প্রিন্ট ভিউ

ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫

( ২০২৫ সনের ১৯ নং অধ্যাদেশ )

তফসিলি ব্যাংক সম্পর্কিত রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগ এবং এতদ্‌সংক্রান্ত বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশ

যেহেতু তফসিলি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, দেউলিয়াত্ব বা অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ অন্য যেকোনো ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান, আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং উহার সহিত সম্পর্কিত বা আনুষঙ্গিক বিষয়ে ব্যাংক রেজল্যুশন সংক্রান্ত বিষয়ে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; এবং

যেহেতু সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় রহিয়াছে এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে;

সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি নিম্নরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিলেন:-

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন

১। (১) এই অধ্যাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ নামে অভিহিত হইবে।

(২) এই অধ্যাদেশ তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশনের নিমিত্ত প্রযোজ্য হইবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, নিম্নবর্ণিত যেকোনো শর্ত সাপেক্ষে, এই অধ্যাদেশ রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সহিত সম্পর্কিত ব্যাংকিং গ্রুপ বা ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের আওতাধীন যেকোনো সত্তা (Entity), হোল্ডিং কোম্পানি, অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং নন-রেগুলেটেড অপারেশনাল এন্টিটি’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে, যথা:-

(ক) সেবা, কার্যক্রম বা পরিচালনের ভিত্তিতে তফসিলি ব্যাংকের ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংশ্লিষ্ট সত্তা, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হইলে;

(খ) তফসিলি ব্যাংকের ব্যর্থতা সার্বিকভাবে হোল্ডিং কোম্পানি বা ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের স্থায়িত্বের জন্য হমকিস্বরূপ হইলে;

(গ) ধারা ৯ অনুযায়ী রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রেজল্যুশন ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার প্রয়োজন হইলে; অথবা

(ঘ) ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের আওতাধীন এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংক ধারা ১৫-তে নির্ধারিত রেজল্যুশন সংক্রান্ত শর্তসমূহ পূরণ করিলে।

(৪) এই অধ্যাদেশ অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

তফসিলি ব্যাংকের সহিত সম্পর্কিত ব্যাংকিং গ্রুপ বা ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের আওতাধীন সত্তা, হোল্ডিং কোম্পানি, ইত্যাদির উপর এই অধ্যাদেশ প্রয়োগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান

২। (১) ধারা ১ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত কোনো কোম্পানি বা সত্তা বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত কোম্পানি বা সত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে এই অধ্যাদেশের অধীন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সহিত পরামর্শ করিবে এবং গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে উক্ত নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিবে।

(২) এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, তফসিলি ব্যাংক সম্পর্কে যেকোনো ধরনের রেফারেন্স ধারা ১ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সত্তা বা কোম্পানির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে।

সংজ্ঞা

৩। বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই অধ্যাদেশে,-

(১) “অকার্যকর (non-viable)” অর্থ ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তফসিলি ব্যাংকের কোনো অবস্থা;

(২) “অবসায়ন” অর্থ সম্পদ বিক্রয় করিয়া নগদে পরিণত করা এবং মার্কেট হইতে প্রস্থান করিবার উদ্দেশ্যে সকল প্রকার ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করা;

(৩) “অবসায়ন আদেশ” অর্থ ধারা ৪৯ এর উপ-ধারা (৭) এর অধীন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ;

(৪) “আমানত সুরক্ষা তহবিল” অর্থ ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ (২০০০ সনের ১৮ নং আইন) এ উল্লিখিত তহবিল;

(৫) “আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা (Prompt Corrective Action Framework)” অর্থ এইরূপ কোনো ব্যবস্থা, যাহা কোনো তফসিলি ব্যাংক এবং উহার পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে উক্ত ব্যাংকের অবনতিশীল আর্থিক ও পরিচালনগত অবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরাইয়া আনিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারীকৃত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতাকে নির্দেশ করে;

(৬) “ইসলামি ব্যাংক” অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী তফসিলি ব্যাংক;

(৭) “উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারক” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪ নং আইন) এর ধারা ১৪খ-তে সংজ্ঞায়িত শেয়ার ধারক;

(৮) “কমন ইকুইটি টিয়ার ১ মূলধন উপাদান, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ও টিয়ার ২ মূলধন উপাদান” অর্থ এইরূপ কোনো মূলধন উপাদান, যাহা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, স্থানীয় তফসিলি ব্যাংক ও বিদেশি তফসিলি ব্যাংক উভয়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়;

(৯) “কাউন্সিল” ধারা ৪২ এর অধীন গঠিত ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল;

(১০) “কোম্পানি” অর্থ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এর ধারা ২ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঘ)-তে সংজ্ঞায়িত কোম্পানি;

(১১) “গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম (critical functions)” অর্থ তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক তৃতীয় পক্ষের জন্য এবং তাহার পক্ষে তফসিলি ব্যাংক ব্যতীত অন্য কোনো পক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি, যেখানে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের আকার অথবা মার্কেট শেয়ার, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আন্তঃসংযুক্ততা, জটিলতা অথবা তফসিলি ব্যাংকের আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমের কারণে এইরূপ কোনো কার্যাবলি সম্পাদনে ব্যর্থতা ঘটিলে বাস্তব অর্থনীতির (real economy) কার্যকারিতা অথবা আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করিবার জন্য অপরিহার্য ব্যাংকিং পরিষেবাসমূহের ব্যাঘাত ঘটিতে পারে;

(১২) “জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৯ক-তে সংজ্ঞায়িত সত্তা;

(১৩) “তফসিলি ব্যাংক” অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No. 127 of 1972) এর Article 2(j)-তে সংজ্ঞায়িত কোনো ব্যাংক;

(১৪) “দাবিসমূহের অগ্রাধিকারের ক্রম (Hierarchy of claims)” অর্থ ধারা ৬৭-তে উল্লিখিত দাবিসমূহ পরিশোধের অগ্রাধিকারের ক্রম;

(১৫) “দায়ী ব্যক্তি” অর্থ ধারা ৭৭ এ উল্লিখিত কোনো ব্যক্তি;

(১৬) “দেউলিয়া” অর্থ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২৪২ এবং/অথবা ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৬৫ এর উপ-ধারা (৪) উল্লিখিত কোনো পরিস্থিতি;

(১৭) “নন-রেগুলেটেড অপারেশনাল এন্টিটি” অর্থ এইরূপ কোনো সত্তা যাহা ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর আওতা বহির্ভূত থাকিয়া ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের মধ্যে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা, যেমন-ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ঋণ মূল্যায়ন, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ সহায়তা, ট্রেজারি সার্ভিসেস, আইটি লেনদেন প্রক্রিয়া, আইনি পরিষেবা ও প্রতিপালন, ইত্যাদি প্রদান করে;

(১৮) “নিয়ন্ত্রণ” অর্থে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর দফা (ছছ)-তে উল্লিখিত কার্যক্রমসহ কোনো ব্যাংক বা আইনি সত্তার আর্থিক ও পরিচালনগত নীতি সিদ্ধান্তসমূহের উপর প্রভাব বিস্তার করা অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(১৯) “নেটিং” অর্থ কোনো চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন হইতে উদ্ভুত দায়-দেনা সমন্বয় করিবার পর নিট দাবি বা বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ;

(২০) “পদ্ধতিগতভাবে পুরুত্বপূর্ণ (systemically important) ব্যাংক” অর্থ কোনো তফসিলি ব্যাংক যাহার আকার, আন্তঃসংযুক্ততা, প্রতিস্থাপনযোগ্যতার অভাব, জটিলতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোনো মানদণ্ডের কারণে যাহার ব্যর্থতা আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে অথবা ফেলিতে পারে;

(২১) “পরিবার” বা “পরিবারের সদস্য” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর দফা (ঝঝ)-তে সংজ্ঞায়িত পরিবার বা পরিবারের সদস্য;

(২২) “পাওনাদার” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর দফা (ঝ)-তে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;

(২৩) “পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা” অর্থ তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত, রক্ষণাবেক্ষণকৃত ও কার্যকরকৃত এইরূপ কোনো পরিকল্পনা যাহাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত অকার্যকারিতা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত উহার কার্যকারিতা বজায় রাখিবার জন্য ব্যাংকের অবনতিশীল আর্থিক ও পরিচালনগত পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে সময়োপযোগী পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ বর্ণিত থাকে;

(২৪) “প্রশাসক” অর্থ ধারা ২০ এর অধীন নিযুক্ত ব্যক্তি;

(২৫) “ফাইন্যান্স কোম্পানি” অর্থ ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ৫৯ নং আইন) এর ধারা ২ এর উপ-ধারা (১৭) এ সংজ্ঞায়িত ফাইন্যান্স কোম্পানি;

(২৬) “ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ” অর্থ আর্থিক প্রকৃতির কার্যক্রম সম্পাদনকারী এইরূপ সত্তাসমূহের সমন্বয়ে গঠিত কোনো গোষ্ঠী যাহার মধ্যে তফসিলি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকে;

(২৭) “বহি” অর্থ ব্যাংকার বহি সাক্ষ্য আইন, ২০২১ (২০২১ সনের ২৭ নং আইন) এর ধারা ২ এর দফা (ঠ)-তে সংজ্ঞায়িত নথিপত্র;

(২৮) “বাংলাদেশ ব্যাংক” অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President's Order No. 127 of 1972) এর অধীন স্থাপিত বাংলাদেশ ব্যাংক;

(২৯) “ব্যক্তি” অর্থে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি (natural person) এবং কোনো প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, অংশীদারি কারবার, ফার্ম বা অন্য কোনো সংস্থা বা আইনি সত্তাও অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(৩০) “ব্যবস্থাপনা পরিচালক” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর দফা (ঢ)-তে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তি;

(৩১) “ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল” অর্থ ধারা ১৭ এর অধীন গঠিত তহবিল;

(৩২) “ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৬গ-তে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;

(৩৩) “ব্যাংকিং গ্রুপ” অর্থ ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫ এর দফা (টটটট)-তে সংজ্ঞায়িত সত্তা;

(৩৪) “ব্রিজ ব্যাংক (Bridge Bank)” অর্থ রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম (critical functions) ও কার্যকর পরিচালন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এবং পরিশেষে তৃতীয় পক্ষের নিকট উহা বিক্রয় করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি ব্যাংক;

(৩৫) “মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী (Key Management Personnel)” অর্থ ক্রেডিট, ফাইন্যান্স, ট্রেজারি, অপারেশনস, কমপ্লায়েন্স, অভিট, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, কোম্পানি সেক্রেটারিয়েট, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্য নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, নির্ধারিত অন্যান্য কার্যাবলিসহ কোনো তফসিলি ব্যাংকের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য প্রাথমিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী;

(৩৬) “যোগ্য দায় (Eligible liability)” অর্থ ধারা ৩৩ এর উপ-ধারা (৫) এ উল্লিখিত যেকোনো দায়;

(৩৭) “রেজল্যুশন” অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ধারা ৯ এ উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে তফসিলি ব্যাংকের উপর ধারা ১৬-তে উল্লিখিত এক বা একাধিক ব্যবস্থার প্রয়োগ;

(৩৮) “রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক” অর্থ এইরূপ কোনো তফসিলি ব্যাংক, যাহার উপর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ধারা ৯ এ উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে;

(৩৯) “রেজল্যুশন পরিকল্পনা” অর্থ ধারা ১২ এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি তফসিলি ব্যাংক অথবা কোনো পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ (systemically important) ব্যাংকের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা;

(৪০) “রেজল্যুশন ক্ষমতা” অর্থ ধারা ১৬-তে উল্লিখিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা;

(৪১) “শেয়ার ধারক” অর্থ কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২(১) এর দফা (ধ)-তে সংজ্ঞায়িত তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক;

(৪২) “সরকারি সহায়তা” অর্থ ধারা ৩৫ এ বর্ণিত আর্থিক ও অ-আর্থিক সহায়তা;

(৪৩) “সাবঅর্ডিনেটেড ভেট হোল্ডার” অর্থ অবসায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঋণ ধারকগণের দাবি পরিশোধের পর পরিশোধযোগ্য এইরূপ কোনো ঋণের ধারক;

(৪৪) “সুরক্ষিত আমানত” অর্থ ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর অধীন আমানতের সুরক্ষিত অংশ;

(৪৫) “সুরক্ষিত আমানতকারী” অর্থ ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর অধীন সুরক্ষিত আমানতকারী;

(৪৬) “স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী” অর্থ ধারা ১৮ এর অধীন রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যে কোনো তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ, দায় অথবা শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করিবার নিমিত্ত ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৯ এ উল্লিখিত যেকোনো স্বাধীন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান;

(৪৭) “স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান” অর্থ এইরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান, যাহা একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান, যেমন- হোল্ডিং কোম্পানি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি, সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান অথবা উভয়ই তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের জয়েন্ট ভেঞ্চার, উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক একক বা যৌথভাবে পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত;

(৪৮) “হোল্ডিং কোম্পানি” অর্থ এইরূপ কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি, কোনো প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, অংশীদারি কারবার, ফার্ম বা অন্য কোনো সংস্থা, যাহার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে; এবং

(৪৯) “হ্রাসকরণ (Write down)” অর্থ ক্ষতি বা ব্যয় সমন্বয়ের বিপরীতে তাহার কিছু মূল্য সমন্বয় করিবার মাধ্যমে কোনো সম্পদের স্থিতিপত্রে মূল্য হ্রাস করা।

এই অধ্যাদেশের প্রাধান্য

৪। আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি প্রাধান্য পাইবে।

দ্বিতীয় অধ্যায়

রেজল্যুশনের কর্তৃত্ব, ইত্যাদি

রেজল্যুশনের কর্তৃত্ব

৫। (১) এই অধ্যাদেশের অধীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের, তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন সংক্রান্ত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ এবং এতদ্‌সংক্রান্ত অন্যান্য দায়িত্ব পালনের কর্তৃত থাকিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ক্ষমতা ও দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান কার্যক্রম হইতে স্বতন্ত্র ও পৃথক হইবে।

(৩) রেজল্যুশনের কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের কাঠামো, আকার, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জটিলতা, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহিত আন্তঃসংযোগ এবং রিস্ক প্রোফাইল বিবেচনা করিবে।

ব্যাখ্যা।- এই উপ-ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “রিস্ক প্রোফাইল” অর্থ ঋণ ঝুঁকি, তারল্য ঝুঁকি, মার্কেট ঝুঁকি, পরিচালন ঝুঁকি, কৌশলগত ঝুঁকি, আইনি ও নিয়ন্ত্রক ঝুঁকি, ইত্যাদিসহ কোনো ব্যাংকের পরিচালন, পোর্টফোলিও এবং সার্বিক ব্যবসায়িক কৌশলের মধ্যে অন্তর্নিহিত ঝুঁকির বিভিন্ন ধরন এবং পরিমাণের বর্ণনা।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজল্যুশন ব্যবস্থা নির্ধারণ ও প্রণয়ন করিবার নিমিত্ত প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য সরবরাহ করিবার জন্য এবং রেজল্যুশন পরিকল্পনা সম্পর্কিত হালনাগাদ ও সম্পূরক তথ্য এবং, ক্ষেত্রমত, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সরবরাহ করিবার জন্য যেকোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(৫) এই অধ্যাদেশের অধীন প্রণীতব্য বা জারীকৃত বিধি, প্রবিধান অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা, গাইডলাইন্স, নির্দেশ বা অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে, কোনো তফসিলি ব্যাংক বা, ক্ষেত্রমত, নিয়ন্ত্রণকারী বা তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, উক্ত বিধি, প্রবিধান, নির্দেশনা, গাইডলাইন্স, নির্দেশ বা অনুরোধ, অবিলম্বে বা নির্দেশিত সময়ের মধ্যে, পরিপালন করিবে।

রেজল্যুশন সংক্রান্ত বিভাগ

৬। এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, রেজল্যুশন সংক্রান্ত ক্ষমতা, দায়িত্ব এবং কার্যাবলি প্রয়োগ, পালন ও সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিভাগ থাকিবে।

তথ্য প্রাপ্তি, তথ্য বিনিময় এবং তদন্তের ক্ষমতা

৭। (১) বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোনো বিভাগ এবং নিয়ন্ত্রণকারী বা তত্ত্বাবধানকারী অন্য যেকোনো কর্তৃপক্ষ, স্বাভাবিক এবং সংকটকালে, এই অধ্যাদেশের অধীন গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রমের সহিত প্রাসঙ্গিক, দেশের অভ্যন্তর ও বহিঃস্থ, যেকোনো তথ্যের যথাযথ আদান-প্রদানে সহযোগিতা করিবে।

(২) তথ্যের সংবেদনশীলতা বিবেচনায়, প্রয়োজনে, তথ্য বিনিময় উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত বিভাগ এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকিবে।

(৩) এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং কার্যক্রম চলমান রাখিবার নিমিত্ত অধিকতর তথ্য সংগ্রহ করিবার প্রয়োজন হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক এবং ধারা ১ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত ব্যাংকিং গ্রুপ বা ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের আওতাধীন কোনো সত্তা, হোল্ডিং কোম্পানি, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং নন-রেগুলেটেড অপারেশনাল এন্টিটি’র ক্ষেত্রে তদন্ত বা পরিদর্শন করিতে পারিবে।

ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর প্রযোজ্যতা

৮। এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেজল্যুশন ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ না করিয়া, বিধিবদ্ধ বাধ্যবাধকতা (regulatory requirements) পরিপালনের ক্ষেত্রে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ অথবা তদ্‌ধীন প্রণীত বিধি, নির্দেশনা, গাইডলাইন্স বা নির্দেশ রেজল্যুশনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।

রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য

৯। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগ, দায়িত্ব পালন ও, ক্ষেত্রমত, কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের পরিশোধ, নিকাশ এবং নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চলমান রাখাসহ আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা রক্ষা করা;

(খ) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি অব্যাহত রাখা;

(গ) সার্বিকভাবে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষা করা;

(ঘ) সরকারি আর্থিক সহায়তা ন্যূনতম পর্যায়ে রাখিয়া সরকারি তহবিলের সুরক্ষা করা;

(ঙ) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদের মূল্য হ্রাস এড়ানো এবং পাওনাদারগণের লোকসান ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা ও রেজল্যুশনের সামগ্রিক ব্যয় হ্রাসের প্রচেষ্টা করা; এবং

(চ) আর্থিক ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা বজায় রাখা।

(২) ইসলামি ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে এবং, প্রয়োজনে, প্রবিধান দ্বারা, ইসলামি ব্যাংকের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যে নির্ধারণ করিতে পারিবে।

রেজল্যুশনের নীতি

১০। রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত নীতি বিবেচনা করিবে, যথা:-

(ক) রেজ্যুলুশন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ধারা ৬৭-তে উল্লিখিত দাবিসমূহের অগ্রাধিকারের ক্রমকে (Hierarchy of claims) বিবেচনা করিতে হইবে, তবে একই শ্রেণির পাওনাদারগণের প্রতি সমানুপাতিক (pari passu) নীতির ব্যতিক্রম করিবার জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তা প্রদর্শন করিতে হইবে এবং যদি কোনো তফসিলি ব্যাংকের ব্যর্থতার সম্ভাব্য পদ্ধতিগত (systemic) প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করিতে অথবা সামগ্রিকভাবে সকল পাওনাদারের স্বার্থ সর্বাধিক করিবার প্রয়োজন হয়, তাহা হইলে উক্ত নমনীয়তা প্রদর্শনের কারণ সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করিতে হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, একই শ্রেণির পাওনাদারগণের প্রতি সমানুপাতিক (pari passu) নীতির ব্যতিক্রম করিবার জন্য প্রয়োজনীয় নমনীয়তার বিধান ইসলামি ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না;

(খ) উক্ত তফসিলি ব্যাংককে অবসায়ন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হইলে শেয়ার ধারক এবং ব্যাংকের পাওনাদারগণ যে ক্ষতির সম্মুখীন হইতেন তাহা অপেক্ষা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হইবেন না;

(গ) সুরক্ষিত আমানতকারীগণ সুরক্ষিত পরিমাণের স্তর পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকিবেন;

(ঘ) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের ব্যর্থতায় ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তি তাহার ভূমিকার জন্য দেওয়ানি বা ফৌজদারি আইনের অধীন দায়বদ্ধ হইবেন; এবং

(ঙ) অকার্যকর তফসিলি ব্যাংকসমূহ যেন সুশৃঙ্খলভাবে মার্কেট হইতে প্রস্থান করিতে পারে, রেজল্যুশন প্রক্রিয়া তাহা নিশ্চিত করিবে।

পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার সহিত সমন্বয়

১১। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক সুপারভিশন বিভাগসমূহ নিয়মিত ভিত্তিতে প্রতিটি পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ (systemically important) ব্যাংকের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারা ৬ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বিভাগকে হালনাগাদ তথ্য প্রদান করিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, যদি পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকসহ অন্য কোনো তফসিলি ব্যাংকের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা অথবা উহার বাস্তবায়নে তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত হয়, তাহা হইলে অবিলম্বে উহা ধারা ৬ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বিভাগকে অবহিত করিতে হইবে।

রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন

১২। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ (systemically important) ব্যাংকসহ আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার (Prompt Corrective Action framework) আওতাধীন যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের জন্য রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রণীত রেজল্যুশন পরিকল্পনা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অথবা তফসিলি ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো, ব্যবসা বা আর্থিক অবস্থার কোনো বস্তুগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হইলে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করিবে।

(৩) রেজল্যুশন পরিকল্পনার পর্যালোচনা বা হালনাগাদের প্রয়োজন হইতে পারে এইরূপ যেকোনো বস্তুগত পরিবর্তন সম্পর্কে তফসিলি ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করিবে।

(৪) রেজল্যুশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়ন করিবে।

(৫) রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের সহিত নিম্নবর্ণিত বিষয় বিবেচনা করিতে হইবে, যথা:-

(ক) অবসায়ন সম্ভাব্যতা ও বাস্তবায়ন যোগ্যতা;

(খ) রেজল্যুশনের অধীন কোনো তফসিলি ব্যাংক কোনো ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত হইলে উহার উপর এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেজল্যুশন পদ্ধতি প্রয়োগের সম্ভাব্যতা ও বাস্তবায়ন যোগ্যতা;

(গ) তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির (critical functions) আর্থিক ও পরিচালন প্রক্রিয়ার নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখিবার ব্যবস্থা; এবং

(ঘ) রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ এবং উহা দূরীকরণের ব্যবস্থা।

(৬) রেজল্যুশন পরিকল্পনায় প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে।

(৭) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উহা বাস্তবায়ন করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংক প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত তথ্য সরবরাহ করিবে।

(৮) আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার আওতাধীন নহে বা পদ্ধতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ (systemically important) বা প্রভাববিস্তারকারী নহে এইরূপ যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা ব্যাংকসমূহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, সহজতর (simplified) রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করিতে পারিবে।

(৯) রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও হালনাগাদকরণে তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিবে।

রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতা (resolvability) মূল্যায়ন

১৩। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, কোনো রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও হালনাগাদকালে, ব্যাংকটির উপর রেজল্যুশন প্রয়োগ করা যাইবে কিনা উহার মূল্যায়ন করিবে এবং ব্যাংকটির রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করিবে এবং উক্ত অন্তরায়সমূহ নিরসনের জন্য পদ্ধতি নির্ধারণ করিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন পরিচালনার জন্য মূল উপাদান, মানদণ্ড, এবং মাপকাঠি নির্দিষ্ট করিয়া প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক উপ-ধারা (১) এর অধীন রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নকালে সংশ্লিষ্ট তফসিলি ব্যাংককে শুনানির সুযোগ প্রদান করিবে।

রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ

১৪। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক কোনো তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎকর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমায়, যাহা ২ (দুই) মাসের অধিক নহে, উক্ত প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ বা হ্রাসকরণের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপের একটি প্রস্তাব দাখিল করিবার জন্য উক্ত তফসিলি ব্যাংককে আদেশ প্রদান করিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ কার্যকরভাবে প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ অথবা হ্রাসকরণে সক্ষম নহে, তাহা হইলে উক্ত ব্যাংককে প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ বা হ্রাসকরণে বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ উক্ত পদক্ষেপসমূহ প্রয়োগের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করিয়া আদেশ প্রদান করিবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণ বা হ্রাসকরণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে, অন্যান্য আদেশের সহিত নিম্নবর্ণিত আদেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) অন্ত-গ্রুপ (intra-group) আর্থিক সহায়তা চুক্তি সম্পাদন বা সংশোধন;

(খ) অন্ত-গ্রুপ বা তৃতীয় পক্ষের সহিত পরিষেবা চুক্তি সম্পাদন বা সংশোধন;

(গ) এক বা একাধিক সত্তায় উক্ত ব্যাংকের এক্সপোজার সীমিতকরণ;

(ঘ) ব্যাংক রেজল্যুশনকল্পে প্রাসঙ্গিক ও অতিরিক্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়মিতভাবে দাখিলকরণ;

(ঙ) নির্দিষ্ট সম্পদ নিষ্পত্তিকরণ (disposal);

(চ) বিদ্যমান বা নূতন কার্যক্রমের কার্যকারিতা অথবা উন্নয়ন সীমিতকরণ বা বন্ধকরণ; এবং

(ছ) তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হ্রাস এবং রেজল্যুশন প্রক্রিয়াকালে উক্ত ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি অন্যান্য কার্যাবলি হইতে পৃথক রাখিবার বিষয়টি নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উক্ত তফসিলি ব্যাংকে যথাযথ আইনি ও পরিচালন বিষয়ক পরিবর্তন আনয়ন।

(৪) উপ-ধারা (১), (২) ও (৩) এর অধীন প্রদত্ত আদেশ তফসিলি ব্যাংক পরিপালন করিবে।

(৫) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত আদেশ প্রদানকালে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকের উপর এবং আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করিবে।

রেজল্যুশনের শর্তাবলি

১৫। (১) এই অধ্যাদেশের অন্যান্য বিধান এবং অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে,-

(ক) কোনো তফসিলি ব্যাংক অকার্যকর (non-viable) হইয়াছে বা কার্যকর হইবার সম্ভাবনা নাই; এবং

(খ) উপ-ধারা (২) এ বর্ণিত পরিস্থিতিতে কার্যকর হইয়া উঠিবার যুক্তিযুক্ত কোনো সম্ভাবনা নাই, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত তফসিলি ব্যাংককে এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী রেজল্যুশন করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে।

(২) কোনো তফসিলি ব্যাংক বর্তমানে অকার্যকর (non-viable) হইয়াছে বা কার্যকর হইবার সম্ভাবনা নাই বা কার্যকর হইবার যুক্তিসঙ্গত সম্ভাবনা নাই বলিয়া পরিগণিত হইবে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক বা তদারককারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত কোনো পদক্ষেপ ব্যাংকটির পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাইবে না, এবং নিম্নবর্ণিত কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যথা:-

(ক) যেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট এই মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো তফসিলি ব্যাংক, ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ অথবা তদধীন প্রণীত, জারীকৃত বা প্রদত্ত কোনো প্রবিধান, নির্দেশ, গাইডলাইন্স, নির্দেশনা বা অনুশাসন অথবা আবশ্যকতাসহ নিয়ন্ত্রণমূলক, মূলধন ও তারল্যের শর্তসমূহ পরিপালন করিতে এইরূপভাবে ব্যর্থ হইয়াছে বা ব্যর্থ হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে যাহাতে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত তফসিলি ব্যাংককে প্রদত্ত লাইসেন্স বাতিল করিতে বাধ্য হইত;

(খ) কোনো তফসিলি ব্যাংক দেউলিয়া হইয়া যাইবে অথবা দেউলিয়া হইয়া যাইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট প্রতীয়মান হইলে;

(গ) যেক্ষেত্রে কোনো তফসিলি ব্যাংক উহার আমানতকারীগণের বা অন্যান্য পাওনাদারের নিকট তাহার দায়বদ্ধতা পূরণে অক্ষম হয় অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট যদি এই মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, তফসিলি ব্যাংকটি উহার আমানতকারীগণের বা অন্যান্য পাওনাদারের পাওনা প্রদেয় হইলে উক্ত দায়বদ্ধতা পূরণে অক্ষম হইবে; অথবা

(ঘ) যেক্ষেত্রে কোনো তফসিলি ব্যাংকের প্রকৃত সুবিধাভোগী (Ultimate Beneficial Owners) অথবা দায়ী ব্যক্তিগণ কর্তৃক ব্যাংকটির সম্পদ বা তহবিলকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজেদের বা অন্যের স্বার্থে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার করাসহ উক্ত ব্যাংক এইরূপ কোনো বিপজ্জনক বা ত্রুটিপূর্ণ চর্চায় জড়িত হয়, যাহাতে উহার অবস্থা দুর্বল হইবে অথবা সুষ্ঠু কার্যক্রম ঝুঁকির সম্মুখীন হইবে, এবং ফলশ্রুতিতে উহার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধিত হইবে।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “প্রকৃত সুবিধাভোগী (Ultimate Beneficial Owner)” অর্থ এইরূপ কোনো প্রাকৃতিক ব্যক্তি যাহারা প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের ২ (দুই) শতাংশ বা তাহার অধিক শেয়ারের মালিক অথবা নিয়ন্ত্রণ করেন, অথবা এইরূপ কোনো আইনগত ব্যক্তির উপর প্রভাব রাখেন, যাহার পক্ষে আর্থিক লেনদেন পরিচালিত হয়, এবং ইহারা সেইসব ব্যক্তিকেও অন্তর্ভুক্ত করিবে যাহারা ব্যাংকের মালিকানার কাঠামোর মধ্যে ব্যাংক বা এইরূপ কোনো আইনগত ব্যক্তির উপর প্রভাব রাখেন বা চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ করেন যাহারা প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের ২ (দুই) শতাংশ বা তাহার অধিক শেয়ারের মালিক বা নিয়ন্ত্রণকারী হন।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আবশ্যক বিবেচিত হইলে, কোনো তফসিলি ব্যাংকের উপর আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা অথবা অন্য কোনো তত্ত্বাবধানমূলক ব্যবস্থা উক্ত ব্যাংকের উপর রেজল্যুশন পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে বাধাগ্রস্ত করিবে না।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তফসিলি ব্যাংককে রেজল্যুশন করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে-

(ক) উক্ত তফসিলি ব্যাংককে লিখিতভাবে উহার সিদ্ধান্ত অবহিত করিবে এবং এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন আরম্ভ করিবে;

(খ) ধারা ১৬-তে বর্ণিত রেজল্যুশন ক্ষমতাসমূহের যেকোনো এক বা একাধিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক দফা (ক) এ উল্লিখিত অবহিতকরণের তারিখ হইতে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে অন্যূন এইরূপ কোনো একটি রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগ করিবে।

(৫) এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ব্যবস্থা আরম্ভ করিবার পর রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে উহার ব্যবসা পরিচালনা করিবে।

(৬) বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে রেজল্যুশনের শর্তাবলির প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট করিবার জন্য প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

রেজল্যুশন ক্ষমতা

১৬। (১) এই অধ্যাদেশের অধীন কোনো তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষমতাসহ নিম্নবর্ণিত ক্ষমতা থাকিবে, যথা:-

(ক) উক্ত তফসিলি ব্যাংকে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা;

(খ) বিদ্যমান শেয়ার ধারক বা নূতন শেয়ার ধারকগণের মাধ্যমে মূলধনের বৃদ্ধি ঘটানো;

(গ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর করা;

(ঘ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এবং কার্যকর পরিচালনা (viable operations) অব্যাহত রাখিবার জন্য এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা এবং পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রয় করা;

(ঙ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের মূলধন এবং যোগ্য দায় হ্রাস করা এবং/অথবা রূপান্তর করা;

(চ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন অথবা ব্রিজ ব্যাংকের অর্থায়নে অবদান রাখিবার জন্য ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল অথবা আমানত সুরক্ষা তহবিল ব্যবহারের শর্তাবলি মূল্যায়ন করা; এবং

(ছ) সরকারকে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন অথবা ব্রিজ ব্যাংকের অর্থায়নের জন্য সহায়তা প্রদানের অনুরোধ করা।

(২) উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষমতাসহ নিম্নবর্ণিত ক্ষমতা থাকিবে, যথা:-

(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিবেচিত যেকোনো উপায়ে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউসহ সম্পদ ও দায়ের বিশদ পর্যালোচনা করা।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (Asset Quality Review)” অর্থ কোনো তফসিলি ব্যাংকের স্থিতিপত্রে উল্লিখিত সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাই এবং মূলধন স্তরের পর্যাপ্ততা মূল্যায়ন করিবার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, প্রয়োজনে, সম্পাদিত যেকোনো পর্যালোচনা;

(খ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী অথবা অন্য কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অপসারণ অথবা স্থলাভিষিক্ত করা;

(গ) দফা (খ)-তে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তি অথবা তাহার স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিকে রেজল্যুশন কার্যক্রমের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা;

(ঘ) দফা (খ)-তে উল্লিখিত কোনো ব্যক্তিকে উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো পরিবর্তনশীল পারিশ্রমিক (variable remuneration) পুনরুদ্ধার করা অথবা ফেরত নেওয়া;

(ঙ) ধারা ৬৭-তে উল্লিখিত দাবিসমূহের অগ্রাধিকারের ক্রম (Hierachy of claims) অনুসারে যেকোনো লেনদেনে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক ও পাওনাদারের অধিকার বাতিল বা অগ্রাহ্য করা;

(চ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক যে চুক্তিপত্রের পক্ষ, উক্ত চুক্তিপত্র বাতিল বা উহার শর্তাবলি বাতিল বা সংশোধনসহ উহা অব্যাহত রাখা বা হস্তান্তর করা বা গ্রহীতাকে পক্ষ হিসাবে প্রতিস্থাপন করা;

(ছ) ঋণ উপকরণের (debt instruments) মেয়াদ, প্রদেয় সুদ বা মুনাফার পরিমাণ এবং যে তারিখে সুদ বা মুনাফা প্রদেয় হইবে সেই তারিখ পরিবর্তন করা;

(জ) অপরিহার্য পরিষেবা এবং গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলির নিরবিচ্ছিন্নতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে-

(অ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক উহার উত্তরসূরিকে, যাহার মধ্যে হস্তান্তরগ্রহীতা অথবা ব্রিজ ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত, কোনো অস্থায়ী সময়ের জন্য সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করা;

(আ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের পক্ষে সম্পর্কহীন তৃতীয় পক্ষ হইতে প্রয়োজনীয় পরিষেবা গ্রহণ করা;

(ই) রেজল্যুশনের পূর্ব বিদ্যমান শর্তাবলি ও নিয়মাবলির অধীন, যেকোনো পরিষেবা প্রদানকারীকে ব্রিজ ব্যাংকসহ কোনো হস্তান্তরগ্রহীতার অনুকূলে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি অব্যাহত রাখিবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করিতে নির্দেশ প্রদান করা;

(ঝ) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের জন্য, যাহা ২ (দুই) কার্যদিবসের অধিক নহে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সকল ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত, সীমিত বা বন্ধ করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের জন্য, যাহা ৩ (তিন) মাসের অধিক নহে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের আংশিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত, সীমিত বা বন্ধ:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্তরূপ কার্যক্রম স্থগিত, সীমিত বা বন্ধ করিবার ক্ষেত্রে-

(১) সামগ্রিক অভ্যন্ত্যরীণ আর্থিক ব্যবস্থায় উহার সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করিবে;

(২) উহার প্রারম্ভিক এবং সমাপ্তির সময়ের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করিবে;

(৩) সুরক্ষিত আমানতের জন্য দৈনিক একটি উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করিবে।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, স্থগিতকরণ, সীমিতকরণ বা বন্ধকরণে নিম্নবর্ণিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হইবে, যথা:-

(অ) তফসিলি ব্যাংক পক্ষভুক্ত এইরূপ আর্থিক চুক্তি ত্বরান্বিতকরণ (acceleration), অবসান বা সমন্বয়ের অধিকার, যাহা এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশনের কোনো ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে উদ্ভূত হয়।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “ত্বরান্বিতকরণ অধিকার (acceleration right)” অর্থ চুক্তির এইরূপ কোনো বিধান যাহার মাধ্যমে কতিপয় শর্ত পূরণ না হইলে কোনো ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে সমুদয় বকেয়া ঋণ পরিশোধে বাধ্য করিতে পারে;

(আ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক যে চুক্তিপত্রের পক্ষ, উক্ত চুক্তিপত্রের অধীন পরিশোধ বা সরবরাহ করিবার দায়বদ্ধতা;

(ই) উক্ত তফসিলি ব্যাংক যে চুক্তিপত্রের পক্ষ, উক্ত চুক্তিপত্রের অধীন সম্পদ ক্রোক করিবার বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ বা সম্পদ আদায় করিবার অধিকার;

(ঞ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন কার্যক্রমের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, উহার অলাভজনক ব্যবসা বন্ধ করা এবং ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় যেকোনো পদ্ধতিতে তফসিলি ব্যাংকটির পুনর্গঠন করা;

(ট) রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারগণের উপর লোকসান আরোপ করা;

(ঠ) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত শর্তানুসারে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ব্যয়ে স্বতন্ত্র আইনজীবী, হিসাবরক্ষক, নিরীক্ষক, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ (valuation experts) এবং পরামর্শক নিযুক্ত করা;

(ড) ইসলামি ব্যাংকসমূহের রেজল্যুশন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করিতে নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা; এবং

(ঢ) এই অধ্যাদেশের অধীন ক্ষমতার প্রয়োগকে প্রভাবিতকারী, অথবা সংশ্লিষ্ট বা আনুষঙ্গিক যেকোনো কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিবেচিত হইলে, উক্ত কার্যক্রম সম্পাদন করা।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন ক্ষমতার কোনো একটি বা একাধিক এবং সরাসরি বা প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে প্রয়োগ করিতে পারিবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে, এই অধ্যাদেশে বর্ণিত রেজল্যুশন টুলস্ ব্যতীত অন্য কোনো টুলসও প্রয়োগ করিতে পারিবে।

ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল

১৭। (১) ধারা ৯ এ উল্লিখিত রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য অর্জন এবং এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করিবার জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল নামে একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পৃথক হিসাবের মাধ্যমে পরিচালিত হইবে, যাহা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য তহবিল হইতে পৃথক ও স্বতন্ত্র হইবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়-সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

 

(৩) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগের কৌশল হিসাবে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা যাইবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত তহবিল পরিচালনার লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, ও তত্ত্বাবধান;

(খ) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের সাধারণ প্রশাসন সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন; এবং

(গ) ধারা ৩৭ অনুসারে ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হইতে তফসিলি ব্যাংকসমূহের রেজল্যুশন কার্যক্রমের অর্থায়নে অবদান রাখা।

(৫) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলে নিম্নবর্ণিত উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ জমা হইবে, যথা:-

(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ ও অনুদান;

(খ) আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন অংশীদারগণের সরবরাহকৃত অনুদান বা ঋণ;

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান” অর্থে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF), ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (IDA), ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IBRD), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (IBD) এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত হইবে;

(গ) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের বিনিয়োগ হইতে প্রাপ্ত আয় ও মুনাফা;

(ঘ) তফসিলি ব্যাংকসমূহ হইতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হারে ধার্যকৃত চাঁদা; এবং

(ঙ) অন্য কোনো উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।

(৬) তহবিলের ব্যয় বাৎসরিকভাবে বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তালিকাভুক্ত Chartered Accountant দ্বারা নিরীক্ষা করাইতে হইবে এবং উক্ত নিরীক্ষার ফলাফল অর্থ বিভাগে জমা দিতে হইবে।

তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় মূল্যায়ন

১৮। (১) রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কোনো তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ, দায় অথবা শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজল্যুশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের পূর্বে যেকোনো সময়, উক্ত তফসিলি ব্যাংককে নির্দেশ প্রদান করিবে, অথবা সরাসরি, বা অস্থায়ী প্রশাসকের মাধ্যমে, সময় সময়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী দ্বারা উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ, দায় অথবা শেয়ারের বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের (fair value) উদ্যোগ গ্রহণ করিবে।

 

(২) জরুরি ভিত্তিতে রেজল্যুশন কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজনে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা সম্ভব না হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক-

(ক) উক্ত তফসিলি ব্যাংককে অস্থায়ী মূল্যায়ন করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে;

(খ) সরাসরি অস্থায়ী মূল্যায়নের ব্যবস্থা করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অস্থায়ী মূল্যায়ন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সম্পাদিত চূড়ান্ত স্বাধীন মূল্যায়নের পরিপূরক হইবে।

(৩) উপ-ধারা (১) এবং (২) অনুযায়ী সম্পাদিত মূল্যায়ন ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলি ও নিয়মাবলি অনুসারে উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক নির্বাহ করা হইবে।

(৪) এই ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারীর তালিকা নির্ধারণ ও প্রকাশ করিতে পারিবে।

(৫) এই ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নির্দেশনা জারি করিতে পারিবে।

আদালতের কার্যক্রম স্থগিতকরণ আদেশ

১৯। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অধীন তফসিলি ব্যাংকের কোনো কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উহার বিরুদ্ধে চলমান যেকোনো আইনগত কার্যধারা স্থগিতকরণের আদেশ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করিতে পারিবে।

(২) আদালত, উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত আবেদনের একতরফা শুনানির পর, রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অধীন তফসিলি ব্যাংকের কোনো কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উহার বিরুদ্ধে চলমান যেকোনো আইনগত কার্যধারা অনধিক ১২ (বারো) মাসের জন্য স্থগিত রাখিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত সময়সীমার মধ্যে রেজল্যুশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত না হইলে আদালত এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন প্রক্রিয়া সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করিতে পারিবে।

(৩) আদালত, উপ-ধারা (২) এর অধীন কোনো আদেশ জারি করিলে, বাংলাদেশ ব্যাংক, যথাশীঘ্র সম্ভব, বাংলাদেশ ব্যাংক ও উক্ত তফসিলি ব‍্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় উক্ত আদেশের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবে।

তৃতীয় অধ্যায়

অস্থায়ী প্রশাসন

প্রশাসক নিয়োগ

২০। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার অধীন অথবা ধারা ১৫ অনুযায়ী রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করিতে পারিবে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে, নির্দেশনায় ও দায়িত্বে কাজ করিবেন।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, যেকোনো সময় প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করিতে পারিবে।

প্রশাসক নিয়োগের উদ্দেশ্য

২১। (১) আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার অধীন প্রশাসক নিয়োগের উদ্দেশ্য হইবে নিম্নরূপ, যথা:-

(ক) ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা;

(খ) ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে ব্যাংকের ব্যবসা বা ব্যবসার অংশবিশেষ পরিচালনা করা; এবং

(গ) ব্যাংকের ব্যবসায় সুষ্ঠু ও বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিবার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(২) রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অধীন তফসিলি ব্যাংকের জন্য প্রশাসক নিয়োগের উদ্দেশ্য হইবে নিম্নরূপ, যথা:-

(ক) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজল্যুশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা; এবং

(খ) রেজল্যুশন কার্যক্রমের উদ্দেশ্য অর্জন করিবার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৩) ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৬ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রশাসককে অস্থায়ী প্রশাসনের অধীন থাকা তফসিলি ব্যাংকের মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের প্রতিস্থাপন করিতে অথবা ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক এই অধ্যাদেশের অধীন কার্যাবলি সম্পাদনে সহায়তার জন্য অস্থায়ী প্রশাসকের ক্ষমতা এবং প্রশাসকের ভূমিকা ও কার্যাবলি নির্ধারণ করিবে।

প্রশাসক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ যোগ্যতা

২২। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, কোনো তফসিলি ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগের পর উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবে।

(২) প্রশাসক হিসাবে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি নির্ধারণ করিবার ক্ষেত্রে, ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১৫ এর উপ-ধারা (৬) ও (১২) এর অধীন তফসিলি ব্যাংকের পরিচালকগণের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা ও উপযুক্ততার মানদণ্ড প্রযোজ্য হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, ইসলামি ব্যাংকের ক্ষেত্রে, প্রশাসক বা, ক্ষেত্রমত, তাহার সহায়তাকারী কর্মকর্তাগণের ইসলামি ব্যাংকিং সংক্রান্ত দক্ষতা থাকিতে হইবে।

(৩) কোনো ব্যক্তি প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত হইবার যোগ্য হইবেন না, যদি-

(ক) উক্ত ব্যক্তি অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের পাওনাদার, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা শেয়ার ধারক হন;

(খ) উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের রেকর্ড থাকে অথবা কোনো অনিষ্পন্ন দণ্ডাদেশ থাকে অথবা তিনি কোনো ফৌজদারি মামলার প্রতিপক্ষ হন;

(গ) কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিতে উক্ত ব্যক্তির মেয়াদোত্তীর্ণ দায় থাকে;

(ঘ) উক্ত ব্যক্তি ইতঃপূর্বে দেউলিয়া ঘোষিত হন; এবং

(ঙ) উক্ত ব্যক্তির অস্থায়ী প্রশাসনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সহিত স্বার্থের সংঘাত থাকে।

(৪) প্রশাসক একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হইবেন যাহার অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, আর্থিক বা অন্যবিধ কোনো স্বার্থ থাকিবে না।

(৫) কোনো ব্যক্তি কোনো তফসিলি ব্যাংকের প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত হইবার পর যদি উক্ত ব্যাংকের কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, আর্থিক বা অন্যবিধ কোনো স্বার্থ অর্জন করেন, তাহা হইলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে উক্ত বিষয়টি অবহিত করিবেন এবং অবিলম্বে প্রশাসক হিসাবে কাজ করা বন্ধ করিবেন।

(৬) উপ-ধারা (৫) এর উদ্দেশ্য পূরণকপ্লে, “স্বার্থ” অর্থে প্রশাসক বা তাহার পরিবারের, উক্ত তফসিলি ব্যাংকে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক স্বার্থ অন্তর্ভুক্ত হইবে, যাহা নিম্নবর্ণিত বিষয়ের সহিত সম্পর্কিত-

(ক) ব্যাংকের প্রতি বা ব্যাংক কর্তৃক কোনো দায় অথবা ব্যাংকের সম্পদের উপর মালিকানা স্বত্ত্ব;

(খ) পূর্ববর্তী ৫ (পাঁচ) বৎসরে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যাংকের সহিত সম্পর্ক;

(গ) ব্যাংকের সামগ্রিক সম্পদের সহিত প্রতিযোগিতামূলক সংঘাত ঘটায় এইরূপ সম্পদের মালিকানা;

(ঘ) পূর্ববর্তী ৫ (পাঁচ) বৎসরে তফসিলি ব্যাংকের সহিত কর্মসংস্থানগত সম্পর্ক; এবং

(ঙ) তফসিলি ব্যাংকের অস্থায়ী প্রশাসনের পরিধির মধ্যে প্রশাসককে নিরপেক্ষভাবে কার্য সম্পাদনে বাধা প্রদান করিতে পারবে এইরূপ অন্যান্য স্বার্থ।

(৭) আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থার অধীন নিযুক্ত অস্থায়ী প্রশাসনের মেয়াদ হইবে নিয়োগের তারিখ হইতে অনধিক ১২ (বারো) মাস এবং রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে, অস্থায়ী প্রশাসনের মেয়াদ, রেজল্যুশন কার্যক্রমের উদ্দেশ্যসমূহ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় সাপেক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।

(৮) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ বা অস্থায়ী প্রশাসনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি, ক্ষেত্রমত, যথাযথ কারণসহ, তফসিলি ব্যাংককে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।

(৯) কোনো প্রশাসক উপ-ধারা (২), (৩) বা (৪) এর বিধান অনুযায়ী অযোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিবে।

(১০) উপ-ধারা (১১) এর বিধান সাপেক্ষে, প্রশাসককে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত পারিশ্রমিক প্রদান করা হইবে।

(১১) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত শর্তানুসারে, প্রশাসকের পারিশ্রমিকসহ অস্থায়ী প্রশাসনের সকল ব্যয় অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক নির্বাহ করা হইবে।

সম্পদ ও দায়ের তালিকা প্রস্তুতকরণ

২৩। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসককে অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের সকল সম্পদ ও দায়ের একটি তালিকা প্রস্তুত করিতে এবং উহা বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিতে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(২) প্রশাসক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে, ব্যাংকের সম্পদ এবং/অথবা দায়ের পর্যালোচনাসহ প্রতিবেদন দাখিল করিবার জন্য একজন স্বতন্ত্র নিরীক্ষক নিয়োগ করিতে পারিবে।

কার্যকর রেজল্যুশনের সম্ভাব্য পন্থাসমূহের উপর প্রতিবেদন প্রস্তুতকর

২৪। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসককে অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের জন্য কার্যকর রেজল্যুশনের সর্বোত্তম পন্থা বাস্তবায়নের সুপারিশসহ উক্ত তফসিলি ব্যাংকের উপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করিতে এবং উহা বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিতে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(২) প্রশাসক, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উপর এবং প্রশাসকের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্যাবলি প্রয়োগ, পালন ও সম্পাদন সম্পর্কিত তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন নিয়মিতভিত্তিতে প্রস্তুত ও বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবেন।

(৩) প্রশাসক অস্থায়ী প্রশাসনের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকের তথ্য ও নথিপত্রের সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনা করিবেন।

(৪) প্রশাসক অস্থায়ী প্রশাসনের মেয়াদকালে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের উপর গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ সম্পর্কিত তথ্যের রেজিস্টার সংরক্ষণ করিবেন।

প্রশাসকের অবসান

২৫। নিম্নবর্ণিত কোনো কারণে প্রশাসকের কার্যক্রমের অবসান হইবে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসককে অব্যাহতির নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) ধারা ২২ এর উপ-ধারা (৭) এ উল্লিখিত নির্দিষ্ট মেয়াদ সমাপ্ত হইলে;

(খ) প্রশাসক মৃত্যুবরণ করিলে বা প্রশাসক হিসাবে কার্যসম্পাদন করিতে অক্ষম হইলে;

(গ) পদত্যাগপত্র দাখিল করিলে;

(ঘ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, উক্ত প্রশাসক তাহার কোনো ক্ষমতা, দায়িত্ব বা কার্যাবলি প্রয়োগ, পালন বা সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হইলে অথবা এই অধ্যাদেশের অধীন উক্ত প্রশাসকের উপর আরোপিত শর্তাবলি ও নিয়মাবলি পরিপালনে ব্যর্থ হইলে;

(ঙ) অন্য কোনো কারণে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকিবার জন্য অযোগ্য হইলে; অথবা

(চ) বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত প্রশাসকের মেয়াদ সমাপ্ত করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে।

অস্থায়ী প্রশাসনের প্রতিবেদন দাখিল

২৬। অস্থায়ী প্রশাসনের কার্যক্রমের সমাপ্তির পর প্রশাসক, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অস্থায়ী প্রশাসনের কার্যক্রমের উপর একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবেন।

চতুর্থ অধ্যায়

রেজল্যুশন টুলস

বিদ্যমান বা নুতন শেয়ার ধারক কর্তৃক মূলধন বৃদ্ধি

২৭। (১) নূতন শেয়ার ইস্যু করিবার মাধ্যমে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের মূলধন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) ধারা ১৮ এ উল্লিখিত মূল্যায়ন অনুযায়ী লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর অধীন মূলধন বিষয়ক আবশ্যকতা পূরণকল্পে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের শেয়ারসমূহে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত মূলধনের পরিমাণ নির্ধারণ এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা: এবং

(খ) তফসিলি ব্যাংকের বিদ্যমান বা নূতন শেয়ার ধারকগণকে, প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত মূলধনের সম্পূর্ণ পরিমাণ বা উহার অংশবিশেষের সমতুল্য বাধ্যকর অঙ্গীকার (binding commitments) দাখিলপূর্বক কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার সাবস্ক্রাইব ও ক্রয়ের জন্য লিখিত অনুরোধ করা:

তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৭৭ এ উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তিগণ এবং ধারা ৮৩-তে উল্লিখিত ব্যক্তিগণ এইরূপ মূলধন বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না:

আরও শর্ত থাকে যে, উল্লিখিত অনুরোধের পূর্বে, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, ছায়া পরিচালক (shadow directors) হিসাবে কাজ করিয়াছেন এবং উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ব্যর্থতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখিয়াছেন এইরূপ শেয়ার ধারককে পরীক্ষা ও চিহ্নিত করিতে পারিবে এবং এই ধারার অধীন এইরূপ শেয়ার ধারককে মূলধন বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করিবার অনুমতি প্রদান করিবে না:

(গ) যদি কোনো শেয়ার ধারক এই ধারার অধীন অতিরিক্ত শেয়ার সাবস্ক্রাইব বা ক্রয় করেন, তাহা হইলে উক্ত শেয়ার ধারককে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর অধীন ব্যাংক কোম্পানিসমূহের শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমা সম্পর্কে জারীকৃত নির্দেশাবলির প্রয়োগ হইতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, নির্ধারিত মেয়াদের জন্য, প্রয়োজনে, অব্যাহতি প্রদান করা যাইবে।

(২) অন্য কোনো আইন বা তফসিলি ব্যাংকের সংঘস্মারক ও সংঘবিধি বা অন্য কোনো গঠনতন্ত্রীয় দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ার ধারকের, উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত বিধান ব্যতীত, ইস্যুকৃত অতিরিক্ত শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রাধিকার বা অন্য কোনো অধিকার থাকিবে না।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারের উপর লোকসান আরোপ করিতে পারিবে।

শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর

২৮। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের, অতঃপর এই অধ্যায়ে “হস্তান্তরকারী ব্যাংক” বলিয়া উল্লিখিত, শেয়ার বা সম্পদ ও দায়ের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ কোনো তৃতীয় পক্ষের নিকট, অতঃপর এই অধ্যায়ে “হস্তান্তর গ্রহীতা” বলিয়া উল্লিখিত, হস্তান্তর করিতে পারিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের একীভূতকরণসহ ব্যবসায়িক শর্তের (commercial terms) ভিত্তিতে হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির বিষয়ে হস্তান্তরগ্রহীতার সহিত মধ্যস্থতা (negotiate) করিতে পারিবে।

(৩) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের হস্তান্তরিত দায়সমূহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উহার সুরক্ষিত আমানতকারীগণের পাওনা অগ্রাধিকার পাইবে।

(৪) সংকটাপূর্ণ সম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে গঠিত সংকটাপন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত যেকোনো স্থানীয় বা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হস্তান্তরগ্রহীতা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে।

ব্যাখ্যা।- এই উপ-ধারার উদ্দেশ্য পূরণকপ্লে, “সংকটাপন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি (Distressed Asset Management Company)” অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং সংকটাপন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপনার ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করে এইরূপ একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

(৫) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারের উপর লোকসান আরোপ করিতে পারিবে।

(৬) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক বা পাওনাদারসহ কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যক্তি বা অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট হইতে কোনো প্রকার সম্মতি ব্যতীত ব্যাংকের শেয়ার ধারকগণের পক্ষে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার বা সম্পদ ও দায় হস্তান্তর করিতে পারিবে।

(৭) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের কোনো শেয়ার ধারক উক্ত ব্যাংকের শেয়ার বিক্রয়, বন্ধকীকরণ বা ট্রাস্টে স্থানান্তরসহ অন্য যেকোনো উপায়ে হস্তান্তর করিতে পারিবেন না এবং তফসিলি ব্যাংকের কোনো শেয়ার ধারক এই বিধানের পরিপন্থি কোনো লেনদেন করিলে উহা অবৈধ ও বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

(৮) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের হস্তান্তর মূল্য একটি উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হইবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য বিবেচনাক্রমে প্রতিযোগিতার ফলাফল নির্ধারণ করিবে:

তবে শর্ত থাকে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ফলে রেজল্যুশনের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হইতে পারে, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উহা পরিহার করিতে পারিবে।

(৯) রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, জারীকৃত নির্দেশনার মাধ্যমে উপ-ধারা (১) এর আওতায় রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের হস্তান্তরযোগ্য সম্পদ ও দায় নির্বাচন করিবার জন্য মানদণ্ড নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(১০) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, নিম্নবর্ণিত বিষয় সম্পদ ও দায় এর অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা:-

(ক) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের মালিকানাধীন যেকোনো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ, যেমন- ঋণ, নগদ উদ্বৃত্ত, রিজার্ভ তহবিল, বিনিয়োগ, আমানত ইত্যাদি;

(খ) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের মালিকানাধীন যেকোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হইতে উদ্ভূত বা ইহার সহিত সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতাসহ সকল প্রকার অধিকার, ক্ষমতা, বিশেষাধিকার, কর্তৃত্ব এবং স্বার্থের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ;

(গ) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের সকল আইনি অধিকার বা বাধ্যবাধকতা; এবং

(ঘ) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের সহিত সম্পর্কিত বা আনুষঙ্গিক সকল বহি, হিসাব এবং নথিপত্র।

(১১) হস্তান্তরগ্রহীতা সত্তা-

(ক) কেবল সেই দায়সমূহের জন্য হস্তান্তরকারী ব্যাংকের শেয়ার ধারক অথবা অন্যান্য পাওনাদারের নিকট দায়বদ্ধ থাকিবে, যাহা স্পষ্টভাবে হস্তান্তর করা হইয়াছে, অথবা অন্য কোনো শর্তানুসারে হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক সম্মত দায়, তবে করসহ অন্য দায় ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না; এবং

(খ) রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে সম্পদ ও দায় হস্তান্তরের শর্ত পরিপালন করিতে হস্তান্তরগ্রহীতার ব্যর্থতার কারণে সরকার অথবা ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল অথবা আমানত সুরক্ষা তহবিলকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য দায়ী হইবে।

(১২) হস্তান্তরগ্রহীতা রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক হইতে অর্জিত আমানতের উপর সুদ হার হ্রাস বা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে, যাহা আমানতকারীগণের নিকট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তি প্রেরণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।

(১৩) হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো প্রতিদান (consideration) হইতে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সুবিধাভোগী হইবে, যথা:-

(ক) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, যেক্ষেত্রে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে বিক্রয় ও হস্তান্তর সম্পন্ন হয়; অথবা

(খ) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক, যেক্ষেত্রে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের কতিপয় অথবা সকল সম্পদ এবং দায় হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরের মাধ্যমে বিক্রয় ও হস্তান্তরিত হয়।

শেয়ার, সম্পদ ও দায় হস্তান্তরের প্রভাব

২৯। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ভিন্নরূপ কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত না হইলে, যেক্ষেত্রে ধারা ২৮ এর অধীন হস্তান্তরকারী ব্যাংকের সম্পদ ও দায় কোনো হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরিত হয়, সেইক্ষেত্রে-

(ক) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়ের উপর হস্তান্তর গ্রহীতার নিয়ন্ত্রণ ও দখল থাকিবে;

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক, হস্তান্তরগ্রহীতার সম্মতিতে, উক্ত হস্তান্তরের সময় নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে, হস্তান্তরকারী ব্যাংককে যেকোনো শেয়ার, সম্পদ বা দায় প্রত্যর্পণ (reverse transfer) করিতে পারিবে, যদি উক্ত সম্পদ বা দায় রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ না হয়:

আরও শর্ত থাকে যে, আমানতকারীসহ শেয়ার ধারক এবং পাওনাদার, যাহাদের স্বার্থ ও অধিকার হস্তান্তরকারী ব্যাংকে বিদ্যমান রহিয়াছে, হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়ের ক্ষেত্রে তাহাদের কোনো অধিকার অথবা দাবি থাকিবে না;

(খ) হস্তান্তরকারী ব্যাংককে উহার ব্যবসার অবশিষ্ট অংশ যাহা হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট হস্তান্তরিত হয় নাই, তাহা পরিচালনা করিতে সক্ষম করিবার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন হস্তান্তরকারী ব্যাংককে ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রদত্ত লাইসেন্সে প্রয়োজনীয় সংশোধন, বা ক্ষেত্রমত, উহা বাতিল করা যাইবে;

(গ) হস্তান্তরিত সম্পদ এবং দায় সম্পর্কিত অথবা আনুষঙ্গিক সকল চুক্তি, ইস্যুকৃত গ্যারান্টি, দলিল, বন্ড, চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, আইনি প্রতিনিধিত্বের মজুরি এবং অন্য যেকোনো প্রকার ইন্সট্রুমেন্ট, ক্ষেত্রবিশেষে, হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক সম্পাদিত অথবা মজুরিকৃত চুক্তি, ইস্যুকৃত গ্যারান্টি, দলিল, বন্ড, চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, আইনি প্রতিনিধিত্বের মঞ্জুরি অথবা অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট হিসাবে বিবেচিত হইবে;

(ঘ) হস্তান্তরকারী ব্যাংক কর্তৃক বা ইহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কোনো কার্যধারা বা মামলা যাহা হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত, উহা হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক বা তাহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কার্যধারা বা মামলা বলিয়া গণ্য হইবে এবং তদনুসারে উহা অব্যাহত রাখা ও নিষ্পত্তি করা যাইবে;

(ঙ) হস্তান্তরকারী ব্যাংকের ব্যবসার হস্তান্তরিত অংশের সহিত যুক্ত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাহারা হস্তান্তরকারী ব্যাংকে কর্মরত রহিয়াছেন এবং হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক যাহাদের চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয় নাই, তাহারা হস্তান্তরগ্রহীতা কর্তৃক বকেয়া পাওনা পাওয়ার অধিকারী হইবেন:

তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ পাওনা অন্য কোনো আইনের অধীন অন্য কোনো পাওনা দাবি করিবার ক্ষেত্রে উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর অধিকারকে ক্ষুন্ন করিবে না।

ব্রিজ ব্যাংক (Bridge Bank) প্রতিষ্ঠা

৩০। (১) রেজল্যুশনের অধীন এক বা একাধিক তফসিলি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি এবং কার্যকর কার্যক্রম অব্যাহত রাখিবার এবং পর্যায়ক্রমে উহাদের তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রয় করিবার উদ্দেশ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক, ধারা ৩১ এর উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত শর্তাবলি পরিপালন সাপেক্ষে, এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রিজ ব্যাংক কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের মালিকানাধীন বা ইস্যুকৃত সকল অথবা অংশবিশেষ সম্পদ, দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা বা অন্যান্য সিকিউরিটি ইন্সট্রুমেন্ট ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তর করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তরিত দায়সমূহের মোট পরিমাণ কোনোভাবেই হস্তান্তরিত সম্পদ এবং ক্ষেত্র বিশেষে, আমানত সুরক্ষা তহবিল, ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল এবং/অথবা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যান্য সম্পদের চাইতে অধিক হইবে না।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক, উপ-ধারা (১) এর অধীন গৃহীত সিদ্ধান্ত, উক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করিবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করিবার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত সাপেক্ষে, যথাশীঘ্র সম্ভব, ব্রিজ ব্যাংককে লাইসেন্স প্রদান করিবে।

(৫) ব্রিজ ব্যাংকের গঠনতন্ত্রীয় দলিলের বিষয়বস্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হইবে।

(৬) ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম উপ-ধারা (৪) এর অধীন লাইসেন্স ইস্যু করিবার তারিখের পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস হইতে আরম্ভ হইবে।

(৭) ব্রিজ ব্যাংক, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক হইতে অর্জিত আমানতের উপর সুদ হার হাস বা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে, যাহা আমানতকারীগণের নিকটা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রেরণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।

(৮) ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম আরম্ভ হইবার পর, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রত্যাহার করা হইবে এবং অবশিষ্ট সম্পদ ও দায়সমূহ অবসায়ন করা হইবে।

(৯) বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রিজ ব্যাংককে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের ধারাবাহিকতা হিসাবে বিবেচনা করিতে পারিবে এবং হস্তান্তরিত সম্পদ, অধিকার বা দায়ের উপর রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োগযোগ্য যেকোনো অধিকার প্রয়োগ করিবার ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে।

(১০) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারের উপর লোকসান আরোপ করিতে উহার ক্ষমতা প্রয়োগ করিবে।

(১১) ব্রিজ ব্যাংক ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর অধীন লাইসেন্স প্রাপ্ত এবং একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হইবে।

(১২) ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রযোজ্য মানদণ্ড বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা

৩১। (১) ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রশাসন একটি পরিচালনা পর্ষদের উপর ন্যস্ত থাকিবে, যাহা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে।

(২) ব্রিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্যদের সদস্যগণ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীগণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে, ব্রিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন।

(৩) ব্রিজ ব্যাংকের মূলধন নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক উৎস হইতে সংগৃহীত হইবে, যথা:-

(ক) ধারা ৩৩ এ উল্লিখিত রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের মূলধন এবং যোগ্য দায়সমূহের হাস এবং/অথবা রূপান্তরের মাধ্যমে;

(খ) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত; এবং

(গ) ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল:

তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার কোনো কিছুই বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্রিজ ব্যাংকের অনুকূলে জরুরি তারল্য সহায়তা প্রদান এবং প্রচলিত বাজারে তারল্য সঞ্চালন প্রক্রিয়া অনুসরণ অথবা ঋণ প্রদান করা হইতে বারিত করিবে না:

আরও শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীনে ব্রিজ ব্যাংককে মূলধন সরবরাহ বাংলাদেশ ব্যাংককে উক্ত ব্রিজ ব্যাংকের উপর নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা প্রয়োগ করা হইতে বারিত করিবে না।

(৪) ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার শর্তাবলির মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা:-

(ক) মূলধন সংস্থান;

(খ) পরিচালন তহবিল এবং তারল্য সহায়তা;

(গ) তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য প্রুডেন্সিয়াল এবং অন্যান্য তত্ত্বাবধানমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক আবশ্যকতা হইতে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান; এবং

(ঘ) সুশাসনের আবশ্যকতা (Governance requirements)।

(৫) এই ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিম্নবর্ণিত ক্ষমতা থাকিবে, যথা:-

(ক) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায়সমূহ, সময় সময়, ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তর;

(খ) উপ-ধারা (৬) এর বিধান সাপেক্ষে, ব্রিজ ব্যাংক হইতে সকল অথবা আংশিক সম্পদ ও দায় রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকে প্রত্যর্পণ (revese transfer);

(গ) ব্রিজ ব্যাংক হইতে সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা (obligations) অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর; এবং

(ঘ) ব্রিজ ব্যাংকের সমাপ্তি এবং নিয়মানুযায়ী অবসায়নে সহায়তা।

(৬) উপ-ধারা (৫) এর অধীন হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নিম্নবর্ণিত যেকোনো পরিস্থিতিতে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকে প্রত্যাবর্তিত হইবে-

(ক) যেক্ষেত্রে ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে উক্তরূপ প্রত্যর্পণের সম্ভাবনার সুস্পষ্ট বিধান রাখা হইয়াছে;

(খ) যেক্ষেত্রে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক হইতে ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা উক্ত হস্তান্তরের শর্তাবলি পূরণ করে না অথবা ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে উল্লিখিত সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত শ্রেণিসমূহের মধ্যে পড়ে না; অথবা

(গ) যেক্ষেত্রে সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা হস্তান্তরের সময় সংঘটিত মূল্যায়ন ত্রুটি (valuation error) সংশোধন করা প্রয়োজন হয়।

(৭) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের কোনো শেয়ার ধারক অথবা পাওনাদার এবং অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ, যাহাদের শেয়ার, সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা এবং মালিকানার অন্যান্য দলিল ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তর করা হয় নাই, তাহাদের, ব্রিজ ব্যাংক, উহার পরিচালনা পর্যদ অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতার উপর, কোনো অধিকার থাকিবে না।

(৮) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সুরক্ষিত আমানতকারীগণের পাওনার সমন্বয়ে ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তরিত দায় গঠিত হইবে।

(৯) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের নিকট উক্ত ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহের পাওনা ব্রিজ ব্যাংকে হস্তান্তর করা যাইবে না।

(১০) উপ-ধারা (৪) এর দফা (গ) অনুযায়ী সাময়িক কোনো অব্যাহতি প্রদান করা না হইলে ব্রিজ ব্যাংক, কোনো তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য প্রুডেন্সিয়াল এবং অন্যান্য তত্ত্বাবধানমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বাধ্যবাধকতা পরিপালন করিবে।

(১১) রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যসমূহ বিবেচনাক্রমে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নিম্নবর্ণিত বিষয় সন্নিবেশপূর্বক ব্রিজ ব্যাংকের কর্মপরিচালনা সংক্রান্ত গাইডলাইন্স প্রণয়ন প্রদান করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) ব্রিজ ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালন পদ্ধতি;

(খ) ব্রিজ ব্যাংকের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত অব্যাহতি;

(গ) ব্রিজ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কর্পোরেট গভর্নেন্সের মূলনীতি;

(ঘ) ব্রিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীগণের যোগ্যতা ও উপযুক্ততা মূল্যায়নের জন্য প্রযোজ্য মানদণ্ড;

(ঙ) সম্পদ ও দায়, আইনি অধিকার ও বাধ্যবাধকতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়; এবং

(চ) ব্রিজ ব্যাংকে প্রাথমিকভাবে হস্তান্তরিত সম্পদ ও দায়সমূহ প্রত্যাবর্তনের পদ্ধতি ও পরিস্থিতি।

ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ

৩২। (১) উপ-ধারা (৩) ও (৪) এর বিধান সাপেক্ষে, ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় হস্তান্তরের শেষ তারিখ হইতে ২ (দুই) বৎসরের অধিক হইবে না।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত মেয়াদ পূর্তিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক উহার নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য বিবেচনাপূর্বক এবং ব্রিজ ব্যাংকের উপর অর্পিত কার্যাবলি সম্পন্ন হওয়া সাপেক্ষে, দ্রুততার সহিত উক্ত ব্যাংকের অবসান (termination) করিবে।

(৩) উপ-ধারা (৪) এর বিধান সাপেক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, ব্রিজ ব্যাংক রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য আর পূরণ করিতেছে না, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক,-

(ক) ব্রিজ ব্যাংককে অন্য কোনো সত্তার সহিত একীভূত করিতে পারিবে;

(খ) ব্রিজ ব্যাংকের সম্পদ, অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রয় করিতে পারিবে; অথবা

(গ) ব্রিজ ব্যাংক অবসায়ন (winding up) করিতে পারিবে।

(৪) ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একবারে ১ (এক) বৎসরের জন্য বৃদ্ধি করা যাইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ, সর্বমোট ৫ (পাঁচ) বৎসরের অধিক হইবে না এবং মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সরকারকে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা প্রদান করিবে।

(৫) উপ-ধারা (২), (৩) ও (৪) এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল সিদ্ধান্ত, বিদ্যসান পরিস্থিতি এবং মার্কেটের অবস্থার মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করিয়া গৃহীত হইবে যাহাতে উক্ত সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয়।

(৬) বাংলাদেশ ব্যাংক, উপ-ধারা (২), (৩) ও (৪) এর অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে, সরকারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করিবে।

(৭) উপ-ধারা (২) এর অধীন ব্রিজ ব্যাংকের মেয়াদ অবসান হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে, যথা:-

(ক) উক্ত ব্রিজ ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যুকৃত লাইসেন্স বাতিল করা; এবং/অথবা

(খ) ষষ্ঠ অধ্যায়ের অধীন উক্ত ব্রিজ ব্যাংক অবসায়ন করা।

(৮) এই ধারার অধীনে ব্রিজ ব্যাংকের বিক্রয়লব্ধ সমুদয় অর্থ উক্ত ব্রিজ ব্যাংকের শেয়ার ধারকগণ প্রাপ্য হইবেন।

(৯) ব্রিজ ব্যাংক অবসায়নের ক্ষেত্রে, অবসায়নে প্রযোজ্য ধারা ৬৭-এ উল্লিখিত দাবিসমূহের অগ্রাধিকারের ক্রমকে (hierarchy of claims) অনুসরণ করা হইবে।

মূলধন ও যোগ্য দায় হ্রাস এবং/অথবা রূপান্তর

৩৩। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত কোনো উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের মূলধন ও যোগ্য দায়সমূহের হ্রাস (write down) এবং/অথবা রূপান্তর করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) ব্যাংকের অনুমোদন প্রাপ্তির শর্তাবলি পরিপালন করিবার ও তাহার কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করিবার উদ্দেশ্যে এবং ব্যাংকের উপর মার্কেটের আস্থা বজায় রাখিতে ব্যাংকটিকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে মূলধন যোগান দেওয়া;

(খ) হস্তান্তরিত দাবি অথবা ঋণ উপকরণসমূহকে (debt instruments) মূলধনে রূপান্তর করিতে অথবা উহার আসল পরিমাণ হ্রাস করাইতে যাহা-

(অ) কোনো ব্রিজ ব্যাংককে মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর হইয়াছে; অথবা

(আ) তৃতীয় পক্ষের নিকট শেয়ার সম্পদ ও দায় বিক্রয়ের অধীন হস্তান্তর করা হইয়াছে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডার, অন্যান্য পাওনাদার ও আমানতকারীর সম্মতি ব্যতীত মূলধন এবং যোগ্য দায়সমূহের হ্রাস (write down) এবং/অথবা রূপান্তর করিতে পারিবে।

(৩) উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) অনুসারে টুল প্রয়োগ করিবার ২ (দুই) মাসের মধ্যে, মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীগণ অথবা প্রশাসক, যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদী সক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গৃহীতব্য পদক্ষেপসমূহ উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা দাখিল করিবেন এবং উক্ত পদক্ষেপসমূহ অর্থনৈতিক ও আর্থিক বাজার পরিস্থিতির বাস্তবসম্মত অনুমানের উপর ভিত্তি করিয়া নির্ধারিত হইবে এবং উক্ত পরিকল্পনার অধীন উক্ত ব্যাংক কাজ করিবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের মূলধন এবং যোগ্য দায় নিম্নবর্ণিত ক্রম অনুসারে হাস এবং/অথবা রূপান্তর করিবে, যথা:-

(ক) কমন ইকুইটি টিয়ার-১ মূলধন উপাদানসমূহ প্রয়োজন অনুসারে এবং উহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হ্রাস করা হইবে;

(খ) দায়ী ব্যক্তিগণ হইতে প্রাপ্ত আমানত, সুরক্ষিত দায়সহ অন্য কোনো দায় প্রয়োজন অনুসারে এবং তাহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হ্রাস করা হইবে;

(গ) এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদানসমূহ, প্রয়োজন অনুসারে এবং উহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হাস এবং/অথবা রূপান্তর করা হইবে;

(ঘ) টিয়ার ২ মূলধন উপাদানসমূহ, প্রয়োজন অনুসারে এবং উহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হ্রাস এবং/অথবা রূপান্তর করা হইবে;

(ঙ) টিয়ার ২ মূলধন উপাদান নহে এইরূপ সাবঅর্ডিনেটেড ডেটসমূহ, প্রয়োজন অনুসারে এবং উহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হ্রাস এবং/অথবা রূপান্তর করা হইবে; এবং

(চ) অবশিষ্ট যোগ্য দায়, প্রয়োজন অনুসারে এবং উহাদের সক্ষমতার ব্যাপ্তি পর্যন্ত, হাস এবং/অথবা রূপান্তর করা হইবে।

(৫) উপ-ধারা (৪) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, যোগ্য দায়সমূহের মধ্যে নিম্নবর্ণিত বিষয় ব্যতীত সুরক্ষা বহির্ভূত আমানতসহ জামানতবিহীন দায়সমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা:-

(ক) সুরক্ষিত আমানত;

(খ) পারিশ্রমিকের পরিবর্তনশীল অংশ ব্যতীত কর্মীর প্রাপ্য বেতন, পেনশন সুবিধা অথবা অন্যান্য নির্ধারিত পারিশ্রমিকের সহিত সম্পর্কিত কোনো দায়;

(গ) ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক পাওনাদারের নিকট দায়, যাহা রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকে পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহের ফলে উদ্ভূত হয় এবং যাহা ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রমের জন্য অত্যাবশ্যক, যাহার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রহিয়াছে আইটি পরিষেবা, ইউটিলিটি ও প্রাঙ্গণ ভাড়া, সার্ভিসিং ও রক্ষণাবেক্ষণ; এবং

(ঘ) কর ও সামাজিক নিরাপত্তা (social security) কর্তৃপক্ষের নিকট দায়।

(৬) বিশেষ পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় নির্দিষ্ট যোগ্য দায়কে হাস অথবা রূপান্তর করিবার ক্ষমতার প্রয়োগ সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে ব্যত্যয় (exclusion) করিতে পারিবে, যেক্ষেত্রে-

(ক) বাংলাদেশ ব্যাংকের সরল বিশ্বাস ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে উহা হ্রাস অথবা রূপান্তর করা সম্ভব না হয়; এবং

(খ) রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য এই ব্যত্যয় অপরিহার্য হয়।

ইসলামি ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে রেজল্যুশন টুলের প্রয়োগ

৩৪। বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, ইসলামি ব্যাংকসমূহের ক্ষেত্রে রেজল্যুশন টুল প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট করিবার জন্য প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

সরকার কর্তৃক সহায়তা প্রদান

৩৫। (১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশনের অর্থায়নে বা, ক্ষেত্রমত, ব্রিজ ব্যাংকের অর্থায়নে সহায়তার জন্য সরকার কর্তৃক আর্থিক সহায়তা প্রদান আবশ্যক কি না, উহা বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের সহিত পরামর্শক্রমে, নির্ধারণ করিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে,-

(ক) আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রভাব পরিহারের লক্ষ্যে এইরূপ সহায়তা অপরিহার্য;

(খ) আমানত সুরক্ষা তহবিল এবং/অথবা ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল বা বেসরকারি উৎস হইতে বিকল্প তহবিল নিঃশেষ হইয়া যায় অথবা এইরূপ উৎসসমূহ হইতে তহবিল যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত বা সহজলভ্য না হয়;

(গ) তফসিলি ব্যাংকের লোকসান শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার-১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার-২ মূলধন উপাদান ধারক এবং টিয়ার-২ মূলধন উপাদান ধারকগণ ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারগণের উপর আরোপিত হয়;

(ঘ) আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখিবার সময় ব্যবহারযোগ্য অন্যান্য রেজল্যুশন টুলসমূহের সর্বাধিক সম্ভাব্য ব্যবহারযোগ্যতা মূল্যায়ন করিবার পর এইরূপ সহায়তা শেষ উপায় হিসাবে ব্যবহার করা হয়; এবং

(ঙ) রেজল্যুশন বা পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক বা ব্রিজ ব্যাংক কার্যকর (viable) হইবে প্রতীয়মান হয়, তাহা হইলে সরকার উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সহায়তা প্রদান করিবে।

(৩) এই ধারার অধীন সরকারি সহায়তা নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে প্রদান করা যাইবে, যথা:-

(ক) কোনো ব্রিজ ব্যাংক বা রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অধীন তফসিলি ব্যাংকের জন্য আর্থিক সহায়তা সম্প্রসারণ করিতে;

(খ) ধারা ৪০ এর অধীন শেয়ার ধারক এবং পাওনাদারের ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে; অথবা

(গ) দফা (ক) বা (খ)-তে উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহের সহিত সম্পর্কিত অন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে।

(৪) সরকার, এই ধারার অধীন সহায়তা প্রদানের ফলে রেজল্যুশন অধীন তফসিলি ব্যাংক বা ব্রিজ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকারী স্বার্থের ধারকে (holder of controlling interest) পরিণত হইলে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক বা ব্রিজ ব্যাংক বাণিজ্যিক ও পেশাদার ভিত্তিতে পরিচালিত হইবে এবং ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৯ এর উপ-ধারা (১) এর সহিত সঙ্গতি রাখিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিবিড় তত্ত্বাবধানের অধীন হইবে।

(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক বা, ক্ষেত্রমত, ব্রিজ ব্যাংক, সরকারি মালিকানা হইতে প্রস্থানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে, যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে, পরিকল্পনা প্রণয়ন করিবে এবং উক্ত পরিকল্পনায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশের ভিত্তিতে, সময় এবং মার্কেট পরিস্থিতি বিবেচনাক্রমে ন্যাযথাযথ পদ্ধতিতে প্রস্থানের বিকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করিতে হইবে।

(৬) সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশক্রমে, এই অধ্যাদেশের অধীন সহায়তা প্রদান এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহের উপর পরবর্তীতে চাঁদা আরোপের মাধ্যমে এইরূপ তহবিলের পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

(৭) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারি সহায়তার আওতায় ঋণ, ইক্যুইটি, সম্পদ ক্রয় বা রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অধীন তফসিলি ব্যাংক বা ব্রিজ ব্যাংকের অনুকূলে গ্যারান্টি ইস্যু করা অথবা ধারা ৩৬ এর অধীন উক্ত তফসিলি ব্যাংককে সাময়িক সরকারি মালিকানায় নিয়ে আসা অন্তর্ভুক্ত থাকিতে পারে।

সাময়িক সরকারি মালিকানা

৩৬। (১) ধারা ৩৫ এর উপ-ধারা (২), (৪) এবং (৫) এর বিধান সাপেক্ষে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন কোনো তফসিলি ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় আনিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তর আদেশ জারি করিতে পারিবে, যেখানে হস্তান্তর প্রহীতা সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি হইবে।

ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা (financial contribution)

৩৭। (১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের মাধ্যমে কোনো তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার অর্থায়ন করিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত তহবিল নিম্নবর্ণিত শর্তসাপেক্ষে ব্যবহার করা যাইবে, যথা:-

(ক) এইরূপ আর্থিক সহায়তা আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার উপর গুরুতর বিরূপ প্রভাব এড়াইতে প্রয়োজনীয় হইলে;

(খ) বেসরকারি উৎস হইতে প্রাপ্ত বিকল্প তহবিল নিঃশেষ হইলে অথবা এইরূপ উৎসসমূহ যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত বা সহজলভ্য না হইলে; এবং

(গ) তফসিলি ব্যাংকের লোকসান শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক এবং টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারকগণ ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারগণের উপর আরোপিত হইলে।

(৩) এই ধারার অধীন ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হইতে নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাইবে, যথা:-

(ক) কোনো তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার সমর্থনে;

(খ) ধারা ৪০ এর অধীন শেয়ার ধারক এবং পাওনাদারের ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে; অথবা

(গ) দফা (ক) বা (খ)-তে উল্লিখিত উদ্দেশ্যের সহিত সম্পর্কিত অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে।

(৪) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক বা, ক্ষেত্রমত, ব্রিজ ব্যাংককে ঋণ, ইক্যুইটি, সম্পদ ক্রয়, অনুদান অথবা গ্যারান্টি ইস্যুর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যাইবে।

(৫) বাংলাদেশ ব্যাংক, এই অধ্যাদেশের অধীন, ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং প্রদত্ত তহবিলের পুনরুদ্ধার সম্পর্কিত প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

আমানত সুরক্ষা তহবিল হইতে রেজল্যুশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা (financial contribution)

৩৮। (১) উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমানত সুরক্ষা তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করিতে পারিবে, যাহার পরিমাণ সুরক্ষিত আমানতের পরিমাণ অপেক্ষা অধিক হইবে না:

তবে শর্ত থাকে যে, উল্লিখিত পরিমাণ সেই সুরক্ষিত আমানতের সমান হইবে, যাহা ব্যাংকটি অবসায়ন প্রক্রিয়ার অধীন অবসায়িত হইলে আমানত সুরক্ষা তহবিল পরিশোধ করিত।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত আর্থিক সহায়তা আমানত সুরক্ষা তহবিল কর্তৃক প্রদান করা হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, তফসিলি ব্যাংকের লোকসান শেয়ার ধারক, দায়ী ব্যক্তি, এডিশনাল টিয়ার ১ মূলধন উপাদান ধারক, টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারক এবং টিয়ার ২ মূলধন উপাদান ধারকগণ ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ডেট হোল্ডারগণের উপর আরোপ করা হইবে, এবং যদি নিম্নবর্ণিত কোনো শর্ত পূরণ হয়, যথা:-

(ক) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের লাইসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যাহার করা হইলে অথবা কোনো নির্দিষ্ট তারিখে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে;

(খ) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় ধারা ২৮ এবং ৩০ এ উল্লিখিত টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হইলে।

(৩) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক বা, ক্ষেত্রমত, ব্রিজ ব্যাংককে আর্থিক সহায়তা নগদ এবং নগদ সমতুল্য এবং/অথবা সরকারি সিকিউরিটিজের আকারে প্রদান করা যাইবে।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক এই অধ্যাদেশের অধীনে, আমানত সুরক্ষা তহবিল কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং উক্ত তহবিলের পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত প্রবিধান প্রণয়ন করিবে।

রেজল্যুশন প্রক্রিয়া আরম্ভ ও ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে অবহিতকরণ

৩৯। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজল্যুশন প্রক্রিয়া আরম্ভের সময় সরকারকে অবহিত করিবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট বিদেশি রেগুলেটর বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে অবহিত করিবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তফসিলি ব্যাংকের উপর রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবে।

শেয়ার ধারক এবং পাওনাদারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান

৪০। (১) অবসায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংককে বিলুপ্ত করা হইলে কোনো শেয়ার ধারক বা পাওনাদার যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হইতেন উহা অপেক্ষা অধিক ক্ষতির সম্মুখীন হইলে তাহাকে ক্ষতির পরিমাণের পার্থক্যের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত পার্থক্য মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হইবে যাহা রেজল্যুশন সম্পন্ন হইবার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত কোনো স্বতন্ত্র পেশাদার মূল্যায়নকারী কর্তৃক পরিচালিত হইবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত মূল্যায়ন এই ভিত্তিতে সম্পাদিত হইবে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উক্তরূপ রেজল্যুশন কার্যক্রম গ্রহণের অব্যবহিত পূর্বে উক্ত তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হইবে এবং উহার অবসায়নের সময় প্রদত্ত মূল্যের ভিত্তিতে সম্পাদিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত জরুরি তারল্য সহায়তার বা, ক্ষেত্রমত, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোনো সরকারি আর্থিক সহায়তার ফলে উক্ত তফসিলি ব্যাংকে সৃষ্ট বা সংরক্ষিত কোনো মূল্য (value) পার্থক্যের হিসাব গণনা হইতে বাদ দেওয়া হইবে।

(৪) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত ক্ষতিপূরণ সরকার কর্তৃক ধারা ৩৫ এ উল্লিখিত সহায়তার মাধ্যমে অথবা ধারা ৩৭ এ উল্লিখিত ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল হইতে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে প্রদান করা যাইবে।

(৫) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নির্দেশনা জারি করিতে পারিবে।

আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা (Cross-border cooperation)

৪১। (১) এই অধ্যাদেশ বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশের বাহিরে প্রতিষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহিত সমন্বয়, সহযোগিতা এবং তথ্য বিনিময়ের জন্য সমঝোতা স্মারক ও বন্দোবস্ত করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট এই মর্মে প্রতীয়মান হয় যে, এইরূপ কোনো কর্তৃপক্ষের সহিত কোনো প্রকার গোপনীয় তথ্য বিনিময় করা হইলে উক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উক্ত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার বাধ্যবাধকতা পালনের নিশ্চয়তা থাকিবে না, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত কর্তৃপক্ষের সহিত উল্লিখিত তথ্য বিনিময় করিবে না।

ব্যাখ্যা।- এই উপ-ধারার উদ্দেশ্য পূরণকপ্লে, “কর্তৃপক্ষ” অর্থে বাংলাদেশের বাহিরে অন্য অধিক্ষেত্রে (junsdictions) ব্যাংকসমূহের তদারককারী বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষও অন্তর্ভুক্ত হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সমঝোতা স্মারক ও বন্দোবস্তে নিম্নবর্ণিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা:-

(ক) পরামর্শ, পূর্ব বিজ্ঞপ্তি, নিয়ন্ত্রণ বা তত্ত্বাবধান বিষয়ক উদ্বেগ, রেজল্যুশনের সম্ভাব্যতার মূল্যায়ন, রেজল্যুশন পরিকল্পনা, আশু হস্তক্ষেপ ব্যবস্থা এবং রেজল্যুশন পদক্ষেপসহ পক্ষগণের মধ্যে সম্মত বিষয়ে সময়োপযোগী তথ্য বিনিময়ের পদ্ধতি;

(খ) রেজল্যুশন ব্যবস্থা (resolution measures) সমন্বয়ের পদ্ধতি;

(গ) বিদেশি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত রেজল্যুশন ব্যবস্থার স্বীকৃতি ও সহজীকরণের পদ্ধতি;

(ঘ) তথ্য যে উদ্দেশ্যে বিনিময় করা হইয়াছে তাহা ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে তথ্যের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা;

(ঙ) তথ্য গোপনীয় পদ্ধতিতে রক্ষা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট সম্মতি ব্যতীত পরবর্তীতে না করিবার বিধান; এবং

(চ) এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য পক্ষগণ কর্তৃক প্রয়োজনীয় বলিয়া বিবেচিত অন্য কোনো বিষয়।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক, কোনো বিদেশি রেজল্যুশন কর্তৃপক্ষের অনুরোধে, এইরূপ বিদেশি কর্তৃপক্ষের রেজল্যুশন ব্যবস্থার প্রভাব সম্পূর্ণরূপে অথবা আংশিকভাবে বাংলাদেশে প্রযোজ্য করিবার বিষয়ে আদেশ জারি করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট প্রতীয়মান হয় যে,-

(ক) বিদেশি রেজল্যুশন ব্যবস্থা, ইহার উদ্দেশ্যমূলক ও প্রত্যাশিত ফলাফল সাপেক্ষে, এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন ক্ষমতা প্রয়োগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নহে;

(খ) অনুরোধের ভিত্তিতে, বিদেশি রেজল্যুশন কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন সংশ্লিষ্ট আইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন ব্যবস্থার স্বীকৃতি প্রদান করে না;

(গ) কোনো বিদেশি রেজল্যুশন ব্যবস্থার স্বীকৃতি এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হইবে না;

(ঘ) বিদেশি রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের পাওনাদারগণের সহিত ন্যায্য আচরণ করা হইবে না;

(ঙ) এইরূপ স্বীকৃতির ফলে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়িবে; অথবা

(চ) এইরূপ স্বীকৃতি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতির (public policy) পরিপন্থি হইবে,

তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক এইরূপ আদেশ জারি করিবে না।

পঞ্চম অধ্যায়

ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল

ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল

৪২। (১) ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা (Inter-Institutional Organization) থাকিবে।

(২) নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে কাউন্সিল গঠিত হইবে, যথা:-

(ক) গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক, যিনি উহার চেয়ারপার্সনও হইবেন;

(খ) সচিব, অর্থ বিভাগ;

(গ) সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ;

(ঘ) সচিব, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ;

(ঙ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন;

(চ) ডেপুটি গভর্নর (রেজল্যুশন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত), বাংলাদেশ ব্যাংক; এবং

(ছ) গভর্নর কর্তৃক মনোনীত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর।

(৩) কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হইবে বাংলাদেশে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখিবার নিমিত্ত ব্যাংকিং খাতের পদ্ধতিগত (systemic) প্রকৃতির সংকটসহ অন্যান্য সংকটের প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলা এবং উহা হ্রাস করিবার জন্য সমন্বয় ও সহায়তা করা।

(৪) এই অধ্যায়ের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কাউন্সিল নির্দেশনার মাধ্যমে উহার কার্যবিধি প্রণয়ন করিবে।

(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত কার্যবিধিতে সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং তথ্য বিনিময় করিবার বাধ্যবাধ্যকতা বর্ণিত থাকিবে।

(৬) কাউন্সিল উহার দায়িত্ব পালনের জন্য, প্রয়োজনে,-

(ক) বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা, নাগরিক গোষ্ঠী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞগণকে সম্পৃক্ত করিতে পারিবে;

(খ) রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ, নাগরিক গোষ্ঠী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনসমূহের নিকট হইতে প্রয়োজনীয় তথ্য, দলিল ও উপকরণ সরবরাহের অনুরোধ করিতে এবং গ্রহণ করিতে পারিবে।

কাউন্সিলের দায়িত্ব ও কার্যাবলি

৪৩। (১) স্বাভাবিক সময়ে, কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি, দক্ষতা এবং সামর্থ্য জোরদার করিবার লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়ন করিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত সুপারিশমালা এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধা, প্রতিবন্ধকতা বা প্রভাব সৃষ্টি করিবে না।

(২) পদ্ধতিগত (systemic) সংকটকালীন সময়ে, কাউন্সিল, সামগ্রিক সংকট ব্যবস্থাপনার কৌশল সমন্বয় ও সহায়তা প্রদান করিবে এবং উক্ত সংকট ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সুপারিশমালা প্রণয়ন করিবে।

(৩) কাউন্সিল অন্যান্য কার্যাবলির সহিত নিম্নবর্ণিত কার্যাবলি সম্পাদন করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) আর্থিক ব্যবস্থায় ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ এবং সংকটকাল চিহ্নিত করা;

(খ) সংকট মোকাবেলায় আইনি এবং রেজল্যুশন টুলস্ ফ্রেমওয়ার্ক এর উৎকর্ষ সাধনের প্রস্তাব করা;

(গ) সরকারের সহিত সমন্বয় করা;

(ঘ) ব্যাংকিং খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করা এবং আস্থা পুনরুদ্ধার করা;

(ঙ) সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রস্তুত করা;

(চ) সংকট মোকাবিলার জন্য আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনার সুপারিশ করা;

(ছ) দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার নিমিত্ত সহযোগিতা ও সমন্বয়ের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা প্রবর্তনে সহায়তা করা;

(জ) ধারা ৪৬ এর অধীন ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটিতে সদস্য নিয়োগ করা;

(ঝ) সংকটকাল ও স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করা; এবং

(ঞ) কাউন্সিল সচিবালয়ের দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করা।

কাউন্সিলের সভা

৪৪। (১) এই ধারার অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, কাউন্সিল উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) প্রতি ৩ (তিন) মাসে কাউন্সিলের অন্যূন ১ (এক) টি সভা অনুষ্ঠিত হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল, প্রয়োজনে বা পরিস্থিতি অনুসারে, যেকোনো সময় বিশেষ সভা আহ্বান করিতে পারিবে।

(৩) কাউন্সিলের সভার কোরামের জন্য চেয়ারপার্সনসহ উহার মোট সদস্য সংখ্যার অর্ধেকের বেশি সদস্যের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে।

(৪) কাউন্সিলের সকল সভায় চেয়ারপার্সন সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে উক্ত সভায় উপস্থিত সদস্যগণের মধ্য হইতে মনোনীত কোনো সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

(৫) কাউন্সিল উহার সভার আলোচ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বা উক্ত বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখিতে সক্ষম এইরূপ যে কোনো ব্যক্তিকে সভায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ করিতে পারিবে এবং উক্ত ব্যক্তি আলোচনায় অংশগ্রহণপূর্বক মতামত প্রদান করিতে পারিবেন।

গোপনীয়তা

৪৫। কাউন্সিলের প্রত্যেক সদস্য এবং কাউন্সিল সচিবালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাহাদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পাদনকালে প্রকাশিত মতামতসহ প্রাপ্ত ও সংগৃহীত তথ্যের বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখিবেন।

ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি

৪৬। (১) সংকট ও স্বাভাবিক উভয় সময়ে কাউন্সিলকে সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটি নামে একটি কমিটি থাকিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কমিটি কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হইবে।

(৩) ধারা ৪২ এর বিধান ক্ষুণ্ন না করিয়া, ব্যাংক রেজল্যুশনের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির সভাপতি হইবেন।

(৪) টেকনিক্যাল কমিটি, ধারা ৪৩ এর উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত কাউন্সিলের কার্যাবলির আওতাধীন কোনো বিষয় আলোচনা করিবে।

(৫) এই অধ্যাদেশের অধীন কমিটির দায়িত্ব এবং কার্যাবলি বাংলাদেশের ব্যাংকের নিয়মিত এবং পরিচালন কার্যক্রমকে প্রভাবিত বা বাধাগ্রস্ত করিবে না।

কাউন্সিল সচিবালয়

৪৭। ধারা ৬ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বিভাগ ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল এবং ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সচিবালয় হিসাবে দায়িত্ব পালন করিবে।

ষষ্ঠ অধ্যায়

তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন

তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন

৪৮। (১) কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এবং ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নবর্ণিত কোনো কারণে কোনো তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) যদি উক্ত তফসিলি ব্যাংক ধারা ১৫-তে উল্লিখিত রেজল্যুশনের শর্তাবলি পূরণ করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, রেজল্যুশন টুলস প্রয়োগ করা সত্ত্বেও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ধারা ৯ এ উল্লিখিত এক বা একাধিক উদ্দেশ্য অর্জিত হইবে না;

(খ) যদি উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় ব্রিজ ব্যাংকসহ হস্তান্তরগ্রহীতার নিকট আংশিকভাবে হস্তান্তরিত হয়; অথবা

(গ) যদি বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজল্যুশন প্রক্রিয়ায় এই মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের কার্যকর রেজল্যুশনের সম্ভাবনা নাই।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে উহার লাইসেন্স বাতিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্স বাতিল করা হইলে উক্ত লাইসেন্স বাতিলের তারিখ হইতে উক্ত তফসিলি ব্যাংক উহার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ করিবে।

অবসায়ন আদেশের জন্য আদালতে আবেদন

৪৯। (১) ধারা ৪৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক কোনো তফসিলি ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম আরম্ভ করিবার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদনপত্রের সহিত অবসায়নের কারণ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি সংযুক্ত করিতে হইবে।

(৩) হাইকোর্ট বিভাগে আবেদনের সময় হইতে তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম আরম্ভ হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(৪) হাইকোর্ট বিভাগ, উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদন বিবেচনার পর, আবেদন দাখিলের তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে, উহা শুনানির তারিখ নির্ধারণ করিবে।

(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন নির্ধারিত শুনানির তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংক উহার ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করিবে এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে প্রদত্ত ফরম অনুসারে উহাতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের পাওনাদার অথবা অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যা প্রতিষ্ঠানকে উক্ত আবেদনে পক্ষভুক্ত, অতঃপর এই অধ্যাদেশে হস্তক্ষেপকারী পক্ষ বলিয়া উল্লিখিত, হইবার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করিবার জন্য অনুরোধ থাকিবে।

(৬) উপ-ধারা (৫) এর বিধান অনুসারে কোনো পাওনাদার, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আবেদনে পক্ষভুক্ত হইলে উক্ত হস্তক্ষেপকারী পক্ষের বিবরণ হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করিতে হইবে।

(৭) হাইকোর্ট বিভাগ নিম্নবর্ণিত বিষয় বিবেচনাক্রমে, অবসায়ন আবেদনে উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তিগণের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম স্থগিত (freeze) বা সম্পদ ক্রোক (attachunent) করাসহ তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ, অতঃপর এই অধ্যাদেশে অবসায়ন আদেশ বলিয়া উল্লিখিত, প্রদান করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদন;

(খ) হস্তক্ষেপকারী পক্ষগণের আবেদন;

(গ) বাংলাদেশ ব্যাংক আইনানুগভাবে কাজ করিয়াছে কি না এবং যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে কি না;

(ঘ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ঘাটতি বা ভুল না থাকিলে অবসায়নের শর্ত পূরণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষায়িত মূল্যায়ন (technical assessment)।

(৮) হাইকোর্ট বিভাগ আবেদন দাখিলের তারিখ হইতে ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে উপ-ধারা (৭) এ উল্লিখিত আদেশ প্রদান করিবে।

(৯) অবসায়ন আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে, ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর বিধানাবলি এবং এই অধ্যাদেশের ধারা ৫১ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঙ) এর বিধান ক্ষুণ্ণ না করিয়া, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের বহি অথবা রেকর্ডে লিপিবদ্ধ কোনো আমানতকারী, পাওনাদার অথবা চুক্তির পক্ষের অধিকার, স্বত্ব বলবতকরণ এবং তফসিলি ব্যাংকের বহি অথবা রেকর্ডে প্রবেশাধিকার অবিলম্বে স্থগিত হইবে।

অবসায়ক নিয়োগ

৫০। (১) অবসায়ন আদেশের অংশ হিসাবে হাইকোর্ট বিভাগ তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তিকে অবসায়ক হিসাবে নিয়োগ করিবে।

(২) অবসায়ককে ধারা ২২ এ উল্লিখিত যোগ্যতা ও উপযুক্ততার মানদণ্ড পূরণ করিতে হইবে।

(৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন অবসায়ক নিয়োগের অব্যবহিত পর, বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়ন আদেশ এবং উপ-ধারা (১) এর অধীন অবসায়ক নিয়োগের আদেশ উক্ত তফসিলি ব্যাংককে প্রেরণ করিবে এবং উহা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করিবে।

(৪) নিয়োগ প্রাপ্তির পর, অবসায়ক সুরক্ষিত আমানত পরিশোধে সহযোগিতা করিবার নিমিত্ত ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর বিধান অনুযায়ী সুরক্ষিত আমানতের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণের পাশাপাশি আমানতকারীগণের সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সহিত কাজ করিবে।

অবসায়কের দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলি

৫১। (১) অবসায়কের দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা:-

(ক) অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের একমাত্র আইনানুগ প্রতিনিধি হইবেন;

(খ) অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও অবসায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতাসহ উহার শেয়ারধারক, পরিচালনা পর্যদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সকল অধিকার ও ক্ষমতা লাভ করিবেন;

(গ) অবসায়ক, অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পূর্ণ অথবা আংশিক সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং এইরূপ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে পাওনাদারগণ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করিতে পারিবেন না:

তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ অনুরোধের প্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ বা আপত্তি জানানোর অধিকার ক্ষুণ্ণ হইবে না এবং উক্তরূপ চ্যালেঞ্জ বা আপত্তির প্রেক্ষিতে কেবল আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা যাইবে, হস্তান্তরিত দায় ও সম্পদের প্রত্যাবর্তন (reverse transfer) করা হইবে না;

(ঘ) অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক অবসায়ন সম্পর্কিত দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলি পালন, প্রয়োগ ও সম্পাদন করিবেন;

(ঙ) অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের কার্যালয়, বহি, রেকর্ড এবং অন্যান্য তথ্য ও সম্পদের দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করিবেন;

(চ) অবসায়ক তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন সম্পর্কিত দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলি পালন, প্রয়োগ ও সম্পাদন করিবার উদ্দেশ্যে, তফসিলি ব্যাংকের ব্যয়ে, পারস্পরিক লিষিত চুক্তির ভিত্তিতে স্বতন্ত্র আইনজীবী, হিসাবরক্ষক, নিরীক্ষক, পরামর্শক, জামানত মূল্যায়নকারী সংস্থা অথবা এইরূপ অন্যান্য ব্যক্তির পরিষেবা গ্রহণ করিতে পারিবেন।

(২) অবসায়ক এই অধ্যায়ের বিধান অনুযায়ী তাঁহার কোনো কার্য, নিষ্ক্রিয়তা বা সিদ্ধান্তের জন্য ব্যক্তিগত দায় হইতে অব্যাহিত লাভ করিবেন।

অবসায়কের পারিশ্রমিক

৫২। (১) অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং আদালত কর্তৃক অনুমোদিত পারিশ্রমিক পাইবেন।

(২) অবসায়কের পারিশ্রমিক এবং অবসায়ন প্রক্রিয়ায় অবসায়ক কর্তৃক ব্যয়িত যুক্তিসঙ্গত ও আনুষঙ্গিক ব্যয় অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বিদ্যমান সম্পদ হইতে নির্বাহ করা হইবে।

অবসায়কের অপসারণ

৫৩। (১) হাইকোর্ট বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে অবসায়ককে অপসারণ করিবে, যথা:-

(ক) অবসায়ক মৃত্যুবরণ করিলে অথবা অবসায়ক হিসাবে কার্য সম্পাদন করিতে অক্ষম হইলে;

(খ) অবসায়ক পদত্যাগপত্র দাখিল করিলে;

(গ) অবসায়ক তাহার কোনো দায়িত্ব, ক্ষমতা ও কার্যাবলি পালন, প্রয়োগ ও সম্পাদন করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হইলে; অথবা

(ঘ) অবসায়ক অন্য কোনো কারণে উক্ত পদে বহাল থাকিবার জন্য যোগ্য নহেন মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হইলে।

(২) উপ-ধারা (১) অনুসারে কোনো অবসায়ক অপসারিত হইলে হাইকোর্ট বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত অন্য কোনো ব্যক্তিকে অবসায়ক হিসাবে নিয়োগ করিবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক, উপ-ধারা (২) এর অধীন অবসায়ক নিয়োগের অব্যবহিত পরে অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংককে নূতন অবসায়ক নিয়োগের নোটিশ প্রদান করিবে, এবং উহা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করিবে।

অবসায়ক কর্তৃক অবসায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন

৫৪। (১) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অবসায়ন আদেশ জারির তারিখ হইতে ৩ (তিন) মাসের মধ্যে অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের জন্য একটি বিস্তারিত অবসায়ন পরিকল্পনা প্রস্তুত করিবেন এবং উক্ত পরিকল্পনা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অবসায়ন পরিকল্পনায় নিম্নবর্ণিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা:-

(ক) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় অন্তর্ভুক্ত করিয়া প্রণীত হালনাগাদ আর্থিক অবস্থার বিবরণী;

(খ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের পূর্ববর্তী ২ (দুই) বৎসরের আয় ও ব্যয়ের ত্রৈমাসিক বিবরণী এবং পরবর্তী ২ (দুই) বৎসরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের প্রক্ষেপণ;

(গ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের মূল সম্পদ বা সম্পদসমষ্টি বিক্রয় এবং বিক্রয় পরিকল্পনার প্রতিবেদন;

(ঘ) অবসায়নাধীন তফসিলে ব্যাংকের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনুসৃতব্য বিচারিক এবং অন্যান্য পদক্ষেপ সংবলিত একটি বিবরণী, যাহাতে কোনো জালিয়াতিপূর্ণ হস্তান্তর এবং তদ্‌ধীন সৃষ্ট কোনো অধিকার বাতিল সংক্রান্ত পদক্ষেপসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে;

(ঙ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের পরিচালক বা কর্মকর্তাগণের অপরাধ ও অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রম এবং উক্ত পরিচালক বা কর্মকর্তাগণের নিকট হইতে তফসিলি ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ সংক্রান্ত প্রতিবেদন;

(চ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বীমা, কর্মসংস্থান এবং পরিষেবা চুক্তির মতো চলমান চুক্তিসমূহের ধারাবাহিকতা বা অবসানের প্রতিবেদন, যাহাতে উক্ত ব্যাংকের কর্মচারীগণের জন্য আর্থিক বিধানাবলির বিস্তারিত বিশ্লেষণ থাকিবে;

(ছ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের দায় এবং উহার পাওনাদারগণের পাওনা পরিশোধসূচি সংক্রান্ত প্রতিবেদন; এবং

(জ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের পরবর্তী ২ (দুই) বৎসরের অনুমিত ভবিষ্যৎ খরচ এবং সম্ভাব্য অবসায়ন ব্যয়ের প্রতিবেদন।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক অবসায়ক কর্তৃক দাখিলকৃত অবসায়ন পরিকল্পনার বিষয়ে সন্তুষ্ট হইলে, উক্ত পরিকল্পনা অনুমোদন করিবে এবং অবসায়ককে লিখিতভাবে উক্ত অনুমোদন সম্পর্কে অবহিত করিবে।

(৪) অবসায়ন পরিকল্পনা অনুমোদিত হইবার পর, অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সপ্তাহে একবার করিয়া ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) সপ্তাহ এতদ্‌সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবেন।

(৫) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে ধারা ৬১ এর অধীন নিবন্ধিত দাবিদারগণ কখন এবং কোথায় অবসায়ন পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য পরিদর্শন করিতে পারিবেন সে সংক্রান্ত তথ্য থাকিবে।

(৬) অবসায়ক অবসায়ন পরিকল্পনা ত্রৈমাসিকভাবে হালনাগাদ করিবেন এবং অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করিবেন।

অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা

৫৫। ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭১, ৭৮ এবং ৮১-তে যাহা কিছুই থাকুক না কেন,-

(ক) অবসায়ন আদেশ অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম আরম্ভ হইলে উক্ত তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কার্যক্রম আরম্ভ করা যাইবে না এবং চলমান সকল বিচারিক কার্যক্রম আদালতের আরোপিত শর্ত সাপেক্ষে স্থগিত থাকিবে;

(খ) অবসায়ন আদেশ অনুসারে সুরক্ষিত পাওনাদার ব্যতীত অন্য কোনো পাওনাদার অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তাহার ব্যক্তিগত অধিকার, স্বত্ব বা স্বার্থ প্রয়োগ অথবা উক্ত ব্যাংকের সম্পদের উপর অন্য কোনো প্রকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করিতে পারিবে না;

(গ) অবসায়ন আদেশ কার্যকর হইবার তারিখের পর সম্পদ আদায় ব্যতীত অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদের উপর জারীকৃত সকল ক্রোক আদেশ বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে;

(ঘ) অবসায়ন আদেশ কার্যকর হইবার তারিখের পর কোনো তফসিলি ব্যাংকের দায়ের উপর কোনো সুদ বা অন্য কোনো চার্জ আরোপিত হইবে না।

কতিপয় পদক্ষেপ বাতিলকরণে অবসায়ক কর্তৃক হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন

৫৬। (১) অবসায়ক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহিত পরামর্শক্রমে অবসায়ন আদেশ জারির তারিখের পূর্বের ৫ (পাঁচ) বৎসরের মধ্যে অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাতিল ও অকার্যকর হিসাবে ঘোষণার জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করিতে পারিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন আবেদন প্রাপ্তির পর সংক্ষুদ্ধ পক্ষগণের শুনানিক্রমে, হাইকোর্ট বিভাগ যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক এবং উক্ত কার্যক্রমে জড়িত পক্ষগণ উক্ত কার্যক্রম সম্পাদনকালে অবগত ছিলেন বা তাহাদের অবগত থাকা উচিত ছিল যে, উহা তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারী বা অন্যান্য পাওনাদারের স্বার্থের ক্ষতি করিতে পারে, তাহা হইলে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত কার্যক্রম বাতিল ও অকার্যকর বলিয়া ঘোষণা করিতে পারিবে।

(৩) নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত অবগতির বিষয়টি অনুমিত হইবে, যথা:-

(ক) কোনো প্রতিদান ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে প্রদত্ত কোনো উপহার বা অন্য কোনো হস্তান্তর;

(খ) তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক উহার কোনো শেয়ারধারক, পরিচালক, প্রশাসক, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুকূলে পরিশোধিত অর্থ, হস্তান্তরিত সম্পদ অথবা অন্য কোনো স্বার্থ, যাহা সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ এতদ্‌বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত বিবেচনাক্রমে, হাইকোর্ট বিভাগের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে, প্রমাণ করিতে ব্যর্থ হয় যে,-

(অ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক এতদ্‌বিষয়ে প্রদত্ত উপস্থাপনার ভিত্তিতে উক্ত ব্যক্তির বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল যে, তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক তাহার অনুকূলে অর্থ পরিশোধ অথবা সম্পদ বা স্বার্থ হস্তান্তরের বিষয়টি যথাযথ; এবং

(আ) তফসিলি ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ অথবা সম্পদ বা স্বার্থ হস্তান্তরের বিষয়টি উক্ত তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারী ও পাওনাদারের স্বার্থের পরিপন্থি এই বিষয়ে উক্ত ব্যক্তি অবগত ছিলেন না;

(গ) নির্ধারিত তারিখের পূর্বে দায় পরিশোধ বা সম্পদ হস্তান্তর অথবা ঋণ পরিশোধযোগ্য হইবার তারিখের পূর্বে ঋণের জামানত হস্তান্তর;

(ঘ) তফসিলি ব্যাংকের সহিত সম্পাদিত এইরূপ কোনো চুক্তি যাহাতে চুক্তির অন্য পক্ষের উপর আরোপিত বাধ্যবাধকতার তুলনায় উক্ত তফসিলি ব্যাংকের উপর আরোপিতা বাধ্যবাধকতা কঠোর হয়;

(‌ঙ) আর্থিক চুক্তি ব্যতীত উক্ত তফসিলি ব্যাংক এবং অন্য এক বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত এইরূপ কোনো বন্দোবস্ত, যাহা উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ জারির পূর্বেই উক্ত ব্যাংক ও চুক্তিবদ্ধ অন্য পক্ষের পারস্পরিক দায়-দেনা নিষ্পত্তির অনুমতি দেয়; অথবা

(চ) তফসিলি ব্যাংক এবং উহার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হস্তান্তর।

জিম্মাদারি কার্যাবলির সমাপ্তি

৫৭। অবসায়ক, যথাশীঘ্র সম্ভব, নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম সম্পাদন করিবেন, যথা:-

(ক) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক জিম্মাদারি ক্ষমতায় নির্বাহকৃত সকল কার্যক্রম সমাপ্ত করা;

(খ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক জিম্মাদারি ক্ষমতায় বা জামিনদার হিসাবে রক্ষিত সকল তহবিল, সম্পদ, সেফ ডিপোজিট আইনগতভাবে ফেরত প্রাপ্তির অধিকারী ব্যক্তি বা তাহার আইনানুগ উত্তরাধিকারী বা প্রতিনিধিগণের নিকট ফেরত প্রদান করা; এবং

(গ) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের জিম্মাদারি হিসাব নিষ্পত্তি করা।

বিদ্যমান চুক্তির অবসান

৫৮। (১) অবসায়ন আদেশ জারির তারিখ হইতে ৪ (চার) মাসের মধ্যে অবসায়ক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে, এক মাস পূর্বে লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারির শর্তে এবং উক্ত সময়ে বলবৎ অন্য কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে, নিম্নবর্ণিত চুক্তির অবসান করিতে পারিবেন, যথা:-

(ক) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সহিত সম্পাদিত যেকোনো কর্মসংস্থান চুক্তি;

(খ) কোনো পরিষেবা চুক্তি যাহাতে উক্ত তফসিলি ব্যাংক পক্ষভুক্ত; এবং

(গ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের দায় সংক্রান্ত কোনো চুক্তি যাহাতে নিম্নবর্ণিত দায় অন্তর্ভুক্ত থাকিতে পারে, যথা:-

(অ) তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধার অধীন দায়;

(আ) ইজারাগ্রহীতা হিসাবে দায়;

(ই) সিকিউরিটিজ, পরিশোধের দলিল অথবা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ অথবা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা;

(ঈ) ঋণপত্রের অধীন দায়: এবং

(উ) গ্যারান্টি, বিকল্প এবং অন্যান্য আকস্মিক দায়ের অধীন সৃষ্ট দায়।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন জারীকৃত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি, উক্ত বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে উহার বিরুদ্ধে আপিল করিতে পারিবেন।

পরিশোধ ও নিকাশ ব্যবস্থার নিষ্পত্তি

৫৯। (১) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন,-

(ক) তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক সম্পাদিত বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পন্নযোগ্য কোনো অপ্রত্যাহারযোগ্য লেনদেন উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন আদেশ জারি হওয়া সত্ত্বেও উহা কার্যকর হইরার পূর্বে অপ্রত্যাহারযোগ্য হইয়া থাকিলে উহা আইনগতভাবে বলবৎযোগ্য এবং তৃতীয় পক্ষের জন্য বাধ্যকর হইবে; অথবা

(খ) কোনো তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন আদেশ জারির পর যদি উক্ত ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পন্নযোগ্য কোনো অপ্রত্যাহারযোগ্য লেনদেন সংঘটিত হইয়া থাকে এবং উক্ত আদেশ কার্যকর হইবার তারিখে যদি উক্ত লেনদেন সম্পন্ন হইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহা আইনগতভাবে বলবৎযোগ্য এবং তৃতীয় পক্ষের জন্য বাধ্যকর হইবে।

(২) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ কার্যকর হইবার তারিখের পূর্বে যদি উক্ত ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পন্নযোগ্য লেনদেনের নেটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট সম্পাদিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে উক্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট আইনগতভাবে সুরক্ষিত থাকিবে।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃত পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় সংঘটিত যেকোনো লেনদেন উক্ত ব্যবস্থার জন্য প্রযোজ্য আইন, বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত সময়ে অপ্রত্যাহারযোগ্য হইবে।

অবসায়ক কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল

৬০। (১) ধারা ৫১ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঙ) এর অধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ, বহি, রেকর্ড এবং অন্যভাবে রক্ষিত তথ্যাদির দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে অবসায়ক উক্ত ব্যাংকের সকল সম্পদ, দাবি, চুক্তি এবং প্রধান লেনদেনসমূহ উল্লেখ করিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল করিবেন।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাহার নিয়ন্ত্রণে থাকা অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের দায় ও সম্পদ সংক্রান্ত এইরূপ তথ্যাবলি অবসায়ককে প্রদান করিতে পারিবেন যে তথ্য ব্যাংকটির দায় ও সম্পদ চিহ্নিত করিবার জন্য প্রয়োজনীয়।

দাবি নিবন্ধন

৬১। (১) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের উপর কোনো দাবি অবসায়ন আদেশ জারির তারিখ হইতে ২ (দুই) মাসের মধ্যে অবসায়কের নিকট লিখিতভাবে দাখিল করিতে হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত কোনো দাবির সহিত উক্ত দাবির প্রমাণক হিসাবে অন্যূন নিম্নবর্ণিত তথ্যাবলি সংযুক্ত করিতে হইবে, যথা:-

(ক) পাওনাদারের নাম ও ঠিকানা;

(খ) অবসায়নের আদেশ কার্যকর হইবার তারিখ পর্যন্ত মূল দাবির উপর আরোপিত সুদ ও অন্যান্য চার্জ, জরিমানা ও করের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক দাবির ধরন; এবং

(গ) জামিনদাতার নাম ও ঠিকানাসহ দাবি সুরক্ষাকারী কোনো বন্ধক, লিয়েন বা গ্যারান্টি সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ।

(৩) ধারা ৬২ এর উপ-ধারা (৪) এর বিধান সাপেক্ষে, অবসায়ক তাহার নিকট দাখিলকৃত প্রতিটি দাবি নিবন্ধন করিবেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত ফরমে একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ইস্যু করিবেন, যাহা দাবি নিবন্ধনের প্রাথমিক প্রমাণক হিসাবে গণ্য হইবে।

দাবি অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান

৬২। (১) উপ-ধারা (৪) এবং (৫) এর বিধান সাপেক্ষে, অবসায়ক কর্তৃক কেবল নিবন্ধিত দাবিসমূহ তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে বিবেচনা করা হইবে।

(২) তফসিলি ব্যাংকের এইরূপ কোনো পাওনাদার যাহার পাওনা কোনো বন্ধক বা লিয়েন দ্বারা সুরক্ষিত, তিনি উক্ত বন্ধককৃত বা লিয়েনকৃত সম্পদ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয়ের মাধ্যমে লব্ধ প্রত্যাশিত মূল্যের অতিরিক্ত অথবা, কোনো পেশাদার জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উক্ত সম্পদের নির্ধারিত বাজারমূল্যের অধিক পরিমাণ দাবি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করিতে পারিবেন।

(৩) কোনো দাবির মূল্য অজানা হইলে ধারা কোনো স্বতন্ত্র জামানত মূল্যায়নকারী সংস্থার সহিত পরামর্শক্রমে, মূল্য নির্ধারণপূর্বক অবসায়ক উক্ত দাবি অনুমোদন করিতে পারিবেন।

(৪) অবসায়ক তাহার নিকট নিবন্ধিত প্রতিটি দাবি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর, উক্ত দাবিসমূহকে নিম্নবর্ণিতভাবে শ্রেণিবদ্ধ করিবেন, যথা:-

(ক) অবসায়ক কর্তৃক অনুমোদিত দাবি; এবং

(খ) অবসায়ক কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত দাবি।

(৫) অবসায়ক, উপ-ধারা (৪) এর অধীন শ্রেণিবদ্ধ দাবিসমূহ লিপিবদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে ২ (দুই)টি পৃথক তালিকা করিবেন এবং প্রত্যাখ্যাত দাবি শ্রেণিবদ্ধ করিবার ক্ষেত্রে উক্ত তালিকায় শ্রেণিবদ্ধ করিবার কারণ উল্লেখ করিবেন।

(৬) উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত উভয় শ্রেণিতে দাবি নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা হইতে এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করিয়া হাইকোর্ট বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করিতে হইবে।

(৭) অবসায়ক প্রত্যাখ্যাত হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ দাবির প্রত্যেক দাবিদারকে এইরূপ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি ধারা ৬১ এর উপ-ধারা (৩) এর অধীন প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ইস্যুর তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে অবহিত করিবেন।

প্রত্যাখ্যাত দাবি অনুমোদনের জন্য আবেদন

৬৩। (১) ধারা ৬২ এর উপ-ধারা (৪) এর অধীন কোনো ব্যক্তির দাবি প্রত্যাখ্যাত হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হইলে তিনি ধারা ৬২ এর উপ-ধারা (৭) এর অধীন অবহিতকরণের তারিখ হইতে এক মাসের মধ্যে উক্ত দাবি অনুমোদনের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করিতে পারিবেন।

(২) হাইকোর্ট বিভাগ উপ-ধারা (১) এর অধীন দাখিলকৃত আবেদন এবং অবসায়কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো ঘাটতি বা সুস্পষ্ট কোনো ভুল না থাকিলে অবসায়কের বিশেষায়িত মূল্যায়নক (technical assessment) বিবেচনার পর, উক্ত দাবি অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যানের আদেশ প্রদান করিতে পারিবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক কোনো দাবি অনুমোদিত হইবার পর উহা প্রত্যাখ্যাত দাবির তালিকা হইতে বাদ দেওয়া হইবে এবং অনুমোদিত দাবির একটি পৃথক তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হইবে।

(৪) কোনো দাবি হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হইলে অবসায়ক উক্ত দাবি পরিশোধ করিবেন না।

অবসায়নে সম্পদ বিক্রয় এবং দায় নিষ্পত্তি

৬৪। ধারা ৬৭ এর বিধান সাপেক্ষে, অবসায়ক অবসায়ন পরিকল্পনা অনুসারে, এই অধ্যায়ের অধীন অবসায়ন আরম্ভ হইবার পর তফসিলি ব্যাংকের যেকোনো বা সকল সম্পদ বিক্রয় করিতে পারিবেন এবং উহার দায়, আইনগত অধিকার ও বাধ্যবাধকতা নিষ্পন্ন ও পরিপালন করিবেন।

দায় সমন্বয় এবং নেটিং

৬৫। (১) এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি এবং তদনুসারে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্ত অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক এবং ইহার চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় পারস্পরিক দায় সমন্বয়ে বাধা হইবে না।

(২) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক এবং ইহার চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে অধিকার ও দায় নির্ধারণের ক্ষেত্রে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক এবং ইহার চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে আর্থিক চুক্তিপত্রে অন্তর্ভুক্ত নেট দায় নির্ধারণ ও পারস্পরিক দায় সমন্বয় সংক্রান্ত বিধানাবলি বিবেচনা করা হইবে।

(৩) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক এবং ইহার সংশ্লিষ্ট চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে আর্থিক চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূল্য,-

(ক) চুক্তির পক্ষগণের উপর উক্ত তফসিলি ব্যাংকের একটি দাবি হইবে; অথবা

(খ) ধারা ৬১ এর অধীন তফসিলি ব্যাংকের উপর প্রতিপক্ষের দাবি হিসাবে নিবন্ধনের পর উহা অনুমোদিত হইবে।

ব্যাখ্যা।- এই উপ-ধারার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূল্য” অর্থ কোনো আর্থিক চুক্তির শর্তানুসারে উক্ত চুক্তির পক্ষগণের মধ্যে পারস্পরিক দেনা-পাওনা সমন্বয় করিবার পর নির্ণীত নিট পরিমাণ।

(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, নির্দেশনা জারির মাধ্যমে আর্থিক চুক্তিপত্রের পরিশোধ সমন্বয় এবং নেটিং সম্পর্কিত বিষয়াবলি নির্ধারণ করিবে।

অবসায়নে সম্পদ বিক্রয়

৬৬। (১) অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সুরক্ষিত পাওনাদারগণের অনুমোদিত দাবি সুরক্ষাকারী সম্পদ ব্যতীত অন্যান্য সকল সম্পদ, অবসায়ক কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে বিক্রয় করা হইবে।

(২) নিম্নবর্ণিতভাবে সম্পদ বিক্রয় করা হইলে উহা উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত বাণিজ্যিকভাবে যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে বিক্রয় করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে, যথা:-

(ক) সিকিউরিটিজ, বৈদেশিক মুদ্রা এবং অন্যান্য সম্পদ, যাহা সহজে বিক্রয় করা যায়, উহা লেনদেনকৃত বাজারে প্রচলিত মূল্যে বিক্রয় করা হইলে; এবং

(খ) এইরূপ সম্পদ প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করা হইলে:

তবে শর্ত থাকে যে, যদি অবসায়ক এই মর্মে অভিমত পোষণ করেন যে, প্রকাশ্য নিলামে সম্পদের জন্য যুক্তিসঙ্গত মূল্য পাওয়া যাইবে না, তাহা হইলে তিনি মধ্যস্থতার (negotiate) মাধ্যমে সম্পদ বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চাহিবেন।

(৩) দাবিকৃত জামানত হিসাবে থাকা সম্পদের মূল্য সম্পর্কে অবসায়ক এবং সুরক্ষিত পাওনাদারের মধ্যে কোনো বিরোধ উদ্ভূত হইলে, যদি উক্ত সম্পদ কোনো স্বতন্ত্র জামানত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত বাজার মূল্যে অথবা প্রকাশ্য নিলামে বিক্রয় করা হয়, তাহা হইলে বাজার মূল্যে অথবা প্রকাশ্য নিলামের বিক্রয় মূল্য উক্ত সম্পদের মূল্যের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত হইবে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা হইবে।

অবসায়নে সম্পদ বন্টনের দাবির পর্যায়ক্রম

৬৭। (১) অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ, নিম্নবর্ণিত দাবির পর্যায়ক্রম অনুসারে বন্টন করিবেন, যথা:-

(ক) অবসায়ক কর্তৃক ব্যয়িত অবসায়ন প্রক্রিয়ার প্রশাসনিক সকল যুক্তিসঙ্গত ব্যয়;

(খ) সুরক্ষিত আমানতকারী এবং বীমাকৃত আমানতকারীগণের অধিকার হস্তান্তরের ফলে সৃষ্ট আমানত সুরক্ষা তহবিলের দাবি;

(গ) ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এ নির্ধারিত সুরক্ষিত সীমার অতিরিক্ত সুরক্ষণযোগ্য আমানত;

(ঘ) আদালত কর্তৃক অবসায়ন আদেশ জারির তারিখের পূর্বের অনধিক এক বৎসর সময়ের মধ্যে সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট উক্ত তফসিলি ব্যাংকের প্রদেয় কর ও বিল;

(ঙ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত ভবিষ্য তহবিল, পেনশন তহবিল, গ্র্যাচুইটি তহবিল অথবা অন্য কোনো কল্যাণ তহবিল হইতে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে প্রদেয় অর্থ;

(চ) আদালত কর্তৃক অবসায়ন আদেশ জারির তারিখ পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং পরবর্তী ৩ (তিন) স্তর ব্যতীত সকল স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অর্জিত বেতন ও মজুরি এবং তফসিলি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিকট প্রদেয় অথবা তাহাদের পক্ষে প্রদেয় অন্য কোনো সংবিধিবদ্ধ পাওনা;

(ছ) এই অধ্যাদেশের অধীন রেজল্যুশন অর্থায়নের জন্য সরকারকে প্রদেয় কোনো অর্থ;

(জ) রেজল্যুশনের কারণে সৃষ্ট তফসিলি ব্যাংকের দায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিলের নিকট প্রদেয় ও বকেয়া;

(ঝ) ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর অধীন অসুরক্ষিত পাওনাদার এবং অরক্ষিত আমানতসহ অন্যান্য সকল সাধারণ পাওনাদারগণের দাবি;

(ঞ) টিয়ার ২ মূলধন উপাদানধারক ব্যতীত সাবঅর্ডিনেটেড ভেটহোল্ডারগণের দাবি;

(ট) টিয়ার ২ মূলধন উপাদানধারকগণের দাবি;

(ঠ) অতিরিক্ত টিয়ার ১ মূলধন উপাদানধারকগণের দাবি;

(ড) যেকোনো সুরক্ষিত দাবিসহ দায়ী ব্যক্তিগণের দাবি; এবং

(ঢ) কমন ইক্যুইটি টিয়ার ১ মূলধন উপাদানধারকগণের দাবি।

(২) ইসলামি ব্যাংকসমূহের অবসায়নের ক্ষেত্রে, সম্পদ বন্টনের দাবির অগ্রাধিকারের বিষয়াবলি বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, সময় সময়, নির্দেশনা জারির মাধ্যমে নির্ধারণ করিতে পারিবে।

অবসায়নে পরিশোধ বন্টন সূচি

৬৮। (১) অবসায়নাধীন কোনো তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারী বা অন্যান্য পাওনাদারের দাবি কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত এতদসংক্রান্ত বন্টনসূচিতে উল্লিখিত পরিমাণে পরিশোধ করা হইবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অবসায়ক অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারী এবং অন্যান্য পাওনাদারকে পরিশোধের জন্য ধারা ৬১ ও ৬২ এর অধীন অনুমোদিত দাবির সমন্বয়ে একটি বন্টনসূচি প্রস্তুত করিবেন এবং উক্ত বণ্টনসূচি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য দাখিল করিবেন।

(৩) প্রতিটি পরিশোধ বন্টনসূচি ধারা ৬৭-তে উল্লিখিত নির্ধারিত দাবির শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী অনুমোদিত দাবির ভিত্তিতে প্রদেয় অর্থের ক্রম নির্ধারণ ও সংযোজন করিবে, কেবল যদি-

(ক) অন্তর্ভুক্ত দাবির তুলনায় অগ্রগণ্য সকল উচ্চ অগ্রাধিকারযুক্ত অনুমোদিত দাবির উপর প্রদেয় অর্থ যাহা, পূর্ববর্তী বিতরণ সময়সূচী অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হইয়াছে বা এই বিতরণ সময়সূচীর অধীনে সম্পূর্ণ পরিশোধ করা সম্ভব; এবং

(খ) যে সকল দাবির অগ্রাধিকারের ক্রম অন্তর্ভুক্ত দাবির তুলনায় উচ্চতর এবং এখনো অনুমোদিত হয়নি, সেগুলোর সম্পূর্ণ পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল সংরক্ষিত রহিয়াছে এবং যে সকল দাবির অগ্রাধিকারের ক্রম অন্তর্ভুক্ত দাবির সমান এবং এখনো অনুমোদিত হয়নি, সেগুলোর সমতুল্যতার নীতি নিশ্চিত করা হইয়াছে।

(৪) যদি বিদ্যমান তহবিলের অপর্যাপ্ততার কারণে উক্ত তহবিল হইতে কোনো নির্দিষ্ট অগ্রাধিকারের সমস্ত দাবি সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তাহা হইলে উক্ত দাবিসমূহের আনুপাতিক হারে তহবিল হইতে পরিশোধ করা হইবে, এবং উক্ত দাবিসমূহ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করা না সম্ভব না হইলে নিম্ন অগ্রাধিকারের দাবিসমূহের পরিশোধের জন্য কোনো তহবিল বরাদ্দ করা হইবে। না।

(৫) পরিশোধ বন্টনসূচি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদনের অব্যবহিত পর, অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সপ্তাহে একবার করিয়া ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) সপ্তাহ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবেন, যাহাতে অনুমোদিত দাবির অধিকারী ব্যক্তিগণ কর্তৃক পরিশোধ গ্রহণের তারিখ ও স্থানের উল্লেখ থাকিবে অথবা পরিশোধ গ্রহণের অন্য কোনো পদ্ধতির উল্লেখ থাকিবে।

(৬) বন্টনসূচিতে তালিকাভুক্ত কোনো অর্থ শনাক্তকরণ অথবা সংশ্লিষ্ট আমানতকারী ও পাওনাদারগণের সহিত যোগাযোগে ব্যর্থতার কারণে পরিশোধ করা সম্ভব না হইলে উক্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে এতদুদ্দেশ্যে রক্ষিত একটি বিশেষ হিসাবে জমা করিতে হইবে।

(৭) উপ-ধারা (৬) এর অধীন জমাকৃত কোনো তহবিল, এই ধারার অধীন তফসিলি ব্যাংকের আমানতকারী বা পাওনাদারগণের মধ্যে চূড়ান্ত বন্টনের নির্ধারিত তারিখের ১০ (দশ) বৎসরের মধ্যে প্রাপ্য ব্যক্তি কর্তৃক দাবি করা না হইলে উহা ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর অধীন অদাবিকৃত আমানত হিসাবে গণ্য হইবে।

বাংলাদেশের বাহিরে প্রধান কার্যালয় বিশিষ্ট তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন

৬৯। (১) নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত প্রধান কার্যালয় বিশিষ্ট কোনো তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবসায়ন প্রক্রিয়া আরম্ভ করা যাইবে, যথা:-

(ক) যদি উক্ত তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব লিখিত অনুমোদনক্রমে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত শর্ত ও নিয়ম পরিপালন করিয়া বাংলাদেশে তাহার ব্যবসা বন্ধ করিতে ইচ্ছুক হয়;

(খ) যদি ধারা ৪৮ এর উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোনো কারণ উক্ত তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়; অথবা

(গ) যদি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের প্রেক্ষিতে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় যে দেশে অবস্থিত অথবা যে স্থানে উক্ত ব্যাংক তাহার মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, উক্ত স্থানে উহার অবসায়ন কার্যক্রম আরম্ভ হয়।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “মূল ব্যবসায়িক কার্যক্রম (Core Business Lines)” অর্থ কোনো তফসিলি ব্যাংকের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজস্ব, মুনাফা বা ফ্র্যাঞ্চাইজি মূল্যের প্রধান উৎস হিসাবে বিবেচিত এইরূপ কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও সংশ্লিষ্ট সেবা।

(২) তফসিলি ব্যাংক অবসায়ন সম্পর্কিত এই অধ্যায়ের বিধানাবলি, বাংলাদেশের বাহিরে প্রধান কার্যালয় বিশিষ্ট তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য হইবে।

(৩) এই ধারার বিধানাবলি প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের বাহিরে প্রধান কার্যালয় বিশিষ্ট এইরূপ অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সকল সম্পদ, দায়, কার্য ও নিষ্ক্রিয়তা, যাহা বাংলাদেশে উক্ত তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসা হইতে উদ্ভূত বা অন্য কোনোভাবে সম্পর্কিত, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের উপর বর্তাইবে।

(৪) অবসায়ক উক্ত তফসিলি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে বাংলাদেশে প্রধান কার্যালয় অবস্থিত এইরূপ তফসিলি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হইবেন।

(৫) বাংলাদেশের বাহিরে প্রধান কার্যালয় অবস্থিত এইরূপ তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবসায়ন কার্যক্রম আরম্ভ করিবার জন্য আদালতের আদেশ জারির সময় হইতে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব লিখিত অনুমোদনক্রমে, অনুমতিপ্রাপ্ত কার্যক্রম ব্যতীত, বাংলাদেশে পরিচালিত অন্যান্য সকল কার্যক্রম বন্ধ করিবে।

(৬) বাংলাদেশের বাহিরে প্রধান কার্যালয় অবস্থিত এইরূপ অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের সকল বাধ্যবাধকতা ও দায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক উক্ত ব্যাংককে প্রদান করা লাইসেন্স অনুযায়ী পরিশোষিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যাংকের কোনো সম্পদ বাংলাদেশ হইতে অপসারণ রোধ করিবার লক্ষ্যে অবসায়ক প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

অবসায়ন কার্যাবলির সমাপ্তি

৭০। (১) অবসায়ন সম্পন্নের পর, অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নিযুক্ত একজন বহিঃনিরীক্ষকের মতামতসহ, তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ও নিরীক্ষিত হিসাব-বিবরণী প্রস্তুত করিবেন এবং অনুমোদনের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করিবেন।

(২) বহিঃনিরীক্ষকের পারিশ্রমিক উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ হইতে নির্বাহ করা হইবে।

(৩) বহিঃনিরীক্ষকের মতামতে নিম্নবর্ণিত বিষয়ের উল্লেখ থাকিবে, যথা:-

(ক) অবসায়কের হিসাব-বিবরণী সত্য ও যথাযথ কি না এবং উহা সঠিকভাবে প্রস্তুত করা হইয়াছে কি না;

(খ) অবসায়ক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত হিসাব-বিবরণী তফসিলি ব্যাংকের সম্পদের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সঠিক কি না;

(গ) যেক্ষেত্রে বহিঃনিরীক্ষক অবসায়কের নিকট হইতে কোনো ব্যাখ্যা বা তথ্য তলব করিয়াছেন, সেই ক্ষেত্রে অবসায়ক কর্তৃক সরবরাহকৃত ব্যাখ্যা বা তথ্য সন্তোষজনক কি না; এবং

(ঘ) অবসায়ক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে কাজ করিয়াছেন কি না।

(৪) হাইকোর্ট বিভাগ, নিরীক্ষিত হিসাব-বিবরণী এবং অবসায়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুমোদন করিতে পারিবে এবং অবসায়ককে তফসিলি ব্যাংকের হিসাব-বহি ও নথিপত্র এবং অবসায়ন সম্পর্কিত অন্যান্য দলিলপত্র, হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত উপযুক্ত কোনো স্থানে দাখিল করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, অবসায়ন কার্যক্রম সমাপ্তির লক্ষ্যে অবসায়কের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো ঘাটতি বা সুস্পষ্ট কোনো ভুল না থাকিলে আদালত অবসায়কের বিশেষায়িত মূল্যায়নকে (technical assessment) বাতিল করিবেন না।

(৫) উপ-ধারা (৪) এর অধীন অনুমোদন প্রাপ্তির পর, অবসায়ক উক্ত অনুমোদনের একটি বিজ্ঞপ্তি সাধারণ জনগণের জ্ঞাতার্থে বাংলাদেশে ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করিবেন।

(৬) উপ-ধারা (৫) এর অধীন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর, অবসায়ক যৌগমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের নিবন্ধককে কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ অনুসারে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর কর্তৃক রক্ষিত রেজিস্টার হইতে উক্ত কোম্পানির নাম অপসারণ করিবার জন্য অবহিত করিবেন।

(৭) উপ-ধারা (৬) এর অধীন অবহিত হইবার পর যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের নিবন্ধক উক্ত কোম্পানির নাম রেজিস্টার হইতে অপসারণ করিবেন এবং এতদ্‌মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ব্যাংক ও যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর এবং বাংলাদেশে বহল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করিবেন।

(৮) উপ-ধারা (৭) এর অধীন কোনো কোম্পানির নাম অপসারণের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ হইতে, তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন কার্যক্রম সমাপ্ত হইবে এবং কোম্পানিটি বিলুপ্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

(৯) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক নিরীক্ষিত হিসাব-বিবরণী এবং অবসায়ন সম্পর্কিত প্রতিবেদনের অনুমোদন সাপেক্ষে, অবসায়ক তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন সম্পর্কিত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সকল দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিবেন:

তবে শর্ত থাকে যে, তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের ফলে এই অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো আইনের অধীন দায়ী ব্যক্তিগণের দায় এইরূপভাবে বহাল থাকিবে যেন কোম্পানিটি বিলুপ্ত হয় নাই।

সপ্তম অধ্যায়

তফসিলি ব্যাংকের স্বেচ্ছায় অবসায়ন

প্রযোজ্যতা

৭১। নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে এই অধ্যায়ের বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে না, যথা:-

(ক) কোনো তফসিলি ব্যাংকের দেউলিয়াত্বের কারণে অবসায়নের ক্ষেত্রে;

(খ) কোনো তফসিলি ব্যাংকের পরিচালনা লাইসেন্স বাতিলের কারণে অবসায়নের ক্ষেত্রে; অথবা

(গ) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যে তফসিলি ব্যাংকের পাওনাদারগণের পরিশোধ সক্ষমতা প্রত্যয়িত নহে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অবসায়নের ক্ষেত্রে।

স্বেচ্ছায় অবসায়নের ক্ষেত্রে আবেদন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন

৭২। (১) কোনো তফসিলি ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নের ক্ষেত্রে উহার ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট নিম্নবর্ণিত দলিলাদিসহ আবেদন করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) আবেদনের তারিখ হইতে পূর্ববর্তী ৩ (তিন) বৎসরের নিরীক্ষিত হিসাব-বিবরণী; এবং

(খ) বোর্ড সভায় অনুমোদিত অবসায়ন পরিকল্পনা।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক আবেদনের তারিখ হইতে ১ (এক) মাসের মধ্যে তফসিলি ব্যাংকের অবসায়ন পরিকল্পনা, সক্ষমতা, ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের পর ব্যাংকের দায় পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য সম্পদের প্রাপ্যতাসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনাপূর্বক উক্ত আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।

(৩) কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যান করিবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবিলম্বে উক্ত সিদ্ধান্ত আবেদনকারী তফসিলি ব্যাংককে প্রেরণ করিবে।

তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধকরণ এবং স্বেচ্ছায় অবসায়ন প্রক্রিয়ার সূচনা

৭৩। (১) বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতীত, কোনো তফসিলি ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ করা যাইবে না এবং স্বেচ্ছায় অবসায়ন প্রক্রিয়া নিজ উদ্যোগে আরম্ভ করা যাইবে না।

(২) ধারা ৭৪ অনুসারে ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে অবসায়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আরম্ভ করিতে হইবে।

(৩) স্বেচ্ছায় অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক, অবসায়নের আওতায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ব্যতীত অন্য কোনো ব্যাংকিং লেনদেন বা কার্যক্রম সম্পাদন করিতে পারিবে না।

(৪) স্বেচ্ছায় অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বন্ধ হওয়া কার্যক্রম ও অবসায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে থাকিবে।

(৫) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসাবে অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের বোর্ডে উহার এক বা একাধিক সদস্য মনোনয়ন দিতে পারিবে।

ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রকাশ ও কার্যকরকরণ

৭৪। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের তারিখ হইতে ৫ (পাঁচ) কার্যদিবসের মধ্যে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের নিবন্ধক, কর কর্তৃপক্ষ এবং, ক্ষেত্রমত, অন্য কোনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবসায়নের বিষয়ে অবহিত করিবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় উক্ত সিদ্ধান্তের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিবে।

(২) ভিন্নভাবে নির্দিষ্ট করা না হইলে, ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রকাশের তারিখের পরদিন হইতে উহা কার্যকর হইবে এবং উক্ত কার্যকরতার তারিখ হইতে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের নামের সহিত ‘অবসায়নাধীন’ শব্দ যুক্ত করিতে হইবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকিং লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইলে উক্ত সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করা যাইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ আবেদন দাখিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধ্য হইবে না।

ঘোষণা ও পরিশোধ

৭৫। (১) ধারা ৭৪ অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক, ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হইবার তারিখ হইতে ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে সুরক্ষিত আমানতসমূহ এবং ২ (দুই) মাসের মধ্যে উহার অন্যান্য দায় এবং উহা হইতে উদ্ভূত সুদ পরিশোধ করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, স্বেচ্ছায় অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংক, বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত অন্যূন একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ৩ (তিন) দিন অবসায়নের ঘোষণা প্রকাশ করিবে এবং আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারকে তাহাদের দাবি পরিশোধের জন্য আবেদন করিবার আহ্বান জানাইবে।

(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এ বর্ণিত কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে বা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিপালন করা না হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত অবসায়ন অনুমতি বাতিল করিতে পারিবে।

অবসায়ন রেকর্ড অবহিতকরণ

৭৬। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের নিকট অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিবন্ধন করিবার ৭ (সাত) দিনের মধ্যে ব্যাংক-কোম্পানি, বাংলাদেশে ব্যাংকের নিকট সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করিবে।

অষ্টম অধ্যায়

ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিলের অপব্যবহার

প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল ব্যবহার

৭৭। (১) এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো আইনের অধীন অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা কোনো আদালত কর্তৃক কোনো ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা এবং সিদ্ধান্তের ফলে তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহার বা অপব্যবহারের জন্য দায়ী হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিগণ এই ধারার অধীন দায়ী ব্যক্তি হইবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তি অর্থে অন্যান্য ব্যক্তির মধ্যে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগনও অন্তর্ভুক্ত হইবেন, যথা:-

(ক) নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ারধারক;

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “নিয়ন্ত্রণকারী শেয়ার ধারক” অর্থ উদ্যোক্তা, পরিচালক, উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারক বা তাহার পরিবারের সদস্য বা তাহার সহিত সম্পর্কিত কোনো ব্যক্তি বা তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো কোম্পানি বা কোনো প্রতিষ্ঠান একক বা যৌথভাবে যাহারা ব্যাংকের শেয়ার ধারণ করতঃ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংককে নিয়ন্ত্রণ করেন;

(খ) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মুখ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীগণ এবং ব্যাংকের অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, যাহারা স্ব স্ব দায়িত্বের জন্য দায়ী থাকিবেন;

(গ) ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান;

(ঘ) Penal Code, 1860 (Act No. XLV of 1860) এর section 403 ও 404 অনুযায়ী অসৎভাবে সম্পদ আত্মসাৎকারী ব্যক্তি;

(ঙ) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৫ নং আইন) এর ধারা ২ এর দফা (শ) এ বর্ণিত অপরাধ সংশিষ্ট ব্যক্তি; অথবা

(চ) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত অন্য কোনো ব্যক্তি।

প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিলের অপব্যবহার

৭৮। (১) নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে প্রতারণামূলকভাবে, অসৎভাবে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বা স্বেচ্ছায় ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিল ব্যবহার করা হইলে উহাকে ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিলের অপব্যবহার হিসাবে গণ্য করা হইবে, যথা:-

(ক) দায়ী ব্যক্তিগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে;

(খ) দায়ী ব্যক্তিগণের সহায়তায় ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা অথবা অন্য কোনো উপায়ে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে, অর্থ, সম্পদ এবং কোনো প্রকার অধিকার ও প্রাপ্য নিজেদের বা অন্যের অনুকূলে আহরণের উদ্দেশ্যে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে-

(অ) নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিকে প্রদত্ত ঋণ এবং/অথবা অন্যান্য সুবিধাদি, যথা:-

(১) দায়ী ব্যক্তি এবং তাহার পরিবারকে ঋণ বা অর্থ প্রদান;

(২) দফা (১) এ উল্লিখিত ব্যক্তিকে অন্য ঋণ পরিশোধের নিমিত্ত বা কোনো আসল বা সুদ আদায় ব্যতীত একই ব্যক্তির অনুকূলে ঋণ পুন:নবায়ন;

(৩) দায়ী ব্যক্তির নিকট সরাসরি বা তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ঋণ ফেরত প্রদানের অভিপ্রায়ে তৃতীয় পক্ষকে ঋণ প্রদান;

(৪) দৃশ্যত ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান;

(৫) দায়ী ব্যক্তির ব্যবস্থাপনা এবং/অথবা নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী এবং/অথবা স্থায়ীভাবে, নিয়োগ চুক্তিসহ অথবা চুক্তি ব্যতীত, নিযুক্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠাতা, অংশীদার, ব্যবস্থাপক অথবা নিরীক্ষক হিসাবে থাকা কোম্পানিকে ঋণ প্রদান;

(৬) দায়ী ব্যক্তির অস্থায়ী এবং/অথবা স্বায়ীভাবে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তি, যে বা যাহারা প্রক্সি (Proxy) এবং/অথবা বাণিজ্যিক প্রতিনিধি এবং/অথবা এজেন্ট হিসাবে এবং/অথবা প্রক্সি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ব্যতিরেকে প্রতিনিধিত্বের ন্যায় কোনো আইনি ব্যবস্থা বা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করিয়া কর্ম সম্পাদনকারী, এবং তাহাদের দ্বারা প্রতিনিধিত্বকারী প্রকৃত এবং/অথবা আইনি সত্তাকে ঋণ প্রদান; অথবা

(৭) ব্যাংকিং আইন ও রীতিনীতির সহিত সাংঘর্ষিক শর্তাবলি এবং/অথবা কোনো প্রকার জামানত ব্যতীত বা পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে ঋণ প্রদান;

(৮) স্বাভাবিক বা আইনি ব্যক্তি যিনি পরবর্তীতে দফা (১) হইতে (৭) স্বাভাবিক ব্যক্তি অথবা আইনি সত্তাসমূহের নিকট অনুরূপ ঋণ এবং/অথবা ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিল হস্তান্তর করে;

(৯) স্বাভাবিক বা আইনি ব্যক্তি, যিনি প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষভাবে, এককভাবে এবং/অথবা যৌথভাবে, ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ অথবা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ রাখে: অথবা

(১০) দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং/অথবা ব্যাংকের অধীনস্থ এবং/অথবা প্রত্যক্ষ এবং/অথবা পরোক্ষ সহযোগী, যিনি সাধারণত তাহাদের কার্য সম্পাদনের নিমিত্ত একই ঠিকানা ব্যবহার করে এবং/অথবা যিনি চুক্তিতে ঋণ মওকুফ এবং/অথবা ঋণ হস্তান্তরের অধিকারের মতো নির্দিষ্ট ধারা সংযোজনপূর্বক ঋণ অথবা ব্যাংকিং সুবিধা ব্যবহার করে।

(আ) দেশি অথবা বিদেশি ব্যাংকের সহিত ব্যাংকের সম্পদ বন্ধক রাখা অথবা জামানত হিসাবে দেখানো;

(ই) ব্যাংকে আমানত এবং অন্যান্য হিসাব খোলা এবং উহা জামানত হিসাবে দেখানো;

(ঈ) উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারকগণের ঋণের সুদ মওকুফ করা;

(উ) দায়ী ব্যক্তির বৈদেশিক মুদ্রা ঋণকে স্থানীয় মুদ্রায় অথবা বিপরীতক্রমে ক্রমাগত রূপান্তর করিবার মাধ্যমে বিনিময় হারের সুবিধা গ্রহণ করা,

(ঊ) দায়ী ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধ করা;

(ঋ) কল্পিত (fictitious) মুনাফা প্রদর্শন এবং তদনুসারে লভ্যাংশ প্রদান করা;

(এ) উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারকের নিকট সম্পদ হস্তান্তরের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করা;

(ঐ) উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারকের দ্বারা ব্যাংকের গ্যারান্টির মাধ্যমে অথবা ব্যাংককে যৌথ দেনাদার হিসাবে ব্যবহার করিয়া বিদেশ হইতে প্রাপ্ত ঋণের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করা;

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, “দেনাদার” অর্থ ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৫ এর দফা (ছ)-তে সংজ্ঞায়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান;

(ও) দায়ী ব্যক্তির নিকট কৃত্রিম উপায়ে কম মূল্য প্রদর্শন করিয়া ব্যাংকের রিয়েল এস্টেট এবং সহায়ক সংস্থা বিক্রি করা; অথবা

(ঔ) উল্লেখযোগ্য শেয়ারধারকের প্রতিষ্ঠানের রিয়েল এস্টেট অথবা শেয়ার অতিরিক্ত মূল্যে ক্রয় করা।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত বিধানাবলি দায়ী ব্যক্তির এবং/অথবা তাহার মাধ্যমে তৃতীয় ব্যক্তির অর্জিত সকল প্রকার অর্থ, সম্পত্তি, অধিকার এবং প্রাপ্য সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে।

প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃত ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিলের হিসাব

৭৯। প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃত ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিলের পরিমাণ উক্তরূপে ব্যবহৃত মূল অর্থ এবং ইহার সহিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত কোনো সুদ, কমিশন, ফি অথবা ক্ষতিপূরণের সমষ্টির সমান হইবে, যাহার গণনা উহা ব্যবহারের তারিখ হইতে আরম্ভ হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, দায়ী ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাহিরে থাকিবার কারণে অথবা দায়ী ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের সহিত কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকিবার কারণে ঘটিয়াছে এইরূপ কোনো ক্ষতি এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হইবে না।

দায়ী ব্যক্তিগণের সম্পদ বিবরণী

৮০। (১) ধারা ৭৭ এ উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো ব্যক্তির সম্পদ বিবরণী চাহিতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত সম্পদ বিবরণীতে নিম্নবর্ণিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে, যথা:-

(ক) স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ, প্রাপ্য সম্পদ, সিকিউরিটিজ, অধিকার এবং ক্রোকযোগ্য সকল প্রকার আয়;

(খ) রেজল্যুশন অথবা অবসায়ন প্রক্রিয়া আরম্ভ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উক্ত প্রক্রিয়া আরম্ভ করিবার তারিখের ৫ (পাঁচ) বৎসরের বিক্রয় অথবা হস্তান্তর করা অনুরূপ আইটেমসমূহের তালিকা:

তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, উল্লিখিত ৫ (পাঁচ) বৎসরের অধিক সময়ের তথ্যও দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

(৩) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যাচনার ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করিতে হইবে, তবে কোনো ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত সময়সীমা অনধিক ৭ (সাত) কার্যদিবস পর্যন্ত বৃদ্ধি করিতে পারিবে।

ব্যাংক রেজল্যুশন ও অবসায়নে প্রাপ্য আদায়ের ক্ষমতা

৮১। (১) বাংলাদেশ ব্যাংক, উহার, ব্যাংক পুনর্গঠন ও রেজল্যুশন তহবিল বা রেজল্যুশনের অধীন বা অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত বিধান অনুসরণ করিতে পারিবে, যথা:-

(ক) কোনো তফসিলি ব্যাংকের ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করিবার লাইসেন্স প্রত্যাহার করা হইলে, অথবা কোনো তফসিলি ব্যাংককে রেজল্যুশন অথবা অবসায়নাধীন করা হইলে দায়ী ব্যক্তি কর্তৃক ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিল হইতে অর্জিত সকল আয়, সম্পত্তি, অধিকার এবং সম্পদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ;

(খ) তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অর্জিত কোনো সম্পদ অথবা অর্থ, উহা দায়ী ব্যক্তির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ যেভাবেই হউক না কেন, উহার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ।

ব্যাখ্যা।- এই দফার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, তফসিলি ব্যাংকের সম্পদ অথবা তহবিল ব্যবহারের মাধ্যমে অর্জিত হিসাবে বিবেচিত হইবে।

(২) বাংলাদেশ ব্যাংক উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তি অথবা তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক অর্জিত সকল প্রকার অর্থ, সম্পত্তি, অধিকার এবং প্রাপ্যের ক্ষেত্রে এই ধারার বিধানাবলি প্রয়োগ করিতে পারিবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধারায় উল্লিখিত অর্থ, পণ্য, অধিকার অথবা প্রাপ্য সম্পদ ক্রোক অথবা অনুরূপ কোনো সম্পদের কর্তৃত্ব গ্রহণ করিতে পারিবে, যাহার মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক এতৎসংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন বিবেচনা করিয়া নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(৪) আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা ৭৭ এ উল্লিখিত দায়ী ব্যক্তিগণের কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে দায়ের করা মামলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য কোনো জামানতের প্রয়োজন হইবে না।

দায়ী ব্যক্তিগণের দায় ও তাহাদের বিরুদ্ধে গৃহীতব্য ব্যবস্থা

৮২। (১) কোনো তফসিলি ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তি তাহাদের কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ব্যাংকটির ব্যর্থতায় ভূমিকা রাখিলে উক্ত ব্যক্তি তফসিলি ব্যাংকের ক্ষতির জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন।

(২) রেজল্যুশনের অধীন বা অবসায়নাধীন তফসিলি ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃত ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পরিশোধ বা ফেরত প্রদান করিতে হইবে।

(৩) যদি প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত বা অপব্যবহৃত ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল পরিশোধ বা ফেরত প্রদান করা না হয়, তাহা হইলে দায়ী ব্যক্তিগণের কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা এবং সিদ্ধান্তের জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে আনীত অন্য কোনো আইনগত কার্যক্রমকে ক্ষুণ্ন না করিয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক অথবা প্রশাসক অথবা অবসায়ক অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষকে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম আরম্ভ করিবার জন্য নির্দেশ প্রদান অথবা অনুরোধ করিতে পারিবে।

(৪) রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংকের শেয়ার তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হইলে, উক্ত তফসিলি ব্যাংক বা প্রশাসক কর্তৃক দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা তফসিলি ব্যাংকের ব্যর্থতার জন্য দায়ী বিবেচিত অন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বাংলাদেশ ব্যাংক, যাহা আইনগত উত্তরাধিকারী হিসাবে বিবেচিত, কোনো প্রকার বাধা ব্যতীত অব্যাহত রাখিবে এবং এইরূপ মামলা এবং আইনগত কার্যক্রমের কারণে প্রদেয় এবং প্রাপ্য সকল অর্থ দায়ী ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে পরিশোধ করিতে হইবে।

নবম অধ্যায়

অপরাধ, দণ্ড, জরিমানা ইত্যাদি

তফসিলি ব্যাংকের পরিচালক এবং কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ

৮৩। (১) অস্থায়ী প্রশাসন ও রেজল্যুশনের আওতাধীন অথবা অবসায়নাধীন কোনো তফসিলি ব্যাংকের পরিচালক অথবা কর্মকর্তা, যিনি-

(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রশাসক অথবা অবসায়কের অনুরোধে, তাহার জ্ঞান ও বিশ্বাস অনুযায়ী, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সকল অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য যাহার মধ্যে কীভাবে, কাহাকে এবং কোন বিবেচনায় উক্ত সম্পত্তি অথবা উহার অংশবিশেষ হস্তান্তর করা হইয়াছে, সেই তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, প্রকাশ করিতে ব্যর্থ হন;

(খ) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রশাসক অথবা অবসায়কের নির্দেশ অনুসারে নিম্নবর্ণিত বিষয় বা তথ্য প্রদান করিতে ব্যর্থ হন, যথা:-

(অ) উক্ত পরিচালক অথবা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধান বা নিয়ন্ত্রণে থাকা উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সকল অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির বিবরণ; অথবা

(আ) উক্ত পরিচালক অথবা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধান বা নিয়ন্ত্রণে থাকা উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সকল বহি, রেকর্ড, রেজিস্টার এবং দলিলপত্র;

(গ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের অম্বায়ী প্রশাসন, রেজল্যুশন অথবা অবসায়ন আরম্ভ হইবার অব্যবহিত পূর্বের ১২ (বারো) মাসের মধ্যে অথবা তৎপরবর্তী যেকোনো সময়ে-

(অ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তির কোনো অংশ গোপন করিয়াছেন অথবা উহার প্রাপ্য অথবা উহা হইতে উত্তোলনকৃত কোনো ঋণ গোপন করিয়াছেন;

(আ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তির কোনো অংশ প্রতারণামূলকভাবে স্থানান্তর করিয়াছেন;

(ই) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তি অথবা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কোনো বহি, রেজিস্টার, রেকর্ড বা দলিলপত্র গোপন, ধ্বংস, বিকৃত অথবা জাল করিয়াছেন, অথবা উহাতে সহযোগিতা করিয়াছেন;

(ঈ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তি অথবা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কোনো বহি, রেজিস্টার, রেকর্ড বা দলিলপত্রে কোনো মিথ্যা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন অথবা করিতে সহযোগিতা করিয়াছেন;

(উ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তি অথবা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কোনো বহি, রেজিস্টার, রেকর্ড বা দলিলপত্রে প্রতারণামূলকভাবে কোনো অংশের বিলোপ, পরিবর্তন, অথবা অন্য কোনো ত্রুটি করিয়াছেন, অথবা প্রতারণামূলক বিলোপ, পরিবর্তন বা ত্রুটি করিতে সহযোগী ছিলেন;

(ঊ) কোনো মিথ্যা উপস্থাপনা অথবা অন্য কোনো জালিয়াতির মাধ্যমে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের জন্য বা পক্ষ হইতে, পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধ করিবার শর্তে কোনো সম্পত্তি অর্জন করিয়াছেন যাহার মূল্য উক্ত তফসিলি ব্যাংক পরবর্তীতে পরিশোধ করে নাই;

(ঋ) উক্ত তফসিলি ব্যাংক উহার ব্যবসা পরিচালনা করিতেছে এইরূপ মিথ্যা অজুহাতে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের জন্য বা পক্ষ হইতে, পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধ করিবার শর্তে কোনো সম্পত্তি অর্জন করিয়াছেন যাহার মূল্য উক্ত তফসিলি ব্যাংক পরবর্তীতে পরিশোধ করে নাই; অথবা

(এ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের এইরূপ কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখিয়াছেন অথবা হস্তান্তর করিয়াছেন যাহা পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধ করিবার শর্তে অর্জিত হইয়াছিল এবং যাহার জন্য মূল্য পরিশোধ করা হয় নাই, যদি না উক্ত বন্ধক অথবা হস্তান্তর তফসিলি ব্যাংকের ব্যবসার সাধারণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে হইয়া থাকে;

(ঘ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের কার্যাবলি সম্পর্কিত কোনো বিবরণীতে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য বিলোপ করিয়াছেন;

(ঙ) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো ঋণ ভুয়া প্রমাণিত হইয়াছে জানিয়াও অথবা বিশ্বাস করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও এক মাসের মধ্যে অবসায়ককে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করিতে ব্যর্থ হন;

(চ) উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তি অথবা বিষয়াদি সম্পর্কিত কোনো বহি, রেজিস্টার, রেকর্ড বা দলিলপত্র উপস্থাপন করিতে বাধা দেন;

(ছ) অস্থায়ী প্রশাসন, রেজল্যুশন বা অবসায়ন আরম্ভ হইবার অব্যবহিত পূর্বের ৫ (পাঁচ) বৎসরের মধ্যে, অথবা তৎপরবর্তী যেকোনো সময়ে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের সম্পত্তির কোনো অংশের কল্লিত ক্ষতি অথবা ব্যয়ের হিসাব দেখাইবার চেষ্টা করিয়াছেন; অথবা

(জ) অস্থায়ী প্রশাসন, রেজল্যুশন অথবা অবসায়ন আরম্ভ হইবার অব্যবহিত পূর্বের ৫ (পাঁচ) বৎসরের মধ্যে অথবা তৎপরবর্তী যেকোনো সময়ে, উক্ত তফসিলি ব্যাংকের পাওনাদারগণের অথবা তাহাদের কোনো একজনের তফসিলি ব্যাংকের কার্যাবলি অথবা অবসায়নের সহিত সম্পর্কিত কোনো চুক্তিতে সম্মতির উদ্দেশ্যে কোনো মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনা করিয়াছেন অথবা অন্য কোনো প্রতারণামূলক কার্যক্রম করিয়াছেন অথবা জড়িত ছিলেন,

তাহা হইলে উক্ত কার্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে।

(২) কোনো পরিচালক অথবা কর্মকর্তা উপ-ধারা (১) এর অধীন অপরাধের সহিত সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে যদি কোনো ব্যক্তি উক্ত সম্পত্তি বন্ধক হিসাবে বা অন্য কোনোভাবে গ্রহণ করিলে তিনি এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন

৮৪। কোনো কোম্পানি কর্তৃক কোনো অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানির সহিত সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তি যাহারা অপরাধ সংঘটনের সময় পরিচালক, নির্বাহী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা বা সচিব ছিলেন, তাহারা উক্ত অপরাধের জন্য দায়ী বলিয়া গণ্য হইবেন, যদি না তিনি আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে বা উক্ত অপরাধ সংঘটন রোধের জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছিলেন।

জরিমানা

৮৫। (১) কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের ধারা ১২ এর উপ-ধারা (৩), (৭) ও (৯), ধারা ১৪ এর উপ-ধারা (৪) এবং ধারা ৮৩ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) ও (খ) এবং এই অধ্যাদেশের অধীন প্রণীত অথবা জারীকৃত কোনো বিধি, প্রবিধান, আদেশ, নির্দেশনা লঙ্ঘন করিলে বা পরিপালন করিতে ব্যর্থ হইলে, উক্ত ব্যর্থতার কারণে তাহার উপর অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা জরিমানা আরোপ করা যাইবে এবং উক্ত লঙ্ঘন বা ব্যর্থতা অব্যাহত থাকিলে লঙ্ঘন বা ব্যর্থতার প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অনধিক ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা যাইবে।

(২) কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের ধারা ৮৩ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) এর উপ-দফা (আ), (ঊ), (ঝ) এবং (এ) এর আওতায় সম্পদ স্থানান্তর অথবা অর্জন, এবং উপ-ধারা (২) এর আওতায় সম্পদ গ্রহণ করিলে, উক্ত ব্যক্তির উপর স্থানান্তরিত, অর্জিত অথবা গৃহীত সম্পদের বহি মূল্য (book value) বা অর্জন মূল্য বা স্থানান্তর মূল্য বা হালনাগাদ বাজার মূল্য, যাহা অধিক হইবে, উহার দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা আরোপ করা যাইবে।

(৩) কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের ধারা ৮৩ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (ঙ) এর বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হইলে তাহার উপর ঋণের হালনাগাদ সুদসহ ঋণের স্থিতির দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা আরোপ করা যাইবে।

(৪) কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের ধারা ৮২ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হইলে, প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত অথবা অপব্যবহৃত সম্পদ গ্রহণের প্রথম তারিখে উহার বহি মূল্য (book value) বা হালনাগাদ বাজার মূল্য, যাহা অধিক হইবে, উহার দ্বিগুণ পরিমাণ এবং তহবিলের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঘোষিত ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার প্রয়োগ করিয়া যে পরিমাণ দাঁড়ায়, উহার দ্বিগুণ পরিমাণ জরিমানা আরোপিত হইবেন।

(৫) বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধারায় বর্ণিত জরিমানা আরোপের পূর্বে, অনধিক ৩০ দিনের সময় প্রদানপূর্বক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করিবে।

(৬) উপ-ধারা (৫) এ উল্লিষিত সময়ের মধ্যে জবাব প্রদান না করিলে বা প্রদত্ত জবাব সন্তোষজনক না হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধারায় উল্লিখিত জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে।

(৭) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত জরিমানা তৎকর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক পরিশোধ করিতে ব্যর্থ হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক, উক্ত ব্যক্তির যেকোনো অথবা সকল ব্যাংক হিসাব হইতে জরিমানা আদায় করিতে পারিবে এবং আরোপিত জরিমানা সম্পূর্ণ আদায় না হইলে উক্ত জরিমানা আদায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির যেকোনো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত যোগ্য হইবে।

জরিমানা অন্য কোনো দায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করিবে না

৮৬। ধারা ৮৫ এর অধীন কোনো ব্যক্তির উপর আরোপিত কোনো জরিমানা এই অধ্যাদেশ অথবা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে উক্ত ব্যক্তির উপর আরোপযোগ্য বা আরোপিত কোনো দায়-কে ক্ষতিগ্রস্ত করিবে না।

অপরাধ ও দন্ড

৮৭। (১) কোনো ব্যক্তি এই অধ্যাদেশের ধারা ৮৩ এর উপ-ধারা (১) এর দফা (গ) এর উপ-দফা (অ), (ই), (ঈ), (উ) এবং (ঘ), (চ), (ছ) ও (জ) এর আওতায় কোনো অপরাধ করিলে, উক্ত অপরাধের কারণে তিনি অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা জরিমানা অথবা অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ড, অথবা উভয় প্রকার দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইলে প্রশাসক বা অবসায়ক বা রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তি, অথবা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক উপযুক্ত আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম শুরু করিতে পারিবে।

অপরাধের বিচার

৮৮। ধারা ৮৬ এর অধীন সংঘটিত অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898)-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।

অস্থায়ী প্রশাসন, ব্যাংক রেজল্যুশন এবং অবসায়নে নিযুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা, প্রশাসক এবং অবসায়কের সুরক্ষা

৮৯। (১) অস্থায়ী প্রশাসন, ব্যাংক রেজল্যুশন এবং অবসায়নের সহিত সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা প্রশাসক এবং অবসায়ক বা রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তি, এই অধ্যাদেশ দ্বারা তাহার উপর অর্পিত ক্ষমতা বা উদ্দেশ্য এবং এতদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করিলে বা কাজ হইতে বিরত থাকিলে তাহার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ, অথবা দাবি উত্থাপন অথবা তাহাকে দায়বদ্ধ করা যাইবে না:

তবে শর্ত থাকে যে, এইরূপ দায়বদ্ধতা হইতে সুরক্ষা প্রদান করা হইবে, যদি না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রমাণ করিতে পারেন যে, ক্ষমতার প্রয়োগ বা প্রয়োগের চেষ্টা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয় নাই।

(২) ব্যাংক রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব পালনকালে ও পরে গৃহীত সিদ্ধান্ত, সম্পাদিত ব্যবস্থা, কৃত লেনদেনের কারণে রেজল্যুশন কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মচারী, প্রশাসক, অবসায়ক বা রেজল্যুশনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ক্ষতিপূরণ, ব্যাংকের নিকট প্রাপ্য অর্থের পরিশোধ করিবার জন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা বা কোনো নির্বাহী কার্যধারা গ্রহণ করা হইলে উহা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে নেওয়া হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং এইরূপ মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিপক্ষ করা হইবে ও মামলার ফি বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজেট হইতে নির্বাহ করা হইবে।

(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনে, যেকোনো উপায়ে, অস্থায়ী প্রশাসন, ব্যাংক রেজল্যুশন এবং অবসায়নে নিযুক্ত কর্মকর্তাগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করিবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আদালতের রায়

৯০। (১) অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কেউ বাংলাদেশ ব্যাংক, উহার কোনো কর্মকর্তা, প্রতিনিধিত্বকারী বা পরামর্শকের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে অথবা সালিশি প্যানেলে আপিল করে, তবে আপিলের সময় বা পরবর্তী কোনো আপিল বা আপিলের সহিত সম্পর্কিত অন্য কোনো বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম অথবা সালিশি কার্যক্রম চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম কোনো প্রকার বাধা ব্যতীত অব্যাহত থাকিবে।

(২) যদি বাংলাদেশ ব্যাংক এই অধ্যাদেশের অধীন উহার ক্ষমতা প্রয়োগ করে বা সরল বিশ্বাসে কাজ করে, তাহা হইলে আদালত অথবা সালিশি প্যানেল বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, স্বগিত অথবা বাতিল না করিয়া প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিকার প্রদান করিবে যাহা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিশোধযোগ্য হইবে।

(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্বাহ করা হইবে যাহা সরকার বা সরকারের প্রাপ্য হইতে পরিশোধ করা যাইবে না।

(৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত ক্ষতিপূরণের সীমা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগের মধ্যে তথ্য বিনিময়

৯১। (১) এই অধ্যাদেশ বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের অধীন সরকারের নিকট হইতে তহবিলের প্রয়োজন হইবে এইরূপ তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন পরিকল্পনা প্রস্তুতি এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ বিভাগ তথ্য বিনিময় করিবে।

(২) তথ্য আদান-প্রদান এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কর্মরত কোনো ব্যক্তি কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখিবেন এবং নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্র ব্যতীত উক্ত তথ্য প্রকাশ করিবেন না, যথা:-

(ক) হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক আবশ্যক হইলে; অথবা

(খ) এই অধ্যাদেশের অধীনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আবশ্যক হইলে।

(৩) সরকারি আর্থিক সহায়তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে প্রেরণ করিতে হইবে এবং উক্ত প্রতিবেদন প্রতি বৎসর বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তালিকাভুক্ত Chartered Accountant ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করিতে হইবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপকে আপিল প্রভাবিত করিবে না

৯২। এই অধ্যাদেশের অধীন জারীকৃত কোনো বিধি, প্রবিধান, আদেশ, নির্দেশনা, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত কোনো সিদ্ধান্ত অথবা কোনো অনুরোধ বা বাধ্যবাধকতা আরোপের ফলে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি বা সংক্ষুব্ধ হইতে পারেন এইরূপ কোনো ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত কোনো আদেশ প্রাপ্তির অধিকারী হইবেন না যাহা বাংলাদেশ ব্যাংককে উক্ত আদেশ কার্যকর করা হইতে বাধা প্রদান করিতে পারে, যথা:-

(ক) স্থায়ী বা অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা;

(খ) কোনো নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ;

(গ) কোনো স্থগিতাদেশ বা অন্য কোনো আদেশ।

রেজল্যুশন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা

৯৩। (১) এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে Bangladesh Bank Order, 1972, ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ বা ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহীত কোনো রেজল্যুশন কার্যক্রম এই অধ্যাদেশ কার্যকর হইবার তারিখের অব্যবহিত পূর্ব দিন পর্যন্ত চলমান থাকিলে উহা এই অধ্যাদেশের অধীন গৃহীত রেজল্যুশন ব্যবস্থা বলিয়া গণ্য হইবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের জন্য উহা অব্যাহত থাকিবে।

(২) এই অধ্যাদেশ কার্যকর হইবার তারিখের অব্যবহিত পূর্ব দিন পর্যন্ত রেজল্যুশনের কর্তৃত্ব প্রয়োগ এবং আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের বাহিরে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী, তত্ত্বাবধানকারী বা সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যমান কোনো সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি এই অধ্যাদেশের অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি বলিয়া গণ্য হইবে।

তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা হইতে অব্যাহতি

৯৪। বাজারের আস্থা রক্ষার জন্য, রেজল্যুশনের অধীন তফসিলি ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা (disclosure requirement) হইতে সাময়িক অব্যাহতি অথবা বাজার প্রতিবেদন, অধিগ্রহণ, এবং তালিকাভুক্তির নিয়মাবলি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ স্থগিত করিবার জন্য আবেদন করিবার অনুমতি পাইতে পারে, যেখানে এই ধরনের তথ্য প্রকাশ রেজল্যুশন ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করিতে পারে।

ফাইন্যান্স কোম্পানিসমূহের উপর এই অধ্যাদেশের প্রয়োগ

৯৫। বাংলাদেশ ব্যাংক, সময় সময়, আদেশ দ্বারা, এই মর্মে ঘোষণা করিতে পারিবে যে, তফসিলি ব্যাংকের রেজল্যুশন সম্পর্কিত এই অধ্যাদেশের বিধানাবলি ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির ক্ষেত্রে, প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ (Mutatis Mutandis), প্রযোজ্য হইবে, যেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে,-

(ক) আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য ইহা প্রয়োজনীয়; অথবা

(খ) উক্ত ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত ব্যবসা অথবা কার্যক্রম সম্পর্কিত জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার জন্য ইহা প্রয়োজনীয়।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

৯৬। এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

৯৭। এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড এই অধ্যাদেশের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো কারণে বোর্ড না থাকিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারের অনুমোদনক্রমে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

৯৭। এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড এই অধ্যাদেশের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে:

তবে শর্ত থাকে যে, কোনো কারণে বোর্ড না থাকিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সরকারের অনুমোদনক্রমে, প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

৯৮। (১) এই অধ্যাদেশ প্রবর্তনের পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই অধ্যাদেশের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিতে পারিবে।

(২) মূল বাংলা পাঠ ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে মূল বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs