প্রিন্ট ভিউ

প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০

( ১৯৯০ সনের ২৭ নং আইন )

প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণকল্পে প্রণীত আইন৷
 
 
 
যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
 
 
 
 
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
 
 
 
সংক্ষিপ্ত শিরোনামা
সংজ্ঞা
২৷ বিষয় বা প্রসংগের পরিপন্থী কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-
 
 
(ক) “অভিভাবক” অর্থ শিশুর পিতা বা পিতার অবর্তমানে মাতা বা উভয়ের অবর্তমানে শিশুর তত্ত্বাবধানে রহিয়াছেন এমন কোন ব্যক্তি;
 
 
(খ) “কমিটি” অর্থ ধারা ৪ এর অধীন গঠিত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি;
 
 
(গ) “প্রাথমিক শিক্ষা” অর্থ শিশুদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা অনুমোদিত শিক্ষা;
 
 
(ঘ) “প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান” অর্থ যে কোন সরকারী বা বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রহিয়াছে;
 
 
(ঙ) “শিশু” অর্থ ছয় বত্সরের কম নহে এবং দশ বত্সরের অধিক নহে এইরূপ বয়সের যে কোন বালক বা বালিকা৷
প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করণ
৩৷ (১) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দেশের যে কোন এলাকায় যে কোন তারিখ হইতে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে পারিবে৷
 
 
(২) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেক শিশুর অভিভাবক তাহার শিশুকে, যুক্তিসংগত কারণ না থাকিলে, প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে উক্ত এলাকায় অবস্থিত তাহার বাসস্থানের নিকটস্থ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইবেন৷
 
 
(৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখিত “যুক্তিসংগত কারণ” বলিতে নিম্নলিখিত কারণগুলিকে বুঝাইবে, যথা :-
 
 
(ক) অসুস্থতা বা অন্য কোন অনিবার্য কারণে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা সম্ভব না হওয়া;
 
 
(খ) শিশুর আবাসস্থল হইতে দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকা;
 
 
(গ) আবেদন করা সত্ত্বেও শিশুকে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইতে না পারা;
 
 
(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিবেচনায় শিশু বর্তমানে যে শিক্ষা গ্রহণ করিতেছে তাহা প্রাথমিক শিক্ষার সমমানের না হওয়া;
 
 
(ঙ) প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিবেচনায় শিশুর মানসিক অক্ষমতার কারণে তাঁহাকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো বাঞ্ছনীয় না হওয়া৷
 
 
(৪) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য হাজির হওয়ার ব্যাপারে বিঘ্নের সৃষ্টি করিতে পারে এমন কোন কাজকর্মে ব্যাপৃত রাখিতে পারিবেন না৷
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি
৪৷ (১) যে এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হইবে সেই এলাকায় ইউনিয়ন বা পৌর এলাকাসমূহের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি নামে একটি কমিটি থাকিবে৷
 
 
(২) কোন ইউনিয়নের ওয়ার্ডের জন্য কমিটি নিম্নবর্ণিত সদস্য-সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-
 
 
(ক) উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন ওয়ার্ড মেম্বার, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন;
 
 
(খ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহিত আলোচনাক্রমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোত্সাহী পুরুষ;
 
 
(গ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহিত আলোচনাক্রমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোত্সাহী মহিলা;
 
 
(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী, যিনি উহার সচিবও হইবেন৷
 
 
(৩) কোন পৌর এলাকার ওয়ার্ডের জন্য কমিটি নিম্নবর্ণিত সদস্য-সমন্বয়ে গঠিত হইবে, যথা :-
 
 
(ক) পৌর কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌর সভার চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন ওয়ার্ড কমিশনার, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন;
 
 
(খ) ওয়ার্ড কমিশনারের সহিত আলোচনাক্রমে উক্ত মেয়র বা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোত্সাহী পুরুষ;
 
 
(গ) ওয়ার্ড কমিশনারের সহিত আলোচনাক্রমে উক্ত মেয়র বা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত দুইজন বিদ্যোত্সাহী মহিলা;
 
 
(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী, যিনি উহার সচিবও হইবেন৷
 
 
(৪) যদি কোন ওয়ার্ডে একাধিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে, তাহা হইলে উহাদের প্রত্যেকটির প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী কমিটির সদস্য হইবেন এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা, ক্ষেত্রমত, পৌর কর্পোরেশনের মেয়র বা পৌর সভার চেয়ারম্যান তাহাদের মধ্য হইতে কে কমিটির সচিব হইবেন তাহা নির্ধারণ করিবেন৷
কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য
৫৷ (১) কমিটি উহার এলাকায় বসবাসরত প্রত্যেক শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া এবং রীতিমত হাজির হওয়া নিশ্চিত করিবে এবং এতদুদ্দেশ্যে কমিটি উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় বা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে৷
 
 
(২) কমিটি উহার এলাকায় বসবাসরত সকল শিশুর একটি তালিকা প্রস্তুত করিবে এবং উহাতে প্রত্যেক শিশুর নাম, অভিভাবকের নাম ও শিশুর বয়স উল্লেখ থাকিবে এবং উহাতে এই আইনের অধীন যাহারা প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইতে বাধ্য এবং যাহারা এই ভর্তি হইতে অব্যাহতি পাওয়ার যোগ্য তাঁহাদের নাম স্বতন্ত্রভাবে প্রদর্শিত হইবে৷
 
 
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন প্রণীত তালিকা প্রত্যেক বত্সর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে সংশোধিত হইবে এবং এই সংশোধিত তালিকা হইতে যাহারা নববর্ষের শুরুতে শিশু থাকিবে না তাঁহাদের নাম বাদ পড়িবে এবং যাহারা শিশু হইবে তাঁহাদের নাম উহাতে অন্তর্ভুক্ত হইবে৷
 
 
(৪) উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তালিকা এবং উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত সংশোধিত তালিকার একটি করিয়া অনুলিপি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড হইতে দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট প্রেরণ করিতে হইবে৷
 
 
(৫) প্রত্যেক বত্সর জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী তাঁহার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিশুদের নামের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কমিটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করিবেন৷
 
 
(৬) প্রত্যেক প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রী প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী মাসে অন্ততঃ সাত দিন অনুপস্থিত ছিল এইরূপ শিশুদের একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট কমিটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রেরণ করিবেন৷
 
 
(৭) যেক্ষেত্রে কমিটি দেখিতে পায় যে, উহার তালিকাভুক্ত কোন শিশু যুক্তিসংগত কারণ ব্যতীত কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় নাই বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীর বিনা অনুমতিতে মাসের মধ্যে অন্ততঃ সাতদিন অনুপস্থিত রহিয়াছে সেক্ষেত্রে কমিটি শিশুর অভিভাবকের বক্তব্য শ্রবণ করিয়া এবং প্রয়োজনবোধে বিষয়টি তদন্ত করিয়া উক্ত অভিভাবককে ভর্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে, উহার শিশুকে কমিটি কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাইবার জন্য এবং অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁহার যথারীতি উপস্থিতি নিশ্চিত করিবার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ দিতে পারিবে৷
দণ্ড
৬৷ (১) যদি কোন কমিটি এই আইনের অধীন উহার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তাহা হইলে, উহার প্রত্যেক সদস্য অনধিক দুইশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷
 
 
(২) যদি কোন অভিভাবক ধারা ৫(৭)-এর অধীন প্রদত্ত নির্দেশ পালনে পরপর তিনবার ব্যর্থ হন তাহা হইলে, তিনি অনধিক দুইশত টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷
অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ
৭৷ কমিটির চেয়ারম্যানের লিখিত অভিযোগ ছাড়া কোন আদালত এই আইনের অধীন কোন অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিতে পারিবেন না৷
বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
৮৷ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে৷

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs