প্রিন্ট ভিউ
সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রণীত অধ্যাদেশ
যেহেতু সংবিধানে বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ স্বাধীন থাকিবেন মর্মে উল্লেখ করা হইয়াছে এবং উক্ত বিচারিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে স্বচ্ছ নিয়োগ-প্রক্রিয়া প্রবর্তন করা আবশ্যক; এবং
যেহেতু সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক সুপারিশ করিবার উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; এবং
যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;
সেহেতু সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৩ এর দফা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-
১। (১) এই অধ্যাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
২। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই অধ্যাদেশে
(ক) “আপীল বিভাগ” অর্থ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ;
(খ) “কাউন্সিল” অর্থ ধারা ৩ এর অধীন গঠিত সুপ্রীম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল;
(গ) “চেয়ারপার্সন” অর্থ কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন;
(ঘ) “প্রধান বিচারপতি” অর্থ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি; এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৭ অনুসারে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনকারী বিচারকও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবেন;
(ঙ) “ফরম” অর্থ এই অধ্যাদেশের ফরম;
(চ) “বিচার-কর্মবিভাগ” অর্থ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২ এর দফা (১) এ সংজ্ঞায়িত বিচার-কর্মবিভাগ;
(ছ) “সদস্য” অর্থ কাউন্সিলের সদস্য;
(জ) “সংবিধান” অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান;
(ঝ) “সুপ্রীম কোর্ট” অর্থ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট;
(ঞ) “সুপ্রীম কোর্টের বিচারক” বা “বিচারক” অর্থ আপীল বিভাগের বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এবং হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক;
(ট) “হাইকোর্ট বিভাগ” অর্থ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।
৩। (১) সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের নিমিত্ত রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে সহায়তা করিবার উদ্দেশ্যে, এই অধ্যাদেশ অনুসারে, উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইপূর্বক সুপারিশ করিবার জন্য একটি স্থায়ী কাউন্সিল থাকিবে এবং উহা সুপ্রীম জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল নামে অভিহিত হইবে।
(২) কাউন্সিল নিম্নবর্ণিত সদস্যগণের সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা:–
(ক) প্রধান বিচারপতি, যিনি ইহার চেয়ারপার্সনও হইবেন;
(খ) আপীল বিভাগে কর্মরত বিচারকগণের মধ্য হইতে কর্মে প্রবীণতম বিচারক;
(গ) হাইকোর্ট বিভাগে (বিচার কর্মবিভাগ হইতে নিযুক্ত ব্যতীত) কর্মরত বিচারকগণের মধ্য হইতে কর্মে প্রবীণতম বিচারক;
(ঘ) বিচার-কর্মবিভাগ হইতে নিযুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক;
(ঙ) উপ-ধারা (৩) অনুসারে চেয়ারপার্সন কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক;
(চ) বাংলাদেশের অ্যাটর্নি-জেনারেল (যিনি পদাধিকারবলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান);
(ছ) উপ-ধারা (৩) অনুসারে চেয়ারপার্সন কর্তৃক মনোনীত একজন আইনের অধ্যাপক বা আইন-বিশেষজ্ঞ।
ব্যাখ্যা।- এই উপ-ধারার দফা (ক), (খ), (গ), (ঘ) ও (চ) এ বর্ণিত পদে সাময়িকভাবে কার্যভার পালনরত ব্যক্তিও সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হইবেন; এবং যেইক্ষেত্রে আপীল বিভাগে কর্মরত বিচারকগণের মধ্য হইতে কর্মে প্রবীণতম বিচারক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৭ অনুসারে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত থাকিবেন, সেইক্ষেত্রে আপীল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম পরবর্তী বিচারক দফা (খ) এ বর্ণিত সদস্য হিসাবে গণ্য হইবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) এর দফা (ঙ) ও (ছ) এ উল্লিখিত কোনো সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে, চেয়ারপার্সন উপ-ধারা (২) এর দফা (খ), (গ) ও (ঘ) এ উল্লিখিত বিচারক-সদস্যগণের সহিত পরামর্শ করিবেন।
(৪) উপ-ধারা (২) এর দফা (ঙ) ও (ছ) এ উল্লিখিত সদস্যগণের মেয়াদ হইবে মনোনয়ন প্রদানের তারিখ হইতে ২ (দুই) বৎসর এবং উক্তরূপ কোনো সদস্যকে পরবর্তী অনধিক ২ (দুই) বৎসরের জন্য পুনরায় মনোনীত করা যাইবে।
৪। সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল পদাধিকারবলে কাউন্সিলের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন এবং তিনি ও তাহার দপ্তর কাউন্সিলের কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, রেজিস্ট্রার জেনারেল নিজে বিচারক পদে প্রার্থী হইলে সুপ্রীম কোর্ট রেজিস্ট্রিতে কর্মরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্য হইতে গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী তাহার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কাউন্সিলের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরূপভাবে জ্যেষ্ঠ দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ বা তৎপরবর্তী কর্মকর্তা প্রার্থী হইলে গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী তাহার পরবর্তী কর্মকর্তা উক্ত দায়িত্ব পালন করিবেন।
৫। (১) এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।
(২) কাউন্সিলের সকল সভা চেয়ারপার্সন কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ও সময়ে অনুষ্ঠিত হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করিবার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধপ্রাপ্ত হইলে, প্রধান বিচারপতি তদুদ্দেশ্যে অবিলম্বে কাউন্সিলের সভা আহ্বান করিবেন:
আরো শর্ত থাকে যে, সুপ্রীম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের পদে নিযুক্তির মেয়াদ শেষ হইবার অন্যূন ২ (দুই) মাস পূর্বেই ধারা ৮ অনুসারে কাউন্সিলের সভা আহ্বান করিতে হইবে।
(৩) কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে সম্ভাব্য শূন্যতা অথবা বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা অথবা নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অথবা এই সকল বিষয় সম্মিলিতভাবে বিবেচনাক্রমে কাউন্সিলের সভায় সুপ্রীম কোর্টে নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ করা হইবে, যাহা প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করিবেন।
(৪) উপ-ধারা (৩) অনুসারে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বা স্বীয় বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় বিচারকের সংখ্যা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণপূর্বক উল্লিখিত সংখ্যক বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতির পরামর্শ যাচনা করিলে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করিবার উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি কাউন্সিলের পরবর্তী সভা আহ্বান ও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
(৫) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৮ এর অধীন নিয়োগকৃত সুপ্রীম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারককে অনুচ্ছেদ ৯৫ এর অধীন বিচারক হিসাবে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে কাউন্সিলের সভা আহ্বান করিতে উপ-ধারা (৩) ও (৪) এর বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
(৬) কাউন্সিলের সকল সভায় চেয়ারপার্সন সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সভায় উপস্থিত আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে প্রবীণতম বিচারক সভাপতিত্ব করিবেন।
(৭) ধারা ৩ এর উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন ধারা ৯ এর অধীন আপীল বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে, ধারা ৩ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (গ) ও (ঘ) এ উল্লিখিত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক-সদস্যগণ এবং ধারা ৩ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (চ) ও (ছ) এ উল্লিখিত সদস্যগণ কাউন্সিলের সভায় অংশগ্রহণ করা হইতে বিরত থাকিবেন।
(৮) ধারা ৭ ও ৮ এর অধীন নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যূন ৫ (পাঁচ) জন এবং ধারা ৯ এর অধীন নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যূন ২ (দুই) জন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্যূন ৫ (পাঁচ) জন সদস্যের উপস্থিতিতে কাউন্সিলের সভার কোরাম গঠিত হইবে।
(৯) কাউন্সিল সাধারণত সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করিবে এবং সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না হইলে কাউন্সিলের সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য হইবে; তবে সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে চেয়ারপার্সন বা ক্ষেত্রবিশেষে, সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তি, নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে পারিবেন।
(১০) কাউন্সিল কর্তৃক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করিবার জন্য বাছাই করিবার ক্ষেত্রে কাউন্সিলের সকল সভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়বস্তু ও গৃহীত সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং সভায় উপস্থিত সকল সদস্য কর্তৃক উহা স্বাক্ষরিত হইতে হইবে।
৬। (১) কাউন্সিল, এই অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাইপূর্বক সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়ন করিবে।
(২) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ ও ৯৮ এর অধীন সুপ্রীম কোর্টের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে কাউন্সিল সংবিধানে বর্ণিত যোগ্যতার সম্পূরক হিসাবে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করিবে:–
(ক) প্রার্থীর বয়স, যাহা কোনোক্রমেই ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) এর নিম্নে হইবে না;
(খ) প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ;
(গ) আইনের কোনো নির্দিষ্ট শাখায় প্রার্থীর বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা;
(ঘ) প্রার্থীর সামগ্রিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা, সুনাম, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়;
(ঙ) কোনো ফৌজদারি মামলায় প্রার্থীর দণ্ড সম্পর্কিত তথ্য;
(চ) কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য বিষয়।
(৩) সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের সুপারিশ করিবার লক্ষ্যে কাউন্সিল উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত এবং নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি বিবেচনা করিয়া উহার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে, যথা:—
(ক) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৮ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে–
(অ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর দফা (২) এর উপ-দফা (ক) এ উল্লিখিত সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট হিসাবে ন্যূনতম যোগ্যতা এবং প্রার্থীর পেশাগত কাজের মানসহ দক্ষতা, বাস্তব অভিজ্ঞতা, সততা, সুনাম ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি;
(আ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর দফা (২) এর উপ-দফা (খ) এ উল্লিখিত বিচার-কর্মবিভাগের সদস্য হিসাবে ন্যূনতম যোগ্যতা এবং প্রার্থীর বিচারিক আদেশ ও সিদ্ধান্তের গুণগতমান, আদালত ব্যবস্থাপনা, উক্ত বিচার-কর্মবিভাগে অভিজ্ঞতা, সততা, সুনাম ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি:
তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত সুপারিশে উপ-দফা (অ) এবং (আ) এ উল্লিখিত দুইটি শ্রেণির যুক্তিসঙ্গত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করিতে হইবে;
(খ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসাবে তাহার নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা, বিচারিক আদেশ ও সিদ্ধান্তের গুণগতমান, আদালত ব্যবস্থাপনা, সার্বিক দক্ষতা, সততা ও সুনামসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি; এবং
(গ) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ অনুসারে আপীল বিভাগের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসাবে তাহার জ্যেষ্ঠতা, নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা, বিচারিক আদেশ ও সিদ্ধান্তের গুণগতমান, আদালত ব্যবস্থাপনা, সার্বিক দক্ষতা, সততা ও সুনামসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।
(৪) উপ-ধারা (৩) এর দফা (ক), (খ) ও (গ) এ উল্লিখিত বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল উহার বিবেচ্য প্রতিটি বিষয়ের মান যথাযথভাবে নিরূপণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের পদের জন্য অভিন্ন মানদণ্ড নির্ধারণ করিবে এবং তদনুসারে সুপারিশ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।
(৫) এই ধারায় উল্লিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, কাউন্সিল উহার এক বা একাধিক সদস্য লইয়া কমিটি গঠন করিতে এবং উক্ত কমিটিকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করিতে পারিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৫ এর উপ-ধারা (৭) অনুসারে কোনো সদস্য কোনো সভায় অংশগ্রহণ করা হইতে বারিত হইলে, তাহাকে উক্ত সভার বিবেচ্য কোনো বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট কোনো কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাইবে না।
(৬) চেয়ারপার্সন, আবশ্যক মনে করিলে, কাউন্সিলের সভায় বা উপ-ধারা (৫) এ উল্লিখিত কমিটির কোনো সভায় কাউন্সিলের সদস্য নহেন এমন কোনো ব্যক্তিকে মতামত ও পরামর্শ প্রদান করিবার জন্য উপস্থিত থাকিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন।
(৭) কাউন্সিল উহার কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, কোনো সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি সংস্থাকে বা উক্ত সংস্থায় দায়িত্বরত কোনো ব্যক্তিকে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের অনুরোধ করিতে পারিবে এবং উক্ত সংস্থা বা ব্যক্তি যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবেন।
(৮) এই অধ্যাদেশে বর্ণিত কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, কাউন্সিল প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে।
৭। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৮ এর অধীন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে, এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল–
(ক) উহার বিবেচনায় উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করিতে পারিবে; ইহা ছাড়াও ফরমে প্রার্থীদের নিকট হইতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করিবে;
(খ) সংবিধান, ধারা ৬ এর উপ-ধারা (২) ও উপ-ধারা (৩) এর দফা (ক) এ উল্লিখিত বিষয়াদি এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনের বিধানাবলির আলোকে নিজ উদ্যোগে সংগৃহীত তথ্যাদি এবং দাখিলকৃত দরখাস্তসমূহ যাচাই-বাছাই করিবে;
(গ) উক্তরূপ যাচাই-বাছাইপূর্বক কাউন্সিলের বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করিবে;
(ঘ) দফা (গ) এ উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করিবে; এবং
(ঙ) উপরি-উক্ত কার্যধারা সমাপ্তির পর ধারা ৫ এর উপ-ধারা (৪) এর অধীন নির্ধারিত নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক প্রার্থীর নামসহ একটি তালিকা ধারা ৬ এর উপ-ধারা (১) অনুসারে সুপারিশ আকারে প্রণয়ন করিবে।
৮। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর অধীন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে, এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল–
(ক) উক্ত ব্যক্তির যোগ্যতা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ধারা ৬ এর উপ-ধারা (২) ও উপ-ধারা (৩) এর দফা (খ) এবং সংশ্লিষ্ট বিধানাবলিতে উল্লিখিত বিষয়াদি বিবেচনা করিবে; এবং
(খ) দফা (ক) এ উল্লিখিত তথ্যাদি বিবেচনাপূর্বক ধারা ৬ এর উপ-ধারা (১) অনুসারে সুপারিশ প্রণয়ন করিবে:
তবে শর্ত থাকে যে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৮ এর বিধান সাপেক্ষে কাউন্সিল সুপ্রীম কোর্টের কোনো অতিরিক্ত বিচারকের মেয়াদ বৃদ্ধি করিবার সুপারিশ প্রদান করিতে পারিবে অথবা কোনো অতিরিক্ত বিচারক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর অধীন বিচারক হিসাবে নিয়োগ লাভের অনুপযুক্ত বিবেচিত হইলে কাউন্সিল তাহাকে উক্তরূপ বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করিবার সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে।
৯। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর আওতায় আপীল বিভাগের বিচারক পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে, এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল–
(ক) আপীল বিভাগে নিয়োগযোগ্য বিচারকের শূন্যপদের সংখ্যার আলোকে হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত জ্যেষ্ঠ বিচারকদের যোগ্যতা নিরূপণের উদ্দেশ্যে ধারা ৬ এর উপ-ধারা (২) ও উপ-ধারা (৩) এর দফা (গ) এবং সংশ্লিষ্ট বিধানাবলিতে উল্লিখিত বিষয়াদি বিবেচনা করিবে;
(খ) দফা (ক) এ বর্ণিত তথ্যাদি বিবেচনাপূর্বক ধারা ৫ এর উপ-ধারা (৪) এর অধীন নির্ধারিত নিয়োগযোগ্য বিচারকের সংখ্যার অতিরিক্ত যুক্তিসংগত সংখ্যক নামসহ একটি তালিকা ধারা ৬ এর উপ-ধারা (১) অনুসারে সুপারিশ আকারে প্রণয়ন করিবে।
১০। ধারা ৭, ৮ ও ৯ এর অধীন কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত সুপারিশ প্রধান বিচারপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর দফা (১) অনুসারে তাহার পরামর্শরূপে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ করিবেন।
১১। (১) ধারা ১০ এর অধীন প্রধান বিচারপতির পরামর্শ প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের মধ্য হইতে সুপ্রীম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ প্রদান করিবেন অথবা, ক্ষেত্রমত, প্রধান বিচারপতির পরামর্শ কার্যকর করিবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
(২) কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির পরামর্শের সহিত দ্বিমত পোষণ করিলে তিনি সংশ্লিষ্ট তথ্য এবং কারণ উল্লেখপূর্বক বিষয়টি পুনরীক্ষণের জন্য প্রধান বিচারপতির নিকট প্রেরণ করিতে পারিবেন।
(৩) উপ-ধারা (২) অনুসারে রাষ্ট্রপতির নিকট হইতে পুনরীক্ষণের অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিলের নিকট উপস্থাপন করিবেন।
(৪) উপ-ধারা (৩) অনুসারে উপস্থাপিত কোনো অনুরোধ প্রাপ্ত হইলে কাউন্সিল–
(ক) বিষয়টি পুনরীক্ষণক্রমে সংশোধিত আকারে উহার সুপারিশ প্রণয়ন করিতে পারিবে; অথবা
(খ) যথাযথ তথ্য ও কারণ উল্লেখপূর্বক ইতিপূর্বে প্রেরিত সুপারিশ কোনো সংশোধন ব্যতিরেকে পুনরায় গ্রহণ করিবে।
(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন সংশোধিত অথবা সংশোধন ব্যতিরেকে গৃহীত সুপারিশ প্র্রধান বিচারপতি তাহার পরামর্শ আকারে রাষ্ট্রপতির নিকট পুনরায় প্রেরণ করিবেন।
(৬) রাষ্ট্রপতি উপ-ধারা (৫) এ বর্ণিত পরামর্শ প্রাপ্তির ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে উক্ত পরামর্শ কার্যকর করিবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
১২। (১) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ এর অধীন সুপ্রীম কোর্টের বিচারক হিসাবে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ সম্পর্কিত এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
(২) এই অধ্যাদেশে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই অধ্যাদেশের কোনো বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
১৩। (১) কাউন্সিলের কার্যাবলি, সদস্যগণের ব্যয় ও আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করিবার জন্য সরকার সুপ্রীম কোর্টের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করিবে।
(২) কাউন্সিলের সদস্যগণের সম্মানি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত উহা ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (৩) এর বিধান অনুসারে নির্ধারিত হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিলের কোনো সদস্য অবৈতনিক সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করিতে চাহিলে অথবা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করিতে না চাহিলে কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে তদনুযায়ী দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন।
(৩) কাউন্সিলের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় অনুমোদনের ব্যাপারে চেয়ারপার্সন চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হইবেন।
১৪। (১) এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, কাউন্সিলের সহিত পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত কাউন্সিল, রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।
(৩) এই ধারার অধীন বিধি বা প্রবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত, চেয়ারপার্সন, কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে, লিখিত আদেশ দ্বারা যে পদ্ধতি নির্ধারণ করিবেন, কাউন্সিল উহার কার্য নির্বাহের ক্ষেত্রে উক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করিবে।
১৫। এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কাউন্সিল ফরম সংশোধন করিতে পারিবে।
১৬। (১) এই অধ্যাদেশ প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই অধ্যাদেশের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।
(২) বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।