প্রিন্ট

07/12/2024
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, ২০২২

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, ২০২২

( ২০২২ সনের ০৩ নং আইন )

Bangladesh Jatiya Jadughar Ordinance, 1983 রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতনভাবে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন

যেহেতু সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন) দ্বারা ১৯৮২ সনের ২৪ মার্চ হইতে ১৯৮৬ সনের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সামরিক আইন দ্বারা জারীকৃত অধ্যাদেশসমূহের অনুমোদন ও সমর্থন সংক্রান্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৯ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হয় এবং সিভিল আপিল নং-৪৮/২০১১ তে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণাপূর্বক উহার বৈধতা প্রদানকারী সংবিধান (সপ্তম সংশোধন) আইন, ১৯৮৬ (১৯৮৬ সনের ১ নং আইন) বাতিল ঘোষিত হওয়ায় উক্ত অধ্যাদেশসমূহের কার্যকারিতা হারাইয়াছে; এবং

যেহেতু ২০১৩ সনের ৭ নং আইন দ্বারা উক্ত অধ্যাদেশসমূহের মধ্যে কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকর রাখা হয়; এবং

যেহেতু উক্ত অধ্যাদেশসমূহের আবশ্যকতা ও প্রাসঙ্গিকতা পর্যালোচনা করিয়া আবশ্যক বিবেচিত অধ্যাদেশসমূহ সকল স্টেক-হোল্ডার ও সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে বাংলায় নূতনভাবে আইন প্রণয়ন করিবার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে; এবং

যেহেতু সরকারের উল্লিখিত সিদ্ধান্তের আলোকে Bangladesh Jatiya Jadughar Ordinance, 1983 (Ordinance No. LIII of 1983) রহিতক্রমে সময়োপযোগী করিয়া নূতন আইন প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-

সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন

১।  (১) এই আইন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হইবে।

(২) ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।

সংজ্ঞা

২।  বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোনো কিছু না থাকিলে, এই আইনে,-

(১) ‘কিউরেটোরিয়াল’ অর্থ জাদুঘরের নিদর্শন সংগ্রহ, সংগৃহীত নিদর্শনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং গবেষণা সংক্রান্ত কার্যাদি;

(২) ‘জাদুঘর’ অর্থ ধারা ৩ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর;

(৩) ‘তহবিল’ অর্থ ধারা ১৪ এ উল্লিখিত জাদুঘরের তহবিল;

(৪) ‘নিদর্শন’ অর্থ সংরক্ষণ, গবেষণা বা প্রদর্শন করিবার উদ্দেশ্যে জাদুঘরে সংগৃহীত ও নিবন্ধিত বা সংগ্রহযোগ্য কোনো উপকরণ, বস্তু বা বস্তুশ্রেণি;

(৫) ‘নির্ধারিত’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;

(৬) ‘পর্ষদ’ অর্থ ধারা ৭ এর অধীন গঠিত পর্ষদ;

(৭) ‘পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন (antiquity)’ অর্থ-

(ক) মানব কর্মকাণ্ডজাত যে কোনো প্রাচীন অস্থাবর বস্তু যাহা শিল্পকলা, স্থাপত্য, চারুকলা, কারুকলা, সাহিত্য, প্রথা, মূল্যবোধ, ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম, যুদ্ধোপকরণ, বিজ্ঞান, সভ্যতা বা সংস্কৃতির যে কোনো ধরনের উপকরণ ও নিদর্শন, অথবা

(খ) যে কোনো ধরনের প্রাচীন অস্থাবর নিদর্শন যাহা ঐতিহাসিক, জাতিতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক, নন্দনতাত্ত্বিক, শৈল্পিক, সামাজিক, জৈবিক, ভূতাত্ত্বিক, সামরিক বা বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, অথবা

(গ) পুরাতাত্ত্বিক স্থাবর নিদর্শনে সংযুক্ত বা সন্নিহিত যে কোনো ধরনের তোরণ, দরজা, জানালা, নৌকা, খাট-পালং, পাইপ, দেওয়াল-নিম্নাংশের প্যানেল, ছাদ, উৎকীর্ণ লিপি, দেওয়ালচিত্র, কারুশিল্প, ধাতব শিল্পকর্ম, ভাস্কর্য বা এতৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণ, অথবা

(ঘ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার কর্তৃক সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত, কোনো প্রাচীন বস্তু বা বস্তুশ্রেণি;

(৮) ‘প্রবিধান’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত প্রবিধান;

(৯) ‘বিধি’ অর্থ এই আইনের অধীন প্রণীত বিধি;

(১০) ‘মহাপরিচালক’ অর্থ জাদুঘরের মহাপরিচালক;

(১১) ‘সদস্য’ অর্থ পর্ষদের কোনো সদস্য;

(১২) ‘সভাপতি’ অর্থ পর্ষদের সভাপতি; এবং

(১৩) ‘সংরক্ষণ’ অর্থ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিদর্শনের স্থায়িত্ব প্রদান, প্রাকৃতিক ক্ষতিকর প্রভাব হইতে রক্ষা বা পুনরাণায়ন (restoration) সংশ্লিষ্ট কাজ।

জাদুঘর প্রতিষ্ঠা

৩।  (১) Bangladesh Jatiya Jadughar Ordinance, 1983 (Ordinance No. LIII of 1983) এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Bangladesh Jatiya Jadughar এই আইনের অধীন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর নামে এমনভাবে বহাল থাকিবে যেন উহা এই আইনের অধীন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।

(২) জাদুঘর একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সিলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে, জাদুঘরের স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার ও হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহা স্বীয় নামে মামলা দায়ের করিতে পারিবে এবং ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।

জাদুঘরের কার্যালয় ও বিভাগ

৪।  (১) জাদুঘরের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে।

(২) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগ, অনুবিভাগ, দপ্তর ও শাখা থাকিবে।

(৩) জাদুঘর, প্রয়োজনবোধে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বিভাগীয় শহরে বিভাগীয় জাদুঘর, জেলা শহরে জেলা জাদুঘর এবং বাংলাদেশের যে কোনো স্থানে শাখা জাদুঘর, বিষয়ভিত্তিক জাদুঘর, স্মৃতি জাদুঘর, সংগ্রহশালা, গবেষণা কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট বা মহাফেজখানা (archive) স্থাপন, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করিতে পারিবে।

(৪) জাদুঘর, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, প্রয়োজনবোধে, দেশের বাহিরে জাদুঘর, সংগ্রহশালা, প্রদর্শনী গ্যালারি ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করিতে পারিবে।

(৫) জাদুঘর দেশের সার্বিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন নিশ্চিত করিয়া দেশের অন্যান্য স্থানের ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব বিবেচনাপূর্বক স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটাইয়া জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করিতে পারিবে।

জাদুঘরের কার্যাবলি

৫। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জাদুঘরের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-

(ক) পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকলা ও সাহিত্যের নিদর্শন, জাতিতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সংশ্লিষ্ট নিদর্শন, স্মৃতিচিহ্ন ও ঘটনা, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ নমুনা, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং মানবসৃষ্ট নিদর্শন, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ড, শ্রুতি-চিত্রণ (audio-visual) ভিত্তিক প্রামাণ্য দলিল এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংশ্লিষ্ট বস্তু ও নিদর্শন অনুসন্ধান, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শন;

(খ) সংগৃহীত সকল নিদর্শনের তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ;

(গ) বিশ্বসভ্যতা সংশ্লিষ্ট বস্তুগত এবং অবস্তুগত বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রদর্শন;

(ঘ) সাময়িকী, পত্রিকা, গ্রন্থ, সংকলন, ডিজিটাল প্রতিকৃতি, ভার্চুয়াল জাদুঘর, চলচ্চিত্রিক নিদর্শন, দেখনচিত্র (viewcard), পোস্টার এবং নিদর্শনের অনুকৃতি (replica) তৈরি প্রকাশ, প্রচার, দেশি-বিদেশি প্রদর্শনী ও মেলায় অংশগ্রহণ, বিনিময় ও বিপণন;

(ঙ) বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যভিত্তিক প্রদর্শনী সম্মেলন, বক্তৃতামালা, সেমিনার এবং সভার আয়োজন;

(চ) সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ক শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত উৎসাহ প্রদান, জাদুঘরমনস্ক প্রচারণা এবং জাদুঘরবান্ধব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিতকরণ ও স্বীকৃতি প্রদান বা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ঐতিহ্য পদক প্রদান;

(ছ) দেশের সকল জাদুঘর ও সংগ্রহশালা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় বা নিয়ন্ত্রণে রক্ষিত সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শনের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহের জন্য জরিপ পরিচালনা এবং জরিপের তথ্য গবেষকদের ব্যবহার করিবার জন্য উক্ত নিদর্শন সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে রাখিয়া কেন্দ্রীয়ভাবে জাদুঘরের তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধীকরণ;

(জ) জাদুঘরের বিশেষায়িত বা গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে অথবা জরুরি প্রয়োজনে সহায়তাকল্পে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিতকরণ এবং তাহাদের সম্মানি, পারিশ্রমিক বা অনুদান প্রদান;

(ঝ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, মেধাবী বা বিশেষজ্ঞ বিনিময় কর্মসূচি (Scholar Exchange Programme), প্রশিক্ষণ বা অনুরূপ কোনো কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য কোনো দেশি, বিদেশি জাদুঘর বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সহিত সমঝোতা-স্মারক বা চুক্তি সম্পাদন; এবং

(ঞ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশনা সাপেক্ষে, উহার উপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন এবং প্রয়োজনীয় অন্য যে কোনো কার্য সম্পাদন।

পরিচালনা ও প্রশাসন

৬। জাদুঘরের সাধারণ পরিচালনা ও প্রশাসন পর্ষদের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং জাদুঘর যে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যসম্পাদন করিতে পারিবে পর্ষদও সেই সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যসম্পাদন করিতে পারিবে।

পর্ষদ গঠন

৭।  (১) নিম্নরূপ সদস্য সমন্বয়ে পর্ষদ গঠিত হইবে, যথা :-

(ক) সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে নিযুক্ত শিক্ষা, ইতিহাস বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনো প্রথিতযশা ব্যক্তি, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;

(খ) মহাপরিচালক, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর;

(গ) মহাপরিচালক, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর;

(ঘ) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ;

(ঙ) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি;

(চ) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ছ) অর্থ বিভাগ কর্তৃক মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(জ) ডিন, চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;

(ঝ) সরকার কর্তৃক মনোনীত বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ১ (এক) জন প্রতিনিধি;

(ঞ) সরকার কর্তৃক মনোনীত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ (দুই) জন অধ্যাপক, তন্মধ্যে একজন ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক এবং অপরজন বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষক হইবেন;

(ট) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত স্থাপত্য বিভাগের ১ (এক) জন অধ্যাপক;

(ঠ) প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শিল্পকর্ম উপহারদাতা বা তাহার উত্তরাধিকারী এবং কলা, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ও জাদুঘর বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত ৪ (চার) জন ব্যক্তি;

(ড) পরিচালক, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন; এবং

(ঢ) মহাপরিচালক, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।

(২) সভাপতিসহ উপধারা (১) এর দফা (ঝ), (ঞ), (ট) এবং (ঠ)-তে উল্লিখিত সদস্যগণ তাহাদের মনোনয়নের তারিখ হইতে পরবর্তী ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন:

তবে শর্ত থাকে যে, মনোনীত সদস্যগণ অনধিক ১ (এক) মেয়াদের জন্য পুনঃমনোনয়নের যোগ্য হইবেন :

আরও শর্ত থাকে যে, উক্ত মেয়াদ শেষ হইবার পূর্বে সরকার, যে কোনো সময়, উক্তরূপ মনোনীত কোনো সদস্যকে তাহার পদ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে বা মনোনীত কোনো সদস্য সরকারের উদ্দেশ্যে স্বীয় স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে পদত্যাগ করিতে পারিবেন।

পর্ষদ এর সভা

৮।  (১) এই ধারার অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, পর্ষদ উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) পর্ষদের সভার তারিখ, সময় ও স্থান সভাপতির সহিত আলোচনাক্রমে, মহাপরিচালক কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।

(৩) প্রতি ৪ (চার) মাসে পর্ষদের অন্যূন একটি সভা অনুষ্ঠিত হইবে :

তবে শর্ত থাকে যে, অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ সদস্যের লিখিত অনুরোধের প্রেক্ষিতে সভাপতি পর্ষদের বিশেষ সভা আহবান করিতে পারিবেন।

(৪) সভাপতি পর্ষদের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন, তবে তাহার অনুপস্থিতিতে সভাপতি কর্তৃক মনোনীত কোনো সদস্য সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

(৫) পর্ষদের সভার কোরামের জন্য উহার মোট সদস্য এর অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশের উপস্থিতির প্রয়োজন হইবে, তবে মুলতবি সভার ক্ষেত্রে কোনো কোরামের প্রয়োজন হইবে না।

(৬) পর্ষদের সভায় উপস্থিত প্রত্যেক সদস্যের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটের ভিত্তিতে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে, তবে প্রদত্ত ভোটের সমতার ক্ষেত্রে উক্ত সভার সভাপতির একটি নির্ণায়ক ভোট প্রদানের ক্ষমতা থাকিবে।

(৭) পর্ষদ উহার কোনো সভায় কোনো আলোচ্য বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখিতে সক্ষম এইরূপ যে কোনো বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শককে আমন্ত্রণ জানাইতে পারিবে এবং উক্ত ব্যক্তি সভায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন, তবে ভোট প্রদানের কোনো ক্ষমতা তাহার থাকিবে না।

(৮) কেবল কোনো সদস্য পদে শূন্যতা বা পর্ষদ গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে পর্ষদের কোনো কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না।

(৯) পর্ষদের প্রত্যেক সভার কার্যবিবরণী রেকর্ডভুক্তকরণ, সংরক্ষণ, সদস্যগণের নিকট প্রেরণ এবং পরবর্তী পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করিতে হইবে।

পর্ষদের কার্যাবলি

৯।  পর্ষদের কার্যাবলি হইবে নিম্নরূপ, যথা :-

(ক) জাদুঘরের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নিদর্শন এবং নমুনার সার্বিক ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান ও নিরাপত্তা বিধান;

(খ) জাদুঘরের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও উহা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ;

(গ) জাদুঘরে রক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস প্রকল্পের দলিলসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সংগৃহীত দলিলসমূহের বিষয়ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা ও আনুষঙ্গিক গ্রন্থাদি প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;

(ঘ) জাদুঘরের সংগ্রহসমূহের উপর গবেষণা এবং উক্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ;

(ঙ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য প্রচার এবং প্রদর্শনের নিমিত্ত দেশের বাহিরে প্রদর্শনীর আয়োজন, সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করিয়া জাদুঘরের সংগৃহীত নিদর্শন বিদেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দেশের বাহিরের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন দেশে আনিয়া প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ;

(চ) বেসরকারি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জাদুঘর ও সংগ্রহশালা তত্ত্বাবধান, সমৃদ্ধকরণ ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান, অন্যান্য জাদুঘর ও সংগ্রহশালার সকল নিদর্শন তালিকাভুক্তির ব্যবস্থাকরণ এবং নিয়মিত পরিদর্শনের মাধ্যমে নিরীক্ষাকরণ;

(ছ) পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহিত সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ;

(জ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সংশ্লিষ্ট কোনো জাদুঘর, সংগ্রহশালা বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, পরিচালনা কমিটির সম্মতিক্রমে বা সমঝোতা বা শর্তাবলির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জাদুঘর, সংগ্রহশালা বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব গ্রহণ ও পরিচালনা;

(ঝ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে ও নির্দিষ্ট শর্তাবলির ভিত্তিতে, সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত কোনো জাদুঘর, সংগ্রহশালা বা এতৎসংশ্লিষ্ট কোনো কর্মসূচি বা প্রকল্পের কর্তৃত্ব গ্রহণ ও পরিচালনা;

(ঞ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য অনুধাবনের নিমিত্ত শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান;

(ট) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সহিত যৌথভাবে বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত অধিভুক্ত হইয়া শিল্পকলার ইতিহাস, জাদুঘরবিদ্যা, প্রত্নতত্ত্ব, সংরক্ষণবিদ্যা, জাদুঘর নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা কোর্স চালুকরণ, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (Institute) স্থাপন ও সনদপত্র প্রদান;

(ঠ) সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জাদুঘরের বিশেষ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, পরিচালনা এবং বেসরকারি সূত্র হইতে জাদুঘরের উন্নয়নের জন্য তহবিল সংগ্রহ;

(ড) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, যাচাই-বাছাইক্রমে অন্য কোনো দেশে, স্থানে, সংগ্রহশালায় বা ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ দেশে ফিরাইয়া আনিবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ;

(ঢ) নিদর্শনসমূহের ব্যবস্থাপনার জন্য ম্যানুয়াল প্রণয়ন ও উহার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ;

(ণ) প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংগৃহীত অস্থাবর নিদর্শন ব্যতীত বাংলাদেশের অন্যান্য অস্থাবর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের নিবন্ধন, একত্রীকরণ, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান;

(ত) এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি, প্রবিধানের বিধান প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ; এবং

(থ) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার কর্তৃক নির্দেশিত যে কোনো কার্যাবলি সম্পাদন।

মহাপরিচালক

১০।  (১) জাদুঘরের একজন মহাপরিচালক থাকিবেন।

(২) মহাপরিচালক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাহার চাকরির মেয়াদ ও শর্তাবলি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।

(৩) মহাপরিচালক জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী হইবেন, এবং তিনি এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি, প্রবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে -

(ক) পর্ষদ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্য সম্পাদন করিবেন;

(খ) জাদুঘরের তহবিল তত্ত্বাবধান করিবেন;

(গ) পর্ষদের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করিবেন; এবং

(ঘ) পর্ষদ কর্তৃক, সময় সময়, তাহার উপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করিবেন।

(৪) মহাপরিচালকের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, শূন্যপদে নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত বা তিনি পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন।

কিউরেটর

১১। (১) জাদুঘরের একজন কিউরেটর থাকিবেন, যিনি মহাপরিচালকের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করিবেন।

(২) কিউরেটর জাদুঘর কর্তৃক নিযুক্ত হইবে এবং তাহার চাকরির মেয়াদ ও শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

(৩) কিউরেটর জাদুঘরের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি-

(ক) নিদর্শন সংগ্রহ এবং উহাদের নিবন্ধীকরণ, গবেষণা, প্রকাশনা, দলিলায়ন, সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, ভেরিফিকেশন এবং জাদুঘরে প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন;

(খ) কিউরেটোরিয়াল ও সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করিবেন;

(গ) কিউরেটেড প্রদর্শনী, ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী, আউটরিচ ও অন্যান্য প্রোগ্রাম, জাদুঘর-জনগণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমন্বয় সাধন করিবেন;

(ঘ) নিদর্শনের বিষয়ে গবেষকগণকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করিবেন;

(ঙ) জাদুঘরের কিউরেটোরিয়াল ও সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন;

(চ) জাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শনের কিউরেটোরিয়াল এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত যাবতীয় কার্যাবলি তত্ত্বাবধান করিবেন;

(ছ) কিউরেটোরিয়াল ও সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট কার্যাবলির সার্বিক তত্ত্বাবধান, সমন্বয়, নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করিবেন; এবং

(জ) মহাপরিচালক কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করিবেন।

সহকারী কিউরেটর

১২। (১) জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর থাকিবে।

(২) সহকারী কিউরেটর জাদুঘর কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং তাহার চাকরির মেয়াদ ও শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

(৩) সহকারী কিউরেটর জাদুঘরের সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা হইবেন এবং তিনি-

(ক) কিউরেটরের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করিবেন;

(খ) নিদর্শন অনুসন্ধান, সংগ্রহ এবং উহাদের নিবন্ধীকরণ, দলিলায়ন, রক্ষণাবেক্ষেণ, প্রদর্শন, গবেষণা ও ভেরিফিকেশনের কাজে কিউরেটরকে সহায়তা প্রদান করিবেন;

(গ) উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা প্রদান করিবেন;

(ঘ) জাদুঘরের নিদর্শন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করিবেন ও এতদসংশ্লিষ্ট গবেষকগণকে সহযোগিতা প্রদান করিবেন; এবং

(ঙ) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত বা নির্ধারিত অন্যান্য কার্য সম্পাদন করিবেন।

জনবল নিয়োগ

১৩।  (১) এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে, জাদুঘরের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য, সরকার কর্তৃক নিযুক্ত উপসচিবের নিম্নে নহে এমন একজন পরিচালকসহ অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল থাকিবে।

(২) জনবলের নিয়োগ এবং চাকরির শর্তাবলি প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত হইবে।

তহবিল

১৪।  (১) জাদুঘরের একটি তহবিল থাকিবে এবং উহাতে নিম্নরূপ উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ জমা হইবে, যথা: -

(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মঞ্জুরি ও অনুদান;

(খ) সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, কোনো বিদেশি সরকার বা সংস্থা হইতে প্রাপ্ত অনুদান বা ঋণ;

(গ) কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সংস্থা, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত দান বা অনুদান;

(ঘ) জাদুঘরের প্রকাশনা, নিদর্শনাদির অনুকৃতি, প্রবেশ টিকিট, ইত্যাদির বিক্রয়লব্ধ আয়;

(ঙ) জাদুঘরের মিলনায়তন বা প্রাঙ্গণ ভাড়া, সার্ভিস চার্জ এবং রয়্যালটি বাবদ প্রাপ্ত আয়;

(চ) তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের সুদ বা মুনাফা হইতে প্রাপ্ত আয়;

(ছ) জাদুঘরের নিজস্ব আয়; এবং

(জ) অন্য কোনো বৈধ উৎস হইতে প্রাপ্ত অর্থ।

(২) তহবিলের সকল অর্থ কোনো তপশিলি ব্যাংকে জাদুঘরের নামে জমা রাখিতে হইবে।

ব্যাখ্যা। - উপ-ধারা (২) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘তপশিলি ব্যাংক’ অর্থ Bangladesh Bank Order, 1972 (President Order No. 127 of 1972) এর Article 2(j) তে সংজ্ঞায়িত ‘Scheduled Bank’।

(৩) সরকারের নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধান অনুসরণক্রমে জাদুঘরের তহবিল পরিচালিত হইবে এবং তহবিলের অর্থ হইতে জাদুঘরের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করা যাইবে।

বাজেট

১৫।  জাদুঘর প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়সহ পরবর্তী অর্থ বৎসরের বাৎসরিক বাজেট বিবরণী সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত বৎসরে সরকারের নিকট হইতে জাদুঘরের কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহারও উল্লেখ থাকিবে।

হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা

১৬।  (১) জাদুঘর উহার আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাবরক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে।

(২) বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বলিয়া অভিহিত, প্রত্যেক বৎসর জাদুঘরের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং এতৎসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনের বিধান মোতাবেক নিরীক্ষা রিপোর্ট দাখিল করিবেন।

(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি জাদুঘরের সকল রেকর্ড, দলিল-দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভান্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং কোনো সদস্য বা জাদুঘরের কোনো কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন।

অপরাধ ও দণ্ড

১৭। (১) কোনো ব্যক্তি জাদুঘরের কোনো স্থাবর নিদর্শন বা উহার অংশবিশেষ ধ্বংস, বিনষ্ট পরিবর্তন বা ক্ষতিসাধন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) কোনো ব্যক্তি জাদুঘরের কোনো অস্থাবর নিদর্শন চুরি, পাচার, ধ্বংস, বিনষ্ট, পরিবর্তন বা ক্ষতিসাধন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) কোনো ব্যক্তি জাদুঘরের সংগৃহীত বা নিবন্ধিত কোনো নিদর্শনের উপর খোদাইকরণ, লিখন, উৎকীর্ণ লিপি বা স্বাক্ষর করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৪) উপ-ধারা (১), (২) ও (৩) এ উল্লিখিত অর্থদণ্ডের ক্ষেত্রে আদালত এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে যে অর্থদণ্ডের সমুদয় বা উহার কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত নিদর্শনটিকে উক্ত অপরাধ সংঘটনের পূর্বকালীন অবস্থায় প্রত্যর্পণ করিবার নিমিত্ত ব্যয় করা যাইবে।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে-

ক) ‘স্থাবর নিদর্শন’ অর্থ ভূমি বা কোনো কাঠামোর সহিত দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত ও সহজে স্থানান্তরযোগ্য নয় এমন নিদর্শন; এবং

(খ) ‘অস্থাবর নিদর্শন’ অর্থ ভূমি বা কোনো কাঠামোর সহিত দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত নয় ও সহজে স্থানান্তরযোগ্য এমন নিদর্শন।

অপরাধের তদন্ত, বিচার, ইত্যাদি

১৮।  এই আইনের অধীন কোনো অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার, আপিল ও এতৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে Code of Criminal Procedure, 1898 (Act No. V of 1898) প্রযোজ্য হইবে।

প্রতিবেদন

১৯।  (১) প্রতি অর্থ বৎসর শেষ হইবার পর, যথাশীঘ্র সম্ভব, জাদুঘর উক্ত বৎসরের সম্পাদিত কার্যাবলির উপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করিবে।

(২) সরকার, যে কোনো সময় জাদুঘরের নিকট হইতে উহার যে কোনো বিষয়ের উপর প্রতিবেদন বা বিবরণী আহবান করিতে পারিবে এবং জাদুঘর উহা সরকারের নিকট সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।

ক্ষমতা অর্পণ

২০।  পর্ষদ লিখিতভাবে, সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দ্বারা, আদেশে উল্লিখিত পরিস্থিতি ও শর্তে, যদি থাকে, উহার কোনো ক্ষমতা সভাপতি, কোনো সদস্য বা জাদুঘরের কোনো কর্মচারীকে অর্পণ করিতে পারিবে।

বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা

২১। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

২২। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, জাদুঘর, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইন বা বিধির সহিত অসামঞ্জস্যপূর্ণ নহে, এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

রহিতকরণ ও হেফাজত

২৩।  (১) Bangladesh Jatiya Jadughar Ordinance, 1983 (Ordinance No. LIII of 1983), অতঃপর উক্ত Ordinance বলিয়া উল্লিখিত, এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন উক্তরূপ রহিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত Ordinance এর অধীন-

(ক) কৃত কোনো কার্য বা গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো নোটিশ, প্রস্ত্ততকৃত বাজেট প্রাক্কলন, স্কিম বা প্রকল্প এই আইনের অধীন কৃত, গৃহীত, প্রদত্ত বা প্রস্তুতকৃত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে;

(খ) প্রণীত কোনো বিধি বা প্রবিধান, জারীকৃত কোনো আদেশ, বিজ্ঞপ্তি বা প্রজ্ঞাপন, রহিত বা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত, বলবৎ থাকিবে এবং এই আইনের অধীন প্রণীত বা জারি করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; এবং

(খ) কোনো কার্যধারা অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা এই আইনের অধীন নিষ্পন্ন করিতে হইবে।

(৩) উক্ত Ordinance রহিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত Ordinance এর অধীন প্রতিষ্ঠিত Bangladesh Jatiya Jadughar এর-

(ক) সকল সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সকল
সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও জামানত, সকল দাবি, হিসাববহি, রেজিস্টার, রেকর্ড, দলিল, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকলা, জাতিতাত্ত্বিক নমুনা, স্মৃতিস্মারক, অনুকৃতি ও অন্যান্য নিদর্শন, ভূমি ও দালান জাদুঘরের সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও জামানত, দাবি, হিসাববহি, রেজিস্টার, রেকর্ড, দলিল, পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকলা, জাতিতাত্ত্বিক নমুনা, স্মৃতিস্মারক, অনুকৃতি ও নিদর্শন, ভূমি ও দালান হিসাবে গণ্য হইবে;

(খ) সকল ঋণ, দায় ও দায়িত্ব এবং উহার দ্বারা, উহার পক্ষে বা উহার সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি, যথাক্রমে, জাদুঘরের ঋণ, দায় ও দায়িত্ব এবং উহার দ্বারা, উহার পক্ষে বা উহার সহিত সম্পাদিত চুক্তি বলিয়া গণ্য হইবে;

(গ) বিরুদ্ধে বা তৎকর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা জাদুঘরের বিরুদ্ধে বা তৎকর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বা আইনগত কার্যধারা বলিয়া গণ্য হইবে; এবং

(ঘ) সকল কর্মচারী জাদুঘরের কর্মচারী বলিয়া গণ্য হইবেন এবং এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে তাহারা যে শর্তে চাকরিতে নিয়োজিত ছিলেন, এই আইনের বিধান অনুযায়ী পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত, তাহারা সেই একই শর্তে জাদুঘরের চাকরিতে নিয়োজিত এবং, ক্ষেত্রমত, বহাল থাকিবেন।

ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ

২৪। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য পাঠ (Authentic English Text) প্রকাশ করিবে।

(২) বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাইবে।


Copyright © 2019, Legislative and Parliamentary Affairs Division
Ministry of Law, Justice and Parliamentary Affairs