূপ কোনো শব্দ ব্যবহার করিবে না যাহাতে উহাকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট হিসাবে মনে করিবার অবকাশ থাকে।
৭। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত কোনো কারণে কোনো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটকে প্রদত্ত লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে, যথা:-
(ক) লাইসেন্সে উল্লিখিত শর্ত বা এই আইনে বা আপাতত বলবৎ কোনো আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে বা উহার কৃত কোনো অপরাধ প্রমাণিত হইলে;
(খ) জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কার্য সম্পাদন করা হইলে;
(গ) উহার কোনো কর্মকর্তা অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি দ্বারা দাখিলকৃত তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট মিথ্যা প্রমাণিত হইলে; এবং
(ঘ) ধারা ১১ এর অধীন প্রদত্ত কোনো গ্যারান্টি পরিপালন না করিলে।
(২) এই ধারার অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংককে অবহিতকরণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।
(৩) এই ধারার অধীন কোনো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে কোনো তফসিলি ব্যাংক সংক্ষুব্ধ হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত উহাকে অবহিত করিবার তারিখের ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে উক্ত তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিকট তাহা পুনর্বিবেচনার আবেদন করিতে পারিবে।
৮। (১) এই ধারার শর্তাবলি পরিপালন সাপেক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি গ্রহণপূর্বক, লাইসেন্সকৃত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট স্বেচ্ছায় উহার লাইসেন্স সমর্পণ করিতে পারিবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, লাইসেন্সকৃত অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম উহার সকল দায়ের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংস্থান রাখিয়াছে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক উহার লাইসেন্স সমর্পণ অনুমোদন করিবে এবং অতঃপর একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করিয়া সমর্পণ কার্যকর করিবে।
(৩) বন্ধ হইয়া যাওয়া অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের দায়-দেনা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক নিষ্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উহাকে নির্দেশনা প্রদান করিবে।
(৪) উপ-ধারা (২) এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স সমর্পণ অনুমোদন করিলে, অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উপ-ধারা (২) এর অধীন নির্ধারিত তারিখের কমপক্ষে ২১ (একুশ) দিন পূর্বে উহার লাইসেন্স সমর্পণের বিষয় বহুল প্রচারিত ন্যূনতম একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করিবে এবং একইসঙ্গে উক্ত বিজ্ঞাপন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করিতে হইবে।
৯। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রদত্ত লাইসেন্স, ধারা ৭ এর অধীন স্থগিত, বাতিল অথবা ধারা ৮ এর অধীন সমর্পণ কার্যকর হইবার পর উক্ত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের সকল কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ থাকিবে।
১০। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রদত্ত লাইসেন্স ধারা ৯ এর অধীন বাতিল বা সমর্পণ কার্যকর হইবার ২ (দুই) বছর পর ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনার লক্ষ্যে উক্ত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট লাইসেন্সের জন্য পুনঃআবেদনের যোগ্য হইবে।
১১। (১) রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কসমূহের শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ হইতে আমানত গ্রহণের পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহাদেরকে স্বল্প মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহিঃলেনদেন সেবা প্রদান করিতে পারিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়ন সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারীকৃত নির্দেশনা প্রযোজ্য হইবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতি পরিপালন সাপেক্ষে, ব্যাংক উহার অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতিরেকে অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করিতে পারিবে।
(৩) আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অনিবাসী ব্যক্তির অফশোর ব্যাংকিং অপারেশনের ক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) প্রযোজ্য হইবে এবং এতদ্ব্যতীত উহার নিকট হইতে আমানত গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৪) অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিকট হইতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৫) ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নিবাসী বাংলাদেশিকে ব্যাংক উহার অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে আমদানি এবং প্রত্যক্ষ (direct) ও প্রচ্ছন্ন (deemed) রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে ইউজেন্স বা ডেফারড রপ্তানি বিল ডিসকাউন্ট বা ক্রয় করিবার সুবিধা প্রদান করিতে পারিবে।
(৬) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত পদ্ধতি পরিপালন সাপেক্ষে তফসিলি ব্যাংক উহার অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিবাসী বাংলাদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে মধ্যম বা দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ মঞ্জুর করিতে পারিবে।
(৭) এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নির্দেশনা জারির মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিং এর আওতা হ্রাস-বৃদ্ধি করিতে পারিবে।
১২। (১) অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক পর্ষদের অনুমোদিত নীতিমালা থাকিতে হইবে।
(২) তফসিলি ব্যাংকের অফশোর কার্যক্রমের জন্য পৃথক হিসাবপত্র সংরক্ষণ করিতে হইবে যাহা আর্থিক এবং অন্যান্য কার্যক্রম যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হইবে।
(৩) অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা (Asset Liability Management) গাইডলাইনস প্রযোজ্য হইবে।
(৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদনে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিট হইতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর করা যাইবে।
(৫) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত সকল ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড সীমা তফসিলি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য হইবে।
(৬) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত সকল ধরনের প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি তফসিলি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায়ের জন্য প্রযোজ্য হইবে।
১৩। (১) নিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তি এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কসমূহ ও অন্যান্য অনুমোদিত বিশেষায়িত অঞ্চলে পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কোনো অনিবাসীর পক্ষে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব শিরোনামে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব পরিচালনা করিতে পারিবে এবং আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাবধারী রেমিট্যান্স প্রেরণকারী অনিবাসীর সহায়তাকারী হিসাবে বিবেচিত হইবে।
(২) অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট যে কোনো অনুমোদিত বৈদেশিক মুদ্রায় এই হিসাব পরিচালনা করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন খোলা হিসাবে শুধু ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের অর্থ জমা হইবে।
(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহার পরিচালিত হিসাবের বিপরীতে সুদ বা মুনাফা প্রদান করিবে।
(৫) আমানত হিসাবের স্থিতি নিম্নবর্ণিতরূপে ব্যবহার করা যাইবে, যথা:—
(ক) প্রয়োজনীয় পরিশোধ ও বিনিয়োগের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে স্থানান্তর; এবং
(খ) সুদ বা মুনাফাসহ স্থিতি প্রয়োজনে, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর অনুকূলে বিদেশে প্রেরণ।
১৪। (১) অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট নিম্নবর্ণিত কার্যক্রমে যুক্ত হইতে পারিবে না, যথা:—
(ক) ধারা ১১ এবং ধারা ১৩ এ নির্দেশিত লেনদেন ব্যতিরেকে, অন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফান্ডেড বা নন-ফান্ডেড ব্যাংকিং লেনদেনে জড়িত হওয়া;
(খ) অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নামে আমানতকারী দ্বারা উত্তোলিত চেক, ড্রাফট, পে-অর্ডার বা অন্য কোনো দলিলের বিপরীতে চাহিদার ভিত্তিতে পরিশোধযোগ্য আমানত বা ঋণ গ্রহণ; এবং
(গ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ বা বিশেষ অনুমোদন ব্যতিরেকে, অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটে তহবিল স্থানান্তর।
(২) ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট হইতে ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসৃত হইবে।
১৫। (১) অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট কর্তৃক আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাগণকে প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকিবে।
(২) আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাগণের হিসাব যে কোনো প্রকার শুল্ক ও লেভি মুক্ত হইবে।
(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করা হইবে।
১৬। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহার কার্যক্রম সংক্রান্ত নথিপত্র এইরূপে সংরক্ষণ করিবে যাহাতে এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, উহার সকল নথিপত্র এবং হিসাব বহি সহজে নিরীক্ষা ও পরিদর্শন করা যায়।
১৭। (১) তফসিলি ব্যাংকের নিয়োজিত নিরীক্ষক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটেরও নথিপত্র এবং হিসাব নিরীক্ষা করিবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত সময়ের মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহার আর্থিক বিবরণী বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবে।
(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক নিয়োজিত নিরীক্ষকের প্রদত্ত বার্ষিক বিবরণীকে অগ্রহণযোগ্য বলিয়া মনে করে, তাহা হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের খরচে অপর একজন নিরীক্ষক নিয়োগ করিতে পারিবে।
১৮। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট উহার কার্যক্রমের সকল বা নির্দিষ্ট তথ্য ও দলিল বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদার প্রেক্ষিতে নির্দেশিত সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবে।
১৯। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নিয়মিতভাবে এবং বিশেষভাবে উহার এক বা একাধিক কর্মকর্তা দ্বারা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের নথি, লেনদেন, দলিলপত্র, হিসাব বহি, উহার ব্যবসায় কেন্দ্র ও সম্পদ যেখানেই রাখা হউক না কেন তাহা, পরিদর্শন বা পরীক্ষা করিতে পারিবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তা কর্তৃক এই ধারার অধীন কোনো অফশোর ব্যাংক ইউনিট পরিদর্শনকালে পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্য, তৎকর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন বা উহার অংশবিশেষ বা কোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তি বা উহার আমানতকারীর আমানত সংক্রান্ত তথ্য, কোনো আদালত বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশিত না হইলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কাহারও নিকট প্রকাশ করিবে না।
২০। কোনো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট ধারা ১৭ এর উপ-ধারা (২) বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত ইউনিটকে অনধিক ২ (দুই) হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করিতে পারিবে এবং যদি উক্ত লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত অনধিক ১ (এক) শত মার্কিন ডলার জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে।
২১। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের কোনো পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রদান করিলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে।
২২। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের পরিচালক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা সহায়তাকারী এই ধারার অধীন প্রয়োজনীয় নথি, হিসাব, দলিল, সম্পদ বা তথ্য—
(ক) প্রস্তুত করিতে অস্বীকার করিলে, ব্যর্থ হইলে, অবহেলা করিলে, বাধা প্রদান করিলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করিলে; অথবা
(খ) ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করিলে;
বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে অনধিক ২ (দুই) হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করিতে পারিবে।
২৩। যদি কোনো ব্যক্তি, ধারা ২০, ধারা ২১ ও ধারা ২২ ব্যতিরেকে, এই আইনের অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করেন, বা তদধীন প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশ বা আরোপিত কোনো শর্ত বা প্রণীত কোনো বিধি লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত লঙ্ঘনের জন্য তাহার উপর অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে এবং যদি উক্ত লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘনের পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত অনধিক ১ (এক) শত মার্কিন ডলার জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে।
২৪। যদি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং উহার পরিচালক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা সহায়তাকারী ধারা ২০, ২১, ২২ ও ২৩ এর অধীন আরোপিত জরিমানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রদান করিতে ব্যর্থ হয়, তাহা হইলে উক্ত জরিমানার অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব হইতে কর্তন করা হইবে, এবং ব্যক্তির উপর আরোপিত জরিমানার ক্ষেত্রে ব্যাংক উক্ত ব্যক্তির নিকট হইতে জরিমানাকৃত অর্থ সমন্বয় করিবে।
২৫। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, জনস্বার্থে, বা অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারীর স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ প্রতিরোধ করিবার জন্য, সময় সময়, নির্দেশ জারি করিতে পারিবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, নির্দেশনা প্রদান, সার্কুলার জারি বা নীতিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবে।
২৬। এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
২৭। এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত সামঞ্জস্যপূরণ হওয়া সাপেক্ষে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
২৮। এই আইনের কোনো বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে, বাংলাদেশ ব্যাংক, এই আইনের বিধানাবলির সহিত সংগতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, উক্তরূপ অস্পষ্টতা দূরীকরণার্থে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করিতে পারিবে।
২৯। (১) এই আইন কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্যমান সকল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকিবে এবং এই আইনের অধীন উহাদের পুনরায় কোনো আবেদন দাখিলের প্রয়োজন হইবে না এবং অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্যমান সকল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এই আইনের আওতায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলিয়া গণ্য হইবে।
(২) অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা, সার্কুলার ও সার্কুলার পত্রসমূহ, এই আইনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, নূতনভাবে প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে।
৩০। (১) এই আইন প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের মূল বাংলা পাঠের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।
(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।