প্রিন্ট

07/12/2024
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮

( ২০১৮ সনের ৪৬ নং আইন )

এই আইন  সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ ( ২০২৩ সনের ৩৯ নং আইন )  দ্বারা রহিত করা হইয়াছে।

প্রথম অধ্যায়

প্রারম্ভিক

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
১। (১) এই আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ নামে অভিহিত হইবে।
 
(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
সংজ্ঞা
২। (১) বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে এই আইনে-
 
(ক) ‘‘আপিল ট্রাইব্যুনাল’’ অর্থ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (২০০৬ সালের ৩৯ নং আইন) এর ধারা ৮২ এর অধীন গঠিত সাইবার আপিল ট্রাইব্যুনাল;
 
(খ) ‘‘উপাত্ত-ভান্ডার’’ অর্থ টেক্সট, ইমেজ, অডিও বা ভিডিও আকারে উপস্থাপিত তথ্য, জ্ঞান, ঘটনা, মৌলিক ধারণা বা নির্দেশাবলি, যাহা-
 
(অ) কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দ্বারা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হইতেছে বা হইয়াছে; এবং
 
(আ) কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হইয়াছে;
 
(গ) ‘‘এজেন্সি’’ অর্থ ধারা ৫ এর অধীন গঠিত ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি;
 
(ঘ) ‘‘কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’’ অর্থ ধারা ৯ এর অধীন গঠিত জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম;
 
(ঙ) ‘‘কম্পিউটার সিস্টেম’’ অর্থ এক বা একাধিক কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস এর মধ্যে আন্তঃসংযোগকৃত প্রক্রিয়া যাহা এককভাবে বা একে অপরের সহিত সংযুক্ত থাকিয়া তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করিতে সক্ষম;
 
(চ) ‘‘কাউন্সিল’’ অর্থ ধারা ১২ এর অধীন গঠিত জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল;
 
(ছ) ‘‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (Critical Information Infrastructure)’’ অর্থ সরকার কর্তৃক ঘোষিত এইরূপ কোনো বাহ্যিক বা ভার্চুয়াল তথ্য পরিকাঠামো যাহা কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কোনো ইলেকট্রনিক তথ্য নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চারণ বা সংরক্ষণ করে এবং যাহা ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটাপন্ন হইলে-
 
(অ) জননিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বা জনস্বাস্থ্য,
 
(আ) জাতীয় নিরাপত্তা বা রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্বের,
 
উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়িতে পারে;
 
(জ) ‘‘ট্রাইব্যুনাল’’ অর্থ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (২০০৬ সালের ৩৯ নং আইন) এর ধারা ৬৮ এর অধীন গঠিত সাইবার ট্রাইব্যুনাল;
 
(ঝ) ‘‘ডিজিটাল’’ অর্থ যুগ্ম-সংখ্যা (০ ও ১/বাইনারি) বা ডিজিট ভিত্তিক কার্য পদ্ধতি, এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ইলেকট্রিক্যাল, ডিজিটাল ম্যাগনেটিক, অপটিক্যাল, বায়োমেট্রিক, ইলেকট্রোকেমিক্যাল, ইলেকট্রোমেকানিক্যাল, ওয়্যারলেস বা ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক টেকনোলজিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(ঞ) ‘‘ডিজিটাল ডিভাইস’’ অর্থ কোনো ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক, অপটিক্যাল বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বা সিস্টেম, যাহা ইলেকট্রনিক, ডিজিটাল, ম্যাগনেটিক বা অপটিক্যাল ইমপালস ব্যবহার করিয়া যৌক্তিক, গাণিতিক এবং স্মৃতি কার্যক্রম সম্পন্ন করে, এবং কোনো ডিজিটাল বা কম্পিউটার ডিভাইস সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সহিত সংযুক্ত, এবং সকল ইনপুট, আউটপুট, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চিতি, ডিজিটাল ডিভাইস সফটওয়্যার বা যোগাযোগ সুবিধাদিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(ট) ‘‘ডিজিটাল নিরাপত্তা’’ অর্থ কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল সিস্টেম এর নিরাপত্তা;
 
(ঠ) ‘‘ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব’’ অর্থ ধারা ১০ এর অধীন স্থাপিত ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব;
 
(ড) ‘‘পুলিশ অফিসার’’ অর্থ সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নিম্নে নহেন, এইরূপ কোনো পুলিশ অফিসার;
 
(ঢ) ‘‘প্রোগ্রাম’’ অর্থ কোনো পাঠযোগ্য মাধ্যমে যন্ত্র সহযোগে শব্দ, সংকেত, পরিলেখ বা অন্য কোনো আকারে প্রকাশিত নির্দেশাবলি, যাহার মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইস দ্বারা কোনো বিশেষ কার্য-সম্পাদন বা বাস্তবে ফলদায়ক করা যায়;
 
(ণ) ‘‘ফৌজদারি কার্যবিধি’’ অর্থ Code of Criminal Procedure, 1898 (Act V of 1898);
 
(ত) ‘‘ব্যক্তি’’ অর্থে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি, অংশীদারি কারবার, ফার্ম বা অন্য কোনো সংস্থা, ডিজিটাল ডিভাইস এর ক্ষেত্রে উহার নিয়ন্ত্রণকারী এবং আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট কোনো সত্তা বা কৃত্রিম আইনগত সত্তাও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে;
 
(থ) ‘‘বে-আইনি প্রবেশ’’ অর্থ কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বা উক্তরূপ অনুমতির শর্ত লঙ্ঘনক্রমে কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থায় প্রবেশ, বা উক্তরূপ প্রবেশের মাধ্যমে উক্ত তথ্য ব্যবস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের আদান-প্রদানে বাধা প্রদান বা উহার প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত বা ব্যাহত করা বা বন্ধ করা, বা উক্ত তথ্য-উপাত্তের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন বা সংযোজন বা বিয়োজন করা অথবা কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ;
 
(দ) ‘‘মহাপরিচালক’’ অর্থ এজেন্সির মহাপরিচালক;
 
(ধ) ‘‘মানহানি’’ অর্থ Penal Code (Act XLV of 1860) এর section 499 এ বিধৃত defamation;
 
(ন) ‘‘ম্যালওয়্যার’’ অর্থ এমন কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল নির্দেশ, তথ্য-উপাত্ত, প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্‌স যাহা-
 
(অ) কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস কর্তৃক সম্পাদিত কার্যকে পরিবর্তন, বিকৃত, বিনাশ, ক্ষতি বা ক্ষুণ্ণ করে বা উহার কার্য-সম্পাদনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে; বা
 
(আ) নিজেকে অন্য কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের সহিত সংযুক্ত করিয়া উক্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের কোনো প্রোগ্রাম, তথ্য-উপাত্ত বা নির্দেশ কার্যকর করিবার বা কোনো কার্য-সম্পাদনের সময় স্বপ্রণোদিতভাবে ক্রিয়াশীল হইয়া উঠে এবং উহার মাধ্যমে উক্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসে কোনো ক্ষতিকর পরিবর্তন বা ঘটনা ঘটায়;
 
(ই) কোনো ডিজিটাল ডিভাইস এর তথ্য চুরি বা উহাতে স্বয়ংক্রিয় প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে;
 
(প) ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’’ অর্থ যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্ধুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ; এবং
 
(ফ) ‘‘সেবা প্রদানকারী’’ অর্থ-
 
(অ) কোনো ব্যক্তি যিনি কম্পিউটার বা ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যবহারকারীকে যোগাযোগের সামর্থ্য প্রদান করেন; বা
 
(আ) এমন কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা সংস্থা যিনি বা যাহা উক্ত সার্ভিসের বা উক্ত সার্ভিসের ব্যবহারকারীর পক্ষে কম্পিউটার ডাটা প্রক্রিয়াকরণ বা সংরক্ষণ করেন।
 
(২) এই আইনে ব্যবহৃত যে সকল শব্দ বা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা এই আইনে প্রদান করা হয় নাই, সেই সকল শব্দ বা অভিব্যক্তি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এ যে অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে সেই অর্থে প্রযোজ্য হইবে।
আইনের প্রয়োগ
৩। এই আইনের কোনো বিধানের সহিত যদি অন্য কোনো আইনের কোনো বিধান অসমঞ্জস হয়, তাহা হইলে অন্য কোনো আইনের বিধানের সহিত এই আইনের বিধান যতখানি অসমঞ্জস হয় ততখানির ক্ষেত্রে এই আইনের বিধান কার্যকর থাকিবে :
 
তবে শর্ত থাকে যে, তথ্য অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনে ২০নং আইন) এর বিধানাবলি কার্যকর থাকিবে :
আইনের অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ
৪। (১) যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন যাহা বাংলাদেশে সংঘটন করিলে এই আইনের অধীন দণ্ডযোগ্য হইত, তাহা হইলে এই আইনের বিধানাবলি এইরূপে প্রযোজ্য হইবে যেন উক্ত অপরাধটি তিনি বাংলাদেশেই সংঘটন করিয়াছেন।
 
(২) যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের বাহির হইতে বাংলাদেশে অবস্থিত কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের বিধানাবলি এইরূপে প্রযোজ্য হইবে যেন উক্ত অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশেই সংঘটিত হইয়াছে।
 
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তর হইতে বাংলাদেশের বাহিরে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে এই আইনের বিধানাবলি এইরূপে প্রযোজ্য হইবে যেন উক্ত অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশেই সংঘটিত হইয়াছে।

Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs